আনা বার্ন্স কে?
১.
..আনা বার্ন্স ম্যান বুকার জিতেছেন। আগেই কিছুটা অনুমান করেছিলাম। বিশ্বসাহিত্যে ফ্যান্টাসি আর ডিস্টোপিয়ার এই রমরমায় রিয়েলিস্ট ঘরাণার কাউকে খুঁজতোই কমিটি। মাস খানেক আগে এক লেখক বন্ধুর সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল এ নিয়ে।
এবার কে জিতবে?
সবচেয়ে কমবয়সি হিসেবে ডেইজি জনসন?
প্রায় সমবয়সী ওই ব্রিটিশ লেখিকা পেয়ে যেতে পারেন, এরকম অনুমান বহু পশ্চিমা পাঠক-পাঠিকা ও পত্রিকা সম্পাদকদেরও ছিল। তার উপন্যাসের নাম এভরিথিং আন্ডার। কিন্তু, বললাম, হোক না ইডিপাসকে নারী হিসেবে কল্পনা করে পৌরাণিক কাহিনীটির রিটেলিং দারুণ ব্যাপার, আমার বাজি আনা বার্ন্সের ওপর।
এ কে?
উত্তর আয়ারল্যান্ডের লেখিকা। অন্য জিনিসি। তার লেখা ডিপ, এনগেজিং, সোশাল এওয়ারনেসে ভরপুর, বুদ্ধিদীপ্ত। কিছুটা ট্র্যাডিশনাল, অনুচ্ছেদহীন লং প্রোজে লেখেন।
বন্ধু শুকনো মুখে জবাব দিল, ‘আচ্ছা আচ্ছা।’
আমার অনুমানশক্তি ভালো, এই যে বিকল্প সাহিত্য নোবেল দেওয়া হলো এক বছরের জন্য, মুরাকামি পুরস্কার ঘোষণার আগে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিলেন, এসব কি আর বুঝিনি? মনে করে দেখো, এমন কিছু একটা তোমাকে বলেছিলাম না? এমনকি নমিনিদের শর্টলিস্ট প্রকাশ হবার আগেই ভেবেছিলাম, মুরাকামিকে নিশ্চয় এবার..
বেশ। এবার একটু দম নেওয়া যাক।
২০১৮ সনের বুকার পুরস্কার ঘোষণার পর উপরের অনুচ্ছেদের মতো কোনো কিছু আপনার পড়ার সুযোগ ঘটেছে বাংলাদেশি পত্র-পত্রিকায়? আমি কিছুটা নিশ্চিত যে ঘটেনি, কারণ আমারও মেলেনি সুযোগ।
আনা বার্ন্স কে? বলা নেই, কওয়া নেই, আনকোরা এক লেখিকাকে বুকার কমিটি মিষ্টি দিয়ে দিল!
২.
সাহিত্যের রাজনীতি নিয়ে অনেক কচকচি করা যেতে পারে এ ধরনের রচনায়। বুকার কারা দেয়, কেন দেয়। বুকার পেলে কী হয়। কী কী হিসেব কষমান থাকে একটা বইকে নির্বাচন করবার আগে। এসব আলাপ প্রতি বছরই পড়ি আমরা দৈনিক পত্রিকা বা ওয়েব ম্যাগাজিনগুলোতে। পড়ি আর ভুলে যাই, পরের বছরের জন্য অপেক্ষা করি। একেবারে প্রতি শীতে দুস্থ লোকজন যেভাবে শীতের কাপড়ের জন্য অপেক্ষা করে, শীত গেলে কাপড়টা আর সংরক্ষণ করে না, নতুন বছরে ফের তো মিলবে।
নিবন্ধ রচয়িতারও শ্রম নেই। একই ফর্মা, খালি বিজয়ীর নাম, বইয়ের সারসংক্ষেপ আর দিন তারিখ বদলে দিলেই হলো।
তো, এ বছর আমি ভেবেছিলাম, একটু ব্যতিক্রম হবে। বুকার কমিটি যাকে নির্বাচন করেছে, একদম আনকোরা ঔপন্যাসিক। আনা বার্ন্স নামটা শুনলেই বারবার জুলিয়ান বার্নসের কথা মনে পড়ে। ২০১২ সালে ওই বার্নসও (জুলিয়ান) বুকার পেয়েছিলেন, তিনি আগে থেকেই ছিলেন বিখ্যাত লেখক।
এই বার্ন্সকে (আনা) প্রথম সাক্ষাতেই আমার অপছন্দ হয়ে গেল।
