গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম  
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা: নিরাপদ সড়কসহ বিভিন্ন দাবিতে ঢাকার রাজপথ দখল করে আন্দোলনকারী স্কুল শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে ঘরে ফিরেছে। আন্দোলনের ধকল কাটিয়ে ঢাকার রাস্তাও চিরচেনা রূপ ফিরে পাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা নিরাপদে পড়ার টেবিলে ফিরে যাওয়ায় স্বস্তিতে রয়েছে সরকার। তবে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে উস্কানিদাতাদের খুঁজে বের করতে চায় সরকার। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন যারা সহিংস করে তুলেছিল তাদের খুঁজে বের করতে ইতোমধ্যে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে কাঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সরকারের নির্দেশে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট, সিআইডি, ডিবিসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে। আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে সরকার দলীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানিয়েছে, সাইবার ক্রাইম ইউনিটের পাশাপাশি সিআইডি ইতোমধ্যে শতাধিক ফেসবুক ও টুইটার অ্যাকাউন্টের এডমিনদের চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে কয়েকজন অভিনয় শিল্পীও আছেন। তাদের গতিবিধির ওপর কড়া নজরদারি করা হচ্ছে।

পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, মৃত্যু, চোখ উপড়ে ফেলা ও ধর্ষণের মতো মিথ্যা তথ্য প্রচার করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে যারা সহিংস করে তুলেছিল তাদের খুঁজে বের করার কাজ চলছে। এ জন্য তারা প্রাথমিকভাবে দুইশ ফেসবুক অ্যাকাউন্টসকে সন্দেহ করেছিল। কিন্তু গত দু’দিনের তদন্তের পর এখন এই সংখ্যা কমে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

পুলিশের মতে, এই অ্যাকাউন্টসগুলো পর্যালোচনা করে তারা এখন উস্কানিমূলক তথ্য প্রচারকারী ও গুজব রটনাকারীদের খুঁজে বের করবেন। এসবের মধ্যে রয়েছে ফেসবুক পেইজ, ফেসবুক ও টুইটারে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টস এবং কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

এদিকে অনলাইনে মিথ্যাচার ও গুজব সৃষ্টিকারী বিভিন্ন ফেসবুক আইডি, পেজ, অনলাইন নিউজ পোর্টালের তথ্য সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। গত মঙ্গলবার (৭ আগস্ট) বিকালে ছাত্রলীগের নেতারা গুজব সৃষ্টিকারীদের একটি প্রাথমিক তালিকা ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটিমন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের হাতে তুলে দেন। এসময় তারা শনাক্ত হওয়া আইডিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘শুধু সড়ক আন্দোলন নয়, কোটা সংস্কার কিংবা ভ্যাট বিরোধী অন্দোলনের সময়ও আমরা দেখেছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যগুলোতে বিভিন্ন ফেক আইডি খুলে সরকারবিরোধী প্রোপাগান্ডা চালানো হয়েছে। এসব আইডির মাধ্যমে ভয়ঙ্কর গুজবও ছড়ানো হয়েছে। তাই আমরা মন্ত্রীকে সাইবার ক্রাইমের বিষয়গুলো জানিয়েছি। গুজবসৃষ্টিকারীদের খুঁজে বের করতে প্রয়োজনে আমরা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজি) সঙ্গেও কথা বলবো। 

জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে ২৮টি ফেসবুক আইডির বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, এসব আইডিগুলো থেকে মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রকাশ করে কোমলতি শিশুদের মনকে নষ্ট করা হয়েছে এবং তাদের খারাপ কাজের জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। আইডিগুলোর মধ্যে রয়েছে- জুম বাংলা নিউজ পোর্টাল, বিএনপি সমর্থক গোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদ, অ্যাক্সিডেন্ট নিউজ, বাংলামেইল ৭১, বাঁশেরকেল্লা, ফাইট ফর সারভাইভার্স রাইট, ফাঁকিবাজ লিংক, আন্দোলন নিউজ। এছাড়া টুইটার আইডিগুলোর মধ্যে রয়েছে- রানা মাসুম-১, নওরিন-০৭, দিপু খান বিএনপি, ইদ্রিস হোসেইন, এম আল আমিন-৯৯, বিপ্লবী কাজী, নাসিফ ওয়াহিদ ফায়জাল ইত্যাদি।

এ বিষয়ে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল ইসলাম বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় আন্দোলনের আহ্বান করা গণতান্ত্রিক বিষয়। কিন্তু কিছুলোক যখন মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে ফেসবুকের অপব্যবহার করে এবং সহিংসতায় প্ররোচণা দেয়, তখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াটা জরুরি হয়ে পড়ে। শনাক্ত করা আইডিগুলোর অ্যাডমিনদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে অপরাধের ধরন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানা গেছে, ইতোমধ্যে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গত শনিবার (৪ আগস্ট) অভিনেত্রী নওশাবাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এখন তাদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। একই অভিযোগে গত মঙ্গলবার রাতে আকতারুজ্জামান টনি (২২), আসাদুল্লাহ আল গালিব (২২) ও মুনইন সরকার (২৩) এবং গত বুধবার (৮ আগস্ট) তৌহিদুল ইসলাম তুষার (২৪), ওয়ালিউল্লাহ (২৮) এবং ইহসান উদ্দিন ইফাজকে (১৮) গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় তাদের অনেকের কাছ থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ, ফেসবুক আইডি ও গ্রুপ আইডি জব্দ করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশ ও পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরা উষ্কানির নেপথ্যে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা- সেটা খুঁজে বের করতে গ্রেফতার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন।

এসব বিষয়ে কথা বলতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। তবে আন্দোলনে উস্কানি ও গুজব ছড়ানোর বিষয়ে গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘গোয়েন্দা ও সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্যানুযায়ী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে পলিটিসাইজ করার চেষ্টা করা হয়েছে। ছাত্রদের স্কুল ড্রেসের বিক্রি ও বানানোর হিড়িক লেগেছে। যারা এসব কাজ করছে তাদের আমরা চিহ্নিত করেছি। এদের আইনের আওতায় আনা এখন সময়ের ব্যাপার।’