নৈসর্গিক প্রস্তর সাম্রাজ্য সিলেটের 'সাদা পাথর'

  • ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নৈসর্গিক প্রস্তর সাম্রাজ্য সিলেটের 'সাদা পাথর'/ছবি: বার্তা২৪.কম

নৈসর্গিক প্রস্তর সাম্রাজ্য সিলেটের 'সাদা পাথর'/ছবি: বার্তা২৪.কম

সাদা পাথর ( ভোলাগঞ্জ, সিলেট) থেকে: পাথরের কত রূপ, দেখা যায় সাদা পাথর নামের অধুনা জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পটে। সিলেট শহর থেকে পূর্ব দিকের সীমান্তগামী পথে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পেরিয়ে ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর। সেখান থেকে নৌকাপথে সামান্য এগুলেই বিখ্যাত সাদা পাথর নামক এলাকা। যেখানে জল, পাহাড় আর সাদা পাথরের সান্নিধ্যে মন ভরে যায়। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েন মানুষ। হারিয়ে যান নৈসর্গিক প্রস্তর সাম্রাজ্যে।


সংখ্যাতীত পাথরের উৎস ধলাই নদ। নদীর ওপারেই ভারতের পার্বত্য রাজ্য মেঘালয়। সেখানকার খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে প্রচুর পরিমাণে পাথর ঝরনার পানিতে নেমে আসে নিম্নভূমিতে। প্রাকৃতিক কারণেই জায়গাটি পাথর প্রবাহের ক্ষেত্র। যেখানে জমেছে বিচিত্র পাথরের মেলা।

বিজ্ঞাপন

জলে ভাসা পাথর সংগ্রহ করা স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবিকার উৎস। বাহারি রঙ-বেরঙের পাথর কিনতে সাধারণ মানুষের আগ্রহ করেছে। সাধারণ পাথরগুলো নির্মাণ সামগ্রী রূপে ট্রাকে করে চলে যায় সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

সাদা পাথর জায়গাটি একেবারেই সীমান্তে। ভারতের অংশ অপেক্ষাকৃত উঁচু হওয়ায় পানি ও পাথরের ঢল বাংলাদেশের অংশে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রাকৃতিক এই ধারার গতি অপ্রতিরোধ্য। সীমান্তের উভয় পাশেই রয়েছে রক্ষীদের প্রহরা। আমাদের দিকে যেমন সিলেট, ওপারের প্রধান দ্রষ্টব্য স্থান ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল লুংলংপুঞ্জি ও শিলংয়ের চেরাপুঞ্জি। দুই দেশের সীমান্ত বাহিনী বিজিবি-বিএসএফের বিশেষ নজরদারি থাকলেও এদিকের সীমান্তে উত্তেজনা নেই। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক নির্বিঘ্নে উপভোগ করেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য।

বিজ্ঞাপন

সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে এয়ারপোর্ট রোড ধরে আসতে হয় সাদা পাথরে। ভোলাগঞ্জ বাজার পেরিয়ে এক কিলোমিটারের ভেতরেই সাদা পাথরে যাওয়ার ঘাট। ঘাটে নামলেই ছোট্ট ধলাই নদীতে অসংখ্য নৌকার মনোরম দৃশ্যে চোঁখ জুড়িয়ে যায়। নৌকা ভাড়া ৭০০-৯০০ টাকা। উঠা যায় ৮-১০ জন। একজন গেলেও ভাড়া একই। ২৫/৩০ মিনিটে ইঞ্জিনের নৌকা পৌঁছে দেয় সাদা পাথরে।


সারাবছরই সাদা পাথর ভ্রমণের উপযুক্ত। তবে বর্ষার মৌসুমে সৌন্দর্য কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। কল্লোলিত জলে রোলিং স্টোন দেখে মনে হয় জীবন্ত পাথরগুলো যেন চলাফেরা করছে। এজন্য জুন থেকে সেপ্টেম্বর উপযুক্ত সময়। শীতের আগে ও পরে সাদা পাথরের আরেক রূপ দেখা যায়। তখন স্নিগ্ধ, সমাহিত পাথরগুলো দেখে দেখে অস্থির বিশ্বের যাবতীয় কোলাহল তুচ্ছ করতে ইচ্ছে হবে। মন চাইবে ধ্যানমগ্ন হতে। কিংবা দূরের নিসর্গে তাকিয়ে থেকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও প্রকৃতিতে হারিয়ে যেতে।