পুরস্কার পেয়ে বোকা বোকা হাসছেন। ফ্যাকাশে একজন প্রৌঢ়া। গ্ল্যামারহীন। হালের পশ্চিমা লেখিকারা প্রায় নায়িকাদের মতো সুন্দরী, সে তুলনায় এনাকে পছন্দ করার কোনো কারণ দৃশ্যমান নাই। উপরন্তু, আনার পেছনে এক হাতে থাবা দিয়ে স্মারক এওয়ার্ডটা ধরে আছেন তারচেয়ে আধহাত লম্বা ডাচেস অব কর্নওয়াল। ছবিটাও অপছন্দ করার মতো।
যাই হোক, আমরা জানি যে, সত্যিকার লেখকের পারফর্মেন্স আর্টিস্ট না হলেও চলে, লেখাই আসল, ট্রু লিটারেচার নিজে থেকেই তার পথ করে নেয়—ইত্যাদি ইত্যাদি।
মিল্কম্যান (২০১৮) বা আনা বার্ন্সের নাম আরো অনেক সাহিত্য রসিকের মতো আমিও শুনিনি আগে। পরেও খুঁজে পেতে তার সম্পর্কে বিস্তর কিছু জানা গেল না। জানা গেলেও বা কী। চিনি না জানি না, এরকম একজন লেখককে হুট করে
কোন আগ্রহে খুঁজব? বইয়ের শেষ আছে? বুক শেলফ ভরে আছে অপঠিত বইয়ে।
এ প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে গিয়েই বুকারের গুরুত্ব সামনে চলে আসলো।
উত্থানের পর থেকেই বুকার পুরস্কার এক ধরনের বুস্টার হিসেবে কাজ করে আসছে লেখকদের জন্য। তুলনামূলক তথ্য উপাত্ত বের করলে দেখা যাবে, নোবেল পুরস্কারও কোনো লেখকের বই বিক্রি এতটা বাড়িয়ে দেয় না যতটা বুকার দেয়। কোনো লেখকের বুকার পাওয়া মানেই উত্তর আমেরিকা, ব্রিটেন ও পৃথিবীর প্রায় সবখানে তার উপন্যাসটা হটকেকের মতো বিক্রি হওয়া। লেখক রাতারাতি সেলিব্রেটি বনে যান। বিশেষ করে একবিংশ শতকে এই পরিসংখ্যান দারুণ উর্ধ্বগামী।
একটু গভীর বইপ্রেমিরা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, ঢাকার নীলক্ষেতেও কী রকম কয়েক হাজার বিক্রি হয়ে যায় বুকারজয়ী বইয়ের নীলক্ষেত কপি। পড়া হয় কী হয় না, সে আলাপের সঙ্গে বই বিক্রির সম্পর্ক সামান্যই।
মানুষ গ্ল্যামার খায়। বুকার হলো বিশ্বসাহিত্যের সবচেয়ে বড় গ্ল্যামারের মুকুট।
সুতরাং, আমি না চিনেও হতাশ হইনি, ভেবেছিলাম, গেলবারের জর্জ সন্ডার্সের মতন এ বছরেও আনা বার্ন্স আনা বার্ন্স করে সকল দেশীয় পত্রিকা, ওয়েব ম্যাগ, আর ফেসবুকের নিউজফিড মশগুল হয়ে উঠবে। তা হলো না। দৈনিকগুলোতে বিদেশি নিউজ থেকে অনুদিত কিছু রিপোর্ট ছাড়া মিল্কম্যান নিয়ে উচ্ছাস কোথাও দেখিনি।
প্রথমত, বার্ন্স প্রসঙ্গে পশ্চিমা পাঠক-সম্পাদক গোষ্ঠীও কিছুটা হতাশা মিশ্রিত বিস্ময়ে ভুগছেন। দ্বিতীয়ত, উপন্যাসটা এখনো প্রকাশিত হয়নি আমেরিকায়। মূল হৈচৈটা তারাই করে থাকে। তৃতীয়ত, আনা বার্ন্স গ্ল্যামারহীন, তার ট্র্যাক রেকর্ড এখনো অস্পষ্ট। যেহেতু আমরা কগনিটিভ বায়াসে (শব্দটা নতুন শিখেছি, ঝেড়ে দিলাম) ভুগি, যাকে অন্যরা ভালো বলছে না বা ভালো কি না ওভাবে শোনা যাচ্ছে না, তার বিষয়ে না বলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
৩.
