গর্বিত জাতির আত্মপরিচয় নির্ণীত হয় তার বীরসন্তানদের অকাতর আত্মত্যাগের মহিমায়। ঠিক এই মানদণ্ডে যখন বিশ্বের জাতিসমূহকে বিচার করা হবে তখন নিশ্চিতভাবেই বাঙালি জাতির আসন অত্যুজ্জ্বল এক উচ্চতায় সমাসীন হবে, তাতে সামান্য সন্দেহ নেই।
আত্মগৌরবের এই মহিমায় বলিয়ান হয়েই হয়তো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৯ সালের ১৯ আগস্ট কলকাতার মহাজাতি সদনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘জাগ্রত চিত্তকে আহ্বান করি, যার সংস্কারমুক্ত উদার আতিথ্যে মনুষ্যত্ত্বের সর্বাঙ্গীন মুক্তি অকৃত্রিম সত্যতা লাভ করুক... সেইসঙ্গে এই কথা যোগ করা হোক, বাঙালির বাহু ভারতের বাহুকে বল দিক, বাঙালির বাণী ভারতের বাণীকে সত্য করুক।’
বাঙালি জাতির সংগ্রামী ঐতিহ্যের সুদীর্ঘ গৌরবময় পরম্পরায় যারা আমাদের জন্য মর্যাদার এই আসন তৈরি করে গেছেন-সুভাষচন্দ্র বসু ও সূর্য কুমার সেন তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য দুই নাম। সূর্য সেন ও সুভাষচন্দ্র যে কবিগুরুর কাঙ্খিত সেই বীর সন্তান তা বলার অপেক্ষাই রাখে না। রাজমণি সেন ও শশীবালা সেনের পুত্র সূর্য চট্টগ্রামে স্বদেশী আন্দোলনের আবহে বেড়ে উঠেন। কিন্তু তার সত্ত্বায় বিপ্লববাদের মন্ত্র প্রবলভাবে রেখাপাত করে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে অধ্যয়নের সময়। সেখানে সূর্য সেন বিপ্লবী বাঘা যতীনের শিষ্য অধ্যাপক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী ও অতুল ঘোষের সান্নিধ্য পান। চট্টগ্রামে ফিরে সূর্য সেন শিক্ষকতায় যোগ দিলেও বিপ্লবী কার্যই তাঁর ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠে। পরিবারের চাপে পুষ্পকুন্তলা দেবীকে বিয়ে করলেও বিপ্লবী জীবনের মহান ব্রত তাকে বৈবাহিক জীবনে প্রবেশ করতে দেয়নি।
বারীন্দ্র কুমার ঘোষের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত বিপ্লবী দল যুগান্তরে যুক্ত হন সূর্য সেন। ঔপনিবেশিক রাজশক্তির মূলোৎপাটনে সশস্ত্র সংগ্রামের পথকেই তিনি বেছে নেন। অম্বিকা চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে সাম্য আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে সূর্য সেন মূলতঃ বৈপ্লবিক কর্মকান্ডের ভীত মজবুত করতে প্রয়াসী হন।
পরবর্তীতে সূর্য সেন বৈপ্লবিক কর্মকা-ের সাংগঠনিক ভিত্তিকে আরও সুদৃঢ় করতে গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ, নির্মল সেন, লোকনাথ বল, অনুরূপ সেন ও নগেন্দ্রনাথ সেনের মতো বলিষ্ঠ বিপ্লবীদের পাশে পান। সুভাষচন্দ্র বসুর মতো কংগ্রেসের বৈপ্লবিক নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগসাজশ ছাড়াও সূর্য সেন যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন হিন্দুস্তান স্যোশালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গেও। ভগত সিং, বটুকেশ্বর দত্ত ও সুখদেবের মতো বিশিষ্ট বিপ্লবীদের সঙ্গেও সূর্য সেনের সংযোগ ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।
মাষ্টারদা সূর্য সেন ও নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শিক সংহতি নিয়ে আলোচনা এজন্য গুরুত্বপূর্ণ যে, সমকালীন ক্ষয়িষ্ণু সমাজে এই মহানায়কদের মহিমান্বিত জীবন আমাদের পথনির্দেশকের ভূমিকা পালন করে। দেশের টালমাটাল পরিস্থিতিতে দুই মহান সংগ্রামীর এক অপূর্ব যুগলবন্ধী রচিত হয় কলকাতায় ১৯২৮ সালে কংগ্রেস অধিবেশনকে ঘিরে। এখানেই রচিত হয় চিরবিপ্লবী সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে আরেক আজন্ম বিপ্লবী সূর্য সেনের গভীর সম্মিলন।
কলকাতার পার্ক সার্কাস ময়দানে জাতীয় কংগ্রেসের ঐতিহাসিক অধিবেশন। সেখানে উপস্থিত স্বয়ং মহাত্মা গান্ধী, মতিলাল নেহেরুসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ। বিশাল স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর নেতৃত্বে তারুণ্যে উদ্দীপ্ত সামরিক পোশাকে অশ্বারোহী সুভাষচন্দ্র বসু। রণসাজে কুচকাওয়াজ দলের অভূতপূর্ব উপস্থিতি চট্টগ্রামের তরুণ বিপ্লবীদের মনে আনন্দের হিন্দোল বইয়ে দেয়। চট্টগ্রামে ফিরে সূর্য সেনের নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’।
উল্লেখ করা প্রয়োজন, পার্ক সার্কাসে কংগ্রেসের জাতীয় অধিবেশনে অর্ভ্যথনায় সুভাষচন্দ্রের সামরিক অভিবাদন ভালো ভাবে নেননি গান্ধী। অধিবেশনই তিনি মন্তব্য করেন, ‘পার্ক সার্কাসে সার্কাস হচ্ছে।’ যা হবার তাই হলো অধিবেশনে ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি উত্থাপনে প্রবল দাবি সত্ত্বেও গান্ধীর হস্তক্ষেপে তা উপস্থাপিত হলো না। এতে ক্ষোভ ক্রমেই ফেনায়িত হতে থাকে। ফলশ্রুতিতে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রচেষ্টা কয়েক ধাপ এগিয়ে যায়। এগিয়ে চলতে থাকে চট্টগ্রামে সশস্ত্র যুব বিদ্রোহের প্রস্ততিও।
১৯২৯ সালের অক্টোবরে আহুত হয় চট্টগ্রামে কংগ্রসের জেলা সম্মেলন। সম্মেলনে কলকাতা থেকে আসেন সুভাষচন্দ্র বসু, নগেন্দ্র ব্যানার্জী ও লতিকা বসু। সুভাষচন্দ্র বসুর সভাপতিত্বে সম্মেলনে মহিমচন্দ্র দাশগুপ্ত সভাপতি ও সূর্য সেন সম্পাদক হন। যুব সংগঠনের নেতৃত্বে আসেন সূর্য সেনপন্থী গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ ও লোকনাথ বলসহ এক ঝাঁক তরুণ বিপ্লবী। যার মধ্য দিয়ে যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের বলয় থেকে পরিপূর্ণভাবে সুভাষচন্দ্র বসুর বলয় চট্টগ্রামের রাজনীতি অধিকার করে। যার মধ্য দিয়ে প্রসারিত হয় সশস্ত্র বিপ্লবের পথ। বিশেষ করে চট্টগ্রামে মুসলিম তরুণদের সশস্ত্র বিপ্লবে প্রকাশ্যে কম দেখা গেলেও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রশ্নে কোনো মতৈক্য ছিল না তাদের। বরং বিভিন্ন সময়ে বৈপ্লবিক প্রচেষ্টাকে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা দিয়ে মুসলিম যুবকরাও তাতে শামিল হয়ে ছিলেন।
এবিষয়ে গবেষক আহমেদ মমতাজ উল্লেখ করেছেন, ‘অসহযোগ আন্দোলনের প্রাক্কালে মুসলিম সমাজের স্বাধীনতাকামী যুবকদের একটি অংশ বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত হতে শুরু করে। প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষ স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতি অনুগত ছিলেন যুগান্তর দলের বিপ্লবীরা। একজন দেশপ্রেমিক, সৎ, মেধাবী ও উদারপন্থী নেতা হিসেবে হিন্দু-মুসলিম সকল ধর্ম-সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁকে বিশ্বাস করতেন। কংগ্রেসের স্বাধীনতাকামী ও উদারপন্থী অংশটির তিনিই ছিলেন আস্থাভাজন নেতা।’
চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহের পটভূমিটি কিভাবে রচিত হয়েছিল তা জানতে হলে একটি বিশেষ ঘটনার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেই হবে। এবিষয়ে আহমদ মমতাজ লিখেছেন, ‘‘চট্টগ্রামের সূর্য সেনের নেতৃত্বাধীন অংশ সুভাষচন্দ্র বসুর অনুসারী ছিলেন। ১৯২৮ সালের ৩০-৩১শে ডিসেম্বর কলকাতা কংগ্রেসের প্রাক্কালে আগের রাতে ২৯শে ডিসেম্বর কংগ্রেসের স্বাধীনতাপন্থী বাছাই করা সদস্যদের নিয়ে জে সি গুপ্তের বাড়িতে এক সভা আহ্বান করেন।
