বিজিএমইএ’র ভুলেই অশান্ত ‘শ্রম পরিবেশ’

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

ঊর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-11 08:23:08

ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পোশাক শিল্পের শ্রম পরিবেশ। অবরোধ হচ্ছে রাস্তা, জ্বলছে গাড়ি, ভাঙছে কারখানা, আবারও বর্হিবিশ্বে ইমেজ সংকটে পড়ছে দেশের পোশাক খাত। কিন্তু এবার বিজিএমইএ’র (বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি) ভুলে শ্রম অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে মনে করছেন খোদ সংগঠনটির সদস্যরা।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিজিএমইএ‘র এক সদস্য বলেন, নতুন মজুরি ঘোষণার পর থেকেই তা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়ে আসছিলো। বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষের উচিত ছিলো এ বিষয়টি শক্তভাবে মনিটর করা। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে সদস্যদের নিয়ে বিজিএমইএ এর বর্তমান কমিটি রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে বৈঠক ডাকে। আমরা তখন বারবার বলেছি আমাদের সাথে বৈঠক করে লাভ নেই। বৈঠক করতে হলে প্রশাসন, শিল্প পুলিশ ও শ্রমিক নেতাদের সাথে করেন। তাহলে আগামীতে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এলে তা সামাল দেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু তারা তা করেনি। তাদের কাছে সবকিছুই পিকনিক মনে হয়।  তাদের ভুলের মাসুল গুনতে হয় আমাদের সাধারণ সদস্যদের।

শ্রমিকদের সুরেও মিলে একই আভাষ। গার্মেন্টস ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বার্তা২৪.কমকে বলেন, যে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয় গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সেখানে আমরা বারবার বলেছি অপারেটরদের মজুরি বাড়াতে। প্রকৃতপক্ষে অপারেটরদের এক টাকাও মজুরি বাড়েনি। তখনই আমরা বলেছি এক সময় শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে আসতে পারেন। কিন্তু তখন তারা আমাদের কথা আমলে নেয়নি। আজ যে শ্রম অসেন্তাষ তৈরি হয়েছে তার জন্য বিজিএমইএ‘কে দায় নিতেই হবে।

এদিকে ৮ জানুয়ারি শ্রম ভবনে শ্রম আন্দোলন ইস্যুতে যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক ডাকা হয় সেখানেও অনেক শ্রমিক নেতাকে আমন্ত্রণ না জানানোয় নাখোশ হোন তারা। শ্রমিকদের সূত্রে জানা যায়, বুধবার ও বৃহস্পতিবার তারাও বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকদের সাথে রাস্তায় নামেন এবং অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টদের মতে বিজিএমইএ’র যে গবেষণা ইউনিট রয়েছে তারা শ্রম অসন্তাষের বিষয়ে কোনো স্টাডি করে না। ফলে শ্রম অসন্তোষ তৈরির আগেই যে সমস্যাগুলো বের করে সমাধান করা সম্ভব তা হচ্ছে না। ফলে রোগের উপসর্গ দেখা দিলেও তা রক্ষা করা যাচ্ছে না।

৯ জানুয়ারি সদস্য নতুন সরকারের  বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান করার আশ্বাস দেওয়ার পরও ১০ ডিসেম্বর সকাল থেকে গার্মেন্টস শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।

তবে এসব বিসয়ে মুখ খুলতে নারাজ বিজিএমএ এর বর্তমান কমিটি। বিজিএমইএ সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাসিরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি বলেন, আমি এই মুহূর্তে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। আমি একটি মিটিং এ আছি।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয় আট হাজার টাকা। ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা করার বিষয়টি অনেক শ্রমিক সংগঠনই তখন মেনে নেয়নি। এর মধ্যে কয়েকটি গ্রেডে শ্রমিকদের বেতন নিয়ম অনুযায়ি বৃদ্ধি পায়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।  ফলশ্রুতিতে গত কয়েকদিন যাবৎ চলছে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের আন্দোলন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর