শিক্ষার মানে ক্রমাবনতি নিয়ে বিতর্কের মাঝেই মঙ্গলবার দেশে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ৯টি সাধারণ ও মাদরাসা এবং কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের ফল প্রকাশিত হল। গতানুগতিক ধারায় এবারও প্রাপ্ত ফলাফল নিয়ে কিছু মূল্যায়ন উঠে এসেছে। বার্তা২৪.কম-এর প্রতিবেদন বলছে, এবার উচ্চ মাধ্যমিকে কৃতকার্য হয়েছে ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন। গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এরমধ্যে ছাত্রীদের পাসের হার ৭৯ দমশিক ৯৫ শতাংশ। আর ছাত্রদের পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। পাশের হারে ছেলেদের চেয়ে ৪.৩৪ শতাংশ এগিয়ে মেয়েরা।
অন্যান্য বছরের মতোই উদ্বেগের খবর হচ্ছে-দেশের ৬৫টি কলেজের কেউই পাস করেনি এবার। গত বছর শূন্যপাস করা কলেজের সংখ্যা ছিল ৪২টি। সেই হিসাবে এবার শূন্য পাস কলেজের সংখ্যা বেড়েছে ২৩টি। কেবলমাত্র রাজশাহী বিভাগেরই ১২ কলেজের অংশ নেওয়া সবাই অকৃতকার্য হয়েছে।
শিক্ষকদের অপেশাদারিত্ব, বিশেষ করে শ্রেণি কক্ষে পাঠদানে অনীহা, কোচিংয়ের নামে শিক্ষাকে বাণিজ্যকীকরণের প্রবণতা প্রভৃতির সাম্প্রতিক দশকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ঐতিহ্যিক পরম্পরায় ধ্বস নামিয়েছে। অভিবাবকদের দায়িত্বশীলতার অভাব, সর্বোপরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে রাজনৈতিক দৌরাত্ম্য, পরিচালনা পর্ষদ ও শিক্ষকদের শিক্ষার মানোন্নয়নের চেয়ে অন্যদিকে বেশি প্রাধান্য দেওয়াকে এই অধঃপতনের জন্য দায়ী করছেন অনেকে।
গেল বছরের চেয়ে শূন্য পাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ২৩টি। শিক্ষার মানোন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা অব্যাহত থাকলে পরের বছর এই সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। অবশ্য, ঘন ঘন শিক্ষাক্রম বদলানোর নেতিবাচক প্রভাবকেও এই ক্রমাবনতির জন্য দায়ী করা হচ্ছে। শিক্ষাবিদদের দাবি, এই ঘন ঘন শিক্ষাক্রম বদলে ফেলার কারণে শিক্ষার্থীদের খাপ খাওয়াতে বেগ পেতে হচ্ছে।
তবে কারণ যাই হোক, উচ্চ মাধ্যমিকে গেল বছরের ধারাবাহিকতায় ৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেউই কৃতকার্য হতে না পারার দায় সেইসব কলেজের শিক্ষক, পরিচালনা পর্ষদ কিংবা অভিবাবক কেউ এড়াতে পারেন না। বিশেষ করে প্রত্যক্ষভাবে পাঠদান ও শিক্ষার্থীদের মনস্ক করে তোলার দায়িত্ব বর্তায় যে শিক্ষকদের উপরে। তারা যে বিগত দিনগুলিতে যথেষ্ট উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন তা নিয়ে সন্দেহ নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দৃষ্টান্ত না গড়তে পারলে শিক্ষার এই ক্রমাবনতি ঠেকানো কঠিন হবে।