সড়ক পরিবহন আইনে সমাধান, বিশেষজ্ঞরা চান পদ্ধতিগত পরিবর্তন



সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

 

ঢাকা: শিক্ষার্থী‌দের দেশজুড়ে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সমাধান হিসেবে সড়কমন্ত্রী ‘পরিবহন আইন পাশের জন্য প্রস্তুত’ বলে জানিয়েছেন। তিনি বলছেন, এর মধ্যেই সমাধান নিহিত। নতুন এই আইনের খসড়ায় চালকের বয়স অষ্টম শ্রেণী পাশ আর প্রতিযোগিতা করে দিয়া-করিম হত্যার মতো ঘটনার শাস্তি হিসেবে ৩ বছর সাজা ও ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড হতে পারে। সরকার এটাকে সমাধান মনে করলেও  আইনের পাশাপাশি ‘পদ্ধতিগত পরিবর্তন’ প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।

আগামী সোমবার মন্ত্রীসভায় খসড়া আইনটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন করা হবে। তারপর সংসদ অধিবেশনে এই আইন পাশ করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলছেন, ‘শিক্ষাথীদের যে দাবিগুলো, সেসব দাবির সমাধান এ সড়ক পরিবহন আইনের মধ্যে আছে।’

সড়ক পরিবহনের নতুন এই আইনের সঙ্গে কোনো দ্বিমত নেই সড়ক পরিবহন মালিকদের। তবে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের পাল্টা কর্মসূচি পালন করছেন তারা। চলছে দেশজুড়ে পরিবহন ধর্মঘট ও কর্মবিরতি। শুধু রাতের বাস চালু রেখেছেন তারা।

এ নিয়ে কথা বললে খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, ‘রাতেও বাসে হামলা হচ্ছে। তবু রাতে চালু রেখে নিরাপত্তা না পাওয়ার আগ পর্যন্ত সারাদেশে দিনে কোনো বাস চলবে না।’

সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে কোনো প্রশ্ন আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই আইনের সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই পরিবহন মালিকদের। ধর্মঘট ডাকা হয়েছে পরিবহনে নিরাপত্তার দাবি ও ভাংচুরের প্রতিবাদে।’

প্রস্তাবিত আইনে চালকের অষ্টম শ্রেণী পাশ যোগ্যতা ও  হেলপারের পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বললে এক মাসের কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধানসহ গাড়ি চালিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটালে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। বেপরোয়াভাবে বা প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানোর কারণে কারো মৃত্যু ঘটলে তিন বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

সড়কে পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালানো বা রেস করার ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা ২৫ লাখ টাকা জরিমানারও বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত এই আইনে।

বুয়েটের নগর ও পরিকল্পা বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক মনে করেন,  নতুন আইন শিক্ষার্থীদের দাবি সামধানে যথেষ্ট কার্যকর নয়। কৌশলগত পরির্বতন আনা দরকার ছিল যা করতে সরকার এখনো মনোযোগী নয়।

তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের পরিকল্পনায় ঢাকা শহরে বাসে শৃঙ্খলা আনতে বিভিন্ন রঙে যে বাস নামানোর কথা তাতে সরকারের একদম মনোযোগ নেই।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দপ্তরে এ পরিকল্পনা নিয়ে কয়েকবার ঘুরেও কোনো কাজ হচ্ছে না।’ সবাই এটা ভুলে গেছে বলেও মন্তব্য করেন এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ।

   

রাজশাহীতে কোরবানির জন্য প্রস্তুত সাড়ে ৪ লাখ পশু



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবগুলোর একটি ঈদ-উল-আযহা। ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে কোরবানির জন্য এ বছর রাজশাহী অঞ্চল থেকে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ১৯৬টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এ অঞ্চলের গরু ও ছাগল পালনকারীরা জানিয়েছেন, এ বছর তাদের পশু সংখ্যা চাহিদার চেয়েও বেশি হয়েছে। এসব পশু রাজশাহীর পাশাপাশি অন্যান্য জেলাগুলির চাহিদাও মেটাতে পারে। তবে বর্তমান রাজনৈতিক প্রচার ও গরমের প্রকোপে জনজীবন কষ্ট পাচ্ছে, যার প্রভাবে পশুর হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি কম হচ্ছে। এ বছর রাজশাহীর কৃষকরা বিশেষ যত্ন নিয়ে পশুগুলোকে লালন-পালন করেছেন।

