স্কুল মিলের আওতায় আসছে প্রাথমিকের সব শিক্ষার্থী
প্রাথমিক শিক্ষার হার বাড়াতে এবং ঝরে পড়া ঠেকাতে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে ‘জাতীয় স্কুল মিল নীতি-২০১৯’ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সে অনুযায়ী প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় শক্তি চাহিদার ক্যালরির ন্যূনতম ৩০ শতাংশ স্কুল মিল থেকে নিশ্চিত করা হবে।
জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির অর্থায়নে পরিচালিত মোট ১৭৫টি বিদ্যালয়ের ৩৩ হাজার ৯৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাইলট ভিত্তিতে রান্না করা খাবার (মিড ডে মিল) পরিবেশন করা হচ্ছে এবং ১০৪টি উপজেলায় বিস্কুট খাওয়ানো হচ্ছে। ১০৪টির মধ্যে ৯৩টি উপজেলায় সরকার ও ১১ উপজেলায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি অর্থায়ন করছে। রান্না করা খাবার দেওয়া এলাকায় ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ এবং বিস্কুট দেওয়া এলাকায় রক্ত স্বল্পতা কমেছে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এ বিবেচনায় জাতীয় স্কুল মিল কর্মসূচির আওতায় সব শিক্ষার্থীকে খাবার দেওয়া হবে। আর এটি বাস্তবায়নের জন্য স্কুল মিল উপদেষ্টা কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে সরকার মনোনীত উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে এ কমিটি কর্মপরিধি, কার্যকারিতা, অর্থায়ন ও মূল্যায়নে কাজ করবে। সরকার মনোনীত বিশিষ্ট ব্যক্তির সভাপতিত্বে এ কমিটির সদস্যদের নির্দিষ্ট মেয়াদে নিয়োগ দেবে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়। স্কুল মিল কর্মসূচির প্রধান নির্বাহী কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে স্কুল ফিডিং প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৬টি উপজেলায় ২ হাজার ১৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল মিল চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের। পরিকল্পনা অনুযায়ী, স্কুল মিল চালু করতে প্রতিটি বিদ্যালয়ে রান্নাঘর তৈরি করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে একটি রান্নঘর তৈরি ও তৈজসপত্র কিনতে আনুমানিক ৭০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। ফলে ১৬টি উপজেলায় ২ হাজার ১৬৬টি বিদ্যালয়ে রান্নাঘর তৈরি করা হলে ১৫ কোটি ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন। এছাড়া প্রতিটি স্কুলে একজন করে রাঁধুনি নিয়োগ করতে ব্যয় হবে ৯ কোটি ৭৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের এডিপিতে বিস্কুট বিতরণ ফি (এনজিও) খাতে ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। গত অর্থবছরে এ খাতে প্রায় ২৭ কোটি ৮৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। ফলে এ খাত থেকে রান্নঘর তৈরি ও তৈজষপত্র কেনা যেতে পারে বলেও মতামত এসেছে।
আর বর্তমানে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির অর্থায়নে পরিচালিত বামনা ও ইসলামপুর উপজেলার ৮৭টি বিদ্যালয়ে বর্তমানে রান্নাঘর ও তৈজষপত্র আছে। এ অবস্থায় প্রথম পর্যায়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বিস্কুট বিতরণ ফি (এনজিও) খাতে বরাদ্দ থেকে আরও ১৪টি উপজেলার ৩১৩টি বিদ্যালয়ে রান্নাঘর তৈরি ও তৈজষপত্র কেনা সম্ভব। ফলে বামনা ও ইসলামপুরসহ ১৬টি উপজেলার ৪০০টি বিদ্যালয়ে স্কুল মিল কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে সুপারিশ এসেছে। আর সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (আরডিপিপি) স্কুল মিল পাইলটিং খাতে ১৬৫ কোটি ৪৮ লাখ ২৭ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) স্কুল মিল পাইলটিং খাতে ২০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু ১৬টি উপজেলায় রান্না করা খাবার (চাল, ডাল, সবজি, মসলা ও ডিম) সরবরাহ করতে আনুমানিক ৫৮ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রয়োজন হবে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘জাতীয় স্কুল মিল নীতি এরই মধ্যে মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। আমরা এটি নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আমাদের শিশুদের ক্ষুধার্থ রাখতে চাই না। ক্ষুধা পেটে থাকলে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারে না। তারা সঠিক পুষ্টিগুণ নিয়ে বেড়ে উঠুক, সেটাই আমরা চাই। আর তাই সরকার দেশের সব স্কুলে মিড ডে মিল যাতে চালু করা যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। তবে শিক্ষার্থীদের কি ধরনের খাবার দেওয়া হবে, সেটি এখনও চূড়ান্ত নয়। খিচুরি খাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থীর সমস্যা হতে পারে, তাই ভিন্ন কোনো খাবার রাখা যায় কিনা সেটিও দেখা হচ্ছে।’
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় শক্তি চাহিদার ন্যূনতম ৩০ শতাংশ ক্যালরি স্কুল মিল থেকে আসা নিশ্চিত করা হবে। যা প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ৩ থেকে ১২ বছরের ছেলে ও মেয়ে শিশুদের জন্য প্রযোজ্য হবে। এছাড়া জাতীয় খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকা অনুযায়ী দৈনিক প্রয়োজনীয় শক্তির ১০-১৫ শতাংশ প্রোটিন থেকে এবং ১৫-৩০ শতাংশ চর্বি থেকে আসা নিশ্চিত করা হবে। ন্যূনতম খাদ্য তালিকার বৈচিত্র্য বিবেচনায় নিয়ে ১০টি খাদ্যগোষ্ঠীর মধ্যে ন্যূনতম চারটি খাদ্যগোষ্ঠী নির্বাচন নিশ্চিত করা হবে। এরই মধ্যে মিড ডে মিল অনেক জায়গায় পাইলট বেসিজে চালু হয়েছে। সমন্বিতভাবে সারাদেশে এটি বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় স্কুল মিল কর্মসূচি বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সেল বা ইউনিট কাজ করবে। কার্যক্রমের পরিধি বাড়াতে প্রয়োজনে প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি আলাদা জাতীয় স্কুল মিল কর্মসূচি কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘ন্যাশনাল স্কুল মিল পলিসি বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে প্রকল্পটি চূড়ান্ত হলে আমরা কাজ শুরু করব। বর্তমানে আমরা ১০৪টি উপজেলার স্কুলগুলোতে খাবার দিচ্ছি, বাকিগুলোতেও ধাপে ধাপে চালু করা হবে। তবে কবে নাগাদ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে, তা অনুমোদনের ওপর নির্ভর করছে।’
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে স্কুল শিক্ষার্থীদের বিস্কুট দেওয়ার কর্মসূচি চালু করা হয়। এরপর বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি ও পাঠে মনোযোগী করার লক্ষ্যে এবং শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে এ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।