কেন্দ্রীয় কমিটিতে ‘উপেক্ষিত’ রাবি ছাত্রলীগ, নেতাকর্মীদের ক্ষোভ

, ক্যাম্পাস

রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 21:25:13

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে গত ১৩ জুলাই। ৩০১ সদস্যের নতুন এই কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে ২২৬জনকে পদায়ন করা হলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা থেকে পদায়ন করা হয়েছে মাত্র একজনকে। বিষয়টি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন রাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

নেতাকর্মীদের অনেকে বলছেন, শিবিরের চোখ রাঙানি উপেক্ষা ও লড়াই-সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয় এই ক্যাম্পাসে। সে হিসেবে যোগ্য নেতা থাকা সত্ত্বেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখাকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। একজনকে পদ দেয়া হলেও সভাপতির নিজ এলাকায় বাসা হওয়ায় তিনি পদ পেয়েছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, দীর্ঘ সাত বছর যাবত রাবি ছাত্রলীগের কমিটি না হওয়ায় এখান থেকে জাতীয় পর্যায়ের নেতৃত্ব তৈরির পথটিই বন্ধ হয়ে আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পান দুইজন। তারা হলেন- সহ-সভাপতি পদে খালিদ হাসান নয়ন এবং সহ-সম্পাদক পদে শরিফুল ইসলাম সাদ্দাম। এর আগে ২০১৬ সালে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ৮ জনকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য পদ দেওয়া হয়। তারা হলেন- তন্ময়ানন্দ অভি, সাহানুর ইসলাম শাকিল, সাকিবুল হাসান বাকি, মিনারুল ইসলাম, মেহেদী হাসান রাসেল, টগর মো. সালেহ, আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, আখেরুজ্জামান তাকিম। তবে এবারের কমিটিতে রাবি থেকে হুসাইন আদনান নামে মাত্র একজনকে সহ-সম্পাদকের পদ দেয়া হয়েছে। যদিও ক্যাম্পাসের বা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সেভাবে ভূমিকা না রাখার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

আবার রাবি থেকে দীর্ঘদিন যাবত কোনো নারী নেতৃত্বও উঠে আসছে না কেন্দ্রীয় কমিটিতে। এতে রাবি শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নারীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে দাবি করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রত্যাশী তাজরীন আহমেদ খান মেধা। তিনি বলেন, ঢাকার বাহিরে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বরাবরই মেয়েরা পদ পায় না। তবে আমরা এবার ধারণা করেছিলাম সাদ্দাম ভাই যেহেতু ভিন্ন ধারার মানুষ তিনি ঢাকার বাহিরের মেয়েদের নিয়ে ভাববেন। এজন্য আমরা বিগত সাতমাস যাবত ঢাকায় গিয়ে রাজনীতি করেছি।

তিনি বলেন, একজন মেয়ের পরিবার এমনিতেই এই বিষয়গুলোতে সাপোর্ট দেয়না। সে হিসেবে অনেক ত্যাগ স্বীকার করে এবং প্রত্যাশা নিয়েই রাজধানীতে গিয়ে রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় ঢাকার বাহিরে কোনো মেয়েই পদ পায়নি। তারা হয়তো আমাদের যোগ্য মনে করেনি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে রাজনীতি করে আসছি। কিন্তু আমাদের মূল্যায়ন করা হলো না। অথচ আমাদের জুনিয়র এবং যাদেরকে কখনো মিটিং-মিছিলে দেখিনি তারাও পদ পেয়েছে শুধু ঢাকার বলে।

রাবি ছাত্রলীগের উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী তাওহীদুল ইসলাম দুর্জয় বলেন, আসলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখাগুলোতে কমিটি হওয়ার পরে যারা সদ্য সাবেক হয়ে যায়, তাদের অনেককেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদায়ন করা হয়। কিন্তু রাবিতে দীর্ঘ সাত বছরেও কোনো কমিটি হয়নি। আর এবারে যারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেতে যোগাযোগ করেছিলেন তারা অনেক সিনিয়র, আর বাকিগুলো ছিল হলের নেতাকর্মী। যদিও তারা কঠোর পরিশ্রম করেছে, কেন্দ্রে সময় দিয়েছে কিন্তু তারা তাদের প্রাপ্য মূল্যায়নটুকু পায়নি।

তিনি বলেন, পূর্বে রাবিতে কিন্তু শিবিরের দাপট বেশি ছিল, সেটা একমাত্র এই শাখার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের রক্তের উপর দিয়েই রোধ করা হয়েছে। এই রক্তের ঋণ কিন্তু আমরা শোধ করতে পারিনি। এই জায়গা থেকেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যথাযথ মূল্যায়ন আমরা পাইনি। এজন্য আমাদেরও দোষ আছে। নির্ধারিত সময়ে আমাদের সম্মেলন হলে এখান থেকে অনেকে কেন্দ্রে পদ পেত। কারণ একটা শাখায় মূল পদ পায় দুজন। বাকিরা অনেকেই এখান থেকে কেন্দ্রে পদ পেতে যোগাযোগ করত এবং পদও পেত বলে মনে করছি।

রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সঙ্গে লড়াই-সংগ্রাম করে ছাত্রলীগকে টিকে থাকতে হয়েছে। এই শাখায় ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক নেতাকর্মীকে হাত, পা হারানোসহ শহীদও হতে হয়েছে। রাবি শাখা ছাত্রলীগের ইতিহাস রক্তাক্ত ইতিহাস। সেই জায়গা থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সেভাবে মূল্যায়িত হয়নি। রাবি শাখাকে কেন্দ্রে আরও বেশি মূল্যায়ন করা উচিত ছিল বলে আমি মনে করি।

সভাপতি গোলাম কিবরীয়া বলেন, রাবির সঙ্গে যেটি করা হয়েছে এটি আসলে দুঃখজনক ঘটনা। এটি আসলে কাম্য না। রাবি ছাত্রলীগের অনেক যোগ্য এবং ত্যাগী নেতা ছিল, যাদেরকে কেন্দ্রে পদায়ন করা যেত। তারা অনেক আগে থেকেই কেন্দ্রে যোগাযোগও রাখছিল। এতে রাবিতে যারা ভবিষ্যতে রাজনীতি করবে তারা কিছুটা নিরুৎসাহিত হবে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রের মতামত জানতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের ফোনে কল দেয়া হলে তিনি কলটি কেটে দেন। পরবর্তীতে হোয়াটসঅ্যাপে এসএমএস করা হলেও তিনি তা দেখেননি। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের মুঠোফোনে একাধিকার কল দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর