সড়ক পরিবহন আইন অনুমোদন: সর্বোচ্চ সাজা ৫ বছরের জেল
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সর্বোচ্চ ৫ বছরের সাজা ও অর্থদণ্ডের বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তবে হত্যা উদ্দেশ্য দুর্ঘটনা ঘটানো হয়েছে প্রমাণ হলে ৩০২ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রদান করারও বিধান রাখা হয়েছে।
সোমবার (০৬ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সর্বোচ্চ সাজা ৫ বছরের বিধান রেখে আইনটির খসড়া অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।বৈঠক শেষে মন্ত্রীপরিষদ সচিব শফিউল আলম এ তথ্য জানান।
সচিব বলেন, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছরের জেল ও অর্থদণ্ড। অর্থদণ্ডের পরিমাণ আদালত নির্ধারণ করবেন। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণে কেউ আহত হলে বা প্রাণহানি ঘটলে এই আইনে মামলা হবে। তবে হত্যার উদ্দেশ্যে গাড়ি চালানো হয়েছে বলে মনে হলে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ৩০২ ধারায় মামলা হবে। তদন্ত করে এবং তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সাপেক্ষে নির্ধারণ করা হবে দুর্ঘটনার প্রকৃতি কী ছিল। ৩০২ ধারায় মামলা হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। আর যদি তদন্তে মনে হয়, হত্যার উদ্দেশ্যে নয়, বেপরোয়া চালানোর কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাহলে সড়ক পরিবহন আইনের ১০৩ ধারায় মামলা হবে। এই ধারায় সর্বোচ্চ ৫ বছর জেল, অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
তিনি জানান, আইনের চূড়ান্ত খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারী তাঁর দায়িত্ব বা সেবা দিতে অবহেলা করলে বা ত্রুটিপূর্ণভাবে পালনের কারণে কোনো দুর্ঘটনা হলে বা কোনো সড়কের ডিজাইন বা নির্মাণ বা রক্ষণাবেক্ষণজনিত ত্রুটির কারণে সংঘটিত দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা নির্মাণকারী বা তদারককারীর ওপর বর্তাবে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে সড়ক পরিবহন আইনে কোনো অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে প্রতিষ্ঠানের মালিক, পরিচালক, নির্বাহী কর্মকর্তা, ব্যবস্থাপক, সচিব, অন্য যেকোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী দায়ী হবেন। এ অপরাধের জন্য ব্যক্তিকে দোষী করা ছাড়াও প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করা যাবে।
১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশ সংশোধন, পরিমার্জন ও সংশোধন করে একটি আইন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২০১৩ সালে। এরপর গত বছরের ২৭ মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠকে কিছু পর্যবেক্ষণসহ আইনটি নীতিগত অনুমোদন পায়। আইনে মন্ত্রণালয়ে সড়ক পরিবহন আইনটি মতামতের জন্য পাঠালে তারা অপরাধ ও দণ্ডের বিধান পর্যালোচনা করে খসড়া আইনটি সংযোজন ও পরিমার্জনের জন্য লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের সচিবকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির প্রতিবেদন হুবহু রেখে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিষয়ে নতুন আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ব্যবহার করে জনসমক্ষে কোনো গাড়ি চালাতে পারবেন না। এ ছাড়া গণপরিবহন চালানোর জন্য আলাদা অনুমতি লাগবে। অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে বয়স ১৮ এবং পেশাদার চালকদের লাইসেন্স পেতে বয়স ২১ হতে হবে। চালকের অপরাধের জন্য ১২ পয়েন্ট বরাদ্দ থাকবে। তাঁর যেকোনো অপরাধের দোষসূচক পয়েন্ট কাটা যাবে। পয়েন্ট শেষ হলে তাঁর লাইসেন্স বাতিল হবে। কোনো অপরাধীকে লাইসেন্স দেওয়া হবে না। আর আগে দেওয়া হয়ে থাকলে তা প্রত্যাহার করা হবে। বাসচালকের সহকারী লাইসেন্স ছাড়া গাড়িতে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এ ছাড়া রেজিস্ট্রেশন ছাড়া গাড়ি চালানো যাবে না। মোটরযানের মালিকানা পরিবর্তিত হলে তা ৩০ দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
আক্রমণাত্মক আচরণ ও জনরোষ নিয়ন্ত্রণে সড়কে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে গাড়ির কোনো ক্ষতি না করার কথা বলা হয়েছে নতুন আইনে। ওই সময় চালক বা সহকারীদের ওপর কোনো আক্রমণাত্মক আচরণ করা যাবে না। দুর্ঘটনায় জড়িত মোটরযান বা মোটরযানের যাত্রী বা ঘটনাস্থলে সমবেত হয়ে জনশৃঙ্খলাপরিপন্থী কোনো ধরনের আচরণ করতে পারবে না। কোনো সংগঠনের ব্যানারেও এসব আচরণ করা যাবে না।
যানবাহন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বলা হয়েছে, সরকার যেকোনো এলাকায় যেকোনো শ্রেণির মোটরযান চলাচল নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। টার্মিনালে কোনো গাড়ি প্রবেশ বা বের হওয়ার সময় বা কোনো সড়কে চলাচলের সময় তার কাছ থেকে কোনো চাঁদা আদায় করা যাবে না।
আইনে সড়কের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী ব্যক্তি বা পরিবার বা প্রতিষ্ঠান বা কোনো এলাকার জন্য মোটরযান রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা বা সীমা নির্ধারণ করার বিধান রাখা হয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি বা সমমানের যোগ্যতা থাকতে হবে। চালকের সিটবেল্ট বাঁধা, চালকের মুঠোফোন বা অনুরূপ সরঞ্জাম ব্যবহার না করা, বিপরীত দিক থেকে মোটরযান না চালানো এবং প্রতিবন্ধীবান্ধব মোটরযান প্রবর্তন করার বিধান রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া মোটরযানের মালিকদের সুবিধার্থে বিআরটিএর যেকোনো শাখায় রেজিস্ট্রেশন বা নবায়ন দেওয়ার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মোটরযান ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুল পরিচালনা করতে পারবে না।
আইনে বলা হয়েছে, কোনো পোশাকধারী পুলিশের সামনে কোনো চালক অপরাধ করলে তিনি পরোয়ানা ছাড়াই ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন এবং জরিমানা করতে পারবেন।