যুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষ
পুলওয়ামার ঘটনার পর থেকে ভারতবর্ষে ও পাকিস্তানে কী হচ্ছে তা আমরা জানি! তা নতুন করে বলার কিছু নেই কিন্তু তাই নিয়ে যে যুদ্ধের পক্ষ- বিপক্ষের যে জিকির উঠেছে দুটোই অমূলক কারণ দুটো ভাবনা ক্ষেত্রেই জনগণ আসল ভাবনার বহুদূরে কেবল প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছেন। যুদ্ধনীতি যেমন দেশকে ধ্বংস করে দেয় তেমন এই সামরিকবাহিনী দেশকে রক্ষাও করে। কোনো দলভিত্তিক একপেশে মনোভাব ভারতবর্ষের এই মুহূর্তের জন্য মোটে ঠিক নয়। যেমন ভাবনার ভিত্তি থাকা উচিত যুদ্ধ আমরা এড়িয়ে যাব একমাত্র কারণ ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা প্রবল!
এবার প্রশ্ন হচ্ছে কেবল যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য কী আমাদের সবরকম সমঝোতা করা উচিত? যে দেশ তথা পাকিস্তান দফায় দফায় এসে জঙ্গিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে এবং অতর্কিতে নির্দোষ মানুষ শেষ হচ্ছে তা আমাদের কাছে মেনে নেওয়ার কারণ হতে পারে না। ২রা মার্চে শহরের একটি বিশিষ্ট সংবাদপত্র সূত্রে জানা যাচ্ছে যে পাক মন্ত্রকের বিদেশ-মন্ত্রী শাহ –মাহমুদ কুরেশি নিজেই বলেছেন 'মাসুদ আজহার পাকিস্তানেই রয়েছে' অপরদিকে লাদেনপুত্র হামজা বিন লাদেনের মাথার দাম নির্ধারণ করল মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, যার ভারতীয় মূল্য ১০ কোটি টাকা।
আল-কায়দার নতুন রক্ষক হিসেবে ফিরে আসছেন এই ত্রিশ বছরের যুবক। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা জানাচ্ছে এর ঘাঁটিটিও সেই পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কোথাও। এখন এই বিষয়টিতে সত্যি তো কোনো সন্দেহ নেই পাকিস্তান জঙ্গি সংগঠনের পরিপোষক! 'মানুষ' সে যে ধর্মের যে স্থানের হোক তার মধ্যে মনুষ্যত্ব জেগে উঠতেই পারে এ কথা অস্বীকারের নয় কিন্তু তার সঙ্গে এই কথাও মনে রাখতে হবে, বিজ্ঞান নিজেও স্বীকার করে একটা সচেতন জীবের ক্ষেত্রেও তার পরিবেশ বিশেষ রকম প্রভাবক।
আজ যদি বারবার এই দেশে জঙ্গি আক্রমণ হয় আর আমরা যুদ্ধ এড়ানোর ভয়ে নিশ্চুপ হয়ে থাকি তাহলে সেটা শুধুমাত্র জাতীয় স্তরের কাপুরুষতা নয় এর মানে ঘরেও আমরা, পরিবেশেও আমরা বৃহত্তর ক্ষতির কথা ভেবে অন্যায়ের সঙ্গে সমঝোতা করতে পারি। এর ক্ষুদ্রতম সংস্করণ হল কোনো ডাকাত আপনাকে হুমকি দিয়ে ডাকাতি করে যে তাদের বিরুদ্ধে কোনোরকম ব্যবস্থা নিলে তারা আবার হানা দেবে। আবার যেতে হানা না দেয় তাই আপনি চুপ করে যাবেন? এই ভাবনা নিয়ে আমরা দেশের নাগরিক আইনের কথা ভাবি কী! এটা তো সত্যি আক্রমণের বিরুদ্ধে উত্তর দেওয়ার জন্যই একটা দেশ তার প্রশাসন থেকে সামরিক সব জায়গা প্রতিষ্ঠা করিয়েছে।
