দেহ ও মনের সুস্থতায় ইয়োগা
প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পুরনো এই শরীর চর্চার ধারাটি বর্তমান সময়ে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জিমে ভারী যন্ত্রের সাথে যারা নিজেকে মোটেও মানিয়ে নিতে পারেন না, তাদের জন্য ইয়োগা বেশ উপযোগী।
নিয়মিত ইয়োগা চর্চার ফলে বাড়তি ওজন কমে যাওয়া এবং পেশী সুগঠিত হয়ে ওঠার পাশাপাশি রয়েছে দারুন স্বাস্থ্য ও মানসিক উপকারিতা।
একশটির বেশী ধরণ রয়েছে ইয়োগার। যার মধ্যে কিছু হলো ‘ফাস্ট-পেসড এবং কিছু রিল্যাক্সিং। তবে যেকোন ধরনের ইয়োগাই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। যেকোন বয়সের সাথে মানিয়ে যাওয়া দারুন এই শরীরচর্চার ধারাটির চমৎকার কিছু শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উপকারি নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো।
শারীরিক:
শারীরিক ব্যথার উপশমে সাহায্য করে
বেশ কিছু গবেষণা থেকে দেখা গেছে যেনির্দিষ্ট কিছু ইয়োগা আসন ও ওষুধ সেবনের ফলে আর্থ্রাইটিসের ব্যথা, পিঠে ব্যথার মতো ক্রনিক শারীরিক ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার নিয়মিত ইয়োগা করলে ব্যথা সেরে যায়, ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হয় না।
ফুসফুস ও শ্বাসপ্রশ্বাসের উন্নতিতে সাহায্য করে
ফুসফুস ও শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যার জন্য অভিনব একটি ইয়োগা রয়েছে। যার নাম‘কমপ্লিট ব্রিদিং’। অভিনব এই ইয়োগার নিয়মিত চর্চার ফলে মাত্র এক মাসের মাঝেই শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যার সমাধান সম্ভব। ইয়োগা করার সময় নাকের সাহায্যে শ্বাস নিতে বলা হয়। এতে শ্বাস-প্রশ্বাসেরও উন্নতি ঘটে।
ঘুম গাঢ় হতে সাহায্য করে
সারাদিনের ব্যস্ততার কারনে শরীরে ক্লান্তি এসে ভর করে। তারপরেও সমস্যা দেখা দেয় রাতে বালিশে মাথা রাখার পর। শরীর জুড়ে ক্লান্তি থাকলেও চোখে ঘুমের কোন আভাস নেই। ‘ইয়োগা নিদ্রা’একটি বিশেষ ধরণের ইয়োগা যা শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি কারণ। স্নায়ুর উপরে প্রভাব বিস্তার করে রাতে দ্রুত ঘুমাতে সাহায্য করে থাকে।যার ফলে নিয়মিত ইয়োগা চর্চা ঘুমের সমস্যা দূর করতে পারে।
উচ্চরক্ত চাপ কমিয়ে আনে ইয়োগা চর্চা
উচ্চরক্ত চাপের সমস্যা কমিয়ে আনতে দারুন কার্যকরি হলো নিয়মিত ইয়োগা চর্চা করা। খুব সাধারণ ইয়োগার ধরণ ‘শবাসন’ চর্চার মাধ্যমে তিন মাসের মাঝেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা একেবারে কমে যায়। অনেকক্ষেত্রে নিরাময়ও হয়ে যায়।
রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখতে/ কমাতে সাহায্য করে
ইয়োগা চর্চার ফলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) এর মাত্রা কমে যায় এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। সঙ্গেরক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকরী
ইয়োগার ভিন্নধর্মী শারীরিক ভঙ্গীর ফলে পেশীতে টান পরে এবং বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে নাড়াচাড়া হয়ে থাকে। যার ফলে শরীরের ভেতরে লিম্ফ (Lymph) নামক এক ধরণের তরল নিঃসৃত হয়। এই তরল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে।
হাড় মজবুত করে
লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণাতে দেখা গেছে, ওজন বা ভার উত্তোলক ঘরানার ইয়োগা চর্চার ফলে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো হয় এবং হাড় মজবুত হয়।
ওজন উত্তোলক ঘরানার ইয়োগা হলো নিজের শরীরের ওজনকে নিজেকেই বহন করা তথা, ইয়োগার ভঙ্গীর ফলে নিজের শরীরের ওজন বহন করা। এক্ষেত্রে হাড়ের উপর চাপ পড়ার ফলে হাড়ের সহনক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি ইয়োগা চর্চার ফলে মানসিক দুশ্চিন্তা তৈরিকারী হরমোন কর্টিসোলের নিঃসরণ হ্রাস পায়। ফলে হাড়ের ক্যালসিয়ামের মাত্রা সঠিক থাকে।
মানসিক স্বাস্থ্যের উপকারিতা সমূহ:
মন খারাপভাব দূর করে
মানসিক অবসাদ কিংবা হতাশা থেকে মন খারাপ ভাব তৈরি হলেও, অনেক সময় অকারনেই মন খারাপ হয়। এমন হুটহাট মন খারাপভাব দেখা দিলে পিঠে পেছনের দিকে বাঁকিয়ে ইয়োগার ‘কিং ড্যান্সার পোজ’ চেষ্টা করা যেতে পারে। এতে শরীরের পেশীতে টান পড়ে এবং সেরোটোনিন নিঃসরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে মন খারাপভাব দ্রুত কেটে যাবে।
মনযোগী হতে সাহায্য করে
ইয়োগার মূলমন্ত্র, বর্তমান সময়ের প্রতি মনযোগী হওয়া। এতে কাজের প্রতি মনোযোগের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।গবেষণা থেকে দেখা যায়, যারা নিয়মিত ইয়োগা চর্চা করেন তাদের সামঞ্জস্যতা, স্মৃতিশক্তি এবং বুদ্ধিমত্তার উন্নতি হয়ে থাকে।
মানসিক শান্তি প্রদান করে
নিয়মিত ইয়োগা চর্চার ফলে যেকোন ধরণের নেতিবাচক অনুভূতি হ্রাস পায়। হতাশা, আফসোস, রাগ, ভয়, মানসিক চাপ কমিয়ে আনতে এবং ইতিবাচক অনুভূতি তৈরিতে ইয়োগা দারুন কার্যকরী ভূমিকা রাখে। মানসিক চাপের ফলে মাইগ্রেন, ইনসমনিয়া, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার মতো শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। তাই মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হবার চেষ্টা করতে হবে। সেক্ষেত্রে ইয়োগা দারুন একটি উপায়।