(পূর্বপ্রকাশের পর) আবুল মনসুর আহমদের সক্রিয় ও পেশাদার সাংবাদিকতা জীবনের চতুর্থ ও শেষ অধ্যায়ের শুরু ১৯৪৭ সালের জানুয়ারি মাসে। এক হাজার টাকা বেতনে ‘ইত্তেহাদ’ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্বে নেন। এখানকার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, ‘আমার গোটা সাংবাদিক জীবনের মধ্যে এইটাই আমার সবচেয়ে সুখ, আরাম ও মর্যাদার মুদ্দত ছিল। বরাবরের মতো পূর্ণ সাংবাদিক স্বাধীনতা এখানে ছিলই, তাঁর উপর ছিল অর্থ-চিন্তার অভাব এবং নবাবযাদা ও ফারুকুল ইসলামের সুষ্ঠু পরিচালনা।’
লক্ষণীয়, আবুল মনসুর আহমদ যেন গল্পের সেই পরশ পাথর যার স্পর্শে সকলেই কেবল সোনা হয়ে ওঠে। তাঁর সাংবাদিকতা ও সম্পাদক জীবনের দিকে দৃষ্টিপাত করলে মিলবে তারই প্রামাণ। তিনি যেসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন, শুরুর সেই ‘ছোলতান’, ‘মোহাম্মদী’, ‘দি মুসলমান’, ‘খাদেম’ থেকে ‘কৃষক’ ও ‘নবযুগ’ অবধি সর্বত্রই তিনি সোনা ফলিয়েছেন। হয়েছেন প্রশংসিত। শ্রম-নিষ্ঠা-মেধা ও দায়িত্বশীলতা দিয়ে সন্তুষ্ট করতে পেরেছেন কর্তৃপক্ষকে। চিত্ত জয় করেছেন পাঠকের। ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে হয়েছেন জয়ী। বিনিয়োগ বিচারে, সুযোগ-সুবিধার মানদণ্ডে প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের তুলনায় নিজের প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তারপরও উনি চাকরিচ্যুত হয়েছেন, সহ-সম্পাদক হিসেবে একবার এবং সম্পাদক (প্রধান সম্পাদক ও শ্যাডো এডিটর) হিসেবে দুইবার। এ কি অমোঘ নিয়তি! নাকি জীবন ঘষে ’আগুন’ হয়ে ওঠার শিক্ষা?
রবীন্দ্রনাথ যে ‘আগুন’কে ‘পরশমণি’ সম্বোধন করে বলেছেন, ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’। আবুল মনসুর আহমদের জীবন, কর্ম, সাধনা, লক্ষ্য ও অভিপ্রায় ছিল সত্যি সত্যিই ‘আগুনের পরশমণি’ তুল্য। যার ছোঁয়ায় আলোকিত হওয়ার অপার সুযোগ রয়েছে সকল প্রজন্মের। তিনি চাকরি করেছেন সাতটি প্রতিষ্ঠানে, তিনটার অভিজ্ঞতা মন্দ ও গভীরতর বেদনার। এইসব হতাশা, অপমান, অন্যায়-অবিচারে তিনি ভেঙ্গে পড়েননি, নিজেকে গুটিয়ে নেননি, অবশ্য এটা উনার স্বভাবের মধ্যেও পড়ে না। কারণ ওইসব চাকরিচ্যুতি, বরখাস্তের যৌক্তিক কোনো কারণ ছিল না। উনার অযোগ্যতা-অপারগতাও এতে প্রমাণিত হয় না। উল্টো তাঁর সাংবাদিকতা-সম্পাদক জীবনের চারটা পর্যায়ের প্রতি লক্ষ্য করলে আমরা দেখি, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে তিনি নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করেছেন এবং সাংবাদিকতার কৌলিন্য বজায় রেখে নিজেই নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন। নিজের প্রতি পূর্ণ আস্থা বা বিশ্বাস না থাকলে এই দুর্লভ গুণ অর্জন করা যায় না। আবুল মনসুর আহমদের এই কর্মনিষ্ঠা, প্রতিষ্ঠান প্রেম, ও সাংবাদিক-মানস থেকে যথার্থ-যুক্তি ও প্রয়োজনীয় বার্তা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে নতুন প্রজন্মের সাংবাদিক-সম্পাদকদের।