সে সভায় চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের কয়েকজনের সাথে হাবীবুল্লাহ বাহার, মোহাম্মদ মোদাব্বের প্রমূখ মুসলমান যুবক উপস্থিত ছিলেন। সুভাষচন্দ্র সভায় ঘোষণা করেন কংগ্রেসের অধিবেশন শুরু হবে কবি নজরুলের ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’ গান দিয়ে এবং সমাপ্তি সংগীতও হবে নজরুলের ‘চল্ চল্ চল্’ দিয়ে।’’ সুভাষচন্দ্র জানান, এতে অবাঙালি নেতারা আপত্তি জানিয়েছিলেন কিন্তু সুভাষ হুমকি দেন এই বলে যে, আপত্তি করলে কংগ্রেসের অধিবেশন পণ্ড করে দেব।’
সুভাষচন্দ্র কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘‘স্বাধীনতা সংগ্রামের রূপরেখায় পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। কংগ্রেসকে বহিরাবরণ হিসেবে ব্যবহার করে স্বাধীনতা সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এ জন্য গণসহযোগিতা প্রয়োজন। আয়ারল্যান্ডকে আদর্শ হিসেবে সামনে রেখে বৃহত্তর সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে হবে।’’
সভায় সুভাষচন্দ্র ভারতের মুক্তির অভিযানে ধর্মীয় গোঁড়ামীর বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, ‘যুগান্তর দল তার পুরাতন সনাতনী ঐতিহ্য এখনও পুরোপুরি বিসর্জন দিতে পারেনি। মুসলমানরা সেজন্য এই পরিবেশে মিশতে পারছে না। এজন্য সব গোঁড়ামী বিসর্জন দিয়ে সর্ব ভারতীয় ও সার্বজনীন প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ধর্ম ব্যক্তিগত বিশ্বাস, রাজনীতি সার্বজনীন সংগ্রামী নীতি।’
সুভাষচন্দ্রের আবেগমথিত সত্য উচ্চারণে সভায় প্রত্যেক সদস্য হাতের আঙুল কেটে রক্ত বের করে স্বাক্ষর করেন দলের শপথনামায়। অতঃপর কবি কাজী নজরুল ইসলাম শপথনামা পাঠ করান ও নিজের লেখা ‘টলমল টলমল পদভারে’ গান গেয়ে সভার সমাপ্তি করেন। সেই সময়কার ঘটনাপ্রবাহ মূল্যায়ন করে একথা আমরা দৃঢ়চিত্তেই বলতে পারি, ভারতের মুক্তি সংগ্রামের চূড়ান্তপর্বের কান্ডারী নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর মাতৃভূমির মুক্তির সাধনায় সংগ্রামের যে পথকে বেছে নিয়েছিলেন একজন মাষ্টারদা সূর্য সেন ও তাঁর অকুতোভয় সহযোদ্ধারা তা বাস্তবায়নে সর্বাগ্রে এগিয়ে এসেছিলেন।
মাষ্টারদা’র নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি ১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল অবধি চারটি দিন ব্রিটিশ শাসন থেকে কার্যত চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার যে মহাউপাখ্যান সৃষ্টি করেছিলেন-তা দারুণভাবে উদ্বেলিত করে সুভাষচন্দ্র বসুকে। লক্ষ্য করে দেখব, সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৩৯ সালে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করবার পর গোপানে ভারত ত্যাগ করবার পূর্বে ১৯৪০ সালে তাঁর শেষ প্রকাশ্য রাজনৈতিক সফর করেন পূর্ববঙ্গে। সুভাষচন্দ্রের পূর্ববঙ্গ সফরে ঢাকাসহ অন্যান্য কয়েকটি শহরে সভা করলেও বেশি সময় তিনি অবস্থান করেন বিপ্লবতীর্থ চট্টগ্রামেই।
ইতিহাস-ঐতিহ্য গবেষক ওয়াকার এ খান তাঁর ‘নেতাজী সুভাষ বোস ইন চট্টগ্রাম’ শীর্ষক লেখায় আমরা জানতে পারছি-নেতাজীর চট্টগ্রাম সফরের সময়কার ইতিবৃত্ত। সেই লেখায় আমরা জানতে পারছি, ১৯৩৮ সালে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি থাকার সময়ে চট্টগ্রাম সফরে সুভাষচন্দ্র বসু যে রাজকীয় অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন ১৯৪০ এ সভাপতির পদত্যাগ করার পরও তার কোনো ব্যতয় হয়নি। তিনি চট্টগ্রামের দেব জমিদার পরিবারের পরম আতিথ্যে পুরো সময়টা স্বাচ্ছন্দ্যে কাটিয়েছিলেন। আমরা সেই সফরের যেসব ছবি দেব জমিদার পরিবারের উত্তরপ্রজন্মের তনুশ্রী দে’র তরফে পাচ্ছি-তাতে দেখা যাচ্ছে কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও স্বয়ং জমিদার নবীনচন্দ্র দেব বর্মন সুভাষচন্দ্রকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে ছবিতে অনেকের সঙ্গে জমিদার পরিবারের সদস্য উর্মিলা দেব বল ও তাঁর স্বামী সুবোধ বলকেও দেখা যাচ্ছে। সুবোধ বল মাষ্টারদা সূর্য সেনের অন্যতম সহযোগি এবং জালালাবাদ পাহাড় যুদ্ধে আহত বিপ্লবী লোকনাথ বলের ভাই। গোয়েন্দা নজরদারির মাঝেও সুভাষচন্দ্র বসু যে চট্টগ্রাম সফরে বিপ্লবীদের সঙ্গে একাধিক সভায় মিলিত হয়েছিলেন তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে নেতাজী সুভাষচন্দ্রের ভারতের স্বাধীনতার জন্য আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করে যে অভিযান তিনি পরিচালনা করেছিলেন মাস্টারদা সূর্য সেনের চট্টগ্রাম মুক্তির সেই অভিযাত্রী দলকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ছিল। একাধিক গ্রন্থে’র তথ্য অনুযায়ী, মৌলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী নেতাজীর আজাদ হিন্দ ফৌজ বার্মায় অবস্থানকালে গোপানে একাধিকবার ছদ্মবেশে যাতায়াত করেছিলেন। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডর নিকটে জঙ্গলাকীর্ণ একটি স্থানে মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী আজাদ হিন্দ্ ফৌজের গোপন ঘাঁটি নির্মাণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশঃ সেই পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে গেলে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে কারা অন্তরীণ হন।
‘বিশ্বের মহান দেশ’ ‘শ্রেষ্ঠ জাতি’ ‘স্বর্গের দ্বার’ ইত্যাদি অভিধায় অভিষিক্ত হওয়ার যে গৌরব আমাদের রয়েছে তার চেয়েই বেশি ক্ষত আজও আমরা বয়ে বেড়াচ্ছি। সবচেযে বড় ক্ষত হচ্ছে নিশ্চিতভাবেই দেশভাগ। মহাবিপ্লবী রাসবিহারী বসু, বাঘা যতীন, ভগত সিং, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, মাস্টারদা সূর্য সেন-সহ অজস্র মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীর রক্তস্রোতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে; যে ভূখণ্ড ঔপনিবেশিক শক্তির যোগসাজশে তাকে দ্বিখণ্ডিত করা হলো। বহুগুণে উত্থান হলো সাম্প্রদায়িক অপশক্তির। এক স্বাধীন মহাজাতির স্বপ্ন নিয়ে যেসব মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীরা অকাতরে প্রাণদান করে দৃষ্টান্ত গড়ে গিয়েছিলেন, তাদের অন্তরাত্মার চিৎকার আমরা ক’জন শুনছি?
এবং একথাও উল্লেখ করতে হবে-যেসব মহান বিপ্লবীদের সংগ্রামী চেতনা ধারণ করে মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ এ বাংলাদেশ স্বাধীন করলেন সেই দেশের জাতীয় উদযাপনে অনেকটাই উপেক্ষিত মহান বিপ্লবীরা। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি উপেক্ষা জাতিকে সম্মানিত করে না। আমরা এই মনেবৃত্তির পরিবর্তন আশা করি।
লেখক: প্রধান সম্পাদক, বহুমাত্রিক.কম ও ইতিহাস গবেষক