গত কয়েক মাস ধরেই অদৃশ্য এক ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সঙ্গে যুদ্ধ করছে বিশ্ব। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র এখনো দমাতে পারেনি এর বিস্তৃতি। অসহায়ত্বের পাহাড়সমান বোঝা মাথায় নিয়ে মানুষ এখন বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে।
এরই মাঝে আমাদের বেঁচে থাকতে লড়াই করতে হচ্ছে খাদ্যের জন্য। পুরো বিশ্ব অবরুদ্ধ থাকায় চরম সংকটে পড়তে পারে খাদ্যের এমন আভাস দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে বিশ্বজুড়ে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের হিংস্র থাবা থেকে বাদ পড়েনি বাংলাদেশও। এরই মধ্যে প্রতিদিন বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। একইসঙ্গে বাংলার মানুষকে করোনামুক্ত রাখতে সরকার কয়েক দফায় গোটা দেশকে অবরুদ্ধ ঘোষণা করেছে। বিচ্ছিন্ন রয়েছে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা। এছাড়া বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত ও পোশাক শিল্প কারখানা।
সবকিছু বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া দুস্থ ও অসহায় শ্রমজীবী মানুষগুলো। দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ থাকায় কর্মহীন এই মানুষগুলো রয়েছে চরম খাদ্য সংকটে। অসহায় মানুষগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ত্রাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কোন খেটে খাওয়া মানুষ যাতে অভুক্ত না থাকে সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে ত্রাণের ব্যবস্থা করেছে।
কিন্তু সরকারের সেই ত্রাণ বিতরণ নিয়ে চলছে তেলেসমাতি। ত্রাণের চাল আজ চলে যাচ্ছে চোরদের ঘরে। চোরদের নজর এখন ত্রাণের চালের দিকে। প্রকৃত ভুক্তভোগীদের কাছে কতটুকু পৌঁছাচ্ছে ত্রাণ, সেটা নিয়ে মানুষের মাঝে রয়েছে নানা প্রশ্ন। ত্রাণের চাল চুরির অভিযোগ উঠেছে জোরেশোরেই। তাও আবার খোদ সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেই এই ত্রাণের চাল চুরির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বিব্রত সরকার।
একজন মানুষও না খেয়ে থাকবে না এমন নীতি নিয়ে যখন সরকার প্রধান কাজ করে যাচ্ছেন, ঠিক তখনই বিবেকবর্জিত গুটি কয়েক নেতাকর্মীর কর্মকাণ্ডে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে সরকারের ভালো কাজগুলো। তারপরেও থেমে নেই সরকার। ত্রাণের চাল চোরদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নীতি-নির্ধারকরা।
কিন্তু প্রশ্ন হলো ত্রাণের চাল নিয়ে কেন চলবে এই চালবাজি। গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে টিসিবির তেল বক্সখাটের নিচে মজুদ করার খবরও। এই দু:সময়ে তেল নিয়েও এই তেলেসমাতি চলতে থাকবে? শুধু এখনই নয়, এর আগেও যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও দেখা গেছে এ সকল চোরদের। সরকারের ভাবমূর্তির দিকে না তাকিয়ে তারা নিজেদের আখের গোছানোর জন্য সুকৌশলে ত্রাণের চাল চুরি করেছেন।
শুধু চুরিই নয়- ত্রাণের চাল বিতরণ নিয়েও চলে ভিলেজ পলিটিক্স। যারা ত্রাণের চাল বিতরণ করেন তারা তাদের পছন্দের মানুষগুলোকেই তালিকাভুক্ত করেন। সেক্ষেত্রে দুস্থ বা অসহায় না হলেও সমস্যা নেই। শুধুমাত্র তালিকাভুক্তকারীর মামা-খালু কিংবা ভাই-ব্রাদার হলেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চলে যাচ্ছে তাদের নাম। বাদ পড়ছেন প্রকৃত ভুক্তভোগীরা।
যারা ত্রাণের চাল পাচ্ছেন তারা কয়েক দফায় পাচ্ছেন। আর যারা পাচ্ছেন না তারা কখনোই কোন ত্রাণের চাল পাচ্ছেন না। ফলে একশ্রেণির অসহায়রা সারা জীবনই বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন। সঠিক বণ্টন না হওয়ায় অভুক্তই থেকে যাচ্ছেন তারা।
এখনই ত্রাণের চালের যদি সঠিক বণ্টনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তাহলে এবারের মহামারিতে চরম খাদ্য সংকটে ভুগবে কর্মহীন খেটে খাওয়া দুস্থ অসহায় মানুষগুলো।
চাল চোরদের এখনি যদি সমন্বিতভাবে প্রতিহত না করা যায় তাহলে আগামীতে এরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। এ সকল চাল চোরদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গর্জে উঠতে হবে। সামাজিকভাবে চাল চোরদের বয়কট করতে হবে। চোরদের ছবিসহ নামের তালিকা করে তা গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতে টাঙিয়ে রাখতে হবে। এক সাথে সবাইকে এই চাল চোরদেরকে ঘৃণা করতে হবে।
আসুন, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করি করোনার বিরুদ্ধে, লড়াই করি ত্রাণের চাল-ডাল-তেল চোরদের বিরুদ্ধেও। বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ত্রাণ চোরদের ঠাঁই নাই- এই নীতিতে চলুন এগিয়ে যাই।
সোহেল মিয়া: স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম