পুরো বিশ্বের সব মানুষকে আস্তে আস্তে মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। মানব সমাজের প্রত্যেককে বুঝতে হবে করোনা হয়তো যাবে না। এখন আমরা পুরো পৃথিবীর মানুষ এই মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করছি। তবে সম্পূর্ণভাবে এর থেকে পরিত্রাণ নেই। মহামারি কবে যাবে এটা কারো জানা নেই।
দেশে দেশে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কাজ চলছে। এটা ঠিক আমরা ভ্যাকসিন পেয়েও যাব। কিন্তু কবে পাওয়া যাবে তা এখন পর্যন্ত জানা নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, যেহেতু ভাইরাসটির চরিত্র একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম, তাই এটি প্রয়োগের জন্য কতটা সময় লাগতে পারে তা ঠিক বলা যাচ্ছে না। ফলে মানব শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগে সাফল্যের ব্যাপারটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা যায় না। ইতোমধ্যে এ ভ্যাকসিন প্রয়োগও করা হয়েছে, কিন্তু সফল হয়নি। তবে চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের একটি মানুষও যদি আক্রান্ত থেকে যায় তাতেও কারোরই নিস্তার নেই।
লকডাউন উঠে গেলে ভাবা যাবে না করোনা ভাইরাস চলে যাবে। অর্থাৎ লকডাউন পরবর্তী জীবনযাপন মোটেও আগের মত স্বাভাবিক হবে না। সমগ্র বিশ্বের মানুষের জীবনযাপনেই পরিবর্তন আনতে হবে।
এবার আসা যাক বিশ্বায়নে। মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে বিশ্বায়নের দিকটাকে সতর্কতার সাথে বিবেচনা করতে হবে। বলা প্রয়োজন, অর্থনৈতিক দিকটা যতটা সম্ভব এরই মধ্যে সচল রাখতে হবে। এজন্য বিশ্বনেতা ও অর্থনীতিবিদদের কাজ করতে হবে একসঙ্গে। কূটনৈতিক নিয়মকানুনে নতুন নিয়ম আরোপ করতে হতে পারে। বিশেষ করে যেসব দেশ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, সেসব দেশে কর্মসূত্রে হোক, পড়াশোনার জন্য হোক বা বেড়াতে যাওয়ার জন্য হোক দশবার ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে কিছু আন্তর্জাতিক নিয়ম তৈরি করতে হবে যা সবার জন্য প্রযোজ্য হবে।আবার, বিভিন্ন দেশের সরকারের পক্ষ থেকেও বেশকিছু বিধিনিষেধ চালু হতে পারে ভবিষ্যতে। এই নিয়ম আবার একই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বা জেলার মধ্যেও কমবেশি প্রয়োগ হতে পারে।
অতএব করোনা দেশে দেশে মানুষের চিন্তার মধ্যে গেঁথে যাবে। বর্তমানের শেখা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যকর, জীবনযাপন, হ্যান্ডওয়াশ, হ্যান্ডসানিটাইজার ব্যবহার প্রত্যেককে আজীবন মেনে চলতে হবে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ঘেঁষাঘেঁষি করে বসা যাবে না।চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সব সময়ের জন্য নিশ্চিত করতে হবে (পরিস্থিতি অনুযায়ী)। মানুষ যেমন পোশাক পড়ে, জুতা পড়ে, তেমনি এখন থেকে মাস্কও নাকে মুখের পোশাক বা জুতা হিসেবে পড়তেই হবে।
বিভিন্ন অফিস-আদালতের ক্ষেত্রেও কিছু সাধারণ স্বাস্থ্য, বিধি মেনে চলতে হবে। ব্যাংকে যেহেতু আনাগোনা, লেনদেন হয়, তাই ব্যাংকের প্রবেশদ্বারেই সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বছরব্যাপী ব্যাংকসেবা নিতে যাওয়া সকলকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে কাজ শেষে ব্যাংক ত্যাগ করতে হবে। এয়ারপোর্টে প্রত্যেক ইমিগ্রেশন অফিসারকে বাধ্যতামূলক মাস্ক এবং হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। শপিংমলের প্রবেশদ্বারে একই ব্যবস্থা জরুরি। যানবাহনের ক্ষেত্রে পরিবহন মালিকদের নিয়মিত বৈঠকের মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচিছন্নতার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল। শুধু করোনা ভাইরাস নয়, যে কোন সংক্রামক রোগের জন্য দেশে দেশে আলাদা স্থায়ী হাসপাতাল স্থাপন করতে হবে। এসব হাসপাতালের চিকিৎসক হবেন স্থায়ী। এতে করে রোগ নির্দিষ্ট স্থানে থাকবে। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকিও কমে আসবে। রইলো গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি-সর্বোচ্চ সতর্কতার বিকল্প নেই এখানে।
আবার আসা যাক ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে। আগেই বলা হয়েছে, ভ্যাকসিন চলে আসবে তবে তার আগেই অগণিত মানুষ কমবেশি সংক্রমিত হবে।দেশে দেশে প্রত্যেকের বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন কেউ না কেউ এর শিকার হয়ত হবে। কেউ সুস্থ হবে, আবার কেউ মারা যাবে, কেউ উপসর্গ ছাড়াই রোগ বয়ে বেড়াবে। আইসোলেশন, সঙ্গরোধ এগুলো হয়তো তখনো থাকবে দেশে দেশে অল্পবিস্তর।
অতএব, লকডাউন উঠলেই সব আগের মত স্বাভাবিক হয়ে যাবে কিনা সেটা ভেবে দেখা দরকার। আবার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আড্ডা, এ বাড়ি-ও বাড়ি যাওয়া, রেস্টুরেন্টে খাওয়া- এগুলো না করে বা কমিয়ে এনে কিভাবে নিজে সুস্থ থাকা যায় এবং অন্যকে সুস্থ রাখা যায় সেটা ভেবে মানব সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ধর্ম -বর্ণসহ বিশ্বের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে একযোগে এর মোকাবেলার জন্য আজীবন নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। মানব সম্প্রদায়কে রক্ষা করতেই হবে। ভার্চুয়ালি সামাজিক মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার সুযোগ তো রয়েছে এই ডিজিটাল যুগে।মনে রাখতে হবে-ভাইরাসটা থেকে যাবে।
আহসান ইমাম: সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়