হাজার বছরের ঐতিহ্য ও ইতিহাসের অনন্য ভৌগলিক নগরীর নাম চট্টগ্রাম। প্রাচ্যের রাণী খ্যাত চট্টগ্রাম সুপ্রাচীনকাল থেকে ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। শিল্প ও বাণিজ্য সর্বক্ষেত্রে চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাণিজ্য নগরী বা শিল্প নগরী হিসেবে পরিচিত পাবার নেপথ্যে আদিকাল হতে বন্দর ও পোতাশ্রয়ের সুবাধে আরব, ইউরোপীয়, চাইনিজ, আফ্রো-এশিয়ান বণিকেরা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামকে প্রাধান্য দিয়েছে। ফলে হাজার বছর ধরে চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের অধিবাসীরা সওদাগর বা ব্যবসায়িক হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। সেই সুনামের ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামে জন্ম নিয়েছে কিংবদন্তিসম সওদাগর, ব্যবসায়ী, শিল্পপতিরা। তারা মেধা ও দক্ষতায় তাদের ব্যবসার পরিধি দেশ হতে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভৌগলিক অবকাঠামোগত সুবিধার কারণে ব্রিটিশ আমলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে সদর দফতর চট্টগ্রামে স্থাপিত হয়েছিল। পাকিস্তান আমলে বৃহৎ শিল্প-কারখানা যেমন, ইস্পাত, মোটর গাড়ি, পাট, বস্ত্র, সুতা, তামাক, ঔষধ ইত্যাদি চট্টগ্রামে গড়ে উঠে। এছাড়াও সে সময়ে বেশ কয়েকটি বহুজাতিক শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, বাঙালি মালিকানাধীন প্রধান ব্যাংক ও বিমার দফতর চট্টগ্রামে স্থাপিত হয়েছিল। ষাটের দশকে যে ক'জন মুষ্টিমেয় বাঙালি উদ্যোক্তা ও শিল্পপতি প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন তাদের মধ্যে এ.কে খান, মীর্জা আবু ও এস আর সিদ্দিকী ছিলেন চট্টগ্রামের লোক। বর্তমান সময়ে তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ যেমন, এ. কে. খান, ইলিয়াছ ব্রাদার্স, আলহাজ্ব খলিলুর রহমানের কেডিএস গ্রুপ, আখতারুজ্জামান চৌধুরী, টি.কে গ্রুপ, এস আলম গ্রুপসহ প্রমুখ শিল্প গ্রুপরা স্বমহিমায় তাদের শিল্পের প্রসার ঘটিয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামের এ উন্নয়ন ও আলোকিত অধ্যায়কে স্বার্থন্বেষী মহল কখনও ভালো চোখে দেখেনি। সেই পাকিস্তান শাসনামল হতে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত তাদের ঈর্ষা, ষড়যন্ত্র, প্রতিহিংসার বার বার চট্টগ্রামকে সব পর্যায় হতে বঞ্চিত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী, শিল্প উদ্যোক্তাদের সাফল্য তাদের গাত্রদাহের কারণ হয়েছে। ছলে বলে কৌশলে ও প্রচারণায় চট্টগ্রামের শিল্প মালিকদেরকে হেয় করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। বর্তমান সময়েও এর ব্যতিক্রম নয়। দেশের একটি স্বনামধন্য পত্রিকা নিয়মিতভাবে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের চরিত্র হরণের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এমন কোন চটকদার কাহিনী নাই যা তারা তৈরি করেনি। তাদের ভাষা দেখলেই বুঝা যায় হিংসা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা কত নিলর্জ্জ হতে পারে! প্রতিহিংসা ও ষড়যন্ত্রের প্রধান শিকার বর্তমান সময়ের চট্টগ্রামের স্বনামধন্য শিল্প গ্রুপ এবং সাধারণ মানুষের ত্রাণকর্তা এস আলম গ্রুপ এবং এই গ্রুপের কর্নধার ‘সাইফুল ইসলাম মাসুদের' কথা বলার চেষ্টা করছি। আমি একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমার দৃষ্টিতে যা দেখছি দেশবাসীর সামনে তা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
আশির দশকে পরিবহন ব্যবসা দিয়ে যাত্রা শুরু করা এস আলম গ্রুপ আজ হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা সফলভাবে পরিচালনা করেছে, নিজেও একাধিক ব্যাংকের মালিক হয়ে সেগুলোকে ব্যবসার জন্য ব্যবহার করেছে। আজ পর্যন্ত সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করেছে, কিন্তু ঋণ খেলাপি হয়নি কখনো। দেশের সংবাদ মাধ্যমে তাকে দোষারোপ করা হচ্ছে, বিদেশে টাকা পাচার করার অপবাদে। বিদেশে বিনিয়োগ না কি ষড়যন্ত্র? বিদেশে ব্যবসা করা মানে বিদেশে টাকা পাচার? এস আলম বৈধভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যবসায় হাত বাড়িয়েছে। বিদেশিরা যেমন এদেশে বিনিয়োগ করেছে। তেমনি এস আলমও বিদেশে বিনিয়োগ করেছে। এতে দোষের কি থাকতে পারে? যদিও কোনো অসংগতি থাকে বা কোন অনিয়ম থাকে সরকার তা সংশোধন করতেই পারে। কিন্তু এখন প্রতিনিয়ত যা হচ্ছে তা একধরনের দুরভিসন্ধিমূলক এবং ষড়যন্ত্রমূলক আক্রমণ, যা দেশের একটি সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়ার পায়তারা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশের সব বিবেকবান মানুষের কাছে আবেদন, দলমত নির্বিশেষে এস আলম গ্রুপকে রক্ষা করার জন্য সোচ্চার হন। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ আবেদন করতে বাধ্য হচ্ছি। আজ এ সময়ে এটা কেবল এস আলমের একার লড়াই নয়, এটা আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ লড়াই। একটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতে বেশি সময় লাগে না, কিন্তু গড়ে তুলতে লাগে বছরের পর বছর। এস আলমের এই দীর্ঘ দিনের কষ্টার্জিত অর্জনকে এক নিমেষে শেষ হতে দেওয়া যায় না। আসুন, আমরা সবাই মিলে এই ষড়যন্ত্রের হাত থেকে এস আলম গ্রুপকে রক্ষা করি, তাদের পাশে দাঁড়াই। আমাদের মানবিক দায়িত্ব কেবল এই শিল্প গ্রুপকে রক্ষা করাই নয, বরং আমাদের প্রাচ্যের রাণী চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক ঐতিহ্যকেও রক্ষা করা। দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করা।
আসুন, সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম বিরোধী এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। আমাদের জাতীয় স্বার্থে এবং চট্টগ্রামের বৃহত্তর কল্যাণে এস আলম শিল্প গ্রুপকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে চট্টগ্রামবাসীর জন্য এটি একটি মহাবিপদের সময় । লাখ লাখ শ্রমিক-কর্মচারীর কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখা এখন সময়ের দাবি। এস আলম শিল্প গ্রুপ দেশি ও বিদেশি মহলে একটি গৌরবের প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আজ সেই প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম বিদ্বেষী কূটকৌশলে দেউলিয়া হওয়ার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। দেশের এ কঠিন পরিস্থিতি থেকে এস আলমকে বাঁচাতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি এবং প্রকৃত সত্য জানারও অনুধাবন করার অনুরোধ করছি।
এস আলম গ্রুপ দীর্ঘ সময় ধরে তিলে তিলে শ্রম, মেধা এবং সৃজনশীলতায় আজকের এই অবস্থানে এসেছে। কারোর দয়ায় নয়। কোনো না কোনো কারণে আজ এটি ষড়যন্ত্রের শিকার। লাখ লাখ মানুষের ভাগ্য এই গ্রুপের সঙ্গে জড়িত, তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও তাদের অবদান উল্লেখযোগ্য। যেখানে আমরা এখনও শতভাগ বেকারত্ব দূর করতে পারিনি, সেখানে এস আলমকে দেউলিয়া করে লাখ লাখ কর্মরত মানুষকে বেকার করার অভিশাপ থেকে বাঁচানোর জন্য
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আজ এ ষড়যন্ত্র শুধুমাত্র এস আলমের বিরুদ্ধে নয়, এই ষড়যন্ত্র চট্টগ্রামের উন্নয়নের বিরুদ্ধে।
