রিয়ালের দুঃস্বপ্ন



সাদ রহমান
অলঙ্করণ কাব্য কারিম

অলঙ্করণ কাব্য কারিম

  • Font increase
  • Font Decrease

একটানে কোকের বোতলটার প্রায় পুরাটাই শেষ করতে গিয়া—না জানি কোন এক গভীর পিপাসায়—কিন্তু শেষমেষ কুলাইতে না পাইরা নাকেমুখে উঠবার জোগাড় হইল, রিয়ালের। সেইসঙ্গে তার শ্বাসপ্রশ্বাসও ক্রমে বন্ধ হইতে লাগল। এই চাপে ঘুমটাই ভাইঙ্গা গেল তার।

ফিজিকালি, রিয়াল উপুড় হইয়া বালিশের ভিতরে নাক ডুবাইয়া ঘুমাইতেছিল। ফলে তার নাশারন্ধ্রটি আটকায়া যাওয়া স্বাভাবিক ছিল। ঘুম ভাঙতেই রিয়াল দেখল, বাস্তবিক দুনিয়াতে তেমন কোনো আলোর প্রসার নাই। সদ্য যে স্বপ্ন সে দেইখা উঠছিল, যেন পৃথিবীও সেটারই মতন প্রতিবেশ নিয়া, তদ্রূপ এক আলো-আঁধারির সঞ্চয়ন হইয়া আছে। জানালার পর্দাতে যেইরকমের সন্ধ্যাটারে সে দেখতেছিল, যেন, এইরকমের একটা সন্ধ্যাই মাত্র সে স্বপ্নের মধ্যেও দেইখা আসছে।

এই আলো-অন্ধকার, আর পর্দার ব্যাপার মাথায় আসতে রিয়ালের মনে পড়ল, সে আসলে কিছুক্ষণ আগেই ঘুমাইছিল। অন্যান্য দিনের মতো আজকে, ঘুমানোর আগে সে ঢাকাতে ছিল না, ছিল নেত্রকোনায়। সেহেতু ঘুম থেকে ওঠার পরে—এখন সে জানালার উপরে এইরকমের একটা ভাবকবলিত পর্দা, ঝুলতে থাকতে দেখল।

রিয়াল আজকে স্বপ্নের মধ্যে অনেকগুলো অপরিচিত দৃশ্যের মুখোমুখি হইছে। এইজন্যই তার একটু অস্থির লাগতেছিল। কোকের যেই বোতলটিকে সে খাইতে খাইতে প্রায় মরতে নিছিল, আদতে বোতলটি যে কোথা হইতে আসছিল, সেই কথা ভাবতে গিয়া রিয়াল দেখল, বোতলের উৎপত্তির ব্যাপার সে অলরেডি ভুইলা গেছে। আর তার কণ্ঠেও বিশেষ কোনো পানির পিপাসা লাগে নাই। তাহলে, স্বপ্নের ভিতরে এমন কী কারণ থাকতে পারে, যার দরুন রিয়াল একটা বোতলের পুরাটা কোক এক ঢোকে খাইতে গিয়া—মরতে নিছে?

রিয়ালের মনে পড়ল, এমনকি কোক খাইবার আগেও স্বপ্নের মধ্যেই সে আরেকবার পানিও খাইছিল। সে আসলে নিজের সঙ্গে এইসব বোঝাপোড়াগুলো কইরা যাইতেছিল। কেন, কিসের পিপাসা ছিল তার, পানির কি? অথবা অল্প কইরা হইলেও, পিপাসা তাহার লাগছে কি? কিন্তু সে বুঝল, পিপাসা তাহার লাগে নাই।

স্বপ্নে রিয়াল তার এক বন্ধু, নাম কুরাইশ, আর অন্য আরেক বন্ধু, নাম জোসেফের সঙ্গে একটা প্রায়-অন্ধকার সন্ধ্যার আলোর মধ্যে বইসা ছিল। আর সেই নিভু আলোর অবস্থান ছিল একটা অচেনা ঘর। যার জানালা দিয়া সন্ধ্যার ওইটুকু আলোই শুধু প্রবেশ করতেছিল। তারা তিনজন আলাপ করতেছিল মদ খাওয়া বিষয়ে। তাদের কারো কাছে কোনো টাকা ছিল না, যেহেতু, রিয়ালের হঠাৎ মনে পড়ল—ওই অচেনা ঘরটিও ঢাকার থেকে অনেক দূরে একটা কোথাও ছিল। তারা স্বপ্নের মধ্যে ঢাকায় ফিরতে পারতেছিল না, টিকেটের চিন্তায়, নাকি বাসস্টপেজের চিন্তায়, নাকি সড়ক দুর্ঘটনায়, নাকি কী—ইত্যাদি অনেকরকম চিন্তার টানাটানিতে, তারা হয়তো বেখেয়ালেই এই মদের আলোচনাতে ঢুইকা পড়ছিল। আগামাথাহীন, স্বপ্নে যেইরকম হয়।

রিয়ালের অবশ্য তাৎক্ষণিক আরো কিছু বিষয় স্মরণে আসলো। অভিজ্ঞতাপ্রসূত সে জানে, স্বপ্ন উদ্ধারের ক্ষেত্রে কখনোই অতীব ব্রতী হওয়া চলে না। তাতে ওইখানেই স্বপ্ন উদ্ধারের বিষয়টির মৃত্যু ঘটে। স্বপ্ন উদ্ধারে স্বাভাবিক থাকতে হয়। স্বাভাবিকভাবে মস্তিষ্কের অন্যান্য সিন ও প্রতিসিনগুলোকে মোকাবিলা করতে হয়। তাই রিয়াল তার চোখটা বন্ধ করে, আস্তে আস্তে, স্বপ্নটার আশপাশ দিয়াই বরং ঘুরতে-টুরতে থাকল।

সবার প্রথমে তার স্মরণ হইল, তারা আসলে আলাপ করতেছিল কিভাবে মদের টাকা জোগাড় করা যায়, সেই বিষয়ে। এরকম আলাপটি তারা বাস্তব জীবনেও প্রায়শ কইরা থাকে। স্বপ্নের ভিতরে রিয়ালের বিকাশ একাউন্টে মাত্র তিনশো টাকা ছিল। কিন্তু রিয়াল মনে করতে পারল না, সেই মাত্র তিনশোটি টাকাও সে কোথায় কিম্বা কোন বিধায় খরচ কইরা ফেলছিল[স্বপ্নে]। তাই স্বপ্ন যখন চলতেছিল, তাদের তিনজনের অনুভূতিটা এমন ছিল যে, হায় আফসোস, যদি ওই তিনশোটা টাকা আমাদের থাকত, তাহলে হয়তো আমরা মরতাম না!

