বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বমানচিত্রে আত্মপ্রকাশকারী আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ তাঁরই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রায় এক যুগের শাসনামলে বাংলাদেশ সর্বক্ষেত্রে বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জন করেছে। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিতব্য স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ ৮৫ শতাংশ সমাপ্ত হয়েছে। রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, সোনাদিয়া ও পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প বাস্তবায়ন, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, পদ্মাসেতু রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্প এবং ঢাকা মেট্রোরেল নির্মাণসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বের নিকট ইতোমধ্যেই দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনা পরিণত হয়েছেন রাষ্ট্র নায়ক থেকে বিশ্ব নায়কে।
শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে তখন সভ্যতার এক চরম ক্রান্তিকাল পার করছি আমরা। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে বদলে গেছে বিশ্বের চিরচেনা দৃশ্যপট। গত ৩১শে ডিসেম্বর চীনের উত্তরাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহর থেকে সূত্রপাত হয়ে এ পর্যন্ত পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। বিশ্ব মোড়লদের ক্ষমতার দাপট, শক্তিশালী অর্থনীতি কিংবা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কোনটাই আটকাতে পারছে না এর ভয়াবহতা। সবকিছুই যেন অসহায় হয়ে পড়েছে এ অতি ক্ষুদ্র ভাইরাসের কাছে।
করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রেই মারা গেছে প্রায় ৮৮ হাজার, বৃটেনে প্রায় ৩৪ হাজার, ইটালিতে ৩১ হাজারের বেশি মানুষ। বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ৮ মার্চ ইতালি ফেরত দুই প্রবাসীর মধ্যে। আজ দু’মাস পেরিয়ে বাংলাদেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৩১৪ জন, যেখানে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে একই সময়ে মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের মধ্যে ১.৫ শতাংশ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। অন্যদিকে আক্রান্তদের মধ্যে ফ্রান্সে ১৫ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ও ইতালিতে ১৪ শতাংশ, স্পেনে ১১ শতাংশ, বেলজিয়ামে ১৭ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ৬ শতাংশ, ভারতে ৩.৩ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ২.১ শতাংশের মৃত্যু ঘটেছে। নিঃসন্দেহে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে ভাইরাসের বিস্তার এবং ভাইরাস জনিত মৃত্যু এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে নিয়ন্ত্রণে আছে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণার সাথে সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার তিন স্তরব্যাপী একটি কমিটি গঠন করে এবং করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থা এগিয়ে নিতে শুরু করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে করোনা মোকাবিলায় জনগণকে অবশ্য পালনীয় হিসেবে ৩১ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এর পাশাপাশি পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আগেই দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
দেশের চলমান লকডাউন কার্যকর করতে নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয় । দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পরপরই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে লকডাউন কার্যক্রম শুরু করেন এবং সেনাবাহিনী, পুলিশ ও মাঠ প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের এ লকডাউন কার্যকরের কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেন। দেশের অর্থনীতিকে রক্ষার জন্য ৭২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয় যা ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পসমূহকে রক্ষায় অবদান রাখবে।
এছাড়াও করোনা যুদ্ধে যারা সামনের সারি থেকে কাজ করছেন তাদের জন্য বিশেষ বীমা ব্যবস্থা চালু করে এক অনন্য নজীর স্থাপন করেছেন মমতাময়ী শেখ হাসিনা। এ বীমার আওতায় রয়েছে ডাক্তার, নার্স, সেনাসদস্য, পুলিশ থেকে শুরু করে অন্যান্যরা। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ঘোষিত মোট ৫টি প্রণোদনা প্যাকেজে বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় পরিমাণ ৯২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, যা জিডিপির প্রায় ২.৫০ শতাংশের বেশি।
স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় জরুরিভিত্তিতে দুই হাজার চিকিৎসক এবং ছয় হাজার নার্স নিয়োগের প্রক্রিয়া সমাপানান্তে তারা সম্প্রতি কাজে যোগদান করেছেন। বিনামূল্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ; ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয়; পঞ্চাশ লাখ পরিবারকে এককালীন ২৫০০ টাকা করে নগদ প্রদান; কওমি মাদ্রাসাগুলোতে আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত গৃহনির্মাণ-সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম কর্মসূচিগুলো শেখ হাসিনার মাতৃসম সত্ত্বাকে পুনরায় জাতির সামনে হাজির করেছে।
দেশের করোনা পরিস্থিতি নিজ হাতে তদারকি করার জন্য জেলা পর্যায়ের ডিসি, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে গত ৮ এপ্রিল থেকে নিয়মিত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি খোঁজ খবর নিয়ে যাচ্ছেন। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার সাথে সাথে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে গণভবনে বৈঠকে বসছেন। এই চরম দুঃসময়েও বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর কথা ভুলেননি ‘মাদার অফ হিউম্যানিটি’ শেখ হাসিনা। সার্বিক পরিকল্পনায় তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
শেখ হাসিনার এই নিরলস এবং কঠোর পরিশ্রমের ফলাফল আমাদের সামনে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সকলের ঐকান্তিক চেষ্টায় নড়াইল জেলাকে করোনামুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এসব সফলতার কারণে আমেরিকার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘ফোবর্সে’ করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে।
একজন প্রকৃত ও দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে প্রতিনিয়ত দেশের মানুষকে আশার আলো দেখিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা; আবির্ভূত হয়েছেন বাঙ্গালী জাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমরা যেমন জয়লাভ করেছি, তেমনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে করোনা যুদ্ধেও আমরা জয়লাভ করব। এর জন্য সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা, সামাজিক দূরত্ব জ্ঞান ও নিয়মানুবর্তিতার অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন।
করোনার বিরুদ্ধে সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মাবলী মেনে চলতে হবে। এই যুদ্ধে সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও একই কাতারে শামিল হয়ে লড়াই করতে হবে। সীমিত সামর্থ্য এবং দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে এই ভাইরাসকে মোকাবিলা করা অত্যন্ত দুষ্কর। এতদসত্ত্বেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ এই যুদ্ধে দ্রুত জয়লাভ করবে এটাই সকলের প্রত্যাশা।
এ কে এম ইফতেখারুল ইসলাম: সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়