মোহাম্মদী, কৃষক ও নবযুগে যেভাবে চাকরি হারান আবুল মনসুর আহমদ
ইত্তেহাদ ছিল আবুল মনসুর আহমদের সাংবাদিকতা জীবনের স্বর্ণোজ্জ্বল এক অধ্যায়। পূর্বের প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা, নিরলস পাঠ, গবেষক-মানস, দূরদর্শী দৃষ্টি, ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সক্ষমতা উজাড় করে ঢেলে দিয়েছিলেন এখানে। এককথায় আবুল মনসুর আহমদ যাকে বলেছেন ‘সাংবাদিক চেতনা।’ তিনি সাংবাদিকতা ও সম্পাদকের দায়িত্বকে নিয়েছিলেন সাধনা হিসেবে। যেখানে মানুষ-সমাজ-রাষ্ট্রের কল্যাণই ছিল মুখ্য। সাংবাদিকতা-সম্পাদকের দায়িত্বকে ব্রতরূপে, পবিত্র জ্ঞানে সর্বোচ্চ নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন। যে দায়িত্ববোধের মধ্যে দিয়ে তিনি নাগরিক সমাজ, মানবতাবাদ ও বাক স্বাধীনতার প্রশ্নকে সমুন্নত করতে নিরন্তর লড়াই চালিয়ে গেছেন। যা বাংলা সংবাদপত্র ও বাঙালি মুসলমানের সাংবাদিকতাকে যেমন করেছে উচ্চকিত, তেমনি তাঁকে দিয়েছে বাংলাদেশের নবজাগরণের দার্শনিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠার মহিমা ও মর্যাদা।
আবুল মনসুর আহমদের সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের কারণেই ইত্তেহাদ স্বল্প সময়ের মধ্যে পাঠকপ্রিয় পত্রিকায় পরিণত হয়। এর নেপথ্যের যৌক্তিক কারণ কী ছিল, সেকথা উল্লেখ করেছেন, ‘আত্মকথা’য়। তিনি লিখেছেন, ‘‘ইত্তেহাদ’ অল্পদিনেই খুব জনপ্রিয় হইয়া উঠে। ইহার প্রচার সংখ্যা অনেক-পুরাতন দৈনিকের দুই তিন গুণ হইয়া যায়। প্রায় পঁচিশ বছর সাংবাদিকতার সহিত সংশ্লিষ্ট থাকিয়া এবং এ সম্পর্কে বিদেশি বই পুস্তক ও সংবাদপত্র পড়িয়া সাংবাদিকের দায়িত্ব সম্পর্কে আমার সামান্য যা কিছু জ্ঞান লাভ হইয়াছিল, তার সবটুকু ‘ইত্তেহাদে’ প্রয়োগ করিবার চেষ্টা আমি করিয়াছিলাম।’’
দৈনিক পত্রিকা ‘ইত্তেহাদ’ সত্যিকারার্থে আবুল মনসুর আহমদের সাংবাদিকতা তথা সম্পাদক জীবনকে পূর্ণতা দান করে। কিন্তু সেটাও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এর মধ্যে অখণ্ড ভারত বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক দেশের জন্ম হয়। উপনিবেশ গুটিয়ে নিয়ে ইংরেজরা ইংল্যান্ডে ফিরে যায়। ইত্তেহাদ কলকাতা থেকে প্রকাশিত হলেও তার পাঠক ছিল মূলত পূর্ববঙ্গের মানুষ। সে কারণে ইত্তেহাদকে বারংবার স্বাধীন পূর্ববঙ্গের রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তরের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু অফিসের জন্য একটু জায়গা দেওয়া হয়নি। এমনকি পূর্ববঙ্গে প্রবেশাধিকারও বন্ধ করে দেওয়া হয়। নাজিমউদ্দীন সরকারের রোষানলে ইত্তেহাদের প্রকাশ হুমকির মুখে পড়ে। নানামুখী সংকট-বৈরিতা ও বাধায় ইত্তেহাদের অকাল মৃত্যু হয় ১৯৫০ সালের গোড়ায়। যার মধ্যে দিয়ে আবুল মনসুর আহমদের সক্রিয় সাংবাদিকতা তথা সম্পাদক জীবনেরও ঘটে যবনিকাপাত।