এমন সময়ে, স্বপ্নের মধ্যেই কে যেন রিয়ালরে জানাইল যে, মাসকান্দায় মাত্র আট টাকায় এক পেগ মদ পাওয়া যায়। এই খবরে তারা তিনজন অন্তত তিন পেগ মদ খাইতে চায়, এমন চিন্তায় চব্বিশ টাকা জোগারের ব্যাপারে অস্থির হইয়া পড়ল।

রিয়াল তার স্বপ্ন-উদ্ধার প্রক্রিয়াটিকে আরো ধীর কইরা আনলো। ভাবতে চেষ্টা করল—কিন্তু কে? কে তাদেরকে ঢাকার বাইরের ওই দূরের, ওই প্রায়-অন্ধকার এক ঘরে, আট টাকা পেগ মদের সন্ধান দিতে পারে? নিতান্ত অস্পষ্টতা অথবা ভাবালুতাভাবে হইলেও রিয়ালের চোখের সামনে এবার ভাইসা উঠল তার বাল্যবেলার বন্ধু, ফজিলতের মুখ। ফজিলতের মুখ তার চোখের সামনে ভাসতেই সে কন্ট্রোল হারাইল, এবং তার স্বপ্ন-উদ্ধার প্রকল্প ওইখানেই শেষ হইল।

রিয়ালও এইসব স্বপ্ন-টপ্ন আর ভাবতে চেষ্টা করল না। বরং ফজিলতের মুখচ্ছবিটাই আরেকটু ম্পষ্ট করতে করতে, সে শোয়া থেকে উইঠা বসল।

২.
ভয়ানক হইলেও সত্য যে, রিয়ালের এই বাল্যবেলার বন্ধু ফজিলত গতবছর রোড একসিডেন্টে প্রয়াত হইছে। এই খবর রিয়াল জানতে পারছে ছয় সাত মাস আগে।

একদিন দুপুরবেলায় রিয়ালের প্রচণ্ড গাঁজা খাওয়ার ইচ্ছা হইছিল। অগত্যা সে সইতে না পাইরা দুপুরবেলাতেই বাইর হইছিল গাঁজা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। খিলগাঁও রেললাইন ধইরা সে মালিবাগের দিকে আগাইতেছিল, আগাইতে আগাইতে, আশ্চর্জনকভাবে, হঠাৎ রেললাইনেই তার রিজভির সঙ্গে দেখা হইয়া গেল। রিজভিও রিয়ালের আরেকজন বাল্যবেলার বন্ধু। বাল্যবেলা কাটবার পরে, যেহেতু আরো কয়েকবার এই দুইজনের দেখাসাক্ষাৎ হইছিল—তাই তারা এমন হঠাৎ-সাক্ষাতেও নিজেদের মধ্যে বিশেষ কোনো আশ্চর্যের ভঙ্গি ধরল না। একটু পরে জানা গেলো, রিজভিও নাকি গাঁজাই খুঁজতেছিল।

তাদের দেখা হইছিল পরে—প্রথমে দুইজনই এমনভাবে আলাপ করতেছিল যেন তারা হুদাই আর কি হাঁটতে বাইর হইছে, রেললাইনে। রিজভি বলতেছিল, তার ভালো লাগতেছিল না। রিয়ালও বলতেছিল, তার ভালো লাগতেছিল না। কিন্তু এইসব তো কোনো অর্থ উৎপাদন করতেছিল না, কাজেই একটা পর্যায়ে তারা নিজ নিজ স্বার্থেই একে অপরের চোখগুলা নীরবে পইড়া নিছিল। মানে স্বীকার কইরা নিছিল, একে অপরে, গাঁজার উদ্দেশ্যের কথা। তখন তারা দুইজন মিলা গাঁজা সংগ্রহ কইরা রিয়ালের মেসে গিয়া সেটা স্মোক করছিল।

সেইদিন আরো হাজারটা তথ্য-ইনফরমেশনের পাশাপাশি রিজভিই রিয়ালকে এই হার্টব্রেকিং ইনফরমেশনটা দিছিল। বলছিল, কিভাবে ফজিলত বাইক এক্সডিডেন্টে মারা গেছে। এই ইনফরমেশন শুইনা রিয়ালের চোখমুখ আন্ধার হইয়া গেছিল। হা কইরা সে রিজভির দিকে এমন শূন্য দৃষ্টিতে তাকাইতেছিল, যে বোকা রিজভি তাতে ভাবছিল রিয়ালের হয়তো এই বিষয়ে অসীম আগ্রহ। তেমন ভাবনায় সে প্রয়াত ফজিলতের মৃত্যুর খবর তো রিয়ালকে বলছিলই, তার পাশাপাশি, ফজিলতের জীবন যে আরো কত জটিল আর দুর্দশাময় হইয়া উঠছিল, সেইগুলাও শুনাইতেছিল।

রিয়ালের একটা নিজস্ব ধারণা হইল, সে মনে করে, গাঁজাখোররা ইয়াবাখোরদের ব্যাপারে অমূলক এক ঘৃণা পোষণ করে। সেই কারণে একটি গাঁজাখোর একটি ইয়াবাখোরের ব্যাপারে অসংখ্য অলিক গল্প ফাঁদে। মানে ফাঁদাই স্বাভাবিক। যেমনটাই হয়তো রিজভি এখন ফাঁদতেছিল।

ইয়াবা খাইতে খাইতে শেষে ফজিলতের এমনই অবস্থা হইছিল যে, ফজিলতের বাপ-মা তারে আর ঘরেও থাকতে দিতে পারল না। বাইর কইরা দিল। রিজভির বক্তব্য অনুযায়ী, পিতামাতা যখন বাধ্য হইলেন তখনই আর কি এমনটা করলেন। এমনিতে ফজিলতের বাবা যে একজন মহৎপ্রাণ মানুষ ছিলেন, সেই বিষয়ে রিজভির নজরানা হাজির করবার কোনো শেষ ছিল না। অথচ অন্যদিকে, ফজিলতের বাপের চেহারাটাই মনে করতে পারতেছিল না রিয়াল।

রিজভি বলল, ফজিলতের বাপ ফজিলতকে দুই-দুইবার রিহাবে দিছিল, কিন্তু কোনো কাজ হয় নাই। ফাইনালি যা হবার তাই হইছে। কেন কাজ হয় নাই, আর কেনই বা ফাইনালে যা হবার তাই হইছে, এমন প্রশ্নে আইসা সম্ভবত রিজভি নিজেও খানিকটা কুচকাইয়া গেছিল।

ফজিলতের ব্যাপারে রিজভি সবচাইতে বাজে আর ভয়ংকর যেই তথ্যটা দিছিল, সেটা শুইনা রিয়াল আসলেই বিরূপ হইয়া উঠছিল, রিজভির ওপর। সে আসলে তার বাল্যবেলার একজন ঘনিষ্ঠ মৃতবন্ধুর ব্যাপারে এইসব কিছুই শুনতে চাইতেছিল না। আর রিজভিরেও সে থামতে বলতে পারতেছিল না। হয়তো বা, চিকনভাবে হইলেও, তার মনেও একটি নৈতিক ভাবাবেগ তৈরি হইছিল। যে, শুনতে কষ্ট হইলেও ফজিলতের গল্পগুলা তার শোনাই উচিত।