জানা গেছে, কোরবানিকে কেন্দ্র করে পশুর মালিক, ব্যবসায়ী ও কোরবানি দাতাদের মধ্যে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে গেছে। সাপ্তাহিক হাট, পাড়া-মহল্লায় গরু ব্যবসায়ীদের আনাগোনাও বেড়েছে। শুধু তাই নয়, একটু কম দামের আশায় আগে থেকে অনেকেই পশুর বায়না করে রাখছেন। তবে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দাবি-পশু খাদ্যের দামের প্রভাব পড়বে গরুর হাটে।

রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর এখন পর্যন্ত কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত রয়েছে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ১৯৬টি। এর মধ্যে গরু রয়েছে ৮৩ হাজার ৩৬৫টি, মহিষ রয়েছে ৩ হাজার ৭৬৯টি ও ছাগল রয়েছে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৭৫৩টি। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও স্থানীয় চাহিদার তুলনায় পশু বেশি রয়েছে।

খামারিরা জানান, তারা নিয়মিত ভেটেরিনারি পরিষেবা, সঠিক খাদ্য ও যত্নের মাধ্যমে পশুগুলিকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করেছেন। এই উদ্যোগ কোরবানির পশুর মান উন্নত করতে এবং ক্রেতাদের মন জয় করতে সাহায্য করেছে।

নগরীর বুধপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম প্রতিবছর নিজ বাড়িতে দুই থেকে তিনটি ষাঁড় পালন করের ঈদুল আজহায় বিক্রির জন্য। তিনি জানান, এবার দুটি ষাঁড় পালন করেছেন। দুই বছর আগে দেড় লাখ টাকায় গরু দুটি কিনেছিলেন। গত ঈদে বিক্রি না করে এবার বিক্রি করার অপেক্ষায় আছেন। একেকটা ষাড়ের দাম প্রায় আড়াই লাখ টাকা করে হতে। এখনো বাজার জমে না ওঠায় বিক্রির জন্য নেয়া হয়নি হাটে।

রাজশাহী সপুরা অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক আব্দুস সালাম বলেন, গবাদি পশুর খাবারের দাম প্রতি মাসেই বাড়ছে। বাড়তি খরচে কৃষকদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। ইতোমধ্যে আবহাওয়া এবং বাজারের অনিশ্চয়তার সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছেন অনেকেই। মানুষ দেশি পশু কোরবানি করতে পছন্দ করেন। কোরবানিযোগ্য পশুও পর্যাপ্ত। তাই বাইরে থেকে গরু আমদানি না করা হলে খামারিরা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন। তবে আমার গরু এবার আগেই বিক্রি হয়ে গেছে ৭০টা। আর ২০টা মত আছে, এগুলোও হয়ে যাবে। দামাদামি চলছে দু’একদিনে হয়ে যাবে। এবার ভালোই দাম পেয়েছি, দেরি হলে চিন্তা বাড়ে, তাই আগেই বিক্রি করে দিয়েছে। হয়তো আর কিছুদিন থাকলে আর একটু দাম পেতাম, তবে খারাপ দাম পাইনি। গরুর দাম অনেক বাড়তি।

রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, সপ্তাহে রোববার ও বুধবার সিটি হাট বসে। কোরবানির হাট শুরু হতে দেরি আছে। তবে কোরবানির পশু কেমন হাটে উঠছে বলা সম্ভব নয়। কোরবানির যে গরু আসার কথা তা এখনো আসেনি। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতি বেড়েছে। ঈদের ৭ থেকে ১০ দিন আগে জমে উঠবে এই বাজার।

