দেশের ফ্যাশন অঙ্গনের সুপরিচিত নাম বুলবুল টুম্পা। দুই যুগের বেশি সময় ধরে ফ্যাশন মডেলিং-এর সঙ্গে জড়িত তিনি। শুরু করেছিলেন মডেল হিসেবে, এরপর তার নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফ্যাশন কোরিওগ্রাফার, ফ্যাশন ডিরেক্টর, স্টাইলিষ্ট, গ্রুমার ইত্যাদি নাম।
নিয়মিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কাজের বাইরে দেশের বড় বড় বিউটি পেজেন্ট-এর বেশিরভাগের সঙ্গে তিনি যুক্ত থাকেন নানাভাবে।
তারই ধারাবাহিকতায় দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘মিস বাংলাদেশ বিউটি পেজেন্ট’-এও তিনি যুক্ত ছিলেন। এর গ্র্যান্ড ফিনালে হয়ে গেলো গত ৪ অক্টোবর পাঁচ তারকা হোটেল লে মেরিডিয়েন ঢাকায়। আয়োজকদের দাবি, এটি বাংলাদেশ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জাতীয় সুন্দরী প্রতিযোগিতা। প্রতিভা, বুদ্ধিমত্তা ও সৌন্দর্যের এক মহা উৎসবে ১০ জন অসাধারণ নারীকে মুকুট পরিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে, যারা বিশ্বের ছয়টি মহাদেশের ১০টি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবেন।
টুম্পা এই পুরো বিউটি পেজেন্টে প্রতিযোগীদের গ্রুমিং করিয়েছেন। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? জানতে চাইলে এই জনপ্রিয় মডেল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এক বাক্যে বলতে গেলে, ভীষণ চ্যালেঞ্জিং ছিলো।’
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে খুব অল্প সময় ছিলো। কারণ এই বিউটি পেজেন্ট থেকে সেরা ১০ জন প্রতিযোগী বিশ্বের ১০টি বিউটি পেজেন্টে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। বুঝতেই পারছেন, এতোগুলো আন্তর্জাতিক পেজেন্টের জন্য তাদের ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী উপযুক্ত প্রতিযোগী নির্বাচন করা কতোটা কঠিন আর সময়সাপেক্ষ। এ ধরনের কাজ আরাম করে করতে গেলে যে সময় দরকার তা আমরা পাইনি। কারণ দেশের পরিস্থিতি কিছুদিন আগেও স্বাভাবিক ছিলো না। তাই পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতেই আমরা কাজে নেমে পড়েছি। যতো দ্রুত সম্ভব আবেদনকারী মেয়েদের শর্টলিস্ট করে তাদের গ্রুমিং শুরু করি। অল্প দিনের মাথায় গ্রান্ড ফিনালের মাধ্যমে ১০ জনকে আমরা নির্বাচন করতে পেরেছি। অল্প সময়ে করলেও কাজটি শেষমেষ ভালো হয়েছে। এজন্য আয়োজকদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই আমাকে কাজটির সঙ্গে যুক্ত করার জন্য। ’
টুম্পা বার্তা২৪.কমকে আরও বলেন, ‘ওই দিনগুলোতে আমি নাওয়া খাওয়া ভুলে গেছিলাম, এতোটাই চাপ গেছে আমার ওপর দিয়ে। বেশিরভাগ মেয়ে একদম নতুন, তাদের কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। এমন মেয়েদেরকে একটি পর্যায়ে নিয়ে আসতে কি পরিমাণ কষ্ট করতে হয় সবাই বুঝতে পারছেন। তবে আমি কোন কাজ হাতে নিলে হাল ছাড়ি না, কম্প্রোমাইজও করি না। এই ডেডিকেশনের জন্যই হয়তো এতো বছর ধরে সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, মিস বাংলাদেশ বিউটি পেজেন্ট ২০২৪-এর চূড়ান্ত শিরোপা অর্জন করেছেন ফেরদৌসি তানভীর ইচ্ছা। তিনি এখন ৯ নভেম্বর ২০২৪-এ ফিলিপাইনে অনুষ্ঠিতব্য মিস আর্থ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
১ম রানার-আপ কাজী তারানা ক্যাম্বোডিয়ায় মিস গ্লোবাল-এ এবং ২য় রানার-আপ মাহবুবা রহমান লাবণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রয়েল ইন্টারন্যাশনাল মিস-এ অংশ নেবেন। শীর্ষ ১০ এর বাকি ৭ জন বাংলাদেশকে মিস হেরিটেজ ইন্টারন্যাশনাল (থাইল্যান্ড), মিস এশিয়া, মিস এশিয়া গ্লোবাল, মিস গ্ল্যাম ওয়ার্ল্ড (ভারত), মিস ইন্টারগ্লোবাল (ফিলিপাইন), মিস কালচার গ্লোবাল (দক্ষিণ আফ্রিকা), এবং মিস ফ্রিডম অব দ্য ওয়ার্ল্ড (কসোভো এবং আলবেনিয়া) প্রতিযোগিতায় প্রতিনিধিত্ব করবেন।
এই গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টটি মিস বাংলাদেশ অর্গানাইজেশন এবং মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন দ্বারা আয়োজিত হয়েছিল। মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান মেঘনা আলম বলেন, ‘প্রতিযোগিতা শেষ হয়েছে, কিন্তু আমাদের মিশন মাত্র শুরু হয়েছে। আমরা বাংলাদেশকে পুনর্গঠন ও পুনরায় ব্র্যান্ডিং করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এই নারীরা পরিবর্তনের দূত হিসেবে পরিবেশগত রক্ষা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার গুরুত্বকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরবেন।’
গ্র্যান্ড ফিনালের বিচারক প্যানেলে ছিলেন জুলিয়া ওয়েসম্যান - ডিরেক্টর, গ্রোইং টুগেদার, মিননা স্ফিনহুউদ - আন্তর্জাতিক স্টাইলিস্ট ও যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক, শারমিন রহমান রওমা - সিনিয়র সাংবাদিক, বিবিসি, মানাম আহমেদ - সংগীত প্রযোজক ও সুরকার, নাজিম ফারহান চৌধুরী - ম্যানেজিং ডিরেক্টর, নর্থব্রুক কনসালটেন্টস লিমিটেড, ফেরদৌস বাপ্পী - কর্পোরেট ট্রেইনার ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং মেঘনা আলম - চেয়ারম্যান, মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন।