আধুনিক গদ্যের রূপকার আন্তন চেখভ

  • কাজী মাহবুবুর রহমান, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আন্তন চেখভ

আন্তন চেখভ

কিংবদন্তি রুশ কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার আন্তন চেখভকে বাংলা সাহিত্যে প্রথমবারের মতো পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সম্ভবত সৈয়দ মুজতবা আলী। ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থে তিনি চেখভকে নিয়ে স্বতন্ত্র প্রবন্ধ রচনা করেন। এবং রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্যদের সাথে তূলনামূলক একটি রচনাও সেখানে স্থান পায়। চেখভ হলেন বিশ্বের সেসকল অল্প কিছু প্রভাব বিস্তারকারী সাহিত্যিকদের একজন, যাদের নামেই পরবর্তী বিশ্বসাহিত্যে একটি স্বতন্ত্র শৈলি তৈরি হয়।

চেখভের শুরুর জীবন ছিল দুঃখ কষ্টে জর্জরিত। শৈশব থেকেই জীবনের কঠিন বাস্তবতার সাথে নিজেকে মানিয়ে একরকম সংগ্রাম করে বেড়ে উঠেছেন তিনি। তাকে বলা যায় গদ্যের চার্লি চ্যাপলিন৷ চেখভ তার অনেক গল্পই লিখেছেন কমেডির আদলে; কিন্তু চেখভের পাঠকেরা জানেন, এরই আড়ালে লুকিয়ে আছে গভীর দুঃখবোধ ও বেদনার আবহ।

বিজ্ঞাপন

১৮৬০ সালের ২৯ জানুয়ারি দক্ষিণ রাশিয়ার আজভ সাগর সংলগ্ন তাগানরোগ শহরে জন্মগ্রহণ করেন চেখভ। বাবা ছিলেন প্রাক্তন ভূমিদাস কৃষক। তিনি তাগানরোগে একটি দোকান চালাতেন। পাশাপাশি গির্জার ধর্মসংগীতে নেতৃত্বদানকারী গায়কদের পরিচালক ছিলেন। তাঁর স্বভাব ছিল ভীষণ রূঢ় ও কঠোর। মা জেভলোনিয়া জাকোভলেভনা ছিলেন ঠিক উল্টো। অত্যন্ত স্নেহবৎসল আর চমৎকার গল্পকথক; অবিকল রুশ উপন্যাসের মায়েদের মতো। তবে চেখভের বাবা ছিলেন মেধাবী ও তৎপর একজন ব্যক্তি। অভাবের সংসার চালিয়ে নিতে তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হতো। চেখভ বলেছিলেন, আমরা আমাদের মেধা বাবার কাছ থেকে পেয়েছি আর হৃদয় মা’র কাছ থেকে।

চেখভের শৈশব-কৈশোর কেটেছে সীমাহীন দারিদ্র্যে। গৃহশিক্ষকতা, পাখি ধরে বিক্রি আর খবরের কাগজে ছোট ছোট স্কেচ এঁকে তিনি নিজের লেখাপড়ার খরচ যোগাতেন। সেই সাথে প্রচুর পড়তেন। মাধ্যমিকেই পড়ে ফেলেছিলেন তুর্গেনিভ, গনসারভ ও শোপেনহাওয়ার। ১৮৭৯ সালে ভর্তি হন মস্কো বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল কলেজে। পাশাপাশি চলছিল গল্প লেখা। তবে প্রথম দিকের গল্পগুলো লিখেছিলেন জীবনযাপন ও লেখাপড়ার খরচ যোগাতে। পরবর্তীকালে তা-ই হয়ে উঠল অন্তরের তাগিদ। ডাক্তারি পাশ করলেও সেই পেশা ছেড়ে পুরোপুরি সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ করেন চেখভ। তাঁর রচিত গল্পগুলোর মধ্যে : ‘স্তেপ’, ‘চাষী’, ‘ওয়ার্ড নম্বর ছয়’, ‘বিষণ্ণ কাহিনি’ উল্লেখযোগ্য।

বিজ্ঞাপন

নাটক লিখেছেন অনেক। তবে নাট্যকার হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এসেছে ‘থ্রি সিস্টার্স’, ‘দ্য সিগাল’ এবং ‘দ্য চেরি অরচার্ড’ নাটকের মাধ্যমে। চেখভের কাহিনি অবলম্বনে মঞ্চস্থ হয়েছে বহু নাটক। এদিক থেকে শেকসপিয়র ও ইবসেনের পাশাপাশি চেখভের নাম উল্লেখ্য।

সাহিত্যচর্চায় চেখভের স্বকীয় রীতি আধুনিক ছোটগল্পের বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখে। চেখভের রচনা শৈলির ওপর দাঁড়িয়ে যায় ‘চেকভিয়ান ম্যানার’। পরবর্তীকালে জেমস জয়েস ও অন্যান্য আধুনিক কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে প্রকটভাবে চেখভের প্রভাব লক্ষ করা যায়।

১৯০৪ সালের ১৫ জুলাই আজকের এই দিনে চেখভ প্রয়াত হন।