তৈমুর লঙ : ঘোড়ার পিঠে বিশ্ববিজয় (পর্ব-২)



আহমেদ দীন রুমি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
অভিযান থেকে ফিরে এসেই শুরু করেছেন নতুন অভিযান

অভিযান থেকে ফিরে এসেই শুরু করেছেন নতুন অভিযান

  • Font increase
  • Font Decrease

 ● পর্ব-১ পড়তে ক্লিক করুন

১৩৮৬ সাল। ক্ষমতায় আরোহণের দেড় দশক পেরিয়ে গেছে তৈমুরের। একসময়ের সর্বস্বহারা যাযাবর ব্যক্তিটি নিজের যোগ্যতা দিয়ে পরিণত হয়েছেন ছোটখাটো এক রাজ্যের অধিপতিতে। কিন্তু অল্পে তুষ্ট হওয়া তৈমুরের স্বভাবে ছিল না। তাই পুনরায় অভিযানে বের হলেন। রক্তাক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলো আজারবাইজান এবং জর্জিয়ার ওপর। হাতে এলো গিলান, শিরওয়ান এবং লেসজিওয়ানের মতো পার্শ্ববর্তী বহু অঞ্চল।

কারা কুয়ুনলু বংশের ক্ষমতা তখন কারা ইউসুফের হাতে; রাজধানী ভ্যান। অপরিণামদর্শী এই শাসক তৈমুরের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে তৈমুর তাকে পরাজিত করে রাজধানী দখল করেন। কারা ইউসুফ পলায়ন করে আশ্রয় নেয় অটোম্যান সুলতান প্রথম বায়েজিদের দরবারে। তৈমুর কিন্তু থেমে থাকলেন না। তৎকালীন মুজাফফারীয় বংশ শাসন করছিল ফারস্- অঞ্চলকে কেন্দ্র করে। শাসনকর্তা জয়নুল আবেদিনকে বশ্যতা স্বীকার করার আহবান জানিয়ে পত্র প্রেরণ করলেন তৈমুর।

নিষ্ঠুরতার অবতার

জয়নুল আবেদিন তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটি মনে হয় এবার করলেন। তিনি তৈমুরের দূতকে বন্দী করে রাখলেন। অপমান মনে করে তৈমুর আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিলেন মূল নগরী ইসপাহান। একরকম বিনাযুদ্ধে দখল করে নিলেন তা। বাড়িয়ে দিলেন করের পরিমাণ; কিন্তু শীঘ্রই বিদ্রোহী হয়ে উঠল জনগণ। অতর্কিত আক্রমণে হত্যা করা হলো তৈমুরের তিন হাজার সৈন্যকে। নিহতদের মাঝে তৈমুরের প্রিয় আমীরও ছিলেন।

যুদ্ধের মাঠে তৈমুরের নিষ্ঠুরতা প্রবাদকেও হার মানায়


ক্ষোভে উন্মত্ত হয়ে উঠলেন তৈমুর। বের করলেন তার সবচেয়ে নৃশংস রূপ; যা ইতিহাসে ভীতি তৈরি করে রেখেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। প্রত্যেকটি সৈন্যকে নির্দেশ দেয়া হলো, খণ্ডিত মাথা নিয়ে ফিরে আসতে। অনুগত সৈন্যরা ঝাঁপিয়ে পড়ল ইসপাহানবাসীর ওপর। চলল নির্বিচার গণহত্যা। এই হত্যাকাণ্ডে প্রায় সত্তর হাজার ইসপাহানবাসী নিহত হন। মৃতের মাথা দিয়ে তৈরি করা হলো সুউচ্চ মিনার। প্রতিশোধ নিয়ে তৈমুর উদাহরণ সৃষ্টি করলেন—তার সাথে টক্কর দেবার পরিণাম কেমন হতে পারে।