এই অংশটা, অর্থাৎ মিল্কম্যান কী নিয়ে লেখা গুগল করলেই আগ্রহীরা পেয়ে যাবেন। তবু গুগল করতে যারা চান না, তাদের জন্য এই অনুচ্ছেদ:
উইকিতে লেখা হয়েছে, উত্তর আয়ারল্যান্ডে ১৯৬০ থেকে ১৯৯৮ সন পর্যন্ত যে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংঘাত চলেছিল তাকেই ‘দা ট্রাবল’ (যেন দুনিয়াতে আর কোনো ট্রাবল নাই) বলে, মিল্কমানের সেটাপ তার শেষ দিকে, অর্থাৎ ১৯৯০ সনের এদিকে ওদিকে। উপন্যাসের নায়িকা ‘মিডল সিস্টার’—এ ছাড়া তার আর কোনো নাম পাওয়া যায় না, মূলত কোনো কিছুরই নাম পাওয়া যায় না সেভাবে। ১৮ বছরের এ তরুণী আমার মতোই বই লাভার। সে ক্লাসিক পড়তে ভালোবাসে। বর্তমান তার পছন্দ নয় বলেই ক্লাসিক তাকে টানে। কিন্তু আসলে দেখা যায়, সে এক যুবককেও ভালোবাসে। কিন্তু, সে এমন একটা সমাজে বসবাস করে, যেখানে মেয়েদের পক্ষে উল্লেখযোগ্য বা বিশেষ যে কোনো কাজ করাটা বিপদজনক। কেউ তেমন কিছু করলেই শহরের আর সবার আলাপের বস্তু হয়ে উঠতে হয়। আমাদের নায়িকা এজন্যই তার প্রেমিককে গোপন করে রাখতে খুব সতর্ক। এমনকি নিজের মা’কেও সে কিছু জানায় না। এইসব সতর্ক দিনেই মিল্কম্যানের বদনজরে পড়ে সে। মিল্কম্যান এক প্যারামিলিটারি লিডার। উপন্যাসের অনামা শহরে সে সর্বেসর্বা। সমাজটাও ঘোর মোড়লতান্ত্রিক (একেবারে গ্রামবাংলা টাইপ মনে হয়)। মিল্কম্যান জোর করেই আমাদের নায়িকাকে বিয়ে করে, যে তার চেয়ে বয়সে কয়েক গুণ বড় এবং হুমকি দেয়, টেরিবেরি করলে সে মিডল সিস্টারের প্রেমিককে খুন করে ফেলবে|
সহজ গুগলিং করা অনুচ্ছেদ শেষ হলো। এবার ডিপ গুগলিং ও মনের কথা। এ অনুচ্ছেদ থেকে আমি আবার আগের মতো স্বাধীন:
ধর্মীয় গোঁড়ামিতে পরিপূর্ণ যে কোনো দেশের প্রেক্ষাপটেই হয়তো আনা বার্ন্সের মিল্কম্যানকে ফেলে দেওয়া যাবে। উত্তর আয়ারল্যান্ডের এমন এক সমাজের গল্প এই উপন্যাসে করা হয়, যেখানে মেয়েরা সমাজের চাপা পড়া অংশ। তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নেই। এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার চেয়ে কোনো একক ব্যক্তি আর সকলের ওপর ক্ষমতাশীল। এতে কারো তেমন মাথাব্যথাও নেই। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয়টা হচ্ছে, কেউ যদি বলে সে নির্যাতিত, নির্যাতনের চিহ্ন তাকে দেখাতে হবে। শরীরে ক্ষতের দাগ নেই মানে সব ঠিকঠাক। একজন নারী পরিবার ও সমাজ থেকে যত রকম মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়, সেসবের অধিকাংশই তো দৃশ্যমান চিহ্নবিহীন। আমাদের নায়িকা ‘মিডল সিস্টার’ যে শহরে বসবাস করে সেখানে বিশ্বাস করা হয়—চিহ্ন যেহেতু নাই, নির্যাতনও নাই। এবং পুরো শহরটা কানকথায় সরগরম। একে অন্যকে নিয়ে কেচ্ছাকাহিনী ও কুৎসা ছড়ানো ও সেসবে আড্ডা গরম করাটা শহরবাসীগণের অন্যতম কাজ।