তাহলে এটাও সত্যি আমরা যারা নেতাজি, ক্ষুদিরাম, সরোজিনী এদের জন্য প্রতিনিয়ত সম্মান বর্ষণ করি সেই সব বন্ধ করে কেবল গান্ধিবাদী হয়ে বেঁচে থাকি! গান্ধিবাদী হয়ে বেঁচে থাকার ক্ষেত্র তুলে আমি বিতর্ক সৃষ্টি করতেও চায় না কিন্তু এর মূলে আমার কথা এক জায়গায় স্পষ্ট করতে চায় আমরা কী আন্দোলনকারী , বিপ্লবীদের চুপ করিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, আমরা কী চাইনি আমাদের ওপর চূড়ান্ত অরাজকতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে! তাই যেমন জীবনের ক্ষেত্রে সহ্যের সীমা অতিক্রান্ত হলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা লড়ি তেমন দেশের ক্ষেত্রেও তাই হওয়া উচিত।
কেউ কেউ বলবেন, আমরা তো কথা বলেই খালাস। হ্যাঁ সকলে যুদ্ধে নামতে পারবে না কিন্তু যারা ভাষায়, মননে নিজেদের প্রকাশ করেন তারা না করলে দেশের গতি, মনোভাব কিছুই প্রকাশিত হয় না। যেমন একদিক দিয়ে একথাও বলতে হয় এই যে পুলওয়ামা বাসিন্দা আদিল আহমেদ যে জইশে পরবর্তীতে যোগ দিয়ে এই চূড়ান্ত লজ্জাকর ঘটনা ঘটাল তার কেন এমন হল এই প্রশ্নের উত্তর বলছে সে ছোটবেলায় পুলিশের গায়ে ঢিল ছুঁড়েছিল, তার উত্তরে তাকে তার স্কুলের বন্ধুদের সামনে জিপের চারিদিকে ঘুরিয়ে নাকখঁত দেওয়ানো হয়েছে, রীতিমতো অপমানজনক শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। ফিরে এসে সে অভিমানে বলেছিল সে আর স্কুল যাবে না। তার মন ঘুরে গেল ফিসফিস রহস্যে ভরা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের দিকে।
এমনি মানুষের একটা বয়স থাকে যখন নিষিদ্ধ সবকিছুর প্রতি তার আগ্রহ জন্মায়! তাহলে এই লেখার পাঠকরা আমায় কাউন্টার প্রশ্ন করতে পারেন আমি কী বলতে চাইছি শিশুমনে এক বিরূপ প্রভাবের ফল এটা? কিছুটা হয়ত তাই। এবার আরও প্রশ্ন উঠতে পারে এর জন্য সে এত বড় ঘটনা ঘটাবে তার মধ্যে নিজের গঠনরীতিমূলক সম্ভ্রম থাকবে না কিম্বা এমন বহু মানুষের সঙ্গে এরকম ঘটনা ঘটে তারা এরকম নৃশংস তো হয় না কিংবা বহু নৃশংস মানুষ আছেন যাদের সঙ্গে শিশুবয়সে কোনোরকম অন্যায় হয়নি এই প্রশ্নগুলোর মান্যতা দিয়েই বলছি ঐ শিশুটির প্রতি কী অন্যপ্রকারের ব্যবহার করা যেত না আবার এই কথাও বলছি যে অন্যায় সে করেছে তার বিচারে কোনো ক্ষমা নেই ফলে একসঙ্গে একথাও সত্যি কোনো কিশোরের প্রতি আমরা কী আচরণ করব সেটাও ভাবা দরকার । একটি রাষ্ট্রের পরিস্থিতি কখনো এক আঙ্গিকে বিচার্য হতে পারে না , সেখানে বহু ভাবনার সময়োচিত ব্যবহারে ভারসাম্য রক্ষা হয়।
আবারও বলছি যুদ্ধ না হওয়াই ভাল , যুদ্ধ আদতেই বিরাট এক ক্ষতি কিন্তু তা বলে বারবার আমাদের দেশবাসীর ওপর, সামরিক শক্তির ওপর অন্যায় হলে আমাদের সুযোগ্য উত্তর দেওয়ার কথা ভুললে চলবে না।ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম প্রাণীও তাদের শক্তি সঞ্চয় করে রাখে বিশেষ আত্মরক্ষার মুহূর্তে,প্রয়োজন পড়লে তারা তার প্রয়োগ করে। এটুকু যেন না ভুলি #SayNoToWar বলতে বলতে কোথাও যেন চূড়ান্ত সমঝোতার মুহূর্ত তৈরি না হয় আর তার ফাঁকে অন্য কোনো রাজনীতি না ঢুকে পড়ে!