প্রাণী স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তায় জোর দিয়ে, রাজশাহী অঞ্চলের কৃষি বিভাগ এবং পশু সম্পদ বিভাগ সক্রিয়ভাবে পশুর খামারগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করেছে। তারা খামারি ও পশুপালকদের সচেতন করেছেন যেন তারা অবৈধ ঔষধ বা স্টেরয়েডের ব্যবহার এড়িয়ে চলেন।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে গতবারের তুলনায় কোরবানির পশুর চাহিদা বাড়েনি। কিন্তু বাড়তি প্রায় ৭০ হাজার বেশি পশু লালন-পালন হয়েছে। কোরবানির আগে এই সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যাবে। তবে এবার উৎপাদন খরচ বেশি, তাই দামও কিছুটা বেশি হবে।

সার্বিক বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদ বলেন, পশুর জোগান বেশি থাকায় এবার ঈদে গবাদিপশু পালনকারী খামারি ও ক্রেতা উভয়ের জন্যই একটি ভালো পরিবেশ বজায় থাকবে। কৃষক ও খামারিরা যেন কোরবানির পশুর ন্যায্য দাম পান, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে গবাদিপশু দেশে প্রবেশ রোধে বিশেষ নজর দিতে বিজিবির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

;

ঘরে উঠলো সোনালী ধান, কৃষকদের মুখে হাসি



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪ কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ঘরে উঠলো সোনালী ধান, কৃষকদের মুখে হাসি

ঘরে উঠলো সোনালী ধান, কৃষকদের মুখে হাসি

  • Font increase
  • Font Decrease

 

সব দুশ্চিন্তার অবসান হয়ে এবার হাওরের কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। একদিকে ফলন হয়েছে ভালো, অপরদিকে আবহাওয়া ভালো থাকায় এবারের ফসল ভালো ভাবে তোলা হয়েছে। এখন চলছে ধান মাড়াই এর কাজ৷ অল্প কিছু জমি বাকি রয়েছে, তাও আজ কালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে৷ শেষ সময়ে আবহাওয়া কিছুটা বিরূপ থাকলেও তা বড় ধরনের কোন সমস্যার সৃষ্টি করেনি। ফলে কৃষকরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন৷

কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চল সহ সবখানেই এখন ধান শুকানোর ধুম। নাওয়া খাওয়া ভুলে এখন চলছে ধান ঘরে তোলার চেষ্টা৷ আবহাওয়া ভালো থাকায় এবছর ফলন হয়েছে ভালো। এরিমধ্যে ৯৬ ভাগ ধান কাটা শেষ৷ বাকিগুলো কয়েকদিনের মধ্যে কাটা শেষ হবে। এখন চলছে পুরোদমে ধান মাড়াই এর কাজ৷ রোদের আসায় রাস্তায় চলছে ধান মাড়াই৷ হাওর এলাকার রাস্তা, স্কুল, বাড়ির বারান্দায়, মাঠে এখন ধান শুকানোর কাজ চলছে। বাতাশে ধানের মিষ্টি ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে৷ পরিবারের সবাই এখন শ্রমিক হয়ে কাজ করছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর আবাদ হয়েছে হাওরে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৬২৫ টন ধান। যা বিক্রি হবে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকায়।

হাওরাঞ্চলে বোরো মৌসুমের ধান কাটা-মাড়াইয়ের শেষদিকে উৎসব মুখর পরিবেশে এখন সেই ধান রাত জেগে সিদ্ধ করে সকাল থেকে শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক কৃষাণীরা। রাত-দিন পরিশ্রমের পরেও কোন ক্লান্তি নেই তাদের। উৎপাদিত ফসলের বাম্পার ফলন ও দাম আশানুরূপ হওয়ায় খুশি কৃষকরা।

নিকলী মজলিশপুরের কৃষক আলী আহাদ বলেন, দুদিন আগেও দে চিন্তা ছিলো, এখন তা নাই। স্বপ্নের ধান এখন হাতে চলে আইলো৷ আর কয়ডা দিন রোদ থাহলে সব ধান ঘরে নিয়ে আসতে পারবাম।'

কটিয়াদী গচিহাটার কৃষক মরম মিয়া বলেন, বাড়ির সবাই মিইল্লা ধান কাডাত নামছি৷ শেষমেশ ধান কাডা শেষ হয়লো৷ রাত কি দিন এক মনে কইরা কাম করছি। এহন আর চিন্তা নাই।'