এস আলম একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ও গৌরবময় প্রতিষ্ঠান, যা দেশি-বিদেশি মহলে সুনাম অর্জন করেছে। এই প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগ পরিবেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা পৌঁছাবে। এতে ভবিষ্যতে বিনিয়োগকারীরা এদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ হারাবে। শ্রমিকরা কর্মসংস্থান হারালে লাখ লাখ শ্রমিক ও তাদের পরিবার সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়বে। বেকারত্বের কারণে তাদের সন্তানদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবনমানে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই পরিস্থিতিতে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে, যা সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে।
এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে লাগামহীন ষড়যন্ত্রের কারণ কি হতে পারে? বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়-
প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে এস আলমের ব্যবসা ধ্বংস করতে ষড়যন্ত্র চলছে। এ কাজে তারা একশ্রেণির তথাকথিত বুদ্ধিজীবী এবং মিডিয়াকে ব্যবহার করছে। এ ধরনের শত্রুতা এবং অপরিণত ব্যবসায়িক কৌশলগুলো তাদের এই ষড়যন্ত্রের মূল চালিকা শক্তি।
এ গ্রুপের অতুলনীয় ধারাবাহিক সাফল্য এবং তাদের শক্তিশালী নেতৃত্ব একশ্রেণির চট্টগ্রাম বিদ্বেষী মহলকে অসন্তুষ্ট করেছে। তারা মনে করে এস আলম গ্রুপের সাফল্য তাদের স্বার্থসিদ্ধির পথে বাঁধা।
এর পেছনে রাজনৈতিক কারণও থাকতে পারে। অনেক সময় একটি সফল প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক প্রভাব এবং চাপ প্রয়োগ করে তার স্বার্থবিরোধী কাজ করানোর চেষ্টা করা হয়। বিরোধীদের স্বার্থ রক্ষা এবং দেশের কিছু প্রভাবশালী মহল তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে এস আলম গ্রুপকে ধ্বংস করতে চাইছে। এ ষড়যন্ত্র আওয়ামী সরকারের সময় হতেই শুরু। এদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখা এবং অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানকে পিছনে ফেলে রাখা।
বর্তমানে দেশ ও জনগণের স্বার্থে গণসমর্থন গড়ে তোলা জরুরি। এ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশনে ও লেখার মাধ্যমে দেশবাসীকে সত্য বিষয় জানিয়ে এস আলম গ্রুপের পক্ষে জনগণের সমর্থন দেশের অর্থনীতির স্বার্থে গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কেবল একটি প্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্য নয়, বরং জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্যও অত্যাবশ্যক।
একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন: এস আলমের ঋণের চেয়েও বিনিয়োগ বেশি।
ধারাবাহিক সাফল্যের কারণে বাংলাদেশ এখন এশিয়ার পঞ্চম টাইগার অর্থনীতি হিসেবে বিবেচিত। যদিও এটি বর্তমানে অবাস্তব শোনাতে পারে, কয়েক দশক আগে এমনকি উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিকে বিশ্বমঞ্চে একটি ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ক্ষুধা, দুর্ভিক্ষ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিশাপকে অগ্রাহ্য করে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। লন্ডন ভিত্তিক সেন্টার ফর ইকোনমিক্স অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের (সিইবিআর) পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০৩৮ সালের মধ্যে বিশ্বের ২০তম বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গ্রুপটির অবদান ছাড়া বাংলাদেশের এই অসামান্য সাফল্য সম্ভব ছিল না। আগেই বলেছি চট্টগ্রাম বন্দর শহর ভিত্তিক অন্যতম বৃহৎ শিল্প সংগঠন এস আলম গ্রুপ।