হাফিজ ও তৈমুর: কবি বনাম সম্রাট

নৃশংসতা দেখে ভয়ে মাজাফফারীয় বংশের সকল যুবরাজ আত্মসমর্পণ করল। কেবল শাহ মানসুর পালিয়ে আত্মগোপন করতে সমর্থ হয়। তৈমুর সেখান থেকেই রওনা হলেন সিরাজ দখল করার প্রত্যাশায়। একরকম বিনা বাধায় নিয়ন্ত্রণে এলো সিরাজ। মসজিদে মসজিদে শুক্রবারে তার নামে পঠিত হতে থাকল খোৎবা। ঠিক এই সময়েই দেখা মেলে বিখ্যাত কবি হাফিজের। প্রচলিত আছে, হাফিজের একটি কবিতার প্রতি তৈমুর আকৃষ্ট হয়ে তাকে দরবারে আহবান করেন। কবিতাটি ছিল—
“আগার আঁতুরকে সিরাজী বাদসত্ আরাদ্ দেলে মারা,
বাখালে হিন্দুয়াশ বো বোখশাস্ সমরকন্দ ও বুখারা রা;”
বা,
“সিরাজবাসিনী প্রিয়ার গালের ছোট্ট এক তিলের তরে
বোখরা-সমরকন্দ রাজ্য নির্দ্বিধাতে আসব ছেড়ে।”

ফারসি সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা কবি হাফিজ


তৈমুর হাফিজের প্রতি কটাক্ষের চাহনিতে বলেছিলেন—“আমি এত যুদ্ধ আর এত রক্ত ঝরিয়ে বোখরা আর সমরকন্দকে প্রতিষ্ঠিত করেছি অপার সৌন্দর্য দিয়ে। আর তুমি কিনা কোথাকার কোন মেয়ের জন্য এই সবকে অপমান করো কবিতায়!” হাফিজ পরিস্থিতি টের পেয়ে অসংকোচে বললেন, “দূরদৃষ্টিহীনতার জন্যই তো আজ আমার এই দুর্দশা। এজন্যই আপনি রাজা আর আমি কবি।” বুদ্ধিদীপ্ত জবাবে তৈমুর চমৎকৃত হয়ে তাকে পুরস্কৃত করলেন।

চোখ এবার রাশিয়ায়

পারস্য বিজয় সম্পন্ন হলে তৈমুরের নজর পড়ল গোল্ডেন হোর্ড সাম্রাজ্যের দিকে। ঠিক এই সময়টাতে গোল্ডেন হোর্ডের শাসক ছিলেন মামাই। অন্যদিকে হোয়াইট হোর্ডের শাসনকর্তা ছিলেন উরুস খান। তৈমুর একটা সুযোগ খুঁজছিলেন মাত্র। সেই সুযোগটাই এনে দিল ক্রিমিয়ার মোঙ্গল সামন্তরাজ তকতামিস। গোল্ডেন হোর্ড থেকে পালিয়ে এসে তিনি তৈমুরের আশ্রয় আর সহযোগিতা চাইলেন।

চেঙ্গিস খানের এই বংশধরকে তৈমুর প্রথমে আশ্রয় দিলেন; অতঃপর উরুস খানের দখল থেকে উদ্ধার করতে সাহায্য করলেন। পরপর দুইবার সংঘর্ষ চালিয়েও তকতামিস তার কাছে পরাজিত হয়েছিল। তবে ইতোমধ্যে উরুস খানের মৃত্যু ঘটলে তকতামিসই গোল্ডেন হোর্ডের উত্তরাধিকারীতে পরিণত হলেন। অভিযান চালিয়ে মামাইকে পরাজিত করে রাজধানী সরাই দখল করলেন তিনি।

তকতামিরে অপরিণামদর্শী আচরণই তার পতন ডেকে আনে


তকতামিস ক্ষমতায় এসেছিল তৈমুরের সহযোগিতায়। তথাপি সিংহাসনে বসার পর স্বেচ্ছাচার শুরু করে দিল। প্রকাশ পেতে থাকল চারিত্রিক অন্ধকার দিকগুলো। যাদের সহযোগিতায় তকতামিস রাজ্য পেয়েছে, সেইসব সামন্ত রাজাদের কাছেই কর দাবি করে বসলেন তিনি। অনেকেই দাবি মেনে নিতে অস্বীকার করায় দগ্ধ এবং বিধ্বস্ত করে ফেললেন মস্কো। এই ঘটনার পর তকতামিসের দম্ভ বেড়ে গেল আরো কয়েকগুণ। তৈমুরের অবদানের কথা ভুলে গিয়ে আক্রমণ করে বসলেন তাব্রিজ।

পীপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। তকতামিসও বেড়ে গিয়েছিল অনেক বেশি। তাব্রিজ আক্রমণের পর দশদিন ধরে লুটপাট ও হত্যাকাণ্ড চালানো হলো। বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি হস্তগত করে ফিরে গেল মোঙ্গল নেতা। সংবাদ শুনে মর্মাহত তৈমুর তাকে একটা শিক্ষা দেবার স্থির সিদ্ধান্ত নিলেন। প্রায় দুই লাখ সৈন্যসমেত আক্রমণ করলেন গোল্ডেন হোর্ড সাম্রাজ্যে। তকতামিসের হাড়ে কাঁপুনি লাগল এবার। তৈমুরের কাছে পাঠালেন সন্ধির প্রস্তাব।

কিন্তু তৈমুর ভালোমতোই বুঝতে পেরেছিলেন তকতামিসের দুরভিসন্ধি। তাই শত্রুর শেষ রাখতে নেই-মন্ত্রেই স্থির থাকলেন। ভল্গা নদীর সন্নিকটে তেরেক নামক স্থানে তুমুল যুদ্ধ হলো দুই বাহিনীর মধ্যে। পরাজিত হয়ে পলায়ন করলেন তকতামিস। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, এই যুদ্ধে প্রায় এক লাখ সৈন্য হতাহতের ঘটনা ঘটে। একজন মোঙ্গল নেতাকে শাসনকর্তা নিযুক্ত করে বিজয়ী তৈমুর ফিরে আসেন। কিন্তু বছর তিনেক পরেই তকতামিস আবার সৈন্য সংগঠিত করে আক্রমণ করে বসে। এবার আর তৈমুর থামলেন না। নেহায়েত অপ্রস্তুত থাকার পরেও রণনিপুণতার মধ্য দিয়ে পরাজিত করলেন তকতামিসকে। আর এর মধ্য দিয়ে দেড়শত বছরের গোল্ডেন হোর্ড সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি ঘটল। তকতামিসের বাহিনীর অর্ধেক যোগ দিল তৈমুরের সাথে, আর অর্ধেক পালিয়ে গেল ক্রিমিয়া, আদ্রিয়ানোপল ও হাঙ্গেরির বিভিন্ন স্থানে।

আরো একবার পারস্য

১৩৯২ সাল। পারস্যের রাজনৈতিক অবস্থায় তখন সংকট চলছে। তৈমুর বিষয়টা লক্ষ্য করেই অস্ত্রাবাদ ও আমুলের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করে খুররামাবাদ, শুসতার এবং কালাসফিদ দখল করে নিলেন। গত অভিযানে পালিয়ে বেঁচে যাওয়া মুজাফফারীয় যুবরাজ শাহ মনসুর চার হাজার সৈন্যসহ তার গতিপথ রোধ করে দাঁড়াল। তৈমুরের ত্রিশ হাজার সৈন্যের সামনে প্রবল সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেও পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হলেন। শাহ মনসুরকে বন্দী এবং হত্যা করা হয় পরের বছর ১২৯৩ সালে। সিরাজের ওপর প্রতিষ্ঠিত হলো তার একচ্ছত্র আধিপত্য।

এই দফায় সিরাজ আর বাগদাদ তার নিয়ন্ত্রণে এলো


সিরাজের পর বাগদাদকে পদানত করাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল। বিশেষ করে তাকরিত দুর্গে হাসান নামের এক দস্যু সর্দার বেশ উপদ্রব করছিল। তৈমুর তাকরিত দখল করে তার সমস্ত অধিবাসীকে হত্যার আদেশ দিলেন। আর সেই সাথে অধিকারে আনলেন কালাত নামের আরো একটি দুর্গ।

