‘রংপুরের ফুসফুস’ বলে পরিচিত শ্যামা সুন্দরী খাল। এটি রংপুরের বুক চিড়ে প্রবাহিত হয়েছে। নগরীর সিও বাজার এলাকার ঘাঘট নদীর উৎসমুখ থেকে শুরু হয়ে খোখসা ঘাঘটের সঙ্গে মিলেছে। খাল হলেও এর দৈর্ঘ্য ১৬ কিলোমিটার; গভীরতা ৪০ ফুটেরও বেশি ছিল। জলাবদ্ধতা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে ১৮৯০ সালে খালটি খনন করা হয়।
শ্যামা সুন্দরী ভরাট হওয়ার ফলে বর্তমানে পানির প্রবাহ নেই বললেই চলে। মানুষ এখন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত করেছে একে। ঘরবাড়ির আবর্জনা খালে ফেলে দিচ্ছে। খালটি ভরাট হয়ে দিন দিন এর আকার সংকুচিত হচ্ছে। দূষিত পানি আর ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে পাশ দিয়ে হাঁটাও দায় হয়েছে রংপুরবাসীর।
অবশেষে সেই ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খাল পুনরুজ্জীবিত করতে অভিযান শুরু করেছ রংপুর সিটি করপোরেশন।
শনিবার (১১ মে) সকালে শ্যামাসুন্দরী খাল পরিস্কার পরিচ্ছন্নকরণ ও জনসচেতনতা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। একযোগে খালের পাঁচ কিলোমিটার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার মধ্য দিয়ে শ্যামাসুন্দরী পুনরুজ্জীবন ও সচল রাখার কার্যক্রমে ১৫ পয়েন্টে স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠন বিডি ক্লিনের একহাজার সদস্যসহ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা অংশ নিয়েছেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র মোস্তফা বলেন, পরিচ্ছন্নতার সুফল সম্পর্কে নগরবাসীকে বেশি করে সচেতন করতে সবাইকে কাজ করতে হবে। শ্যামাসুন্দরী খালের আশপাশে বসবাসরত নগরবাসীকে সচেতন হতে হবে। খাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের পর নতুন করে ময়লা ফেলা এবং পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য অবৈধ স্যুয়ারেজ সংযোগ প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে রংপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত তদারকি কার্যক্রম চলমান থাকবে। প্রয়োজনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনাসহ অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে গ্রিন সিটি এবং ক্লিন সিটি ছিল অন্যতম অ্যাজেন্ডা। এরই ধারাবাহিকতায় শ্যামাসুন্দরী খালের পাঁচ কিলোমিটার (চেকপোস্ট হতে শাপলা চত্বর) ময়লাযুক্ত মাটি পুনঃখনন ও অপসারণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শ্যামাসুন্দরী কেবল রংপুর নয়, সমগ্র দেশের জন্যই একটি বড় সম্পদ। এ সম্পদ রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব। শ্যামাসুন্দরী খালকে পুনরুজ্জীবিত এবং সৌন্দর্যবর্ধনের যে প্রয়াস চলছে তার সফলতা এবং রংপুরের সকল নাগরিকের সহযোগিতা প্রয়োজন।
এসময় আগামী তিন মাসের মধ্যে শ্যামাসুন্দরী খাল খনন ও সংস্কারসহ আধুনিকায়নে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রজেক্ট ডিজাইন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের জন্য চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন। আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেন।
রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান ও পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী।