রোজায় মাথাব্যথার সমস্যাটি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকবে?
রোজা রাখার মাধ্যমে শরীর ও মনের স্বাস্থ্যকে মজবুত করা সম্ভব হয়।
আত্মিক বিষয় বাদে যখন শারীরিক সুস্থতার কথা আসে, তখন রোজা রাখার ফলে সৃষ্ট সমস্যার কথাও উঠে আসবে।
রোজা শুরুর প্রথম কয়েকদিন অনেকেই মাথাব্যথার সমস্যায় ভোগেন। এটা রোজাকালীন খুবই সাধারণ একটি শারীরিক সমস্যার উপসর্গ। প্রতিদিন তিন-চার বেলা পেট ভরে খাবার খাওয়ার পরিবর্তে ১৪-১৫ ঘণ্টার লম্বা সময় কোন ধরনের খাবার ও পানি গ্রহণ না করে থাকার ফলে, শরীর স্বাভাবিকভাবেই সমস্যার মুখোমুখি হয়। হুট করে এমন বড় ধরনের পরিবর্তনের সঙ্গে শরীরের মানিয়ে নিতে বেগ পেতে হয়।
ফলে রোজা রাখাকালীন সময় থেকে ইফতারি খাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরেও মাথাব্যথার প্রাদুর্ভাব রয়ে যায়। মাঝারি থেকে স্বল্প মাত্রার এই মাথাব্যথা চিনচিনে ধরনের হয়ে থাকে। যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কপালের সামনের অংশে দেখা দেয়।
কেন দেখা দেয় এই মাথাব্যথা?
রোজা রেখে মাথ্যাব্যথা দেখা দেওয়ার পেছনে কাজ করে কয়েকটি কারণ। হাইপোগ্ল্যাসেমিয়া (Hypoglycaemia), ক্যাফেইন উইথড্রওয়াল, পর্যাপ্ত পানি পানের অভাব, ঘুমের সময়ের পরিবর্তন ও রোজার নিজস্ব চাপ।
ইউনিভার্সিটি অফ মালায়া’র চার মাসের (রোজার আগের দুই মাস, রোজা চলাকালীন এক মাস ও রোজা পরবর্তী এক মাস) একটি গবেষণা থেকে দেখা গেছে, প্রায় ৮৩টি ভিন্ন কারণে মাথাব্যথা দেখা দিয়ে থাকে এ সময়ের মাঝে। যার তীব্রতা হালকা থেকে তীব্রতর হতে পারে।
রোজা চলাকালীন সময়ে মাথাব্যথা শুরু হলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোজা ভাঙার পর সন্ধ্যার দিকে এই মাথাব্যথার তীব্রতা দেখা দেয়। তবে আনন্দের বিষয় হলো, রোজা রাখার ফলে যে মাথাব্যথার সমস্যাটি দেখা দেয়, তা মূলত নিজ থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে এই মাথাব্যথা?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্যাফেইন উইথড্রওয়াল সমস্যার জন্য মাথাব্যথা হয়ে থাকে। শরীর তার প্রয়োজনীয় মাত্রায় ক্যাফেইন না পেলেই বিদ্রোহি হয়ে ওঠে। যার ফলাফলে দেখা দেয় মাথাব্যথা। এই সমস্যাটি কমানোর ক্ষেত্রে রোজা শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে থেকে কফি ও চা পানের মাত্রা কমিয়ে দিতে হবে। এতে করে শরীর স্বল্প মাত্রার ক্যাফেইনের সাথে অভ্যাস্ত হয়ে উঠবে। ফলে রোজা রাখায় খুব একটা সমস্যা দেখা দিবে না। স্বল্প মাত্রার ক্যাফেইনের সাথে শরীর আগে থেকেই অভ্যস্ত হওয়ায় রোজা চলাকালীন সময়ে শরীর তার সাথে মানিয়ে নেবে।
অন্য আরেকটি বড় কারণ হলো হাইপোগ্ল্যাসেমিয়া বা লো ব্লাড সুগার। রক্তে চিনির মাত্রা হুট করে বেড়ে যাওয়ার পরে অনেকখানি কমে যায় রোজা চলাকালীন সময়ে। রক্তে চিনির মাত্রা এমন ওঠা-নামার ফলে মাথাব্যথার সমস্যাটি তৈরি হয়। এর জন্য সেহেরিতে উচ্চমাত্রার চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। চিনিযুক্ত খাবার প পানীয় রক্তে চিনির মাত্রা সাময়িকভাবে অনেক বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে পরবর্তী দিনে শরীর যখন প্রয়োজনীয় মাত্রার চিনির অভাব বোধ করে, তখন মাথাব্যথার লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে।
অন্য যে আরেকটি কারণে মাথাব্যথার সমস্যা দেখা দেয়, সেটা হলো ডিহাইড্রেশন তথা পানিশূন্যতা। শরীরে পর্যাপ্ত পানির অভাব দেখা দেওয়ায় ফ্যাটিগের সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে আমাদের মস্তিষ্ক সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির মুখোমুখি হয়। সেক্ষেত্রে ইফতারি থেকে সেহেরি পর্যন্ত সময়ে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। এতে করে শরীর কিছুটা হলেও পানির চাহিদা পূরণে সমর্থ হবে।
তবে মাথাব্যথা প্রকট আকারে দেখা দিলে ঘুমাতে হবে। শারীরিক ক্লান্তি ও অবসাদ মস্তিষ্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে বলেও মাথাব্যথা দেখা দেয়। ঘুমিয়ে বিশ্রাম নিলে শরীর কিছুটা আরামবোধ করলে মাথাব্যথা কমে যাবে।
রোজা রাখার ফলে মাথাব্যথার সমস্যাটি প্রথম তিন-চার দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে মাথাব্যথা যদি আরও লম্বা সময় পর্যন্ত স্থায়ী হয়, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আরও পড়ুন: প্রযুক্তি যেভাবে স্বাস্থ্যহানি ঘটাচ্ছে!
আরও পড়ুন: মেটাবলিজম কমছে যেসকল অভ্যাসে