কৃষকরা পুরো সড়কে ধান শুকানোর জন্য বাড়ি থেকে সিদ্ধ ধান বস্তায় বড়ে বাইসাইকেলে করে এনে রাস্তার উপর ঢালছেন। আর কৃষাণীরা সে ধান পা দিয়ে আলগা করে দিচ্ছেন। তিব্র গরমে তাপপ্রবাহ রোদে সোনালী ধানে পা দিচ্ছেন কৃষাণীরা। অনেকেই হাট-বাজারে বিক্রির পাশাপাশি বাড়ি থেকেও বিক্রি করছেন তাদের উৎপাদিত ফসল।

জেলার ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলী হাওর ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও খেলার মাঠ দখল করে ধান শুকানোর ধুম পড়েছে। প্রচণ্ড রোদেও নেই কৃষক কৃষাণীদের কোনো ক্লান্তি বরং ধান শুকাতে পেরে স্বস্তির হাসি দেখা দিয়েছে তাদের  চোখে-মুখে। ধান ও খড় শুকানোর কাজে খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান শুকানোর কাজ করছেন তাঁরা। দ্রুত ধান শুকাতে মাঠের ঘাসের ওপর বিছানো হয়েছে ছোট-বড় পলিথিন। আর সেই পলিথিনে শুকানো হচ্ছে ধান। কেউ ধান উল্টিয়ে দিচ্ছেন, কেউ ধানের আবর্জনা পরিষ্কার করছেন। অনেকেই তাদের উৎপাদিত ফসল রোদে শুকিয়ে হাটে তোলার প্রস্ততি নিচ্ছেন। সবমিলিয়ে প্রখর রোদ আর বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ধান ঘরে তোলা ও বাজার জাত করার কাজ। অবসর নেই কারও। অস্বস্তির রোদই যেন তাঁদের স্বস্তি এনে দিয়েছে।

এ বছর কিশোরগঞ্জের ইটনা, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন হাওরসহ নিকলী, বাজিতপুর, তাড়াইল, করিমগঞ্জ, কটিয়াদী এবং উজান এলাকার অন্যান্য উপজেলায়ও বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের দামও ভালো। মাড়াইস্থলে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে আটশ থেকে সাড়ে নয়শ টাকায়।

কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুস সাত্তার বলেন, ধান কাটা প্রায় শেষ। এবছর আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন ভালো হয়েছে৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই কৃষকরা খুশি।

;

৬৯ হাজার রোহিঙ্গা পাসপোর্ট নবায়নে সৌদির তাগিদ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যাওয়া ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিকের পাসপোর্ট নবায়ন করতে তাগিদ দিয়েছে সৌদি সরকার বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

রোববার (১২ মে) দুপুরে রাজধানীর নিকুঞ্জে হোটেল লা মেরিডিয়ানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সৌদি আরবের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে এ বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা নাগরিকদের পাসপোর্ট নবায়নের বিষয়ে সাংবাদিকদের সৌদি সরকারের তাগিদের কথা জানান। এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ১৯৭৪ সালের দিকে সৌদি আরবে যাওয়া ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাসপোর্ট নবায়ন করবে বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সৌদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের একটি চুক্তি হয়েছিল। কারণ, ১৯৭৪ সালের পর ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে দেশটিতে যায়। নিয়ম অনুযায়ী তাদের ওই দেশে কেউ কাগজপত্র ছাড়া থাকতে পারে না। সৌদি আরবে অবস্থান করা ৬৯ হাজার রোহিঙ্গার বাংলাদেশি পাসপোর্টের নবায়ন নেই। আমাদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে ওই সব রোহিঙ্গাদের তারা বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে না। আমরা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়ন করে দিব। এ বিষয়ে আমরা স্লো যাচ্ছি কেন কিংবা আমাদের কোনো অসুবিধা আছে কি-না সেটা দেখার জন্য তারা এসেছিলেন। এছাড়াও সৌদি আরবের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আমাদের উভয় দেশের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলাপ হয়েছে।

সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সৌদি আরব কিন্তু ৬৯ হাজার রোহিঙ্গার কাউকে ফেরত পাঠাবে না। আবার তারা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বও দেবে না। তবে কীভাবে থাকবে? সেজন্য তাদের কিছু ডকুমেন্টস প্রয়োজন। সে সববিষয়ে সরাসরি কথা বলতে তারা এসেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, সৌদিতে থাকা ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে দেশটিতে গিয়েছিল। সুতরাং আমরা শুধু তাদের পাসপোর্ট রিনিউ করে দিব। তাদের নাম-ঠিকানা পাসপোর্টে যেমন আছে তেমনি থাকবে।

সৌদি আরবের প্রতিনিধিদল উভয় দেশের মধ্যে বন্দী বিনিময় চুক্তির বিষয়ে প্রস্তাব করেছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দী বিনিময় চুক্তি রয়েছে। সৌদি যদি এই চুক্তি করে তবে ভাল হবে। বাংলাদেশ থেকে তাদের সিকিউরিটি গার্ডের জন্য আনসার পাঠানোর কথা বলেছি। এ বিষয়ে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন।

;

অন্তর্বাসে লুকিয়ে রাখতো ডিভাইস, ১০ মিনিটে শেষ হতো উত্তর



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
চক্র

চক্র

  • Font increase
  • Font Decrease

পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের অন্তর্বাস বা গেঞ্জির ভেতরে লুকিয়ে রাখা অত্যাধুনিক ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর পৌঁছে দিত চক্রটি। এতে করে পাঁচ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যেই সব প্রশ্নের উত্তর শেষ করতেন পরীক্ষার্থীরা।

রোববার (১২ মে) রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ।

তিনি বলেন, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ, রেলওয়েতে নিয়োগ, ভূমি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গ্রেফতাররা হলো- মো. জুয়েল খান (৪০), মো. রাসেল (৩০), মো. মাহমুদুল হাসান শাকিল (৩৯), মো. আব্দুর রহমান (৩৮), মো. আরিফুল ইসলাম (৩৫), মো. আজহারুল ইসলাম (২৯) ও মো. মাসুম হাওলাদার (২৫)। এসময় তাদের কাছ থেকে বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত জিএসএম সুবিধা সম্বলিত ১০টি অত্যাধুনিক ডিজিটাল ইলেকট্রনিক স্পাই ডিভাইস, ৭টি মোবাইল ফোন ও ১০টি সিম কার্ড এবং ১টি পকেট রাউটার উদ্ধার করা হয় বলে জানান ডিবিপ্রধান।

হারুন অর রশীদ জানান, বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে অত্যাধুনিক ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর সাপ্লাই করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি।

তিনি জানান, চক্রটি পরীক্ষা শুরুর ১ থেকে ২ মিনিট আগে কেন্দ্রের কাউকে ম্যানেজ করে প্রশ্নের ফটোকপি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বাইরে পাঠিয়ে দিত। তাদের প্রশ্নপত্র সমাধান টিম পাঁচ মিনিটের মধ্যে তা সমাধান করে ফেলতো। এরপর তারা উত্তরগুলো ডিভাইস সরবরাহকারীদের বলতে থাকতো। যা পরীক্ষার্থীরা ১০ মিনিটের মধ্যে সলভ করে ফেলতো।

ডিবিপ্রধান বলেন, চক্রটি বাইরে থেকে উত্তর বলবে আর যাদের অন্তর্বাস বা গেঞ্জির সঙ্গে ডিভাইস লাগানো তারা ভেতর থেকে উত্তরগুলো শুনে সঙ্গে সঙ্গে এমসিকিউ দাগিয়ে ফেলবে। দিন দিন এভাবে ক্রাইমের প্যাটার্ন চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। এক সময় আমরা নকল প্রতিরোধের জন্য কাজ করেছি। সে সময় তারা পরীক্ষার হলে বই নিয়ে যেত। অপরাধীরা তাদের অপরাধের প্যাটার্ন (ধরন) চেঞ্জ করছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে ধরার জন্য বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করছে। সর্বশেষ আমরা যেটা পেলাম ডিভাইস, এটা এমন জায়গায় রাখছে যেখানে ধরার বা চেক করার কোন স্কোপ নেই।

