রামগরুড়ের ছানা হাসতে তাদের মানা
WE SHALL NEVER KNOW ALL THE GOOD THAT A SIMPLE SMILE CAN DO --- বলেছিলেন মাদার টেরেসা। তবে আমাদের আজকের প্রতিপাদ্য কিন্তু হাসি নয়। হাসির যে জ্যান্ত উপকরণ সে , ঠিক সেও না, তাকে যে রক্ষা করে সে। একটু গুলিয়ে গেল জানি তবু বলি, হাসতে গেলে দাঁত লাগে বৈকি! আর সেই দাঁতকে যে রক্ষা করে তাঁর নাম দাঁতন কিম্বা বলতে পারি টুথব্রাশ । এখন দাঁতের দফারফা হয়ে গেলেই আপনি কিম্বা আমি সেই রামগরুড়ের ছানা। দাঁত ব্রাশের প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব কতটা সেসব আমাদের বিষয় নয় তবু একটা কথা না বললেই নয় ; শাহরুখ খান একবার বলেছিলেন “CINEMA IN INDIA IS LIKE BRUSHING YOUR TEETH IN THE MORNING.YOU CAN’T ESCAPE IT.” দাঁতের সঙ্গে সিনেমার তুলনা, ভাবা যায়! ফরাসি প্রজাতন্ত্রে প্রথম কনসাল নেপোলিয়ান বোনাপোর্ট ঘোড়ার চুল দিয়ে তৈরি করেছিলেন ব্রাশ , তা দিয়ে তিনি নিজের দাঁত মাজতেন।তবে ঐতিহাসিকদের আলোচনা থেকে জানা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই এর সবচেয়ে বেশি ব্যবহার শুরু হয়। তবে এই ব্রাশের আগমনের মূল উৎস কিন্তু গাছের ডাল । পরবর্তীতে মানুষ একে “চিউই স্টিক” নামেও বিখ্যাত করেছে। তবে এর উন্নত পরিশীলিত ব্রাশের রূপের আগমন প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব তিন হাজারের কাছাকাছি।
এখন আরো উন্নত পন্থায় চিউং ব্রাশ বাজারে এসেছে যার প্রসেস হল “ইউজ অ্যান্ড থ্রো”। জল ছাড়াই এর ব্যবহার জনপ্রিয় হচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন মানুষ নিজের জীবন ও সভ্যতা সম্পর্কে সচেতন হতে শিখছিল তখন সেই ধাতু আবিষ্কারের যুগেও দাঁত মাজার ব্যাপারে তারা পশু-পাখির হাড়,গাছের ডালই ব্যবহার করত।মেসওয়াক তথা গাছের ডালে দাঁতনের উপযোগীতা কিন্তু এখনো অস্বীকার করা যায় না। অনেকেই মনে করেন ব্রাশের পিতা-মাতা আসলে মেসওয়াক।এই মেসওয়াকের মধ্যে পার্সী মেসওয়াক হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এইক্ষেত্রে কিছু বিশেষ ধর্মীও ভাবনাও জড়িয়ে আছে, যেমন প্রত্যেকবার প্রার্থনা করার আগে দিনে অন্তত পাঁচবার মেসওয়াক ব্যবহার করা উচিত এটা ইসলাম ধর্মের একটি বিশ্বাসের জায়গা। প্রাচীন পারস্যেই এর আবির্ভাব ঘটে এবং একে মূলত মরু উদ্ভিদ বলা হয়। সাধারণ মাজনের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ খনিক উপাদান এই দাঁতনে পাওয়া যায়। বলা হয় ওরাল ক্যান্সার থেকে এটি মানুষকে দূরে রাখে। বর্তমানে ডাক্তাররা অবশ্য বলছেন অতি শক্ত ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজলে অবশ্য দাঁতের মূল উপাদান এনামেল ক্ষয়ে যেতে পারে।
যেই ব্রাশ আজ আমরা দেখছি তার উৎপত্তি কিন্তু ১৯৩৮ সালের পরে। ১৪৯৮ সাল নাগাদ চীনে ট্যাং সাম্রাজ্যের অধীনে ব্রাশ ভাবনার আগমন হয়।প্রথম যে নাইলনের ব্রাশ আসে তাকে বলা হত “DOCTOR WEST’S MIRACLE TOOTHBRUSH”. প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষ শুকনো খড়খড়ে কাপড়কে জলে ভিজিয়েও দাঁত পরিষ্কার রাখত। তারপর তা জীবাণুমুক্ত করতে নুন ও চকগুঁড়ো সংযোজন করত। ইজিপ্টের মানুষরা প্রথম গাছের ডালের ভি আকৃতি করে দাঁত মাজা শুরু করে। তবে গ্রীক ও রোমানরা মূলত সরু কাঠির মতো টুথপিককে দাঁত পরিষ্কার করার জিনিস হিসেবে ব্যবহার করত। ১৭৮০ সালে উইলিয়ম অ্যাডিস ইংল্যান্ডে প্রথম আধুনিক টুথব্রাশের আবিষ্কার করেন। এখন অবশ্য তিনধরণের টুথব্রাশ মানুষ ব্যবহার করেন ম্যানুয়াল, ইলেকট্রিক, সোনিক । ১৯৩৯ সালে সুই(ট)জারল্যান্ডে প্রথম ইলেকট্রিক ব্রাশ আসে। একটা সময়ের পর পশুর হাড় সরে গিয়ে সেলুলয়েডের আগমন ঘটে সেটা প্রায় ১৯০০ সালে।
মানুষ যে ক্রমাগত তার জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্তকে শক্তিশালী ও বিপদমুক্ত করার জন্য ক্রমাগত নিজের বুদ্ধি কে কাজে লাগিয়ে এক উন্নত ও সুস্থ ওব ইতিবাচক সমাজ গড়ার চেষ্টা করেছে সেটাকে এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদাহরণেই টের পাওয়া যায়। জীবন আর কতটুকু, তাঁকে এই ঝকঝকে হাসির আওতায় ধরে রাখতে পারলেই তো জিতে যাওয়া যায়।