দক্ষিণাঞ্চলের খুলনাসহ আশেপাশের কয়েকটি জেলায় মাছের ঘেরে খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় শামুক। সাদা মাছ ও চিংড়ির ঘেরে উৎকৃষ্ট খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয় শামুকের ভেতরের শ্বাস। বিল থেকে শামুক সংগ্রহের পর তা বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন শামুক কুড়ানিরা। ঘের মালিকরা এগুলো কিনে ভাঙার দায়িত্ব দেন টাকার বিনিময়ে। এই শামুক ভেঙেই প্রতিদিনের জীবিকা নির্বাহ করেন কয়েক হাজার মানুষ।
বর্ষা শেষ হবার পর থেকে শীত পর্যন্ত চলে এ মৌসুমী পেশা। প্রতিদিন ভোর হলেই রাস্তার দুই ধারে বস্তাভর্তি শামুক নিয়ে ভাঙার কাজ শুরু করেন এই পেশার মানুষজন।শামুক ভেঙে এসব হতদরিদ্র মানুষেরা প্রতিদিন ৩ থেকে ৪শ টাকা উপার্জন করেন। প্রতি বস্তায় প্রায় হাজার খানেক শামুক থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনার, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে সাদা মাছ আর বাগদা-গলদা চিংড়ির জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার হিসেবে শামুকের শ্বাস বেশ জনপ্রিয়। এজন্য শামুকের চাহিদাও বেশ এখানে। ঘের মালিকরা বর্ষা শেষে মাছের খাবারের জন্য শামুক কেনা শুরু করেন। ফলে এ সময় শামুকের চাহিদা বেড়ে যায়।
শামুক ভাঙার কাজে ব্যস্ত দীপিকা সরকার বলছিলেন, প্রায় ৫ বছর যাবত আমি এ মৌসুমী পেশার সাথে জড়িত। আশপাশের বিলে আগে শামুক পাওয়া গেলেও এখন দূর-দূরান্ত থেকে শামুক আসে। ঘের ব্যবসায়ীরা বস্তা ভর্তি শামুক কিনে এনে আমাদেরকে ভাঙ্গার জন্য দেন। প্রতিদিন এক থেকে দুই বস্তা শামুক ভেঙ্গে ৩শ টাকার মতো উপার্জন হয়।
খুলনার ডুমুরিয়ার চহেড়া গ্রামের রবিন মন্ডল জানান, ডুমুরিয়া এলার প্রায় ৩শ পরিবার শামুক ভাঙ্গার কাজে নিয়োজিত। বর্ষার পরের এ সময়ে কাজ না থাকায় তাদের এ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করতে হয় বলে জানান তিনি।
শামুকের ভেতরের শ্বাসকে খুলনা অঞ্চলে ‘গেতো’ বলা হয়। বরিশাল, গোপালগঞ্জ, মাগুরার বিভিন্ন বিল থেকে সংগ্রহ করা শামুকও খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলের মাছের ঘেরের চাহিদা পূরণ করে। প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন জলাশয়ে জন্ম নেওয়া এসব শামুকে এ অঞ্চলের মানুষের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে।