গাবতলী পশুর হাটে ঈদ আমেজ
গাবতলী পশুর হাট ঘুরে: মুসলমানদের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহার আর মাত্র ৫ দিন বাকি। এ ঈদকে সামনে রেখে ঢাকাসহ সারাদেশে চলছে গরু, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এমনকি উটের বেচাকেনা। আল্লাহর নৈকট্য ও তার সন্তুষ্টি লাভের আশায় মুসলমানরা এসব পশু কোরবানি করে থাকেন। ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর গাবতলীতে বসেছে সর্ববৃহৎ পশুর হাট। যেখানে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ট্রাক, লরি, নছিমন, লঞ্চ বা ট্রলারে করে পশু নিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে পশুগুলোকে পায়ে হাঁটিয়েই আনা হচ্ছে। একটু বেশি দামে বিক্রির আশায় অনেক গৃহস্থ নিজেই পশু নিয়ে হাটে উপস্থিত হচ্ছেন। তবে অধিকাংশ পশুই এসেছে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে।
বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) গাবতলী পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে গরুর সংখ্যা বেশি, দামেও রয়েছে ভিন্নতা। সর্বনিম্ন ৪৫ হাজার থেকে শুরু করে ২০ লাখ টাকা দামের গরু রয়েছে। রং, প্রজাতি, আকারভেদে দাম হাঁকছেন ব্যবসায়ীরা। তবে গাঢ় উজ্জ্বল রংয়ের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এহাটে দেশি গরুর পাশাপাশি রয়েছে অস্ট্রেলিয়ান, শ্রীলঙ্কানসহ নানা প্রজাতির গরু। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ও উট।
হাটের একপাশে দেশি ছাগল সারিবদ্ধভাবে বেঁধে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। ফুলচাঁদ নামে এক ব্যবসায়ী বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘কুমিল্লা থেকে আসা একজোড়া ছাগল বিক্রি হয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার টাকায়। এছাড়াও বাজারে আসা ছাগলের গড় দাম ১৮-২০ হাজার টাকা।’
ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পশু আনা হলেও এখনও ক্রেতাদের সমাগম শুরু হয়নি। ফলে তাদের অলস সময় পার করতে হচ্ছে। দু’একজন ক্রেতা এসে দরদাম করছেন, কিন্তু পশু না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন। তবে তারা আশা করেন ঈদের দু’দিন আগে বেচাবিক্রি বাড়বে। বিশেষ করে চাঁদ রাতে সবচেয়ে বেশি পশু বিক্রি হবে। তখন এমন অবস্থা হয় যে, ক্রেতা থাকেন কিন্তু পশুর যোগান থাকে না।
গাবতলীর হাটে ঘুরে ঘুরে পশু দেখছিলেন ধানমন্ডির বাসিন্দা আসলাম পারভেজ। তিনি বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘দামদর যাচাই করতে এসেছিলাম। গরু রাখার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। তাই আগেভাগে কেনারও সুযোগ নেই। কুরবানির আগের রাতে কিনবো, যাতে রাস্তায় বেঁধে রেখে পরেরদিন কুরবানি দেয়া যায়।’
এদিকে, হাটের মধ্যে বাড়তি চাপ এড়াতে আশপাশের এলাকায় বাঁশ, চট, রশি দিয়ে চলছে ছাউনি নির্মাণের কাজ। নির্মাণ শ্রমিকদের দাবি, শনিবার থেকে বাজারে পশু ও ক্রেতাদের চাপ বাড়বে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আরও পশু আনা হবে। হাটে পা ফেলানোর জায়গা থাকবে না। তাই আগেভাগেই প্রস্তুতি চলছে।’
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আকর্ষণীয় গরু ও উটের প্রতি শিশুদের উৎসাহ উদ্দীপনার কমতি নেই। বাজারে বড় গরু আনা হলেই শিশুরা ভিড় করছে, ছুটছে পিছু পিছু। স্কুল শেষে রাজধানীর মিরপুর থেকে গাবতলী পশুর হাটে ঘুরতে এসেছে জিসান, ইয়াসিন ও তাওহীদ নামে তিন বন্ধু। তারা বার্তা২৪.কম’কে জানায়, হাটে তারা ঘুরতে এসেছে। অনেক বড় বড় গরু, উট, দুম্বা দেখেছি।
এদিকে পশু সাজানোর জন্য মালা, কলাপাতা, টাই, ঘন্টি, আয়নার মালা, জরির মালার পসরা সাজিয়ে বসেছেন অনেকে। ঈমান হোসেন নামে এক বিক্রেতা জানান, কুরবানির পশু সাজানোর জন্য বিভিন্ন জিনিস নিয়ে বসেছেন। সৌখিন ক্রেতারা পছন্দের গরু ছাগল কিনে সাজিয়ে নেন মনের মতো করে। এসব পণ্য সর্বনিম্ন ৮ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
এছাড়াও কুরবানির হাটকে ঘিরে গড়ে উঠেছে স্থায়ী-অস্থায়ী খাবার হোটেল। এসব হোটেলে দিনরাত চলছে রান্নাবান্না। গরু ব্যবসায়ীরাই এসব হোটেলের মূল কাস্টমার। অস্থায়ী হোটেলের মলিক আফসার উদ্দিন বলেন, ‘কুরবানির পশু বিক্রি করতে অনেক ব্যবসায়ী আসেন এই হাটে। তখন এসব ব্যবসায়ীদের খাবার সংকট দেখা দেয়। তাই এই অস্থায়ী হোটেল দিয়েছি। হোটেলে সাতজন কর্মচারিও রেখেছি।’
অন্যদিকে, হাট এলাকায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ বিষয়ে দারুস সালাম থানার অপারেশন কর্মকর্তা জাহানুর বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। সেখান থেকে টহল দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাট এলাকায় এখনও পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি কিংবা অভিযোগও আসেনি।’
ছবি: শাহরিয়ার তামিম