খুলনায় কোরবানির পশু সংকটের আশঙ্কা

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

 

খুলনা: আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আযহায় কোরবানির জন্য খুলনার পশু সংকটের আশঙ্কা করছেন খামারিরা। ঈদকে ঘিরে খুলনার বিভিন্নখামারে ৩৬ হাজার ৯১৫টি পশু লালন-পালন করা হয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় অর্ধেক বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, আসন্ন ঈদে খুলনায় পশুর চাহিদা আছে প্রায় ৮০ হাজার টি। সুতরাং সে হিসেবে খুলনায় কোরবানির অর্ধেকের বেশি চাহিদা আমদানি করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, মূলত লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্য সংকট, চিংড়ি ও কাঁকড়ার ঘেরের কারণে গবাদিপশুর চারণভূমি কমে যাওয়া, পশু খাদ্যেরদাম বৃদ্ধি এবং পরপর দু’বছর পশুর ন্যয্য দাম না পাওয়ায় পশু পালনে আগ্রহ হারিয়েছেন খুলনার খামারিরা।

মাঠ পর্যায়ের খামারিরা জানান, খুলনার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও গরু ও ছাগল মোটাতাজাকরণ মনিটরিং করছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। কোরবানি ঈদ উপলক্ষ্যে খুলনা জেলায় ৩৬ হাজার ৯১৫টি গরু ও ছাগল  লালন-পালন হচ্ছে। গত বছর খুলনায় ৮০ হাজার গবাদিপশু কোরবানি হয়।খুলনার পাইকগাছা, ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি কোরবানির পশু মোটাতাজাকরণ হচ্ছে। তবে লবণাক্ততা বাড়ার কারণেখুলনার নয় উপজেলায় খাদ্যের সংকট রয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালে খুলনায় ৬০ হাজার ৫১৯টি গরু এবং ৫১ হাজার ৮৪৬টি ছাগল ও ভেড়া, ২০১৭সালে ৪৩ হাজার ৪৪০টি গরু এবং ৩৬ হাজার ৫০৭টি ছাগল-ভেড়া কোরবানি দেওয়া হয়। কিন্তু আসন্ন ঈদে কোরবানির জন্য ২১ হাজার৩৯০টি গরু এবং ১৪ হাজার ৯৮৫টি ছাগল ও ভেড়া পালন করেছেন খামারিরা। ঘাটতি পূরণে নড়াইলের কালিয়া ও যশোরের অভয়নগর মনিরামপুর থেকে কোরবানির পশু আনা হবে বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

মহানগরী ছাড়া পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, ফুলতলা, তেরখাদা, দিঘলিয়া, রূপসা, দাকোপ, কয়রা ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় আট হাজার ৯০ জনখামারি পশু মোটাতাজাকরণ করছে। নিরাপদ মাংস সরবরাহের জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগ খামারিদের পরামর্শ দিচ্ছেন।

বটিয়াঘাটার খামারি মাসুদ হাসান বলেন, ‘ভারত থেকে গরুর আসায় দেশি গরুর দাম কমে যায়। এতে গত দু’বছরে খামারিদের লোকসানগুনতে হয়েছে। এবারও ভারত থেকে কোরবানির পশু আমদানি করা হবে বলে মনে করেন খামারিরা। তাই আমরা পশু পালন কমিয়ে দিয়েছি। এখন দেশি খামারিদের স্বার্থ রক্ষা ও নিরাপদ মাংশের জন্যে ভারত থেকে কোরবানির পশু আনা বন্ধ করতে হবে। আর এ জন্য প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।’

ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলার ধামালিয়া, রঘুনাথপুর, খর্নিয়া, শাহাপুর, আটলিয়া ওমাগুরঘোনা গ্রামে নিরাপদে পশু মোটাতাজাকরণ হচ্ছে। উপজেলার কোরবানির চাহিদা পূরণে অন্য স্থান থেকেও গরু ও ছাগল আসবে।’

বটিয়াঘাটা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. স্বপন কুমার রায় বলেন, ‘জলমা, সুরখালি ও ভান্ডারকোট এলাকায় পশু মোটাতাজাকরণহচ্ছে। উপজেলায় প্রায় চার হাজার গবাদিপশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। খারাবাদ-বাইনতলা হাট, প্রগতি মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বর ওজিরোপয়েন্ট এলাকায় পশুর হাট বসবে।’

জানা গেছে, খুলনার সবচেয়ে বড় পশুর হাট বসবে মহানগরীর জোড়াগেট, ডুমুরিয়ার শাহাপুর, খর্নিয়া, আঠারো মাইল, দাকোপের বাজুয়া, পাইকগাছার চাঁদখালী, কাছিকাটা ও তেরখাদা উপজেলার ইখড়ি-কাটেঙ্গায়।

এদিকে, কোরবানি ঈদ উপলক্ষ্যে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) আয়োজনে নগরীর জোড়াগেটে পশুর হাট বসানো হবে। আগামী ১৬আগস্ট থেকে ওই হাট শুরু হবে। সেখানের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধার্থে জালটাকা শনাক্তকরণের ব্যবস্থা, হাটে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করা, হাট এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার করা, মহানগরী এলাকা থেকে অবৈধপশুর হাট উচ্ছেদ করবে কেসিসি।

 

প্রসঙ্গত, কেসিসি’র একমাত্র পশুর হাটটি ইজারার জন্য এর আগে তিন দফা দরপত্র আহ্বান করলেও কেউ সাড়া দেয়নি। এজন্য কেসিসিনিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ওই পশুর হাট পরিচালনা করবে।