ওজন স্কেলে গাড়ির ওজন একটু বেশি হলেই পাঠিয়ে দেয়া হয় স্টক ইয়ার্ডে। সেখানে গাড়ি প্রতি আদায় করা হয় ৫০ টাকা। বঙ্গবন্ধু সেতুতে এটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে টাকা আদায়ের নিয়ম না থাকলেও কেবল সড়ক সংস্কারের অজুহাতে টেন্ডার ছাড়াই পরিবহন থেকে টাকা আদায় করছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
স্কেলে অনেক সময় পরিবহনের ওজন অনেক বেশি দেখায়। তবে গাড়ি ঘুরে স্কেলে এলে সেটির পরিমাপ সঠিক হয়। অথচ ঘুরে যাওয়ার জন্য ৫০ টাকা বাড়তি দিতে হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, টাকা আদায়ের ব্যবস্থাপনায় স্টক ইয়ার্ডে নিয়োগ করা হয়েছে ৩০ জনকে। যদিও ২০১১ সালের আগে সেতুতে এ ধরনের কোনো টাকা আদায় হতো না। ২০১১ সালের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সেতু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ওজন বেশি হওয়ার পরিবহন থেকে এমন টাকা আদায়ের উদ্যোগ নেয়া হয়।
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, সেতুতে সাংবাদিক প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া সেতু এলাকায় কোনো ধরনের ছবি তোলা নিষেধ রয়েছে। এমনকি কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে সেতুর কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী কথা বললে তার নিয়োগ বাতিল করারও অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে বঙ্গবন্ধু সেতুতে গিয়ে জানা গেছে, সেতু পার হতে ভারী পরিবহনগুলোকে ওজন স্টেশন অতিক্রম করতে হয়। মেশিনে ওজন বেশি হলে পরিবহনটিকে পাঠিয়ে দেয়া হয় স্টক ইয়ার্ডে। আর এতে গাড়ি প্রতি আদায় করা হচ্ছে ৫০ টাকা করে। পরে গাড়িগুলো ৫০ টাকা পরিশোধ করে স্টক ইয়ার্ড পার হচ্ছে। এই স্টক ইয়ার্ড পরিচালনার জন্য ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
আরও জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয় প্রান্তে প্রতিদিন গড়ে ৩-৪শ গাড়ি ওজন বেশি হওয়ার জন্য ঘুরে স্টক ইয়ার্ডে যায়। পরিবহনের পেছনের চাকায় (স্কেলে) সর্বোচ্চ ১৬ টন ৪০০ কেজির উপরে হলেই সেটিকে স্টক ইয়ার্ডে পাঠানো হয়। আর এতে প্রায় ৬ লক্ষাধিক টাকা আদায় করা হয়। আদায়কৃত এই টাকা থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করে বাকি টাকা সেতুর ব্যাংক একাউন্টে জমা করা হয়।
এ ছাড়া বেশি ওজনের গাড়ি হতে মালামাল স্থানান্তরের জন্য সেতুর উভয় প্রান্তে ১২০ জন লেবার (শ্রমিক) নিয়োজিত রয়েছেন। গাড়িতে ১ টন ওজন মালামাল সরানোর জন্য তাদের ৩০০ টাকা করে দিতে হয় চালকদের।
চালকদের অভিযোগ, বঙ্গবন্ধু সেতুতে স্থাপিত ওজন স্টেশনের যন্ত্র প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ে। এতে অনেক সময় পরিবহনের ওজন অনেক বেশি দেখায়। এতে গাড়ি ঘুরে এসে আবার ওজন স্টেশনে এলে সেটির পরিমাপ সঠিক হয়। অথচ ঘুরে যাওয়ার জন্য ৫০ টাকা বাড়তি দিতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্টক ইয়ার্ডে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা বলেন, গাড়ি ঘুরলেই টাকা দিতে হবে। টাকা পরিশোধ ছাড়া চালকরা স্টক ইয়ার্ড পার হতে পারবে না। অনেক গাড়ির ওজন ঠিক থাকলেও সেগুলো ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে শুধুমাত্র টাকা আদায়ের জন্য।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) বঙ্গবন্ধু সেতুর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন বলেন, সেতু এলাকায় যেসব পরিবহনের ওজন বেশি হচ্ছে, সেগুলো থেকে রশিদের মাধ্যমে ৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। টাকাগুলো নিয়মিত বিবিএ প্রধান কার্যালয়ের একাউন্টে জমা দেয়া হচ্ছে। এর জন্য ঠিকাদার নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।