কোরবানির মাংস সংরক্ষণে সহজ সচেতনতা
কোরবানির ঈদ মানেই মাংস সংরক্ষণের ঝক্কি ঝামেলা।
শুধু তো মাংস নয়, সাথে গরু ও খাসির অন্যান্য অংশ যেমন: হাড়, চর্বি, ভুঁড়ি, মাথার অংশ ও কলিজাও থাকে। কোরবানির পর ভাগ বাটোয়ারা শেষে নিজেদের ভাগে যতটুকু মাংস থাকে, সেটুকুই ঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে গেলে হিমশিম খেতে হয়।
ইতোপূর্বে জানানো হয়েছে যে, ঈদের বেশ কয়েকদিন আগে থেকে ডিপ ফ্রিজ পরিষ্কার ও গুছিয়ে রাখতে পারলে ঝামেলা কমে যাবে প্রায় অর্ধেক। সেক্ষেত্রে মাংস সংরক্ষণে খুব একটা সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তবে সঠিক নিয়মে মাংস সংরক্ষণ করা না হলে সংরক্ষণের পাশাপাশি সমস্যা দেখা দিতে পারে মাংসেও। দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মাংসের পুষ্টিগুনে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সে কারণে কিছু সাধারণ সচেতনতা জানা থাকলে মাংস সংরক্ষণে সুবিধা হবে।
প্রাণিজ প্রোটিন তথা মাংসের প্রায় ৫৫-৭০ শতাংশই হলো জলীয় অংশ। ফলে মাংসে খুব দ্রুত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে ও পচন দেখা দেয়। তবে কোরবানি শেষে মাংস ঘরে আনার সাথে সাথেই ফ্রিজিং করা উচিত নয়। কোরবানি শেষে অন্তত দুই ঘণ্টা পর মাংস ভালোভাবে ধুয়ে ও পানি শুকিয়ে ফ্রিজিং করতে হবে। এ সময়ের মাঝে মাংসের সাথে থাকা বাড়তি রক্ত ঝরে যাবে। ফলে ফ্রিজিং এর ক্ষেত্রে কোন সমস্যা দেখা দিবে না।
মাংস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা জরুরী। প্রথমত, মাংসের সাথে বাড়তি হাড় ও চর্বি সরিয়ে ফেলতে হবে। এতে করে তুলনামূলক বেশি মাংস সংরক্ষণ করা যাবে এবং মাংস দীর্ঘদিন ভালো থাকবে।
দ্বিতীয়ত, মাংস কাটতে হবে ছোট ও পাতলা টুকরা করে। আমরা সাধারণত বড় ও ভারি টুকরা করে মাংস কেটে থাকি। এতে করে কাঁচা মাংস ফ্রিজিং হতে লম্বা সময়ের প্রয়োজন হয় এবং মাংসের ভেতরে কাঁচা রক্ত রয়ে যায়। পাতলা ও ছোট টুকরা করে মাংস কাটা হলে অল্প সময়ের মাঝে মাংস ফ্রিজিং হয়ে যাবে এবং মাংসের ভেতরে থাকা রক্ত ঝরিয়ে নেওয়া যাবে।
কোরবানির মাংস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পর্যাপ্ত মাংস দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণের দিকে নজর না দিয়ে, এর গুণগত মান অক্ষুণ্ণ রাখার প্রতিও নজর দিতে হবে। বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, জিংক, ফসফরাসের সঙ্গে রেড মিট তথা গরু ও খাসির মাংস থেকে পাওয়া যাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ ও প্রথম শ্রেণির আমিষ।
মাংস সংরক্ষণের বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি থাকলেও, ডিপ ফ্রিজে নিম্ন তাপমাত্রায় ফ্রিজিং করাই সবচেয়ে প্রচলিত ও সহজ উপায়। তাই মাংস সঠিক নিয়মে কেটেবেছে, রক্ত ঝরিয়ে ও শুকিয়ে নিয়ে ছোট ছোট ও আলাদা প্যাকেটে নিয়ে ফ্রিজিং করতে হবে। ফ্রিজের তাপমাত্রা যেন পর্যাপ্ত পরিমাণ কম হয়, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
এবারে আসা যাক মাংস বাদে কোরবানির প্রাণীর অন্যান্য অংশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে। ভুঁড়ি, কলিজা, হাড় ও চর্বি, মাথা ও মগজ- যেটাই সংরক্ষণ করা হোক না কেন মনে রাখতে হবে, মাংসের সাথে রাখা যাবে না। কলিজা, ভুঁড়ি, জিহ্বা বা লেজের অংশ খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করে তবেই ডিপ ফ্রিজে রাখতে হবে। নতুবা এতে থাকা ময়লা ও রক্ত থেকে ব্যাকটেরিয়া ছড়াতে পারে। মাথার অংশ ও মগজ ধুয়ে রক্ত ঝরিয়ে এরপর প্যাকেট করতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় বাড়তি হাড় ও চর্বি ফেলে দেওয়া হয়। যদি ফেলে দেওয়া না হয় তবে চর্বি ধুয়ে ও হাড় জ্বালিয়ে এরপর সংরক্ষণ করলে দীর্ঘদিন ভালো থাকবে। পায়ের হাড়ের ক্ষেত্রেও যদি জ্বাল দিয়ে পানি শুকিয়ে রাখা সম্ভব হয় তবে পায়ের হাড় ভালো থাকবে।
খুব সাধারণ এমন কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে পারলে কোরবানির ঈদে মাংস সংরক্ষণে কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না।
আরও পড়ুন: ডিপ ফ্রিজ খালি করার এইতো সময়!
আরও পড়ুন: যেভাবে নতুনের মতো থাকবে কাঠের চামচ