বিখ্যাত একটি উক্তির কথা মনে পড়ছে। ‘কোন ভয়েসই এত জোরে নয় যে, এটি আমার শোনার দাবি করতে পারে।’ এই মুহূর্তের পথচলায় তাই দেশে বিরোধীবলয় থেকে কোন অর্থবহ কণ্ঠ দ্বারা আমাকে বা আমাদেরকে 'এই শোন' বলার গোষ্ঠিগত উদ্যোগ নেই, তাদের রাজনৈতিক দৈন্যতার কারণে থাকা সম্ভবও নয়। যা দেখছি তা এক প্রকারের কৃত্রিম রাজনৈতিক তৎপরতা। আমাদেরকে তাই সামনের দিকেই এগিয়ে যেতে হবে। তবে চিন্তা করে যেতে হবে, ‘চিন্তা করতে পারার মধ্যেই উত্তর-প্রতিউত্তর তোমাকে শ্রেষ্ঠ করে আর সফলতাও এনে দেয়’। তাই বাংলাদেশে যা হচ্ছে বা হতে থাকবে তা তৃতীয় চোখ ও অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে পরখ করে আমাদের গতিপথ নির্ধারণ করতে হবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালে এখন যে হাওয়া তা ধুলো হাওয়া, মিষ্টি হাওয়া নয়। এই ধুলো হাওয়া ঝড় হয়ে ফিরতে চায়। অনেক ঝড় মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধুর পতাকা উড্ডীন রাখতে গিয়ে বিখ্যাত এক রাষ্ট্রনায়কের কথাগুলো আমার জীবনকে প্রভাবিত করে। তিনি বলেছিলেন, আমি একটি তুলনামূলকভাবে সমান সমাজে বিশ্বাস করি, যা এমন প্রতিষ্ঠান দ্বারা সমর্থিত যা সম্পদ এবং দারিদ্রের চরম সীমাবদ্ধতা রাখে। আমি গণতন্ত্র, নাগরিক স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনে বিশ্বাস করি। এটি আমাকে একজন উদারপন্থী করে তোলে এবং আমি এতে গর্বিত।
গর্বিত হওয়ার সবিশেষ যুক্তিও আছে। আমার ও আমাদের বোন শেখ হাসিনা এমনই এক উন্নত মানের শাসক, যার নেতৃত্ব অবলোকন করে এই বয়সেও শুধু শিখে যাচ্ছি। ওয়ারেন বেনিস যেমন বলেছিলেন, নেতৃত্ব হলো দৃষ্টিকে বাস্তবে রূপান্তর করার ক্ষমতা। শেখ হাসিনা ফলত দেখতে জানেন। নেতৃত্বের মৌলিক গুণাবলীর মধ্যে দূরদৃষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা তার মধ্যে আছে বলেই তিনি টানা তিন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী, যে কারণে বাংলাদেশ কার্যত পথ হারায়নি। কারণ, তিনি শুধু দেখতে জানেন না, বাস্তবায়নের প্রশ্নে তিনি এক ঐতিহাসিক পর্যায়ের অদম্য সত্তা।
থমাস একুইনাস বলেছিলেন, সত্যিকারের বন্ধুত্বের চেয়ে মূল্যবান হওয়ার মতো এই পৃথিবীতে আর কিছুই নেই। বন্ধুভাগ্য একজন শেখ হাসিনার কেমন, সেটা অবশ্য একবার ঝালিয়ে নিতে হবে। কারণ, তার এখনও বাংলাদেশকে বহু কিছু দেয়ার বাকি। ভালো সহকর্মী এবং বন্ধু-ভাই-বোন পেলে বাংলাদেশ আরও উন্নত জায়গায় চলে যাবে।
রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকারদের কেউ কেউ শেখ হাসিনাকে গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর দার্শনিক রাজা হিসেবে অভিহিত করেছেন। প্লেটো অন্যদিকে সর্বদা রাজনৈতিক মতবাদ রাখার প্রশ্নে নিকৃষ্ট শাসকদের একহাত নিতেন। শেখ হাসিনার বিপরীতে তারা কারা?
খুব স্পষ্ট করে বলছি, দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ক্ষমতার মসনদে বসতে চাওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষী এমন ব্যক্তিদেরকেই প্লেটো ঘৃণা করতেন। তিনি মনে করতেন, জনস্বার্থ উদ্ধারের কোন পরিকল্পনা না থেকেও তারা ক্ষমতা চেয়ে বসে। দেশের নামধারী রাজনৈতিক দল বিএনপি-কে তাই কী বলা যায়?