এই গ্রুপটি ১৯৮৫ সাল হতে ৩৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রয়োজনীয় পণ্য, বিদ্যুৎ খাত, আমদানি ও পরিশোধন, অর্থনৈতিক অঞ্চল, স্বাস্থ্য, টেক্সটাইল, আইটি এবং অন্যান্য ব্যবসা স্থাপনে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড গুগল এবং দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের গুগল নিউজ চ্যানেলের তথ্যমতে, এ শিল্প গ্রুপের উদ্যোগের ফলে দুই লাখেরও বেশি মানুষ সরাসরি চাকরি পেয়েছে।
ছয়টি ভোজ্যতেল ও দুটি চিনি শোধনাগারের মাধ্যমে অধিকাংশ দেশীয় তেল, গম ও চিনির চাহিদা পূরণ করে আসছে। দেশীয় ভোক্তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য সরকারের হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে দেশের বাজারে চিনি, গম, ছোলা, পেঁয়াজ, তেলের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি ও প্রক্রিয়াকরণের অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছে।
পরিসংখ্যানুযায়ী ২০২৩ সালে ৭ লাখ ৫০ হাজার টন চিনি আমদানি করেছিল সংস্থাটি, মূল্য ৪৯ কোটি ডলার। গত তিন বছরে (২০২০, ২০২২, ২০২১) চিনি আমদানির পরিমাণ ১৪ লাখ ৮২ হাজার মেট্রিক টন, যার মূল্য ৮২ কোটি ৬১ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ ডলার।
পাশাপাশি গত বছর ৫ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানি করা হয়েছে, যার মূল্য ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। তিন বছরের পরিসংখ্যানে (২০২০, ২০২২, ২০২১) আমদানিকৃত গমের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ১০ হাজার টন মূল্যের ৪৯ কোটি ৫৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার।
২০২৩ সালের পাম ও সয়াবিন তেলের মোট আমাদিন ছিল প্রায় ৩ লাখ ১২ হাজার ৪৮০ মেট্রিক টন, যেখানে পাম তেল ছিল প্রায় ২ লাখ ৭৫ হাজার ৭৭৯ মেট্রিক টন এবং সয়াবিন তেল ছিল প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন। এর আর্থিক বাজার মূল্য ছিল পাম তেলের জন্য প্রায় ২৫ কোটি ৯১ লাখ ৪৭ হাজার ১৫২ ডলার এবং সয়াবিন তেলের জন্য ৪ কোটি ১৯ লাখ ১ হাজার ৭২ ডলার। গত তিন বছরে (২০২০, ২০২২, ২০২১) মোট তেল আমদানির পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ১০৬ মেট্রিক টন, যার মূল্য ছিল ১৫৬ কোটি ৮২ লাখ ৪২ হাজার ৩৩১ ডলার।
দেশীয় বাজারে তেল, গম ও চিনির চাহিদার ৩০, ২০ ও ৩৫ শতাংশ পূরণ করেছে এস আলম। চলতি বছর ৫০ শতাংশ পূরণের পরিকল্পনা ছিল।
এস আলম গ্রুপের বর্তমানে ছয়টি ভোজ্যতেল শোধনাগার এবং দুটি সক্রিয় চিনি শোধনাগার রয়েছে। আরেকটি প্রকল্প নির্মাণাধীন পর্যায়ে। স্ব-অর্থায়নে ইউরোপীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ প্রকল্পে প্রতিদিন ৪ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল এবং ৫ হাজার ১০০ মেট্রিক টন চিনি পরিশোধন করা হয়। এর মধ্যে দুটি চিনি শোধনাগার চট্টগ্রামে অবস্থিত। ২০২৬ সালের মধ্যে নির্মাণাধীন মেগা সুগার রিফাইনারির কাজ শেষ করে উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে দেশের প্রথম বৃহৎ বেসরকারি কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প বর্তমানে উৎপাদনে রয়েছে। প্রায় ২.৬ বিলিয়ন ডলার বা ২৮ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগে নির্মিত হয়েছে ১৩২০ মেগাওয়াট ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এসএস বিদ্যুৎ কেন্দ্র । প্রকল্পে এস আলম গ্রুপের ৭০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে, বাকি ৩০ শতাংশ চীনা কোম্পানি, সেপকো ৩ এবং এইচটিজি প্রতিষ্ঠিত।
