বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ বাঙালী কৃষ্টি তথা সংস্কৃতির এক অনবদ্য অংশ। অতীতের সকল জীর্ণতা ও ক্লান্তির অবসান ঘটিয়ে নতুন বছরের সূচনা হয়। সারা দেশেই পহেলা বৈশাখ বিভিন্ন উৎসব ও নানান সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়। বাংলা নববর্ষের ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায়, ১৯১৭ সালে আধুনিক নববর্ষ প্রথম উদযাপিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্তন ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। অনুরূপভাবে ১৯৩৮ সালেও পালিত হয় বাংলা নববর্ষ। তবে ১৯৬৭ সালের আগে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ পালনের রীতি তেমন একটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। জমিদারের খাজনা আদায়ে কৃষক ও জমিদারের সমস্যা দূর করতেই মূলত বাংলা সনের প্রবর্তন করা হয়। তাই দেখা যায় বাংলা নববর্ষ সব বাঙালির হলেও উৎসবের আমেজটা কৃষকের একটু বেশি। কৃষক-কৃষাণীর ভাটি বাংলায় বা হাওরাঞ্চলে এখনও খুব ঘটা করেই বাংলা নববর্ষকে বরণ করা হয়।
বাঙালিরা প্রতিবছর বেশ জাঁকজমক করেই নববর্ষের দিনটি পালন করে। পুরো দেশ বর্ণিল উৎসবে মেতে ওঠে। পুরো দেশ গানে গানে, আনন্দ আয়োজনে বরণ করে নেয় নতুন বছরটিকে। পুরো বাঙালি জাতি ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আয়োজনে মেতে ওঠে।
কিন্তু এবার সেই আয়োজন করতে পারবে না বাঙালি। করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ওপরও আঘাত হেনেছে। চীনের উহান শহর থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের কারণে এবার নববর্ষের অনুষ্ঠান হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাইরে নববর্ষের সব অনুষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, জনসমাগম করলে ভাইরাসটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে। এজন্য বাইরে কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না। পহেলা বৈশাখ, চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে ১৪২৬ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বছর- ১৪২৭। জীর্ণ-পুরাতনকে পেছনে ফেলে সম্ভাবনার নতুন বছরে প্রবেশ করবে বাঙালি জাতি- এই আশা রাখি। পুরো পৃথিবী আবার অগ্নিস্নান করে শুদ্ধ হয়ে উঠবে। পৃথিবীর মানুষ নতুনভাবে আবার স্বপ্ন দেখবে, দূর হয়ে যাবে সকল কালিমা, গ্লানি।
মো. আরমান হোসাইন: প্রভাষক, উইন্স কলেজ, রংপুর