সাধ আছে সক্ষমতা কম বলে বেশি ধারকর্জ আর কর-রাজস্বে ভর করে বেশি খরচের সব পরিকল্পনা সাজিয়েছেন অর্থমন্ত্রী তার প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে। চলতি বাজেটের তুলনায় ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা যা চলতি বছরের এডিপির তুলনায় মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা বেশি। ২৭ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে ভর্তুকি ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
সামষ্টিক অর্থনীতির অতি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হলো জাতীয় বাজেট। সাধারণ মানুষের কাছে বাজেট মানে ন্যায্য এবং সহনশীল মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারছে কি না। অধিকাংশ গরিব, স্বল্প আয়ের মানুষ এবং মধ্যবিত্তের কাছে প্রত্যাশা হলো বাজেট ঘোষণার পর যাতে সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রয়সীমার মধ্যে থাকে।
কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবংদুর্বল ও অদক্ষ আর্থিক ব্যবস্থাপনার কারণে অর্থনীতি কয়েক বছর ধরে চাপে আছে। দুই বছরের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ, ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ব্যাপকভাবে। ফলশ্রুতিতে ডলার সংকটের কারণে পণ্য, শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে এবং বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান কমেছে।
মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ জনগণ খুব চাপে আছে। এই ধরনের কঠিন পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রীর কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। বাজেট বক্তৃতায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অগ্রাধিকার পেলেও নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়বে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাজেট বাস্তবায়ন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। ' সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার' এই স্লোগানকে টিকিয়ে রাখতে বাজেট ব্যবস্থাপনার গতিশীলতা, করনীতি সংস্কার, কর ব্যবস্থার অটোমেশন, কর সংগ্রহে সামগ্রিক সিস্টেম লস কমানো এবং কর প্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধি তথা জনগণকে যথাযথ সেবা দেওয়া আরও সুযোগ আছে।
এবারের প্রস্তাবিত বাজেট সময়োপযোগী ও বাস্তবায়নযোগ্য। বাস্তবায়ন করতে হলে প্রতিটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হবে এবং সমস্যা সমাধানকল্পে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নজর বাড়াতে হবে এমএসএমই ও এসএমই খাতে। দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে এসএমই খাত ও শ্রম ঘন ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।এছাড়া গ্রামীণ এলাকায় অকৃষি খাতে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে।
বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য দরকার সুশাসন ও যথাযথ মনিটরিং। বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং তদারকির মান ক্রমাগতভাবে উন্নয়নের জন্য সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা ও পরিকল্পনা নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়াও বাজেট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারি এবং বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করতে হবে।
মৌসুমী ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রমিক্সকো গ্রুপ, চেয়ারপারসন, অ্যাসোসিয়েশন অফ গ্রাসরুট উইমেন এন্টারপ্রেনার বাংলাদেশ।