অন্তর্বাস ও গেঞ্জি

গ্রেফতারদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, আসামিদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের হোয়্যাটসঅ্যাপ মেসেঞ্জারের বার্তা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চক্রের সদস্যরা প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ (তৃতীয় ধাপ), বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেট কালেক্টর (গ্রেড ২) ও বুকিং অ্যাসিসটেন্ট (গ্রেড ২), পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অফিস সহায়ক, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, টাঙ্গাইলের অফিস সহায়ক, মৎস্য বিভাগের অফিস সাহায়ক, গণপূর্তের হিসাব সহকারী ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের অফিস সহায়ক, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপকসহ আরও বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় উল্লিখিত পন্থায় অপরাধ কর্ম সংগঠিত করেছে।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবৎ চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এই কাজ করে আসছে। চাকরি ভেদে এমসিকিউ পরীক্ষায় টিকিয়ে দেওয়ার জন্য ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা এবং লিখিত ও ভাইভাসহ ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা পরীক্ষার্থীদের নিকট থেকে নিতো।

চক্রের মূলহোতা জুয়েল খান (৪০) বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত জিএসএম সুবিধা সম্বলিত ইলেকট্রনিক স্পাই ডিভাইস সংগ্রহ ও সরবরাহ, প্রশ্নপত্র সংগ্রহ, সমাধান টিমের সদস্য সংগ্রহ ও চক্রের অন্যান্যদের সাথে সমন্বয় করতো। মো. রাসেল (৩০) ও মো. মাহমুদুল হাসান শাকিল এবং মো. আব্দুর রহমান (৩৮) বিভিন্ন পরীক্ষার্থী সংগ্রহ এবং পরীক্ষার্থীদের কাছে ডিজিটাল ইলেকট্রনিক স্পাই ডিভাইস পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি ডিভাইসটি কিভাবে ব্যবহার করতে হবে তার বিস্তারিত ব্যবহার বিধি শিখিয়ে দিত। মো. আরিফুল ইসলাম (৩৫) পরীক্ষা কেন্দ্রের অভ্যন্তর হতে পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর সুবিধামতো সময়ে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করা চক্রের অন্য সদস্যদের কাছে পৌঁছে দিত। এরপর তাদের সমাধান টিম অতিদ্রুত সেই প্রশ্নপত্র সমাধান করে কেন্দ্রের অভ্যন্তরে তাদের নির্ধারিত পরীক্ষার্থীদের কাছে ডিজিটাল ইলেকট্রনিক স্পাই ডিভাইসের মাধ্যমে প্রেরণ করতো।

বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত জিএসএম সুবিধা সম্বলিত এই ডিজিটাল ইলেকট্রনিক স্পাই ডিভাইসটি মেয়েদের 'অন্তর্বাস' ও ছেলেদের গেঞ্জি'র ভিতরে এমনভাবে সেলাই করে সংযুক্ত করা থাকে যা বাহির থেকে দেখে বোঝার উপায় থাকে না।

ডিভাইসে একটি মোবাইল সিম কার্ড সংযুক্ত থাকে। কেন্দ্রের বাহির থেকে ওই নম্বরে কল করা মাত্রই সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিসিভ হয়ে যায়। এই ডিভাইসের সাথে ব্লুটুথ এর মাধ্যমে কানেক্ট থাকা 'ছোট্ট বল আকৃতির রিসিভার স্পিকারটি পরীক্ষার্থীদের কানের ভিতরে থাকে ফলে বাহির থেকে উত্তর বলে দিলে নির্দিষ্ট পরীক্ষার্থীরা অনায়াসে তা লিখতে পারে। পরীক্ষা শেষে শক্তিশালী কলম সদৃশ চুম্বকের (ডিভাইসের বিশেষ অংশ) সহায়তায় সেটি কানের ভিতর থেকে বের করা হয়।

তিনি আরও বলেন, আসামিদের দশ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

;