পরবর্তী দুই যুগ তিনি একজন কলাম লেখক হিসেবে সাংবাদিকসত্তাকে সচল ও অর্থবহ করে রাখেন। ইত্তেহাদ পূর্ববঙ্গ অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশের অনুমতি না পেলেও পূর্ব পাকিস্তানে বিংশ শতাব্দীর পাঁচের দশকে যে সাংবাদিকতার চর্চা শুরু হয় তাতে এর প্রভাব রোধ করা যায়নি। ইত্তেহাদের দেখানো পথেই সকলে হেঁটেছেন। সমৃদ্ধ সব পত্রিকার নামকরণ থেকে শুরু করে এর পরিচালন কৌশল, উন্নয়ন পরিকল্পনা, অঙ্গসজ্জা, বিভাগ-বিন্যাস, ভাষার প্রয়োগ, সম্পাদকীয় নীতি নির্ধারণ, পত্রিকার কাগজ ও আঙ্গিক, প্রকাশনা ও বিতরণ ব্যবস্থা সর্বত্র ইত্তেহাদের ছায়া এসে পড়ে।
একটা মানসম্পন্ন, প্রভাবশালী, পাঠকপ্রিয় ও ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক পত্রিকার বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী কী হওয়া উচিৎ তার মানদণ্ড ও চর্চার যে নমুনা হাজির করেছিল ইত্তেহাদ তার অনুশীলন ও অনুসরণ জারি আছে আজ অবধি। এবং এসবের মধ্যেই নীরবে-নিভৃতে দেদীপ্যমান রয়েছে বলিষ্ঠ সাংবাদিক ও যশস্বী সম্পাদক আবুল মনসুর আহমদের প্রাসঙ্গিকতা। তিনি মনে করতেন একটা পত্রিকা জনপ্রিয় হয়ে ওঠার অন্যতম শর্ত হল,
এক. জনপ্রিয় রাজনৈতিক মতবাদের সমর্থন।
দুই. সু-সম্পাদন।
তিন. সুন্দর ছাপা ও ভালো মানের কাগজের নিয়মিত যোগান নিশ্চিত করা।
চার. সর্বাধিক পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য সাইজে কাগজ প্রকাশ।
পাঁচ. নিয়মিত প্রকাশ ও সময়মতো সুষ্ঠু সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ।
এতো গেল সাংবাদিকতা নিয়ে তাঁর বহিরঙ্গের ভাবনা। একইভাবে তিনি অভ্যন্তরীণ ভাবনার কথাও বলেছেন। অভ্যন্তরীণ ভাবনার সাত দফাকে তিনি সাংবাদিকতার ক, খ জ্ঞান করেছেন। এগুলো হল:
১. সাংবাদিকতা নিছক সংবাদ সরবরাহ নয়, সংবাদের সুষ্ঠু ব্যাখ্যাও বটে।
২. সাংবাদিকতার সঙ্গে রাজনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রাজনীতিতে পার্টি-গত শ্রেণি-গত মতভেদ অপরিহার্য। কিন্তু এই মতভেদ সত্ত্বেও সাধু সাংবাদিকতা সম্ভব।
৩. বিরুদ্ধ পক্ষকে অভদ্র কটূক্তি না করিয়াও তাঁর তীব্র সমালোচনা করা যাইতে পারে ভদ্র ভাষায়। বস্তুত সমালোচনার ভাষা যত বেশি ভদ্র হইবে, সমালোচনা তত তীক্ষ্ণ ও ফলবতী হইবে।
৪. প্রত্যেক মতবাদের সুষ্ঠু, উদার, বৈজ্ঞানিক ও নিরপেক্ষ আলোচনার দ্বারা নিজের মতের পক্ষে এবং বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে জনমত তৈয়ার করা অধিকতর সহজসাধ্য।
৫. মরহুম মৌলবি মুজিবর রহমান বলিতেন: সংবাদ-পত্রের কেবলমাত্র সম্পাদকীয় কলমটাই সম্পাদকের; বাকি সবটুকু পাবলিকের। চিঠি-পত্র কলমটা টাউন হল, সম্পাদকের বৈঠকখানা নয় অতএব সংবাদ প্রকাশে নিরপেক্ষতা চাই। স্বয়ং সম্পাদকের নিন্দা-পূর্ণ পত্রও চিঠি-পত্র কলমে ছাপিতে হইবে।