এইসবের মধ্য দিয়েই উঠে আসে রহস্যময় মিল্কম্যানের জীবন, ক্ষমতার অপ-ব্যবহার, ক্ষমতার বিরুদ্ধে মানুষের অসহায় আত্মসমর্পণ আর পৃথিবী থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন বুক লাভার মিডল সিস্টারের অন্ধকার থেকে মুক্তির সংগ্রাম। সে সংগ্রাম করে কি না এটাও বলা যায় না, সে আসলে তার গল্পটা বলে যায়।
এ কাহিনীতে ‘দা ট্রাবলের’ বিশেষ কোনো ধারাবর্ণনা নেই, ঐতিহাসিক ইভেন্ট নিয়ে যেমন নেই মিডল সিস্টারের কোনো আগ্রহ, তার না জানাটা দারুণ কুশলীভাবে পাঠকেরও না জানা হয়ে থাকে।
এই দিকটা আমার কাছে দারুণ লেগেছে।
ঐতিহাসিক উপন্যাস মানেই যে মূল চরিত্রকে এনসাইক্লোপেডিক হবে, তা তো না। মিল্কম্যানের নায়িকা এক নির্যাতিতা যুবতী, তার জ্ঞানের জগত ক্লাসিক উপন্যাসে সীমিত, চলমান পৃথিবী নিয়ে তার ধারণা বা আগ্রহ দুটোই সামান্য। সে জানে একটা সংঘাত চলছে দেশে, এটুকুই আমাদের জানায় যে সেটা “দা ট্রাবল”, সে তাই আমাদের শোনায় মানব জীবনের অদৃশ্যমান, প্রমাণহীন সঙ্ঘাতের গল্প, যা আরো অন্ধকার, অধিক বিধ্বংসী।
৪.
সময়টা গুরুত্বপূর্ণ।
অনেকে মনে করছেন, নিজেরা ভুক্তভোগী কিন্তু বলা যায় না এমন গোপন সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে নারীরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন আজকের পৃথিবীতে। মি টু মুভমেন্টের এই সময়ে বিস্ময়করভাবেই মিল্কম্যান খুব প্রাসঙ্গিক একটা উপন্যাস।
এজন্যই কি বইটা পুরস্কৃত হলো?
এ মুভমেন্ট কত লম্বা হবে, সেটা নিয়ে কারো ধারণা নেই। কিন্তু, বুকার কমিটি বা সমালোচকদের সন্দেহ নেই যে মিল্কম্যান ট্রু লিটারারি পিস। তার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবার যোগ্য।
এ বই কোন দিক থেকে বৈশ্বিক? আমি বলেছি আগে। আশা করি, আপনিও বুঝতে পারছেন। পৃথিবীটা এখনো মোড়লতান্ত্রিকই আছে। নারীরা এখনো নির্যাতিত হচ্ছেন পৃথিবীর সকল দেশেই। মিল্কম্যান উপন্যাসটিকে সে অর্থে এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে একটা শক্ত কণ্ঠ হিসেবে ধরে নেওয়া চলে।
৫.
বিষয়বস্তু গেল, পড়তে কেমন আনা বার্ন্সের গদ্য?
