শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি কমবে না, প্রয়োজন জোরালো বাজার মনিটরিং

, অর্থনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-06-25 10:57:44

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ। তবে সম্প্রতিক সময়ে এই দুটি কাজে বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যর্থ বলে মনে করা হচ্ছে।

মূল্যস্ফীতি কমিয়ে সাধারণ মানুষকে স্বস্তিতে রাখার কথা থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংক কোনোভাবেই তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। দেশে টানা ১৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার বাড়িয়ে দিলেও মূল্যস্ফীতি লাগামছাড়াই রয়ে গেছে। আর এর প্রভাব পড়ছে নিম্নআয়ের মানুষের ওপর।

অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার অর্থাৎ ডলারের বাজার অস্থিরতার কারণে ষান্মাসিক মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সূত্র জানায়, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কাজ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে মানুষকে স্বস্তিতে রাখা। প্রতি ছয় মাস পরপর মুদ্রানীতি ঘোষণার মাধ্যমে কাজটি করার চেষ্টা করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা যাবে না। এ জন্য বাজার ব্যবস্থাপনাও উন্নত করতে হবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতিতে নতুন মুদ্রানীতিতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা নিয়ে এখন সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কাজ করছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নতুন করে আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ কম। সরকারের চাপে সময়মতো সঠিক নীতি নেওয়া যায়নি। এ কারণে সংকট দীর্ঘমেয়াদি হয়েছে। তবে ব্যাংক ঋণের সুদহার ইতোমধ্যে ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তাই এখন নীতি সুদের হার বাড়িয়ে টাকাকে আরও দামি করে তোলা হতে পারে। এতে ঋণের সুদের হার আরও বাড়বে। তবে সবকিছু নির্ধারণ করবে মুদ্রানীতি কমিটি।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সুদের হার বাজারভিত্তিক রেখেই মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করে যেতে হবে। ডলারের সংকটও অনেকটা কমে এসেছে। কোনো অবস্থাতেই আর টাকা ছাপানোর দিকে যাওয়া যাবে না, বলছেন অর্থনীতিবিদরা।

জানা গেছে, শিগগির মুদ্রানীতি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। এই কমিটিতে গভর্নরসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি রয়েছেন অর্থনীতিবিদ সাদিক আহমেদ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান মাসুদা ইয়াসমীন।

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা ও জিডিপিতে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই লক্ষ্য ঠিক রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকও মুদ্রানীতি প্রণয়ন করবে।

দেশে মার্কিন ডলারের পাশাপাশি স্থানীয় টাকারও সংকট চলছে, বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্যহীনতায় রিজার্ভ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এ ছাড়া ব্যাংক খাতও নিয়ন্ত্রণহীন। মোটা দাগে এসবই হচ্ছে এখন দেশের আর্থিক খাতের প্রধান সমস্যা। এসব সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তারা বছরে দুবার মুদ্রানীতির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা রক্ষার চেষ্টা করে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি বছরে নীতি সুদের হার দুই দফা বাড়িয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে সরকারের ব্যাংক ঋণের সুদে। সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে ব্যাংক ঋণের সুদে। প্রথম দফায় গত জানুয়ারিতে নীতি সুদহার ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয় ও গত মে মাসে তা ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়। ফলে ঋণের সুদের হার বেড়ে সাধারণত ঋণের চাহিদা কমে যায়। গত এপ্রিলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশে নামে। এভাবে অর্থনীতিতে অর্থের প্রবাহ কমে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি কাজ করছে না। ১৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। সর্বশেষ মে মাসে তা বেড়ে হয় ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের মে মাসে যে পণ্য কিনতে ১০০ টাকা খরচ হয়েছিল, সেটি কিনতে এ বছরের মে মাসে খরচ হয়েছে ১০৯ টাকা ৮৯ পয়সা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কামাল মুজেরী বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি নেওয়া হয়েছে। এখন এর সঙ্গে রাজস্ব নীতি ও অন্যান্য নীতিকে সমন্বয় করতে হবে। বাজারে বিশৃঙ্খলার ফলে অকারণেও হঠাৎ পণ্যের দাম ওঠানামা করছে। এর মাধ্যমে মানুষের পকেট কাটছেন কিছু ব্যবসায়ী। এতেই বোঝা যাচ্ছে সমন্বয়হীনতা কতটা প্রকট হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর