বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হেয় করে, অপমান-অপদস্থ করে বক্তৃতা-বিবৃতি, পত্র-পত্রিকায় লেখা, টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার-প্রচারণার একটি সাম্প্রতিক প্রবণতা লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
পুরো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজকে নিয়ে যার যা খুশি বলে ফেলছেন, লিখে ফেলছেন। কারও কারও মতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক না হলেও অধিকাংশ শিক্ষক মানহীন, লেখা-পড়া জানে না। বাস্তবতা হলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষক বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার ডিগ্রি, এম. ফিল, পিএইচ.ডি, পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করেছেন।
বিখ্যাত গবেষণা জার্নালে তাদের প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের যে কোন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার যোগ্যতা রাখেন। অনেক শিক্ষক উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে না ফিরে কিংবা দেশে ফিরে চাকরীতে ইস্তফা দিয়ে বিদেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে, গবেষণা প্রতিষ্ঠানে যোগদান করে সুনাম-সুখ্যাতি অর্জন করেছেন।
তার মানে এই নয় যে, মানহীন শিক্ষক নেই। অবশ্যই আছে। সংখ্যায় তারা অধিকাংশদের কাতারে নয়।তারা সংখ্যালঘু। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি একজন মানহীন শিক্ষকও যদি নিয়োগ হয় তা অপরাধ। তবে এ অপরাধের দায় পুরো শিক্ষক সমাজের উপর চাপানো সঠিক নয়। কেননা এ প্রক্রিয়ায় যিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন তিনি উপাচার্য। আর ৯০ এর দশক থেকে প্রায় সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগে সাধারণ শিক্ষকদের কোন ভূমিকা নেই। এটি রাষ্ট্রের তরফ থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি করে থাকেন।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পদ-পদবির লোভে লবিংয়ে ব্যস্ত।
তিনি বলেছেন, ‘আজকাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষকেরা প্রশাসনের বিভিন্ন পদ-পদবি পাওয়ার লোভে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে ঠিকমতো অংশ না নিয়ে বিভিন্ন লবিংয়ে ব্যস্ত থাকেন। অনেকে আবার নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতেও পিছপা হন না। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ভুলে গিয়ে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট লেনদেনে সম্পৃক্ত হন। এটা অত্যন্ত অসম্মানের ও অমর্যাদাকর’।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি ‘শিক্ষকেরা’ ছাড়া আর সবটুকুই সঠিক বলেছেন। কেননা ‘শিক্ষকেরা’ বললে সকল শিক্ষক কিংবা অধিকাংশ শিক্ষককে বোঝায় যা সঠিক নয়।
প্রকৃত সত্য হলো হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষক তদবির-লবিং করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলি উপাচার্য পদের জন্য বড়জোড় ৫ জন লবিং করেছেন। আর উপ-উপাচার্য পদের দৌড়ে ৩ জনের নাম শোনা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে ৮ জন। ৯০০ শিক্ষকের মধ্যে মাত্র আটজন লবিং করেছেন, মানে শতকার হিসাবে ০.৮৮ শতাংশ অর্থাৎ ১ শতাংশেরও নিচে শিক্ষক তদবির-লবিং করেছেন। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও সংখ্যা শতাংশের হিসাবে এর চেয়ে খুব বেশি হবে না। তাই এ ক্ষেত্রে পুরো শিক্ষক সমাজের দায় নেই।
তদুপরি তদবির-লবিং বন্ধ করার দাওয়াই মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেই রক্ষিত। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুজন মিলে যদি সিদ্ধান্ত নেন যে, কোন তদবির-লবিংকারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য নিয়োগ দিবেন না, তাহলে তদবির-লবিং বন্ধ হতে বাধ্য। আর এমন হলে উচ্চশিক্ষার অনেক অসুখ এই এক দাওয়াই দিয়েই সেরে যাবে।
বাংলাদেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তত্ত্বাবধানে সমন্বিতভাবে নেয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্নমত ও সিদ্ধান্তহীনতাকে কেন্দ্র করে কোন কোন লেখক অত্যন্ত আপত্তিকর ভাষায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আক্রমণ করছেন। কেউ কেউ তো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অর্থলোভী বলে মানহানি করতেও কসুর করছেন না।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাক স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অসীম ও শর্তহীন নয়। বাংলাদেশের সংবিধানে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, “৩৯। (১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হইল। (২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে
(ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং
(খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল”।
সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সভায় আমি উপস্থিত ছিলাম। এখানে যেসব যুক্তি উপস্থাপিত হয়েছে সেখানে অর্থসংক্রান্ত বিষয়ের কোন যুক্তি উল্লেখ ছিলো না। কেন থাকবে? একজন শিক্ষক ভর্তি পরীক্ষার পরিদর্শন করে ১৫-২০ হাজার টাকা পান। এজন্য তাকে ভর্তি পরীক্ষার দিনসমূহে সকাল-সন্ধ্যা শ্রম দিতে হয়। এটি কি লোভী হওয়ার পরিমাণ অর্থ? ভর্তি ইউনিটের সাথে যারা জড়িত থাকেন, তারা কিছু বেশি পান মাসব্যাপী তাদের শ্রম, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঝুঁকি ইত্যাদি বিবেচনায়।
ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত আয়ের ৪০ শতাংশ বাধ্যতামূলকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের রাজস্ব বাজেটে জমা হয়। তারপর বিশাল কর্মযজ্ঞের পিছনে কত নানা রকমের খরচ বাদ দিলে লোভী হয়ে অর্থলাভের সুযোগ কোথায়?
ভর্তি পরীক্ষার কয়েকদিনের শ্রমে শিক্ষকের অর্জিত ১৫-২০ হাজার টাকা এদেশের অনেক সরকারি চাকরিতে একজনের একদিনের সিটিং আ্যালাউন্সের সমান। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভিন্নমত অর্থের জন্য নয়। বরং প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে আমাদের যে তিক্ত অভিজ্ঞতা, সারা দেশব্যাপী শিক্ষকদের দিয়ে বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর মূল্যায়নে নম্বর প্রদানে বৈষম্যের শঙ্কা, বিষয় বৈচিত্র্যের ভিন্নতার ক্ষেত্রে মেধা যাচাইয়ে প্রশ্নপত্র প্রণয়নে বৈচিত্র্যের সাথে আপোষ করে একইরুপ প্রশ্ন প্রণয়ন, পরীক্ষা পরিদর্শনে কোন কেন্দ্রে শৈথিল্য হলে তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কিছু পরীক্ষার্থীর বিশেষ সুযোগ পাওয়া ইত্যাদি সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
এ ছাড়াও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোসহ বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি যেভাবে প্রকাশ্যে খোলামেলা আলোচনা করছেন তাতে এর পিছনে কোন মহলের কারসাজি রয়েছে বলে শিক্ষকদের মনে স্বায়ত্বশাসন নিয়েও এক ধরণের শঙ্কা বিরাজ করছে।
এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো কেবল বাংলাদেশের জন্য অনবদ্য কোন ঘটনা নয়। এটি সারা বিশ্বেই প্রচলিত একটি সাধারণ বিষয়। সান্ধ্যকালীন কোর্স পরিচালনার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি আছে। তারপরও মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের চ্যান্সেলর হিসাবে যদি মনে করেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গমন এবং সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধ করতে চান তাহলে বঙ্গভবনে উপাচার্যদের ডেকে নির্দেশনা দিতে কিংবা চ্যান্সেলর হিসাবে তাঁর দপ্তর থেকে এ বিষয়ে লিখিত নির্দেশনা দিতে পারতেন। তা না করে মহামান্য রাষ্ট্রপতির প্রকাশ্যে এভাবে উচ্চারণকে শিক্ষক সমাজ সন্দেহ-শঙ্কার চোখে দেখছেন।
যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজকে অর্থলোভী হিসাবে চিহ্নিত করতে চান তাদের উদ্দেশে কয়েকটি সত্যি তুলে ধরছি। এদেশে কিছু সরকারি চাকুরের একাধিক সরকারি গাড়ি রয়েছে।
একটি তিনি অফিসের কাজে ব্যবহার করেন। অন্য সরকারি গাড়িতে করে তার সন্তানেরা স্কুল-কলেজে-প্রাইভেট পড়তে যায়, স্ত্রী-পরিজন সরকারি গাড়িতে বাজারে, বেড়াতে যান। তাদের অনেকেরই প্রতীকী মূল্যে কোটি কোটি টাকা দামের সরকারি প্লট আছে, অনেকে আবার ডেভেলপার দিয়ে সরকারি প্লটে বাড়ি তৈরি করে এপার্টমেন্ট বিক্রি করছেন।
সিটিং অ্যালাউন্স, রেশনসহ নানা ভাতার মাধ্যমে বেতনের প্রায় সমপরিমাণ আয় করছেন। সরকারের কাছ থেকে ১ শতাংশ সুদে ৩০ লাখ টাকা নিয়ে গাড়ি কিনে মাসিক ৫০হাজার টাকা রক্ষণাবেক্ষণ খরচ পাচ্ছেন ও গাড়ির মালিক বনে যাচ্ছেন।
৩০ লাখ টাকার মধ্যে ১০ লাখ সরকারকে ফেরত দিতে হবে আর ২০ লাখ অবচয়জনিত কারণে ফেরত দিতে হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের জন্য এসব সুযোগ ‘নিষিদ্ধ লোবান’। একই স্কুল-কলেজে-প্রাইভেট-কোচিংয়ে যখন একজন সরকারি কর্মকর্তার সন্তান সরকারি গাড়িতে যাওয়া-আসা করে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সন্তান যাচ্ছেন বাস- সিএনজি-টেম্পু-রিকশায় চড়ে।
সবকিছু চোখের সামনে দেখা স্ত্রী-সন্তানের প্রশ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরি কি না? যারা এত বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক তাদের চেয়ে কম শিক্ষিত-যোগ্য কিনা? নানা প্রশ্ন, চাওয়া ও চাপের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কেউ কেউ নিজেই রাষ্ট্র সৃষ্ট বঞ্চনা ও বৈষম্যমোচনের দায়িত্বগ্রহণ করেছেন। যাদের সুযোগ আছে তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে অতিরিক্ত আয়ের সুয়োগ হিসাবে বেছে নিয়েছেন।