লেখিকার সাক্ষাৎকার থেকে যা জানলাম, মিল্কম্যানে মিশে আছে তার আত্মজৈবনিক উপাদান। তিনি নিজে যে সমাজ থেকে উঠে এসেছেন, তা ছিল অপরাধ, অবিশ্বাস আর বিকৃতিতে সয়লাব। মিল্কম্যানে সেই সমাজে নারীর অস্তিত্বের গল্পই তিনি করতে চেয়েছেন।
যতটা পড়বার সুযোগ হয়েছে, এ উপন্যাস একই সঙ্গে আকর্ষণীয় এর গদ্যের জন্য, আবার অনাকর্ষণীয় সেই সুন্দর গদ্যের বিরামহীনতার কারণেই। দম নেবার ফুরসত নেই। যেন ঔপন্যাসিক চাইছেন মূল চরিত্রের যে অস্থিরতা, জীবনের প্রতি অনাগ্রহ, ভয় ও বিরক্তি—সেসব অভিজ্ঞতা পাঠকও পাক, কাহিনী তো আছেই, গদ্যেও বা ওসব পাইয়ে দেবার প্রচেষ্টা বাদ থাকবে কেন?
সুতরাং, সহজপাঠ্য নয় মিল্কম্যান।
মনোযোগী পাঠের দুর্গম উপকূল পাড়ি দিয়েই পাঠককে নতুন কোনো অনুভূতির মুখোমুখি হতে হবে। সেটাই অনুমান।
৬.
ঔপন্যাসিক হিসেবে আনা বার্ন্সের যাত্রাটা কখনো মসৃণ ছিল না। এর আগে তার দুটি উপন্যাসের (নো বোনস - ২০০১, লিটল কন্সট্রাকশন - ২০০৭) ও একটি নভেলার (মোস্টলি হিরো - ২০১৪) কোনোটাই সেভাবে পাঠকের মনোযোগ পায়নি। তবে প্রথম উপন্যাসটি ক্রিটিকালি সফল হয়েছিল, জিতেছিল উইনিফ্রেড হলবাই মেমোরিয়াল প্রাইজ (নাম শুনেছেন আগে? আমিও শুনিনাই)।
বুকারে শর্টলিস্টেড হবার আগে মিল্কম্যানও সেভাবে কারো মনোযোগ কাড়েনি। সেজন্যেই হয়তো, একদম অপ্রত্যাশিত এই পদক ও অর্থ হাতে ৫৬ বছর বয়সী গ্ল্যামারহীন লেখিকা আপ্লুত হওয়া ছাড়া আর কিছু করবার সুযোগ পাননি।
আর্থিক সঙ্কটে ছিলেন তিনি। ডুবে ছিলেন ঋণে। পুরস্কারের অর্থমূল্য পঞ্চাশ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি টাকায় ৫৩ লাখের মতো) তার দারুণ কাজে লাগবে, অকপটে বলেছেন, ঋণদাতারা তার জন্য অপেক্ষা করে আছেন।
কিন্তু, বুকার কমিটির এ ব্যতিক্রমী পছন্দ কি বইয়ের বাজারে অন্যান্য বারের মতোই ঝড় তুলবে? বেস্ট সেলার হবার উপাদান কি আছে মিল্কম্যানে? অবশ্য নেম অব দা রোজের মতো দুষ্পাঠ্য উপন্যাসও বেস্ট সেলার যেহেতু হতে পারে, আনা বার্ন্সের সম্ভাবনা কম ভাবার কারণ নেই। এমন একদল লোক তার মাঝে সাহিত্যের মৌলিক উপাদান আবিষ্কার করেছে, যারা পর্যাপ্ত গ্ল্যামারেরও যোগানদাতা।
এমনটা খুব অল্পই ঘটতে পারে আজকের পৃথিবীতে। প্রায় অজ্ঞাত এক ঔপন্যাসিককে এভাবে আবিষ্কার করতে পারাটা বুকার কমিটির জন্য বড় অর্জন।
হয়তো বিশ্বসাহিত্যে আরো অনেক উপন্যাসের বিখ্যাত সূচনা বাক্যের সঙ্গে যোগ হতে চলেছে মিল্কম্যানের এই অসাধারণ বাক্যটিও: The day Somebody McSomebody put a gun to my breast and called me a cat and threatened to shoot me was the same day the milkman died.