গত বছর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি জাতীয় গ্রিডে একীভূত করা হয়, যেখানে দুটি ইউনিট সমন্বিত, প্রতিটি ৬৬০ মেগাওয়াট ধারণক্ষমতা সম্পন্ন। প্রথম ইউনিট ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২৬ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে উদ্বোধন করা হয়। এই প্রকল্পের বিশেষ দিক হল এর উৎপন্ন শক্তি অন্যান্য অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় বেশি ব্যয়-দক্ষ।
এখানে প্রস্তাবিত সবুজ এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি দ্বারা গৃহীত একটি মেঘা প্রকল্প। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে সম্মিলিত সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে এবং প্রত্যাশিত ধারণক্ষমতা ৩ হাজার মেগাওয়াট। শুরু থেকেই বিদ্যুৎ কেন্দটি ৫০ শতাংশ সবুজ শক্তি দিতে সক্ষম হবে এবং তারপর ধীরে ধীরে তা ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। প্রকল্পটিতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার এবং এটি ২০২৭ সালে বাস্তবায়িত হবার পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রকল্পে প্রায় পাঁচ হাজার লোকের সরাসরি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি সেখানে পরোক্ষভাবে এক লাখ মানুষ সুবিধা ভোগ করবে।
জিই, সিমেন্স এবং মিতসুবিশির মতো নেতৃত্বস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানি থেকে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি সবুজ এবং পুনরায় নতুন শক্তিতে নিযুক্ত হবে। এই প্রকল্পের অনন্য প্রকৃতির কারণে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী কার্বন ট্যাক্সেস সুবিধা পাবে দেশ।
এস আলম গ্রুপ ১৯৯৫ সালে গ্যালভানাইজিং এবং স্টিলের শিট প্রোডাকশন প্রক্রিয়া শুরু করে। চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে এসব ফ্যাক্টরি অবস্থিত। জাপানি এবং ইতালীয় প্রযুক্তিভিত্তিক ফ্যাক্টরিগুলোতে, ‘সিআই এবং জিপি শিট, কালার কোটেড সিজিআই শিট, কোল্ড রোল্ড স্টিল শিট এবং আরও অনেক কিছু তৈরি করা হয়। এই গ্যালভানাইজিং প্ল্যান্ট এবং ফ্ল্যাট রোলিং প্ল্যান্টগুলোতে বিনিয়োগের মূল্য ৬৪০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০০০ এরও বেশি কর্মচারী এই শিল্পে কাজ করেন। গ্যালভানাইজিং শিল্পের চারটি ইউনিটের মোট উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৯৩০ মেট্রিক টন প্রতিদিন । এছাড়া দুটি ফ্ল্যাট রোলিং প্ল্যান্টের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ২ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন।
এস আলম গ্রুপ ২০০০ সাল হতে চট্টগ্রামের চরপাথরঘাটায় পোর্টল্যান্ড কম্পোজিট সিমেন্ট ফ্যাক্টরি চালু করে। ১৩০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে নির্মিত এ প্রতিষ্ঠানে ১৫০০ এর বেশি কর্মী কাজ করেন। জার্মান প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ইউনিটের দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১২০০ মেট্রিক টন
৫৮ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ পরিকল্পনা এবং সরকারের ভিশন ৫০ হাজার চাকরি সৃষ্টির লক্ষ্যে এস আলম গ্রুপ দুটি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির পরিকল্পনা করেছে। ১৮৪ একর জমি নিয়ে ‘বাঁশখালী এস আলম ইকোনমিক জোন ১' ও ২৫৯ একর জমি নিয়ে ‘বাশঁখালি এস আলম ইকোনমিক জোন ২' এর প্রকল্পের কাজ প্রক্রিয়াধীন।