যাদের সে সুযোগ নেই, তাদের কেউ প্রজেক্ট-কনসালট্যান্সি, শেয়ারবাজার, প্রাইভেট-কোচিং, স্কুল-কলেজের জন্য বই লেখাসহ নানা পথ বেছে নিয়েছেন। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতিরেকে অন্য সরকারি চাকরিতে কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে সিনিয়র সচিবের, সচিবের মর্যাদা অর্জনের সম্ভাবনা আছে।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পাবার অপরাধে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স-এ এখন অবধি একজন শিক্ষকের যুগ্ম সচিবের ওপরে মর্যাদা পাবার সুযোগ নেই। শুধু তাই নয় ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স এর ২০ নম্বর ধাপে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার যে ৩৫ প্রকার পদাধিকারীর উল্লেখ আছে তারমধ্যে সর্বশেষ অর্থাৎ ৩৫তম অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের।
অধ্যাপকের নিচের পদাধিকারীদের বিষয়ে কোন উল্লেখই নাই। আর বেতন স্কেলের ক্ষেত্রেও কিছু সরকারি কর্মকর্তার জন্য সংরক্ষিত ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের পৌঁছার সুযোগ আইন করে রহিত করা হয়েছে।
বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের লাল পাসপোর্টের সুযোগ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের জন্য তা নিষিদ্ধ। সুইস ব্যাংক, কানাডার বেগম পাড়া কিংবা মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোমে যারা টাকা পাচার করেছে সেই তালিকায় কোন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের নাম দেখেছেন? আমার চোখে পড়েনি। আমি অনেক শিক্ষককে দেখি ছোট্ট একটা ভাড়া বাড়িতে নানা টানা-টানিতে থাকেন।
রিকশা, গণপরিবহনের বাস, শেয়ারের সিএনজিতে চলাচল করেন। এইতো সেদিন যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত SOAS University থেকে পিএইচডি করা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহ শেয়ারের সিএনজিতে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় নিহত হলেন। ৪০-৪৫ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেছেন কিন্তু বিভাগে ভৌত সুবিধার অভাবে এককভাবে একটি অফিস কক্ষে বসার সুযোগ পান নিসারা চাকরি জীবনেও। তারপরও বলবেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা অর্থলোভের কারণে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিরোধিতা করছে। বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষকদের যতই দোষারোপ করেন না কেন বাস্তবতা হলো সরকারের তিনটি অঙ্গে যারা কর্মযজ্ঞ করছেন, নানা পদ-পদবিতে দেশ চালাচ্ছেন তাদের প্রায় সবাই কিন্তু এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি।
বাংলাদেশে এমন শত শত শিক্ষক আছেন যারা অনায়াসেই বিশ্বের যে কোন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি নিয়ে চলে যেতে পারেন। নিরাপদ, সচ্ছল জীবন-যাপন করতে পারেন। কেবলমাত্র দেশকে ভালোবেসে, সামান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।
রাষ্ট্র সৃষ্ট বঞ্চনা ও বৈষম্য সত্ত্বেও দেশ-বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে অতি সীমিত সুযোগ সুবিধার মধ্যে শিক্ষকতা পেশাকে ভালোবেসে শিক্ষা-গবেষণা কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সিংহভাগের ক্ষেত্রে এটি সত্য। ব্যতিক্রম নেই তা বলবো না। তবে অর্থ ও সুযোগ-সুবিধার লোভে নয়, দেশ প্রেম, পেশার প্রতি ভালোবাসা, সমাজ ও গণমানুষের স্বীকৃতি ও সম্মানকে আলিঙ্গন করেই অধিকাংশ শিক্ষক এ পেশাকে বেছে নিয়েছেন।
নীতি-নৈতিকতা বিচ্যুত শিক্ষককে নিয়ে লিখুন। তাকে অপসারণে প্রতিবাদ করুন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিয়ে নানা নেতিবাচক লেখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে সমাজ ও জনমনে বিরূপ ধারণা তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মূল্যহীন করে তুলবেন না। এতে মেধাবীরা এ পেশা বেছে নিতে নিরুৎসাহিত হতে পারে। এমনটি ঘটলে আমাদের উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হতে পারে। এটি কোনোভাবেই রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য মঙ্গলজনক হবে না।
লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়