ফজিলতরে যখন ফজিলতের বাপ ঘর থেকে বাইর কইরা দিছিল, তখন ফজিলত আর কোথায় বা যাবে, কোথায় বা খাবে, কোথায় বা ঘুমাবে, আর ইয়াবা খাবার পয়সাই বা সে কোথায় পাবে, সেইরকমের এক নিদারুণ অবস্থায় সে কিভাবে কিভাবে যেন একটা ডাকাতিটাইপ আয়ের উৎস বাইর কইরা নিছিল। সেটা হইল, বিকাশ একাউন্ট প্রতারণা।

রিয়াল খুব ভালো কইরা জানত, একচুয়ালি কারা এই বিকাশ একাউন্ট প্রতারণার শিকার হয়। সাধারণত খুব গরিব মানুষেরা, গ্রামের মানুষেরা। কাজেই ফজিলতের এই কাহিনী তাকে খুবই মর্মাহত করল। তখন সে রিজভিকে অনুরোধ করল, এইসব কিছু আর না বলতে। রিজভি থামল বটে, কিন্তু বোঝা গেল, অনেক কথাই তার বলার বাকি। সেইদিনের পর থেকে রিয়াল রিজভির সঙ্গে আর যে কোনো প্রকার দেখাসাক্ষাৎ এড়াইয়া গেছিল। রিজভি যদিও সেদিনের পরের দিন, পরের দিনের পরের দিন, বেশ কয়েকবার তাকে ফোন করছিল, রিয়াল সেগুলো রিসিভ করে নাই।

ফজিলতের ব্যাপারে রিয়ালের এই গভীরটাইপ অনুভূতির একটা প্রধান কারণ হইল, রিয়ালের বাল্যবেলার যৌনতার সঙ্গে ফজিলতের যোগ আছিল। ক্লাস ফোরে বা ফাইভে পড়বার সময়ে, ময়মনসিংহ কে.বি. হাইস্কুলে, একদিন তাদের কোন একটা ক্লাস মনে হয় হইল না। কিম্বা কী জানি, খেলাধুলা বা অন্য কিছু ছিল মাঠে—তাই ক্লাসরুমে কেউ ছিল না। অন্ধকারের মধ্যে রিয়াল একটা বেঞ্চিতে চিৎ হইয়া শুইয়া মনে হয় ঘুমাইতেছিল। হঠাৎ কইরা প্রবল এক যৌন-উত্তেজনায় তার ঘুম অথবা তন্দ্রাটা ভাইঙ্গা গেল। সে দেখল, তার যৌনাঙ্গটা তখন টনটনে হইয়া আছে। আর ঘাড় ঘুরাইল পরে দেখল—পাশের বেঞ্চিতেই ফজিলত শুইয়া তার দিকেই তাকায় আছে। ফজিলত তারে বলল, ‘কেউ নাই।’ তারপরে একটু অপেক্ষা করল, তারপরে ফজিলত পুনরায় টেবিলের তলা দিয়া হাত বাড়াইল, আর রিয়ালের হাতটাও টাইনা নিয়া বলল, ‘আমারটাও ধর্!’

যাইহোক, কোকের বোতল খাইতে খাইতে আজকেও যখন ঘুম ভাঙছিল, তখনও রিয়ালের যৌনাঙ্গটি স্বাভাবিক ছিল না। অথবা যেহেতু সে উপুড় হইয়া ছিল, সেই কারণেও এমনটা হয়ে গিয়া থাকতে পারে। অন্য কত কারণেও তো হইতে পারে।

ঘুমানোর আগে তো রিয়াল এই বিছানাতেই বৃষ্টি ভাবির সঙ্গে আনন্দ করছিল, তারপরে ঘুমাইছিল। এটাও একটা কারণ। রিয়াল তাই খুব মজবুতভাবেই ধারণা কইরা নিল, আজকের কারণটা কোনোভাবেই ফজিলতের কারণ না। শুধু একমাত্র—যদি সে স্বপ্নে ফজিলতের ওই বাল্যবেলার ক্লাস ফাইভের চেহারাটা দেইখা থাকে, কিন্তু রিয়ালের তেমনটাও মনে হইল না। মনে হইল, না, বরং অন্য কোনো চেহারাই সে দেখছে। কোন চেহারা, সেইটা মনে না আসাই স্বাভাবিক।

ফজিলতের সঙ্গে রিয়ালের সর্বশেষ দেখা হইছিল ক্লাস এইটে পড়ার সময়। কিন্তু ফজিলতের ক্লাস এইটের চেহারাটা কেমন ছিল, সেইটা এখন তার কাছে একটা আবছা আবছা ধারণা, তার বেশি কিছু না। এছাড়া, ক্লাস এইট পর্যন্ত যাইতে যাইতে রিয়াল আর ফজিলতের সম্পর্কটাও আরেকরকমের গিয়া ঠেকছিল। সেইখানে সমকামিতামূলকতা কিছুই আর ছিল না।

রিয়ালের বাপের যেদিন কেওয়াটখালি থানা থেকে অন্য একটা কোথাও পোস্টিং হইয়া গেল, সেই হবার কিছুদিন আগে, একবার সে আর ফজিলত গাঙ্গিনার পারে রাতের শো দেখতে গেছিল। সেই শোয়ের একটা পর্যায়ে হলের লোকেরা বিরাট স্ক্রিনে [সফট]পর্ন ক্লিপ ছাইড়া দিছিল। রিয়ালের খেয়াল আছে, সেদিন তারা নিজেরা কিছুই করতে গেল না ওই হলের ভিতরে, ধরাধরি বা এই জাতীয়। তারা বরং ওইখান থেকে বাইর হইয়া মেয়েদের খুঁজতে লাগল। তারা জানত, সিনেমা হলে রাতের শোতে তেমন মেয়েদের পাওয়া যায়। যদিও তারা হাজার খুঁইজাও তেমন মেয়েকে পাইল না।

এতসব ভাবতে ভাবতে, যদিও ভাবতে কিন্তু বেশি সময় লাগে না, কিন্তু ততক্ষণে সন্ধ্যাটা বলা যায় পুরাই সমাপ্ত হইয়া গেল। যেই অল্প আলোটুকু বাকি ছিল, ছায়ার মতো, সেই আলোতেই রিয়াল দেখল বিছানায় বৃষ্টি ভাবির রক্ত লাইগা আছে। যেন খুব ছোট একটা দেশের মানচিত্রের মতো, বিরাট গোলাপি এক বিছানায়। যেহেতু বৃষ্টি ভাবির মাসিক চলতেছিল, তাই এই রক্ত। তৎমুহূর্তে, রিয়ালের একটু গাঁজা খাইতে ইচ্ছা করল।

বাসস্ট্যান্ডের দিকে গেলে গাঁজা কিনতে পাওয়া যায়। প্রতিবারই নেত্রোকোনায় আইসা সে বাসস্ট্যান্ডের গাঁজা না খাইয়া ফেরে না। সেরকম আকাঙ্ক্ষাতে সে উপরতলায় বৃষ্টি ভাবিরে ফোন করল, বলল, কিছুক্ষণের মধ্যেই সে একটু বাসস্ট্যান্ড থেকে ঘুইরা আসতেছে। বৃষ্টি ভাবি বলল বেশি দেরি না করতে, কেননা সে আটটার দিকে রওনা হইতে চায়।