বিচ্ছিন্ন অভিযাত্রা

১৩৯৪ সালে তৈমুর নিজের অভিযাত্রার গতিমুখ ঘোরান মস্কোর দিকে। সীমাহীন ধ্বংস আর হত্যার মধ্য দিয়ে দখল করেন ককেশাস অঞ্চলের অস্ত্রাখান। তারপর একে একে অধিকারে এলো সমুদ্র তীরবর্তী ভেনিস, জেনোয়া, বাস্ক, কাটান প্রভৃতি নগরগুলিও। হাজির হলেন বিস্তৃত সাইবেরিয়া পেরিয়ে আলবুর্জ পর্বতমালার কাছে। এই বিজয়ের পর তার কাছে পদানত হলো উত্তরাঞ্চল, উরাল, কাস্পিয়ান সাগর, পারস্য ও ককেশাস।

তৈমুর পরিণত হলেন পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সাম্রাজ্যের অধিকর্তা হিসাবে


এই মুহূর্তে তৈমুর কোনো নামমাত্র রাজা নয়; ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা এক পরিণত সম্রাট। যিনি বাকি পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে আছেন নিজের হাতের মুঠোতে আনার জন্য। তখনও ভারত এবং অটোম্যান সাম্রাজ্যের সাথে সংঘর্ষ বাকি। তখনও বাকি তার রূপকথাতে পরিণত হওয়ার আখ্যান। সেই গল্প হবে পরবর্তী পর্বে।

● পর্ব-৩ পড়তে ক্লিক করুন

   

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

  • Font increase
  • Font Decrease

‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত/ সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত/ ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে/ ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে/ কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী/ হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি/ কলমী লতার গহনা তাহার গড়ার প্রতীক্ষায়/ ভিনদেশী বর আসা যাওয়া করে প্রভাত সাঁঝের নায়।’ পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘ধান ক্ষেত’ কবিতার অপূর্ব চিত্রায়ন কৃষকের শ্রম-ঘাম আর প্রকৃতির তরফে। কাব্যে-পঙক্তির বিমূর্ত চিত্র মূর্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠে। কিষান-কিষানির বুক ভরা আশার সার্থক রূপায়ন হতে চলেছে এ-মৌসুমে।

এখন ভরা বৈশাখ। এ-সময়টা বোরো ধানের। বোরো ধান দেশের খাদ্যচাহিদার অন্তত ৫৫ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। দেশের হাওরভুক্ত ৭টি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে এই বোরোর চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই ধান অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে দেশের খাদ্যচাহিদায় ঘাটতি পড়ে না। তাই এই ধান চাষ থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া, বিশেষ করে রোদের উপস্থিতি অতি জরুরি। বর্তমানে সে পরিস্থিতি চলছে।

সিলেট অঞ্চলের মানুষ বলে এই অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, হতাশা-উচ্চাশার সঙ্গে আমি পরিচিত। তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে টানছি। তাদের সঙ্গে থেকে জেনেছি, বোরো মৌসুমে নির্বিঘ্নে ঘরে ফসল তোলা কতটা জরুরি। গবাদি পশুর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি খড় সংরক্ষণও। তীব্র রোদ এখানে সমস্যার নয়, এটা বরং আনন্দের। কারণ এই রোদ গা পোড়ালেও বুক ভরা আশার সার্থক বাস্তবায়নের পথ দেখায়। দেশের যে খাদ্যচাহিদা, যে খাদ্যনিরাপত্তা সেটা এই বোরো ধানের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই চাষ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দরকার হয় প্রকৃতির সহায়তা। এবার এখন পর্যন্ত সে সহায়তা আছে, যদিও এ মাসের শুরুর দিকে একবার ঝড়বৃষ্টিসহ শঙ্কার কালমেঘ হাতছানি দিয়েছিল। সেটা আপাতত দূরে সরেছে।