এই বিশেষ দুটি শিল্প অঞ্চলের জন্য ৫৮ হাজার কোটি টাকার দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত। যেখানে বিদ্যুৎ খাতের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা, এইচ আর কয়েল খাতের জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকা, ডিআরআই প্ল্যান্ট খাতের জন্য ৭৫০০ কোটি টাকা এবং বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ৫০০ কোটি টাকা। আগামী দিনে ৪০০ একরের অধিক জমি ‘বাশঁখালি এস আলম ইকোনমিক জোন ২' এ যোগ করা হবে এবং জাপানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কয়েকটি মাঝারি ও ভারী শিল্প স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বর্ণিত দুটি বিশেষ ইকোনমিক জোন, যা বর্তমানে চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন, তাদের কার্যক্রম শুরু করলে সেখানে ৫০ হাজারও বেশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। যা থেকে সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব পাবে।
৫ লাখের বেশি মানুষকে সেবা দিতে স্বাস্থ্যসেবার খাতে ২০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে এ প্রতিষ্ঠান। তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অধীনে প্রধান শহরগুলোতে ক্লিনিক, হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন করেছে। তাদের লক্ষ্য হল সুবিধাবঞ্চিতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা এবং স্বাস্থ্যসেবাকে সবার কাছে আরও সহজলভ্য করা। মানবসেবার দিকে দৃষ্টি রেখে এস আলম গ্রুপ চালু করেছে চট্টগ্রামে এস আলম ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতাল প্রকল্প, যা প্রায় সমাপ্তির পথে। এখানে অনকোলজি, কার্ডিওলজি, নেফ্রোলজি, এন্ডোক্রিনোলজি, অর্থোপেডিক্স, শিশুরোগ, স্ত্রীরোগ এবং মাতৃত্বের যত্ন ইত্যাদি বিভাগে মানুষকে সেবা প্রদান করবে।
এছাড়াও গ্রুপটি দেশের বিভিন্ন জায়গায় মেডিকেল ও নার্সিং কলেজ ও অন্যান্য চিকিৎসা সুবিধা স্থাপন করে স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে । এ প্রকল্পের অধীনে পূর্বাচল, বসুন্ধরা এবং অন্যান্য অঞ্চলে ভূমি উন্নয়নে কাজ করেছে।
এস আলম গ্রুপের স্বাস্থ্য সেবার এ উদ্যোগে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ইউরোপীয়, ইন্ডিয়ান এবং পূর্ব এশিয় ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের ওপর ভিত্তি করে ২০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে এ প্রকল্পে ৫ লাখ লোকের সেবা দেওয়া সম্ভভ হবে।
পরিশেষে বর্ণিত বিষয়াদি এবং এস আলম গ্রুপের ব্যবসায়িক বিনিয়োগ ও পরিকল্পনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, একটি প্রতিষ্ঠান দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে কি পরিমাণ উদ্যোগী হতে পারে? আমি দক্ষিণ কোরিয়ায় দেখেছি, একটি দেশকে কিভাবে ব্যবসায়ীরা উন্নত অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড়ে তোলতে পারে?
আমাদের দেশেও দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্প গ্রুপ ‘ইয়ংওয়ান’ বিশাল বিনিয়োগ করে দেশকে সমৃদ্ধ করছে। সে হিসেবে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে এস আলম গ্রুপের অবদানকে খাটো না করে সরকারি পর্যায় হতে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। যাতে তারা দেশের উন্নয়নে সহযোগী হতে পারে। ধ্বংস নয় সৃষ্টিই হোক আমাদের লক্ষ্য। কাউকে বড় করা বা খাটো করা আমার উদ্দেশ্য নয়। দেশের স্বার্থে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।