৩.
বৃষ্টি ভাবির জামাই, তথা রিয়ালের বড়ভাই—বিদেশ থাকে। ফাঁকে, এই জামাই আর বড়ভাইয়ের অনুপস্থিতিটুকু তারা দুইজন মিলে উপভোগ করে।

এই উপভোগের বরাতে তারা কোনোপ্রকার রাগ, বিরাগ, অথবা অনুরাগ বা অধিকারের জন্ম হইতে দেয় না। দুইজন দুইজনের অসুবিধাগুলারে খেয়াল করে, আর সেই মোতাবেক কাজ করে। যখনই তারা সুযোগ পায়, যে কোনো সুযোগই তারা মিস করে না। আর সুযোগের কোনো অভাবকেও তারা সুযোগ বানাইতে গিয়া বিপদে পড়ে না।

রিয়ালদের বাড়ি গৌরীপুরে, অর্থাৎ বৃষ্টি ভাবির যেটা শ্বশুরবাড়ি। সেখানে তারা এইরকম কিছু করার সুযোগ পায় না। এছাড়াও বৃষ্টি ভাবি শ্বশুরবাড়ি অপেক্ষা বাপের বাড়িতেই বছরের বেশিরভাগ সময় কাটায়। যেহেতু তার স্বামী দেশে থাকে না। রিয়াল ঢাকা থেকে গৌরীপুরে ফিরবার কালে ভাবিকে দেখবার নাম করে, অথবা ঢাকা থেকে আনা একটা-দুইটা কসমেটিক পণ্য ভাবিকে পৌঁছে দিবার ছলে, অথবা বাপের বাড়ির ভাবিকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়া যাইবার অথবা ফেরত রেখে যাইবার এইসব কিছু পলে ও বিপলে, সে ভাবির সঙ্গে এইসব আনন্দকাণ্ডগুলা ঘটায়।

বৃষ্টি ভাবির বাপের পেনশনের টাকা দিয়া গড়া এই দুইতলা বাসার নিচতলাতে বৃষ্টি ভাবি আর তার বাচ্চা ছেলেটা—মাসুদ রানা, থাকে। বৃষ্টি ভাবির জামাইয়ের নাম আনোয়ারুল ইসলাম। আর উপরতলায় থাকে তার বাবা-মা, অর্থাৎ মাসুদ রানার নানা ও নানি।

রিয়াল এইখানে আসলে, তাকে নিচের তলা ছাইড়া দিয়া বৃষ্টি ভাবি আর মাসুদ রানা উপরতলায় চইলা যায়। তারপরে কোনো এক নিশ্চিত সুযোগে, হয়তো বা দুপুরবেলায়, অথবা দেবরকে ভাত খাওয়াইতে হবে তাই, বৃষ্টি ভাবি নিচতলায় আইসা হাজির হয়। তাছাড়া মাসুদ রানা কেমন একটু অসুস্থই থাকে সবসময়। ঘুমাইতেই বেশি ভালোবাসে। তখন, মাসুদ রানার ঘুমের মতোই তাদেরও ঘুম-ঘুম অথবা স্বপ্ন-স্বপ্ন লাগে।

যাই হোক, নিচতলাটা থেকে বাইর হইয়া বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাইতে যাইতে রিয়ালের মনে হইল, গৌরীপুরে রওনা দেওয়ার আগে আরো একবার সে ভাবিকে পাইতে চায়। সেরকম চিন্তা থেকে, বাজারের ভিতর দিয়া আগাইতে আগাইতে সে ভাবিকে একটা মেসেজ পাঠাইল। ‘vabi, bair hoar agey, arekbar deikhen…’

সবসময়ের মতো এইবারও রিয়ালের গাঁজা খুঁইজা পাইতে বিশেষ কোনো অসুবিধা হইল না। বাসস্ট্যান্ডের পিছনের দিকের টয়লেটগুলোর ওইখানটাতে, ওই পুরান দলটার থেকেই। গাঁজাটা নিয়া সে একটা বাসের আড়ালে আইসা দাঁড়াইল। তারপরে দুইটা সিগারেটের মধ্যে জিনিসটা ভইরা, এবার সে আস্তে আস্তে মেইনরোড ধইরা বিজিবি ক্যাম্পের দিকে হাঁটতে আরম্ভ করল।

রিয়ালের নেত্রোকোনায় গাঁজা খাওয়ার অভিজ্ঞতাগুলো একইরকম। প্রতিবারই যা প্রায় একই মতন কইরা তার জীবনে ঘটতে থাকে। একটা পর্যায়ে যখন পিছনের বাসস্ট্যান্ডের হইহল্লা ক্রমে বিলীন হইতে থাকে, তখনই রিয়াল প্রথমটায় আগুন ধরায়। এবারও তাই ধরাইল। পিছনের হইহল্লাগুলো ক্রমে বিলীন হইয়া হাইওয়ের হম-হম শব্দটা তারে ধইরা বসল। আরো সম্ভবত, তখনও তার মাথার মধ্যে ফজিলতের কথাগুলোই ঘুরতেছিল। তার যেই বন্ধুটা কিনা, রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছিল। তাছাড়া গাঁজারও তো একটা তাৎক্ষণিক প্রভা অথবা প্রভাব থাকে, সেটাই রিয়ালকে পুনরায় ওই স্বপ্ন, ওই ফজিলত, আর ফজিলতের ওই মৃত্যুতে নিয়া আছাড় মাইরা ফালাইল। তখন বৃষ্টি ভাবির ফিরতি মেসেজটাও তার ফোনে ঢুকল, যে, ‘ajke ar hoitona’।

রিয়ালের কোনোভাবেই বোধগম্য হইতেছিল না, ঠিক কী কারণে সে ফজিলতরে স্বপ্নে পাইতে পারে। এমনকি সেটা কোনো বাল্যবন্ধুর সঙ্গেও নয়, বাল্যবেলার কোনো স্মৃতিতেও নয়। বয়সকালের দুই বন্ধু কুরাইশ আর জোসেফের সঙ্গে। মদের ব্যাপারে-স্যাপারে কুরাইশ আর জোসেফরে স্বপ্নে পাওয়া স্বাভাবিক। রিয়ালের ইদানীং যা মদ খাওয়া এবং মদের যা জোগাড়যন্ত্র, তার সবটাই—এই দুইজনকে কেন্দ্র কইরা ঘইটা থাকে। তবে ফজিলত এইখানে কে? কিভাবে? বিধায়ক রূপে কি? মদের বিধানকর্তা কি? যার কাছে থাকে, আট টাকা পেগ মদের সন্ধান!

