বাংলা ব্যাকরণের প্রথম প্রণেতা ঢাকার পর্তুগিজ!



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

একজন বিদেশি প্রথম অনুধাবন করেন সুশৃঙ্খল, শুদ্ধ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাংলা ভাষা চর্চার প্রয়োজনীয়তা। আদর্শ মানের ভাষা চর্চা ও ব্যবহারে জন্য যে ব্যাকরণ বা গ্রামারের প্রয়োজন, তা তিনি বুঝেছিলেন। বাংলা ভাষার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন সেই বিদেশি বাংলা প্রেমিক, জাতিতে যিনি ছিলেন পর্তুগিজ। কাজটি তিনি করেছিলেন ঢাকার কাছেই ভাওয়াল অঞ্চলে, ১৭৩৪ সালে।

ভাষা চর্চার জন্য অভিধান আর ব্যাকরণের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাকরণকে বলা হয়ে থাকে ভাষার হাতিয়ার। নিয়ম-রীতি জেনে সঠিকভাবে ভাষা চর্চা করতে হলে ব্যাকরণ জানতে হবেই। হাতিয়ার ছাড়া যেমন কোনো কাজ করা সম্ভব নয়, ব্যাকরণ ছাড়া তেমনি শুদ্ধভাবে ভাষা চর্চা করা অসম্ভব।

আসলে ব্যাকরণ হচ্ছে ভাষা ব্যবহার ও প্রয়োগের নিয়মবিধি। ভাষা ব্যবহারে শৃঙ্খলা ও নিয়ম বজায় রাখার কাজটি করে ব্যাকরণ। বাক্য, শব্দ, পদ, লিঙ্গ ইত্যাদি আরো নানা কিছুর সঠিক নির্দেশনা ব্যাকরণে পাওয়া যায়।

বিভিন্ন ভাষা যেমন পার্থক্য ও বৈচিত্র্যপূর্ণ, সেসব ভাষার ব্যাকরণও তেমনি আলাদা। বাংলা ভাষা যেসব নিয়ম-রীতি মান্য করে, স্প্যানিশ বা আরবি তেমন নয়। ভাষা ভেদে ব্যাকরণও পৃথক বা আলাদা হয়। 

বাংলা ভাষার নিজস্ব ব্যাকরণের ইতিহাস খুব বেশি প্রাচীন নয়। মুঘল আমলের ক্ষয়িষ্ণু সময়ে বাংলায় বিদেশি বণিক ও ধর্মযাজকদের বিকাশের আমলেই প্রথাগত ব্যাকরণ রচনার সূত্রপাত ঘটে। বিদেশিরা এদেশে এসে ব্যবসা-বাণিজ্য, কাজ-কর্ম করার প্রয়োজনে ভাষা শেখার তাগিদ অনুভব করেন। তখন তারা স্বদেশিদের এদেশে কাজের উপযোগী করার প্রয়েোজনে বাংলা শেখানোর জন্য ম্যানুয়েল আকারে ব্যাকরণ প্রণয়ন শুরু করেন। 

রাজনৈতিক দিক দিয়ে নাজুক ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে বহিরাগত ইউরোপীয় শক্তির মধ্যে ইংরেজরা ক্ষমতা কব্জা করে। ইংরেজরা বাংলা তথা ভারত দখল করে নানা কিছু করলেও ব্যাকরণ রচনায় প্রথমে আসে একজন পতুর্গিজের নাম।

পতুর্গিজ পাদ্রি মনোএল দ্য আসসুম্পসাউ ঢাকার দক্ষিণে ভাওয়াল এলাকার নাগরী নামক খ্রিস্টান পল্লীতে ১৭৩৪ সালে পতুর্গিজ ভাষায় রচনা করেন বাংলা ব্যাকরণ। তার গ্রন্থের দুটি অংশ ছিল। একটি ব্যাকরণ, অন্যটি পর্তুগিজ-বাংলা ও বাংলা-পতুর্গিজ অভিধান।

মনোএল-এর কাজটি এদেশে ছাপার সুযোগ সে আমলে ছিল না। তখন সবে মাত্র প্রেস আবিষ্কৃত হয়েছে এবং সামান্য কয়েকটি প্রেস আছে ইউরোপের কিছু দেশে। ফলে ঢাকায় বসে রচনা করা হলেও দশ বছর পর ১৭৪৩ সালে পতুর্গালের রাজধানী লিসবন থেকে সেটি রোমান হরফে ছাপা হয়। কারণ বাংলা হরফ বা টাইপ তখন ছিল কল্পনার বিষয়। 

বাংলা ভাষার দ্বিতীয় ব্যাকরণ গ্রন্থের প্রণেতাও একজন বিদেশি। তার নাম নাথানিয়েল ব্র্যাসি হলহেড। পর্তুগিজ মনোএল-এর ৩৫ বছর পর ১৭৭৮ সালে হলহেড যে ব্যাকরণ গ্রন্থ প্রকাশ করেন, তা উপমহাদেশের মুদ্রণ ইতিহাসের স্মরণীয় অংশ। কারণ বইটি এদেশে ছাপা হয় এবং এটি মূলত ইংরেজি ভাষায় রচিত হলেও উদাহরণ স্বরূপ কিছু বাংলা হরফও এতে ছাপা হয়। 

কোনো পুস্তকে প্রথম বারের মতো বাংলা হরফ ছাপানোর কৃতিত্বটিও এখানে দেখা যায়। হলহেডের বইয়ের হাত ধরে সর্বপ্রথম মুদ্রিত হয় বাংলা অক্ষর। এজন্য বাংলা হরফগুলো ছাপার উপযোগী কাঠের ব্লক বানিয়ে ছিলেন চার্লস উইলকিনসন ও পঞ্চানন কর্মকার। 

পুরো আঠারো শতকে এই দুটি নমুনা ছাড়া ব্যাকরণ রচনার অগ্রগতির ক্ষেত্রে আর কোনো উদাহরণ দেখতে পাওয়া যায় না। পরের শতকে ব্যাকরণ চর্চার পরিস্থিতি বেশ অগ্রসর হয়। ফলে উনিশ শতকে বাংলা ব্যাকরণ লেখার অনেকগুলো নমুনা দেখা যায়। এর কিছু ব্যাকরণ বিদেশি লেখকদের দ্বারা ইংরেজি ভাষায় রচিত। বাকীগুলো স্থানীয় পণ্ডিতদের দ্বারা প্রণীত। 

সে সময়ের শাসক ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া কলকাতার অদূরে শ্রীরামপুরে প্রতিষ্ঠিত পাদ্রি উইলিয়ার কেরির ছাপাখানাও বাংলা মুদ্রণ এবং ব্যাকরণ চর্চায় ঐতিহাসিক অবদান রাখে।

অবশ্য এসব কাজে তাদের উৎসাহের অন্তর্নিহিত কারণ অকৃত্রিম বাংলা ভাষা প্রেম নয়, তা ছিল (১) রাজনৈতিক ও প্রশাসনের প্রয়োজনে, (২) ব্যবসা-বাণিজ্য-অর্থনৈতিক স্বার্তগত প্রয়োজনে, এবং (৩) খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারের প্রয়োজনে।

ইংরেজ আমলে বিদেশি লেখক ও সংস্কৃত পণ্ডিতদের দ্বারা প্রণীত ব্যাকরণ ল্যাটিন এবং সংস্কৃত ভাষার রীতি মেনে রচিত এবং বাংলাকে সে ধাঁচে ফেলে আলোচনা করা হয়। ফলে অনেক কঠিন নিয়ম তখন বাংলা ব্যবহারে চাপিয়ে দেওয়া হয়। শব্দ গঠন, বাক্য গঠনে বিদ্যমান থাকে অনেক প্রাচীন রীতি। ক্রমে ক্রমে ভাষা ব্যবহার বিধিতে জটিলতা এড়িয়ে অনেক নিয়ম সহজ করা হয়, যা এখনো হচ্ছে।

ব্যাকরণ যেমন ভাষা ব্যবহারের নিয়ম নির্ধারণ করে, তেমনি মানুষ ও সমাজ তাদের ভাষা চর্চায় দীর্ঘকাল যাবত অন্তর্ভুক্ত অনেক কিছুকেই ব্যাকরণ-সিদ্ধ করে নেয়। ফলে ব্যাকরণকে অনঢ় বা স্থবির হলে চলে না। কিংবা উপর থেকে চাপিয়ে দিলেও কাজ হয় না। ব্যাকরণকে মানুষ ও সমাজে প্রচলিত ভাষার গতি-প্রকৃতি ও মনোভাবটিকেও আত্মস্থ করতে হয়। এ কারণেই ব্যাকরণ একটি জীবন্ত ভাষার জন্য নিজেকে জীবন্ত রাখতে বাধ্য হয়। সময় সময় নানা পরিবর্তন ও অদল-বদল মেনে নিতেও হয় ব্যাকরণকে।

ঢাকায় ভাষা আন্দোলনের কারণে এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলা ভাষার যেমন অভূতপূর্ব বিকাশ সাধিত হয়েছে, তেমনি ব্যাকরণেও বিদেশি প্রভাব অনেকাংশে লুপ্ত হয়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তরফে ভাষা চর্চার নির্দেশনামূলক সহজ ও বোধগম্য ব্যাকরণ প্রণীত হচ্ছে। এখন হাতের কাছে পাওয়া যাচ্ছে একাধিক ব্যাকরণ গ্রন্থ। ইচ্ছে করলেই যে কেউ ব্যাকরণ অনুসরণ করে পরিশীলিত ও শুদ্ধ বাংলা চর্চা করতে পারেন।

   

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;