প্রথম পর্ব
নির্ধারিত দামে চামড়া কিনতে চান না আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা
আসন্ন কোরবানির ঈদে মন্ত্রণালয়ের নির্ধারণ করে দেওয়া দামে গরু ও মহিষের চামড়া কিনতে চান না দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর চামড়ার মোকাম নাটোরের চকবৈদ্যনাথের আড়তদার ও স্থানীয় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে তারা পৃথক যুক্তি দেখিয়েছেন তারা।
আড়তদারদের দাবি, নির্ধারিত দামে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে চামড়া বিক্রি করতে চান না। আর ব্যবসায়ীদের দাবি, চরম প্রতিযোগিতা থাকায় আড়তদাররাই নির্ধারিত দামে চামড়া নিতে চান না।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর বাইরে প্রতি বর্গফুট গরু ও মহিষের কাঁচা চামড়া ৩৫-৪০ টাকা, খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮-২০ টাকা ও বকরির চামড়া ১৩-১৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। এ ঘোষণা আসার পর বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-এর কাছে পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া জানান চকবৈদ্যনাথ মোকামের আড়তদার ও জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মৌসুমি কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীরা।
গুরুদাসপুর উপজেলার চাচকৈরের মৌসুমি ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান জানান, সরকার কাঁচা চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেই দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়। কারণ কোরবানিদাতারা ভালো দাম চান, যা তাৎক্ষণিকভাবে দর কষাকষির মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। বেশি দামে কিনে কম দামে চামড়া বিক্রি সম্ভব নয়।
সদর উপজেলার মৌসুমি ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দীন জানান, চামড়া যে দামেই কেনা হোক না কেন, আড়তে বিক্রির আগ পর্যন্ত নিজস্ব উদ্যোগে প্রক্রিয়াজাত করতে হয়। ফলে প্রক্রিয়াজাত ব্যয় চামড়ার ক্রয়মূল্যের সঙ্গে যোগ করে আড়তে বিক্রি করতে হয়। এক্ষেত্রে কতদিন নিজস্ব উদ্যোগে চামড়া সংরক্ষণ করতে হবে তা অনিশ্চিত। কাজেই এসব খরচের বিপরীতে প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়া সর্বোচ্চ ৪০ টাকায় বিক্রি করা মানে নিজের পুঁজি হারানো।
লালপুরের বিলমাড়িয়া মৌসুমি ব্যবসায়ী আব্বাস আলী জানান, খাসির চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে তারা হতাশ। খাসির চামড়া ছাড়ানোর সময় যে সতর্কতার মেনে চলা প্রয়োজন, তা অনেকেই মেনে চলেন না। ফলে চামড়াটি বিক্রির অযোগ্য হয়ে যায়। চামড়া সংগ্রহ থেকে শুরু করে সংরক্ষণ ব্যয় যোগ করার পর সরকারের নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি সম্ভব হয় না।
অপরদিকে আড়তদাররাও নির্ধারিত দামে চামড়া সংগ্রহের অপারগতা প্রকাশ করেছেন। প্রতিবছর নির্ধারিত দরে চামড়া সংগ্রহে অস্বস্তি ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হতে হয় বলে দাবি তাদের।
জেলার আড়ৎদারদের সংগঠন চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের উপদেষ্টা মনজুরুল ইসলাম জানান, কোরবানির আগে চামড়ার সংগ্রহ মূল্য কমিয়ে দেয়া হয়। এ মূল্য অনুসরণ করে চামড়া কেনা যায় না। ভালো দাম পেতে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া বিক্রি না করে সংরক্ষণ করলে বাজারে সংকট দেখা দেয়। তখন আড়তদাররা জিম্মি হয়ে পড়ে।
জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি শরিফুল ইসলাম জানান, চামড়া সংগ্রহের নির্ধারিত মূল্য বাজারে কোনো প্রভাব ফেলে না। তাই এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের চিন্তার সুযোগ নেই। ব্যবসায় টিকিয়ে রাখতে হলে নির্ধারিত দর অতিক্রম করেই চামড়া কিনতে হয়। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়ার বড় একটি অংশ সরবরাহ করেন, তাই তাদের সিদ্ধান্তই বাজারে প্রতিফলিত হয়।