তারপরে, রিয়ালের মনে হইল, স্বপ্নে সে যেই অচেনা ঘরটারে দেখছিল, সেইটাও হয়তো বা কুরাইশের বাসাটাই হবে। তাছাড়া, আজকে দুপুরবেলাতেই যেহেতু সে ময়মনসিংহের মাসকান্দা অতিক্রম কইরা আসছিল, তাই স্বপ্নের মধ্যে মাসকান্দাতে ওই অচেনা ঘর আর আট টাকা পেগ মদের দোকান তৈরি হয়ে পড়া—অসম্ভব কিছু নয়। শুধু অসম্ভব যে, যদি আট টাকা পেগ মদের সন্ধান দিতে আসলো ফজিলত। রিয়াল ভাবতে চেষ্টা করল, ছোটবেলায় সে আর ফজিলত আট টাকা দামের কোনো কিছু খাইত বা কিনত কিনা। তেমন কিছু তার মনে পড়ল না। উল্টা পরপর দুই-দুইটা গাঁজা খাইয়া সে ভাবনার এমন এক জটিল অন্তঃপুরে গিয়া পড়ল, সম্ভবত এমনসব অন্তঃপুরে পইড়া গিয়াই মানুষ [মজা কইরা] আত্মহত্যার কথা ভাবতে আরম্ভ করে।

রিয়ালের পাশ দিয়া ছোট ছোট সিএনজি আর বড় বড় বাস ফরফর কইরা ছুটতে ছুটতে যাইতেছিল। এইসব যানবাহনেরা মাত্রই বাসস্ট্যান্ড থেকে ছাইড়া-ছাইড়া আসতেছিল। বাসগুলার বেশিরভাগের গন্তব্য ছিল ঢাকা, কোনোটা কোনোটা ময়মনসিংহ পর্যন্ত গিয়া আবার ফেরত আসবে। সিএনজিগুলা যাবে গৌরীপুর, মাসকান্দা, ব্রিজের পাড়, ইত্যাদি নানান জায়গায়। হয়তোবা গাঁজা খাবার কারণেই, রিয়ালের কাছে এইসব সিএনজিগুলাকে নিতান্ত ঠোঙ্গার মতন লাগল। তার মনে হইল, কোনো একটা বাসের সঙ্গে যদি কোনো একটা সিএনজির একটা কোনাও বাড়ি খায়, তাতে সিএনজিটা উইড়া গিয়া কতদূরে যে পড়বে, তার ইয়ত্তা নাই। অথচ তা সত্ত্বেও, এইসব সিএনজিরা ও বাসেরা, কিভাবে এত স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতেছিল, সেটা ভাইবা রিয়ালের অবাকই লাগল। কিছুক্ষণ পরেই যে তাকে বৃষ্টি ভাবি সহযোগে এই রাস্তা দিয়া গৌরীপুরে যাইতে হবে, সেইকারণেও ভয় হইল।

সে বিজিবি ক্যাম্পের কাছাকাছি পৌঁছাইলে পরে রাস্তার কিনারে একটা গাছের গুঁড়ির উপরে বসল। তখন তার মনে হইল রিজভিরে একটা ফোন করা যাইতে পারে। কেন সে জানে না, তবে তার বিশ্বাস জন্মাইল, এইসময়ে ফজিলতকে নিয়া দুইটা-একটা কথা বললে সে একটু হয়তো প্রশান্তি পাবে।

কয়েকবার ফোন করার পরে রিজভি ফোন ধরল। রিজভি একটু ব্যস্ত ছিল বটে, তবে তার ব্যস্ততার গল্পটাও বয়ানযোগ্য। ঈদের ছুটিতে রিজভির বাপ-মা-ভাই-বোন সবাই গ্রামের বাড়িতে গেছে, কিন্তু রিজভি যায় নাই। এই মুহূর্তে, রিজভির প্রেমিকা হোস্টেল থেকে বাড়িতে যাবার আগের রাতে—একটা রাত রিজভির সঙ্গে খালি বাসায় কাটাইয়া যাইতেছে। হাহা, যদিও রিয়াল এই ব্যস্ততারে বিশেষ পাত্তা দিল না। নানান-নানান কথায়-মথায় ফজিলতের আলাপটা সে তুললই।

এইসব বিষয়ে রিজভির হয়তো আগ্রহ তৈরিই থাকে। বা গার্লফ্রেন্ডের সামনে বইসা থাকার কারণে তার আগ্রহ তৈরিও হইতে পারে। অথবা একজন ইয়াবাখোরের প্রতি তার ঘৃণাপূর্ণ অবস্থান, বা ইয়াবার পরিণতি বিষয়ে তার বক্তব্যপ্রদান, যেন এইসব ব্যাপারগুলাও তার দায়িত্বেরই অন্তর্গত বিষয়। তাই সে ফজিলতের বিষয়ে, অল্পক্ষণের মধ্যেই নতুন নতুন আরো অনেক খবর রিয়ালকে জানাইল। সেগুলোর মধ্যে ছিল একটা বিশেষ খবর, মৃত্যুর বিবরণী হিসাবে রিজভি সেটা বলছিল। আর এই খবরটাই রিয়ালের স্বপ্ন নিয়া করা ফ্যান্টাসি-ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, উদ্ধার-কল্পনা, সবকিছুরেই এক লহমায় উপড়াইয়া ফেলল। যেন রিয়ালকে জীবন-মরণের এক সন্ধিক্ষণে আইনা খাড় করাইয়া দিল।

রিজভি যেই ঘটনা বলল, তার সারমর্মটা ছিল এমন—ফজিলত বিদ্যাময়ী কলেজে পড়তে সময়ে যেই মেয়েটার সঙ্গে প্রেম করছিল, আর কয়দিনের মধ্যেই যেই প্রেম সে খোয়াইছিল, অনেকবছর পরে ফেসবুকের সূত্রে ফজিলত ওই মেয়েটাকেই আবার পেয়ে ফেলছিল। রিজভির ধারণা, সেইটাই ফজিলতের জন্য কাল হইছিল। ওই মেয়ের বিয়া হইছিল যার সঙ্গে, সেই লোকটা ছিল খারাপ। ফলেই সে ফজিলতরে পুনরায় পাইছিল মাত্রই তার সঙ্গে আবারও জড়াইতে চেষ্টা করছিল। আর জড়াইতে জড়াইতে, মানে জড়াইতে জড়াইতে, যেইদিন ফজিলত বাইকে কইরা আইসা ওই মেয়েকে নিয়া ঢাকার উদ্দেশ্যে পলাইতেছিল, যাওয়ার বেলায়—সেইদিনটিতেই মাসকান্দায়—তাদের বাইক একটা বাসের তলায় পিষ্ট হইল। মেয়েটা বাঁচল যদিও, ফজিলত মরল।

এই কাহিনী শুইনা, রিয়ালের কাছে—আজকের সন্ধ্যার স্বপ্নটা মৃত্যুর এক গভীর সংকেত ছাড়া আর কী-ই বা মনে হইতে পারে? ভয়ে তার ভিতরের সবটুকু গোপন সত্যই তখন বাহিরে চইলা আসলো। ভাবির সঙ্গে তার যেই পলায়নের প্রকল্প, এইসব কিছু থেকেই সে তৎক্ষণাৎ পরিত্রাণ লইয়া ফেলল। ভাবল, দুই মাস পরে বড়ভাই চইলা আসবে? আসুক। তার দুই মাস পরেই সে নিজে বিদেশে চইলা যাবে। একমাত্র বিদেশে গেলেই সে বৃষ্টি ভাবিকে ভুইলা থাকতে পারবে।

   