আমার প্রশ্ন এই দেশের ২০ কোটি মানুষের কাছে। আচ্ছা, তারা (বিএনপি) কি মানুষের জন্য কী কী করবে তা গত একযুগে স্পষ্ট করতে পেরেছে? যদি পেরে থাকে, সমাবেশ-মহাসমাবেশ সব কিছু করুক, আমরা বাধা দেয়ার কে? এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বাধা দেয়নি। কিন্তু গভীর চিন্তা করতে পারলে আমার মনে হয়, রাজনৈতিক অপশক্তি হওয়ার সকল উপাদান নিয়ে বাস করা বিএনপি’র রাজনীতি বিনাশ করার সময় এসেছে। প্লেটোর রাজনৈতিক স্থিতিশিলতার মতবাদকে সম্মান করতে চাইলে বিএনপিকে 'না' বলতেই হবে।
মতামত তাই রেখেই যেতে হবে। সত্যটা বলতে হবে। প্লেটোই যেমন বলেছিলেন, মতামত হলো জ্ঞান ও অজ্ঞতার মধ্যকার মাধ্যম। কাজেই দু'টো শ্রেণির জন্য আমার কিংবা আমাদেরকে মৌখিক ও লিখিত ধারাভাষ্য প্রতিদিনই প্রকাশ করে যেতে হবে। এভাবেই জনশ্রেণির মধ্যকার মূল্যবোধ তৈরি হবে, তারা সচেতন নাগরিক হয়ে একদিন মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয়তা, সংবিধান ও শাসনরীতির সম্যক ধারণা পেয়ে ধনী শ্রেণির মত করে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। এই ধনী মানে চিন্তার জায়গায় ধনী।
অন্ধকারকে ভয় পায় এমন একটি শিশুকে আমরা সহজেই ক্ষমা করতে পারি। জীবনের আসল ট্র্যাজেডি হলো যখন মানুষ আলোকে ভয় পায়। এমন মতবাদও সেই প্লেটোর।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশে শকুনেরা ফিরে আসে। তারা অপেক্ষায় থাকে কখন নিথর দেহ হয়ে অসাধারণ সত্তাগুলো পড়ে থাকবে! মানুষ সেই শকুনরূপী অন্ধকারকে ভয় পায়, তখন তাদেরকে প্রতিবাদ করতে তাগিদ না দিয়ে ক্ষমাও করা যায়। কিন্তু, মানুষ ভয় পেয়ে গিয়েছিল যখন শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকতে এক খুনি জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর ৬০০-৭০০ কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিলেন। একইভাবে তার পারিবারিক উত্তরসূরীরা বাংলাদেশ বিরুদ্ধ শক্তিকে মিত্র করে জিয়ানীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। তারা ২১ আগস্ট এর মতো জঘন্য উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি খ্যাতনামা রাজনীতিকদেরকে জীবন থেকে সরিয়ে দেয়। এতিমের অর্থ আত্মসাৎ থেকে শুরু করে লুটপাট করে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে দেউলিয়া করে। তাদেরকে দিনের আলোয় পুনরায় শাসকশ্রেণি হিসেবে দেখা গেলে সেই আলোকে ভয়-ই পাবে বাংলাদেশ।
বিএনপিই হলো সেই ভোট সংস্কৃতির প্রচলনকারী, বিখ্যাত উক্তিকে স্মরণ করতেই হচ্ছে। তা হলো ‘জনগণ জানে যে নির্বাচন হয়েছে এটাই যথেষ্ট। যারা ভোট দেয় তারা কিছুই সিদ্ধান্ত নেয় না। যারা ভোট গণনা করবে তারাই সব সিদ্ধান্ত নেবে।’এই উক্তির মতো করে তারা হ্যাঁ-না ভোট চালু করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছিল। সবাই তা ভুলে যায় কেন?
বিএনপি হালে একটি সুন্দর মাস্ক পরিধান করেছে। দেখতে ভাল দেখাচ্ছে! কিন্তু, বাংলাদেশের মানুষের জন্য বলছি, ‘মুখোশ পরিধান করে ডাকাতি করা যায়, রাষ্ট্র পরিচালনা করা যায় না’। না, এমন উক্তি বিশেষজনের নয়; খায়রুজ্জামান লিটন বলছি...
লেখক: সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।