৬. সাংবাদিকতা সাহিত্য, আর্ট, সায়েন্স, ইন্ডাস্ট্রি ও কমার্সের সমবায়। এর একটার অভাব হইলে সাংবাদিকতা ত্রুটিপূর্ণ এবং পরিণামে নিষ্ফল হইবে।
৭. বিখ্যাত সাহিত্যিক থেচারে বলিয়াছেন, ‘‘ছাপার মেশিনের মতো সংবাদপত্র নিজেও একটা ইঞ্জিন। সকল যন্ত্রপাতির ঐক্য ও সংহতি অন্যান্য ইঞ্জিনের মতো প্রেস ইঞ্জিনেরও অত্যাবশ্যক বটে, কিন্তু তার উপরেও প্রেস ইঞ্জিনে দরকার ‘ইনটেলেকচুয়াল ইউনিটি’।’’
সাংবাদিকতায় শতবর্ষে আবুল মনসুর আহমদ: নবযুগ এনেছিলেন যিনি
একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এই সময়ে এসেও যদি কেউ একটা জনপ্রিয় ও লাভজনক পত্রিকা করতে চান এবং সংবাদপত্রকে প্রতিষ্ঠান ও ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে গড়ার অভিপ্রায় রাখেন উপরোক্ত এই শর্ত পূরণ ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। সুতরাং এই পাঁচ/সাত দফাকে আমরা একটা পত্রিকার প্রাণ-ভোমরা হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। সময়ের পরিক্রমায় ও প্রযুক্তির বিকাশের কারণে এর সঙ্গে হয়তো আরও নতুন বিষয় যুক্ত হতে পারে, কিন্তু তাঁর এই পাঁচ/সাতদফাকে উপেক্ষা করা প্রায় অসম্ভব।
সংবাদপত্র একটা বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠান। সুতরাং এখানে যা কিছুই উৎপাদিত কিংবা সংঘটিত হোক তার সবটাতেই বুদ্ধির ছাপ ও চর্চা থাকা জরুরি। এর চর্চা ব্যতীত কোনো সংবাদপত্রই সমাজ-রাষ্ট্রে এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও সমাদৃত হয়ে উঠতে পারে না। একারণে আবুল মনসুর আহমদ যে ‘ইন্টেলেকচুয়াল ইউনিটি’র কথা বলেছেন সেটা একটা সংবাদপত্রের জন্য ‘চাবিকাঠি’ বিশেষ। যা তাঁর কালে সত্য ছিল, আজও সত্য রয়েছে, আগামীদিনের সাংবাদিকদের জন্যও সত্য হিসেবে থেকে যাবে।
বাঙালি জাতীয়তাবাদ, বাংলাদেশের নবজাগরণ, বাঙালি সংস্কৃতি এবং বাঙালি মুসলমানের বিকাশের পরম্পরা ও বাঁক বদলের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও চেতনাকে বুঝতে হলে আবুল মনসুর আহমদের সাংবাদিকতা-সম্পাদকতা ও কলাম লেখক ভূমিকা সম্পর্কে পঠন-পাঠন ও গবেষণা জরুরি। ২০২৩ সালে এসে আমরা যদি আবুল মনসুর আহমদের সাংবাদিকতা জীবনের শতবর্ষের প্রতি চোখ রাখি, তাহলে এই প্রজন্মের একজন সাংবাদিক-সম্পাদক হিসেবে কেবল বিস্ময় উদ্রেক করে না, ভক্তি ও শ্রদ্ধাও জাগ্রত হয়।
শ্রেণিকক্ষে যা মেলার নয়, বিদ্যায়তনিক পুস্তকরাজিতেও যা অনুপস্থিত, তাই রয়েছে তাঁর সাংবাদিকতা-সম্পাদক জীবনের প্রতিটি পৃষ্ঠায়। যা সদর্থক অর্থেই আগুনের পরশমণি তুল্য। যার পরশে দীক্ষিত হলে আজকের প্রজন্মের একজন সাংবাদিক-সম্পাদকেরও সুযোগ রয়েছে নিজের প্রতিভা ও অভিপ্রায়কে বিকশিত করে প্রত্যাশিত লক্ষ্যে পৌঁছবার। আর এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে আবুল মনসুর আহমদের শতবর্ষী সংবাদিকতার প্রাসঙ্গিকতা। (সমাপ্ত)
কাজল রশীদ শাহীন: সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও গবেষক
kazal123rashid@gmail.com