কিষান-কিষানির দরকার এখন তীব্র রোদ। তারা এটা পাচ্ছে। দেশে তীব্র তাপদাহ। এখানেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবু তারা এই রোদের প্রার্থনায় রয়েছে। বৃষ্টি এখন তাদের কাছে দুর্যোগ-সম। কারণ এই বৃষ্টি এবং অতি-বৃষ্টিসৃষ্ট বন্যা তাদের স্বপ্নসাধ গুঁড়িয়ে ভাসিয়ে নিতে পারে সব। ২০১৭ সালের দুঃসহ স্মৃতি এখনও বিস্মৃত হয়নি সুনামগঞ্জের কৃষকেরা। সে বছর সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৭ হাওরের ফসল বন্যায় এবার ভেসে গিয়েছিল। গতবার কৃষক নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলেছেন। এরআগের বছর অন্তত ২০টি হাওরের ফসলহানি হয়েছিল বন্যায়।

প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ক্ষেতের ফসল, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। এখানে প্রচণ্ড তাপদাহ তাই প্রভাব ফেলে সামান্যই। রোদে পুড়ে, প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে কিষান-কিষানিরা স্বপ্ন তোলেন ঘরে। তারা বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা না করে বরং রোদ আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার প্রার্থনায় বসেন। কৃষকেরা পরিমিত বৃষ্টি চায় চৈত্র মাসে, বৈশাখে চায় খাঁ খাঁ রোদ্দুর, কারণ এই রোদে সোনালী ধান ঘরে ওঠে। লোককথার প্রচলিত, ধান তোলার মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য হাওরবাসীরা তন্ত্রসাধক বা ‘হিরাল’ ও ‘হিরালি’-দের আমন্ত্রণ জানাতেন। তারা এসে মন্ত্রপাঠ করে ঝড়বৃষ্টি থামানোর জন্য চেষ্টা করতেন। লোকায়ত বিশ্বাস থেকে আগেকার মানুষজন এমন আচার পালন করতেন। এসবে সত্যি কাজ হতো কিনা সেটা বিতর্ক এবং ব্যক্তি-বিশ্বাসসাপেক্ষ, তবে এই হিরাল-হিরালিদের আমন্ত্রণ বলে বৈশাখে একদম বৃষ্টি চায় না হাওরের কৃষক।

হাওরপারের মানুষেরা যখন রোদ অব্যাহত থাকার প্রার্থনায়, তখন দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে পুড়তে থাকা মানুষেরা আছেন বৃষ্টিপ্রার্থনায়। দেশের জায়গায়-জায়গায় বৃষ্টি প্রার্থনায় ইস্তিস্কার নামাজ পড়া হচ্ছে, গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ আসছে এর। কোথাও প্রবল বিশ্বাসে কেউ কেউ ‘ব্যাঙের বিয়ে’ দিচ্ছেন, এটাও বৃষ্টি প্রার্থনায়। সামাজিক মাধ্যমে গরমের তীব্রতার আঁচ মিলছে, বৃষ্টি নাকি ধান—কোনটা জরুরি এই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের প্রচণ্ড তাপদাহ নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে দেশের মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে টানা দ্বিতীয় বছর বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণাও এসেছে। বৃষ্টি-প্রার্থনায় নামাজের আয়োজনের কথাও এসেছে বিশ্বমিডিয়ায়।

একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ, অন্যদিকে খাদ্যনিরাপত্তার প্রধান উপকরণ ধান ঘরে তোলার অনিশ্চয়তা—তবু অনেকের কাছে সাময়িক স্বস্তিই যেন মুখ্য। অথচ আর দিন দশেক বেরো আবাদ-এলাকায় বৃষ্টি না নামলে ধানগুলো ঘরে ওঠত কৃষকের। নিশ্চিত হতো খাদ্যনিরাপত্তার।

প্রকৃতির ওপর আমাদের হাত নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই; তবু মনে করি আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশে কৃষকদের গুরুত্ব থাকা উচিত। আমাদের চাওয়ায় হয়তো প্রকৃতির রীতি বদলাবে না, তুমুল রোদ্দুরের দেশে হঠাৎ বৃষ্টি নামবে না, তবে ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত রোদ্দুর কামনায় কৃষক স্বস্তি পাবে; ভাবতে পারবে এই দেশ আছে তাদের সঙ্গে।

কৃষকের জয় হোক। অন্তত বোরো-এলাকায় প্রকৃতি কৃষকের সঙ্গে থাকুক।

;

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;