নারীর পোশাক, নারীর ইচ্ছে হয়ে থাক—এই ভাবনায় ১৩ লেখিকার বই ‘শাড়ি’



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
‘নারীর পোশাক, নারীর ইচ্ছে হয়ে থাক- এই ভাবনায় ১৩ লেখিকার বই ‘শাড়ি’

‘নারীর পোশাক, নারীর ইচ্ছে হয়ে থাক- এই ভাবনায় ১৩ লেখিকার বই ‘শাড়ি’

  • Font increase
  • Font Decrease

চারপাশে এত কিছু ঘটে যে চিন্তা ও উদ্বেগ প্রকাশ করার মতো বিষয়ের অভাব নেই। তবে এর মধ্যে কিছু জনগোষ্ঠীর চিন্তাভাবনার একটি জায়গায় আটকে আছে; আর তা হলো নারীর পোশাক। নারী কী পোশাক পরল, কেমন পোশাক পরল, কেন পরল ও এমন পোশাক পরা উচিত ছিল না; ইত্যাদি নিয়ে দিন-রাত ব্যস্ত। আর এমন জনগোষ্ঠী সংখ্যায় দিন দিন বেড়েই চলছে। নানা সময়ে এ নিয়ে তর্ক বিতর্কে মেতে উঠে বাঙালি। নারীর পোশাক নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতা তো বটেই, অন্য ধর্মের অস্তিত্ব এবং ভিন্ন জীবন দর্শনকেও ভুলে যায় সমালোচনাকারীরা।

বিভিন্ন সময় নারী দেহে আঁচলের বিশেষ অবস্থান দেখে ‘ভালো মেয়ে’, ‘খারাপ মেয়ে’র সংজ্ঞা নির্ধারণ পদ্ধতি স্থির করে দিতে চাওয়া হয়েছে মত প্রকাশের স্বাধীনতার আড়ালে। আর এর প্রতিবাদ- প্রতিরোধ উঠে এসেছে সমাজের নানা স্তর থেকে। কেউ কেউ বিপক্ষে মত প্রকাশ করেছেন।

নারী পোশাক নিয়ে ভাবনা ও মতামত ইতিহাসের দলিল রূপে প্রকাশ করার জন্য উদ্যোগে নিয়েছে কলকাতার ঋত প্রকাশনী। আগামী ১১ মে বিকেল সাড়ে ৫টায় অভিযান বুক ক্যাফে-তে প্রকাশিত হতে চলেছে ‘শাড়ি’ নামের এই বইটি।

বইটি বের করার পরিকল্পনা, সম্পাদনা ও নিমার্ণের দায়িত্বের রয়েছেন তানিয়া চক্রবর্তী। প্রচ্ছদ ও চিত্রের দায়িত্বে রয়েছেন অংশুমান।


সংকলনটিতে অলংকরণ ও লেখার মাধ্যমে আলোকপাত করা হয়েছে আবহমানকাল জুড়ে পোশাককে কেন্দ্র করে বাঙালি মেয়েদের আহত দেহ ও মনের দিকে। সোচ্চারে উচ্চারণ করা হয়েছে সেই ইতিহাস যা অনুচ্চারিত থেকে যায় সামাজিক বিধি নিষেধেরে আড়ালে।

বইটির মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি নয়, অস্তিত্বের সন্ধানে বের হয়েছেন তেরোজন লেখক। যারা হলেন- জিনাত রেহেনা ইসলাম, যশোধরা রায়চৌধুরী, মধুজা ব্যানার্জি, চৈতালী চট্টোপাধ্যায়, রোহিণী ধর্মপাল, সেবন্তী ঘোষ, মিতুল, অমৃতা ভট্টাচার্য, রত্নদীপা দে ঘোষ, অদিতি বসু রায়, দেবাবৃতা বসু, শ্রুতকীর্তি দত্ত ও তানিয়া চক্রবর্তী।

দৃশ্য বা শব্দের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ভাইরাল হওয়া নয়, সংকলনটির উদ্দেশ্য একটি প্রলেপ সৃষ্টি যা আগামী প্রজন্মের মাথায় ছায়া দেবে। মেনে নেওয়া নয়, প্রশ্ন করার সাহস জোগাবে নতুন করে নয়।

এ প্রসঙ্গে তানিয়া চক্রবর্তী বলেন, আমরা মনে করি, ‘শাড়ি’ নিয়ে একটি বই প্রকাশ করা হচ্ছে। সম্প্রতি নারীদের পোশাক নিয়ে ভারতে একটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। আমি মনে করি, ২০২৪ সালে এসে নারীর পোশাক নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। মেয়েরা যা ইচ্ছা তা্ই পরতে পারে। তাদের বুদ্ধি, কর্ম ও অভিব্যক্তি বিষয়টিই আসল। এ বিষয়গুলো বইটিতে স্থান পেয়েছে।

;

৩ গুণী পাচ্ছেন বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র ও নজরুল পুরস্কার



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
-অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা, অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী ও অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা

-অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা, অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী ও অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা

  • Font increase
  • Font Decrease

রবীন্দ্র ও নজরুল সাহিত্যে গবেষণায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র ও নজরুল পুরস্কার পাচ্ছেন ৩ গুণী গবেষক।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বাংলা একাডেমির জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক সমীর কুমার সরকার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলা একাডেমি রবীন্দ্র-সাহিত্যের গবেষণায় অবদানের জন্য এবার রবীন্দ্র পুরস্কার ২০২৪ পাচ্ছেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী এবং অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা। অন্যদিকে, বাংলা একাডেমি নজরুল-সাহিত্যে গবেষণায় অবদানের জন্য অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা পাচ্ছেন নজরুল পুরস্কার ২০২৪।

আগামী ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১/৮ মে ২০২৪ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র পুরস্কার-২০২৪ ও আগামী ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১/২৩ মে ২০২৪ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে নজরুল পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হবে।

অধ্যাপক ড. রাজিয়া সুলতানা 

খ্যাতিমান নজরুল গবেষক অধ্যাপক ড. রাজিয়া সুলতানার জন্ম ২৫শে জুলাই ১৯৩৭। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় ১৯৫৮ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৫৯ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮৫ সালে মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিমের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি এইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন।

বাংলাদেশের মহিলাদের মধ্যে তিনি প্রাচীন ও মধ্যযুগের পাণ্ডুলিপি ও সাহিত্য বিষয়ে প্রথম গবেষক। ১৯৮৩ সালে তিনি ফারসি ভাষায় ডিপ্লোমা লাভ করেন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রণীত মধ্যযুগের সাহিত্য-সম্পাদনা-গ্রন্থ 'নওয়াজিশ খান বিরচিত গুলে-বকাওলী কাব্য। পরে প্রকাশিত হয় তাঁর গবেষণাগ্রন্থ ‘আবদুল হাকিম : কবি ও কাব্য (১৯৮৭)। অপর সাহিত্য সম্পাদনা-গ্রন্থ 'আবদুল হাকিম রচনাবলী' (১৯৮৯)।

কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে ড. রাজিয়া সুলতানার গবেষণাগ্রন্থ 'কথাশিল্পী নজরুল (১৯৭৫), 'নজরুল (১৯৮৮), অন্বেষা' (২০০১) এবং 'সাহিত্য-বীক্ষণ' (১৯৮৮)। ড. রাজিয়া সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। ইতোপূর্বে তিনি বিভিন্ন সরকারি কলেজে ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।

অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধোত্তর প্রজন্মের বিশিষ্ট সাহিত্য-সমালোচক ভীষ্মদেব চৌধুরীর জন্ম ১৯৫৭ সনের ৩০শে নভেম্বর সিলেট শহরে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন। ১৯৮৪ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা। ২০০০ সনে তিনি অধ্যাপক হিসেবে উন্নীত হন। বাংলা উপন্যাস, রবীন্দ্র ছোটগল্প এবং বাংলাদেশের সাহিত্য তাঁর অনুধ্যান ও মূল্যায়নের কেন্দ্রীয় বিষয়। ভীষ্মদেব চৌধুরীর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : জগদীশ গুপ্তের গল্প : পঙ্ক ও পঙ্কজ (১৯৮৮); মিরজা আবদুল হাই (১৯৮৯); বাংলাদেশের সাহিত্যগবেষণা ও অন্যান্য (দ্বি সংস্করণ ২০০৪); সৈয়দ মুজতবা আলীর পত্রগুচ্ছ (সম্পা. ১৯৯৩); তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস : সমাজ ও রাজনীতি (১৯৯৮); তারাশঙ্কর স্মারকগ্রন্থ (সম্পা. ২০০১); দু-চারটি অশ্রুজল : রবীন্দ্রগল্পের ভিন্নপাঠ (২০০৫); কথাশিল্পের কথামালা : শরৎচন্দ্র ও তারাশঙ্কর (২০০৭); সাহিত্য-সাধনায় ঢাকার নারী (২০১১); প্রভাতসূর্য :রবীন্দ্রনাথ সার্ধশত জন্মবর্ষ স্মরণ (সম্পা. ২০১১)।

অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা

অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী, ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের শিক্ষক ও সাধারণ সম্পাদক। গুণী এই শিল্পীর জন্ম রাজশাহীতে। বাবা অধ্যাপক মফিজ উদ্দিন আহমদ ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের শিক্ষক ও মা খানম মমতাজ আহমদ। রবীন্দ্রনাথের গানসহ সুস্থধারার সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে তিনি সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে যুক্ত থেকেও তিনি দেশজুড়ে শুদ্ধ সঙ্গীতের চর্চাকে ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখছেন। 

;

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত

  • Font increase
  • Font Decrease

আবুল মাল আবদুল মুহিত সাবেক অর্থমন্ত্রী। সবচেয়ে বেশিবার বাজেট উপস্থাপন করে রেকর্ড গড়া অর্থমন্ত্রী তিনি। দীর্ঘ চাকরিজীবন শেষে রাজনৈতিক জীবন এবং স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে অবসর—সব ছিল তার বর্ণাঢ্য জীবনে। তার পর দেশের অর্থমন্ত্রী হয়েছেন আবু হেনা মোহাম্মদ মুস্তাফা কামাল ও বর্তমানে আবুল হাসান মাহমুদ আলী; কিন্তু কেউই আবুল মাল আবদুল মুহিতের মতো সাফল্যের সাক্ষর রাখতে পারেননি। মুস্তাফা কামালের মন্ত্রিত্ব কালের পুরোটা সময় কেটেছে ‘অনুপস্থিতি’ আর বিবিধ ব্যর্থতা দিয়ে। নতুন অর্থমন্ত্রী মাত্রই নিয়েছেন দায়িত্ব, তাই তাকে এনিয়ে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছা কঠিন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত কেবল অর্থনীতিবিদ ও সাবেক অর্থমন্ত্রীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন লেখক, গবেষক, ভাষাসংগ্রামী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাঙালির মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি সরকারি চাকরি ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৫৬ সালে যোগ দিয়েছিলেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি)। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ওয়াশিংটন দূতাবাসে পাকিস্তানের কূটনীতিকের দায়িত্বে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের জুনে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৮১ সালে স্বেচ্ছায় সরকারি চাকরি ছেড়েও দেন। সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদেরও অর্থমন্ত্রী ছিলেন তিনি। গণতন্ত্রে দেশকে ফেরানো হবে এই শর্তে তিনি এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। এরপর বছরখানেক দিন শেষে যখন দেখেন এরশাদ তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছেন না, তখন তিনি স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ের পর যে মন্ত্রিসভা গঠন করে সেখানে শেখ হাসিনা তাকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। প্রবল প্রতিকূল দেশীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়া আবুল মাল আবদুল মুহিত বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতিকে যে জায়গায় নিয়ে গেছেন তার সুফল দীর্ঘদিন ভোগ করেছে দেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্পসহ আরও অনেক প্রকল্প তার আমলে শুরু হয়। তিনি আর্থিক ব্যবস্থাপনার দিকটি সুনিপুণভাবে করে গেছেন। তার দায়িত্বকালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের যে ঊর্ধ্বগতির সঞ্চার হয়েছিল সেখান থেকে দেশ একটা সময়ে ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায়।

মাথাপিছু আয়, জিডিপি, রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতির নানা খাতের ব্যবস্থাপনায় তিনি যে সাফল্যের সাক্ষর রেখেছেন তার পথ ধরে পরের অর্থমন্ত্রীরা সেটা অব্যাহত রাখতে পারেননি। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে পারেননি এবং পদে থেকেও তার কাজে অনুপস্থিতি দেশকে গভীর সংকটে নিপতিত করেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মুস্তাফা কামাল বিজয়ী হলেও তাকে মন্ত্রিসভায় রাখেননি শেখ হাসিনা, এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে।

নানা কারণে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে এই দেশ স্মরণ রাখবে। তন্মধ্যে একটি যদি পেনশন ব্যবস্থা হয়, অন্যটি নারীর ঘরের কাজের মূল্যায়ন। নারীর ঘরের কাজের মূল্যায়নের বিষয়টি এখনো আনুষ্ঠানিক হয়নি যদিও, তবে এনিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। নয় মাস আগে দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হয়েছে, এবং এই নয় মাসে ব্যাপক সাড়া যদিও পড়েনি, তবে এখন পর্যন্ত ১ লাখ লোক এই সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। অথচ তিনি যখন প্রথমবার সবার জন্যে পেনশন চালুর কথা বলেন, তখন এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছিলেন অনেকেই। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে তিনি এক বৈঠকে সকলের জন্যে পেনশন চালুর ব্যবস্থার কথা বলে অনেকের বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন। তবু তিনি এর একটা খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে। আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘সবার জন্য পেনশন চালু করতে পারলে এ দেশ থেকে অনেক কিছু দূর হবে। মানুষ যখন দেখবে তার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত তখন অনেকেই অনিয়ম থেকে সরে আসবে। মানুষ এত অনিয়ম-হানাহানি করে শুধু ভবিষ্যতের জন্য।’ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে খসড়া তৈরি হয়ে আসার পর তিনি জানালেন, কিছুই হয়নি। এরপর তার নিজের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় খসড়া তৈরির কাজ। তিনি এনিয়ে কথা বলতেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবুল মাল আবদুল মুহিতের ওই উদ্যোগের পক্ষে ছিলেন, এবং কাজ করার নির্দেশ দেন। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর পর তথ্যগুলো একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক কর্মকর্তা।

আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে দেশের সকল নাগরিকের জন্যে পেনশন ব্যবস্থা চালুর স্বপ্নের কথা বলেছিলেন। তিনি তার বাজেট বক্তৃতার ৫৯ নং পৃষ্ঠার পেনশন অধ্যায়ে বলেছিলেন ‘সরকারি পেনশনারগণ দেশের সমগ্র জনগণের একটি ক্ষুদ্রাংশ মাত্র। তাই সরকারি কর্মচারীদের পাশাপাশি সকলের জন্যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অংশগ্রহণমূলক সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুকরণে আমরা কাজ করছি। আমাদের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের অন্তর্নিহিত লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ-রাষ্ট্রে রূপান্তর করা।’ এর আগের বছরের বাজেটে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ, যাদের প্রায় সবাই সরকারি চাকুরে, এখন পেনশন সুবিধা পান। বাকি ৯৫ শতাংশের মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ গ্র্যাচুইটি সুবিধা পেলেও অন্যদের জন্য সে সুবিধাও নেই।’ তার বক্তব্য তখন সে পর্যন্তই ছিল, এবং এক বছর পর পরের বাজেটে এসেছে স্বপ্নের পূর্ণ অবয়ব। আর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকারে। এরবাইরে আছে ২০১৮ সালে পেনশন নিয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিতের উদ্বোধন করা এক পাইলট প্রকল্পে, যেখানে ৫৭ জন ব্যক্তিকে এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়। দেশের মানুষদের জন্যে পেনশন ব্যবস্থা চালু নিয়ে যে স্বপ্নের রূপরেখা দিয়েছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত, সেটা তার জীবদ্দশায় পূরণ হয়নি। তার মৃত্যুর কয়েক মাস পর সরকারি তরফে হয়েছে প্রকাশ্য এবং প্রধানমন্ত্রী করেছেন এর বাস্তবায়ন।

সম্প্রতি নারীদের গৃহকর্মের অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। গত ২৩ এপ্রিল সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয় বলে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। নারীদের গৃহকর্মের এই মূল্যায়নে ঘরে হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন, বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদনসহ নানা হিসাব এর মধ্যে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশের অন্তত ৪৩ শতাংশ নারী পুরোপুরিভাবে গৃহস্থালি কাজের সঙ্গে যুক্ত। দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপি) নারীর অবদান ২০ শতাংশ। তবে নারীর এই গৃহস্থালি কাজকে জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতিতে যোগ করা হলে জিডিপিতে নারীর অবদান দাঁড়াবে ৪৮ শতাংশ বা তার কাছাকাছি। এখন নারীদের গৃহস্থালি কাজের মূল্যায়নের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে, এ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এটাও ছিল সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্বপ্ন। দায়িত্ব পালনকালে একাধিকবার তিনি এনিয়ে কথা বলেছেন, নারীদের কাজের রাষ্ট্রীয় মূল্যায়নের গুরুত্বারোপ করেছেন। ২০১৭ সালের অক্টোবরে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে প্রয়াত এই অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশে ঘরের সেবামূলক কাজের কোনো মূল্যায়ন নেই। সে কারণে জিডিপিতে এর কোনো অন্তর্ভুক্তি নেই। এটার মূল্যায়ন করা জরুরি।’ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে এই মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘বিষয়টি আমরা পরিসংখ্যান বিভাগে যুক্ত করব এবং সরকারিভাবে আমরা এটিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাব।’

আবুল মাল আবদুল মুহিত নেই আজ দুই বছর। ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল না ফেরার দেশে চলে যান বরেণ্য এই ব্যক্তিত্ব। মৃত্যুর মাস দেড়েক আগে তাকে দেওয়া সিলেটে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি নিজের জীবনের মূল্যায়নে বলেছিলেন, ‘আমি আমার জীবনকে নিয়ে গর্বিত।… অনেকে হয়ত একে আত্মগরিমা বলবেন। কিন্তু এটা অন্যায় নয়। বরং এরজন্য নিজেকে গড়ে তুলতে হয়।’ ৮৮ বছরের দীর্ঘ সময়কে তিনি বলতেন ‘মহাতৃপ্তির-মহাপ্রাপ্তির জীবন’।

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত।

;

চতুর ঘুঘু



শরীফুল আলম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নেশাখোরের মত কখনো কখনো খিলখিল করে হাসি
প্রথমত দহন উষ্ণতায় ,
তারপর সুবিশাল শূন্যতায় ,
কখনো কখনো ছুঁয়ে ফেলি সাজানো প্রতিমা
জীবনের দাবী ,
তবে আপাতত গন্তব্য বলে কিছু নেই আমার
কবিতার অবয়ব এখনো যেটুকু আছে
তাকে আমি রঙ্গের উৎসবই বলি
কিম্বা যেটুকু আছে তা জীবনের দাবী ।

ক্রমাগত অন্তর্গত দ্বন্দে
অবাধ্য ভাষা এখন প্রাচীর তোলে
প্রসারিত মৃত্যুর কথা বলে ,
আমি তার গল্পের শেষটা জানার চেষ্টা করি
রাতের গহ্বর থেকে তোলে আনি মৃত্যুর পরোয়ানা ,
কিন্তু অস্পষ্টতা কিছু থেকেই যায়
আবার নিজে নিজেই বলি
আমার জলভূমিতে আবার কিসের নিঃসঙ্গতা ?

স্বপ্নবাসর ? সে এক চতুর ঘুঘু
আমি তার ক্ষণিকের হটকারীতা বুঝতে পারি
এমনকি চোখ বুজে
আমি ভুলে যাই তার সন্ধ্যার ঘায়েল
যেন দেখেও দেখিনা
বিনা মোহে সারারাত অহেতুক তার অহংকার
নিরর্থক বাজি ধরে সে
অর্কিড নিরালায় আমিও একা থাকি
ভাঙ্গা চোরা রাত জেগে থাকে আমার পাশে
মনে হয় চোখ দিয়ে ছুঁয়ে দেখি তার ঢাকাঢাকি
ফিরতি নজরে সেও আমায় দেখে
আমার মিষ্টি কবিতার মতই
আমিও থমকে যাই পাখীর ডাকে
দূর দরিয়ায় তখন উলুধ্বনি শংখ বাজে ,
ইচ্ছে হয় নাগরদোলায় আবার গিয়ে দুলি
আর জানই তো কবিরাই প্রেমে পড়ে
কবিরাও চুমু খায়
সুন্দরী পেলে তাঁরাও শুয়ে পরে।

*************************
শরীফুল আলম ।
২১এপ্রিল । ২০২৪ইং
নিউইয়র্ক । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ।

;