সাদা পাথর ( ভোলাগঞ্জ, সিলেট) থেকে: পাথরের কত রূপ, দেখা যায় সাদা পাথর নামের অধুনা জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পটে। সিলেট শহর থেকে পূর্ব দিকের সীমান্তগামী পথে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পেরিয়ে ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর। সেখান থেকে নৌকাপথে সামান্য এগুলেই বিখ্যাত সাদা পাথর নামক এলাকা। যেখানে জল, পাহাড় আর সাদা পাথরের সান্নিধ্যে মন ভরে যায়। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েন মানুষ। হারিয়ে যান নৈসর্গিক প্রস্তর সাম্রাজ্যে।
সংখ্যাতীত পাথরের উৎস ধলাই নদ। নদীর ওপারেই ভারতের পার্বত্য রাজ্য মেঘালয়। সেখানকার খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে প্রচুর পরিমাণে পাথর ঝরনার পানিতে নেমে আসে নিম্নভূমিতে। প্রাকৃতিক কারণেই জায়গাটি পাথর প্রবাহের ক্ষেত্র। যেখানে জমেছে বিচিত্র পাথরের মেলা।
বিজ্ঞাপন
জলে ভাসা পাথর সংগ্রহ করা স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবিকার উৎস। বাহারি রঙ-বেরঙের পাথর কিনতে সাধারণ মানুষের আগ্রহ করেছে। সাধারণ পাথরগুলো নির্মাণ সামগ্রী রূপে ট্রাকে করে চলে যায় সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
সাদা পাথর জায়গাটি একেবারেই সীমান্তে। ভারতের অংশ অপেক্ষাকৃত উঁচু হওয়ায় পানি ও পাথরের ঢল বাংলাদেশের অংশে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রাকৃতিক এই ধারার গতি অপ্রতিরোধ্য। সীমান্তের উভয় পাশেই রয়েছে রক্ষীদের প্রহরা। আমাদের দিকে যেমন সিলেট, ওপারের প্রধান দ্রষ্টব্য স্থান ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল লুংলংপুঞ্জি ও শিলংয়ের চেরাপুঞ্জি। দুই দেশের সীমান্ত বাহিনী বিজিবি-বিএসএফের বিশেষ নজরদারি থাকলেও এদিকের সীমান্তে উত্তেজনা নেই। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক নির্বিঘ্নে উপভোগ করেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য।
বিজ্ঞাপন
সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে এয়ারপোর্ট রোড ধরে আসতে হয় সাদা পাথরে। ভোলাগঞ্জ বাজার পেরিয়ে এক কিলোমিটারের ভেতরেই সাদা পাথরে যাওয়ার ঘাট। ঘাটে নামলেই ছোট্ট ধলাই নদীতে অসংখ্য নৌকার মনোরম দৃশ্যে চোঁখ জুড়িয়ে যায়। নৌকা ভাড়া ৭০০-৯০০ টাকা। উঠা যায় ৮-১০ জন। একজন গেলেও ভাড়া একই। ২৫/৩০ মিনিটে ইঞ্জিনের নৌকা পৌঁছে দেয় সাদা পাথরে।
সারাবছরই সাদা পাথর ভ্রমণের উপযুক্ত। তবে বর্ষার মৌসুমে সৌন্দর্য কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। কল্লোলিত জলে রোলিং স্টোন দেখে মনে হয় জীবন্ত পাথরগুলো যেন চলাফেরা করছে। এজন্য জুন থেকে সেপ্টেম্বর উপযুক্ত সময়। শীতের আগে ও পরে সাদা পাথরের আরেক রূপ দেখা যায়। তখন স্নিগ্ধ, সমাহিত পাথরগুলো দেখে দেখে অস্থির বিশ্বের যাবতীয় কোলাহল তুচ্ছ করতে ইচ্ছে হবে। মন চাইবে ধ্যানমগ্ন হতে। কিংবা দূরের নিসর্গে তাকিয়ে থেকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও প্রকৃতিতে হারিয়ে যেতে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পাখি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে বাল্ড বা টাক ঈগলকে নির্বাচন করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বড়দিন উপলক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিবিসির প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। এর আগে ১৭৮২ সালে মার্কিন নথিতে জাতীয় পাখি হিসেবে ঈগল নথিভুক্ত ছিল। তখন দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রের সীলে জাতীয় পাখি হিসেবে এই পাখির প্রতীক ব্যবহার করা হতো। তবে একে এর আগে কখনো ঈগলকে মনোনীত করা হয়নি। গত সপ্তাহে কংগ্রেস বিলটি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তার স্বাক্ষর করার পর বিলটি পাশ হয়।
ন্যাশনাল বার্ড ইনিশিয়েটিভ ফর দ্য ন্যাশনাল ঈগল সেন্টারের কো-চেয়ার জ্যাক ডেভিস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রায় ২৫০ বছর ধরে আমরা সাদা-কালো-হলুদ পালকের ঈগলকে জাতীয় পাখি বলে ডাকতাম। কিন্তু বাল্ড বা টাক ঈগল পাখি কখনোই জাতীয় পাখি হিসেবে নথিভুক্ত ছিল না, যা এখন সরকারিভাবে শিরোনামপ্রাপ্ত হলো।’
বেশিরভাগ আমেরিকান ঈগলের সিল ব্যবহার করেন। সেখানে একটি পতাকাযুক্ত ঢাল রয়েছে। এর একটি ট্যালনে একটি জলপাই গাছের শাখা রয়েছে এবং অন্যটিতে তীর। তবে বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
ঈগলের জাতীয় মর্যাদা সম্পর্কে সবাই একমত নয়। প্রতিষ্ঠাতা ফাদার বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন এই প্রাণীকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বাছাইয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তিনি ‘নেতিবাচক নীতিবান পাখি’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
অন্যদিকে কংগ্রেসের সবাই ফ্রাঙ্কলিনের বিরোধী মতামত জানিয়েছেন।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ ভেটেরান অ্যাফেয়ার্স অনুসারে, বিশ্বব্যাপী অন্যান্য ঈগলের থেকে বাল্ড ঈগলকে অন্যভাবে দেখা হয়। প্রজন্মের জন্য শক্তি, সাহস, স্বাধীনতা এবং অমরত্বের প্রতীক হিসাবে দেখা হয় এই ঈগল। এই ঈগল শুধুমাত্র উত্তর আমেরিকার আদিবাসী ছিল।
বাল্ড বা টাক ঈগলকে জাতীয় পাখি হিসাবে মনোনীত করা আইনটি মিনেসোটার আইন প্রণেতাদের নেতৃত্বে ছিল। সিনেটর অ্যামি ক্লোবুচার দেশে বৃহত্তম টাক ঈগল জনসংখ্যার একটি হিসাবে বর্ণনা করা হয় সেখানে। ১৯৪০ সালের জাতীয় প্রতীক আইনের অধীনে নেওয়ার পর এই প্রাণীটিকে বিক্রি বা শিকার করা অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
বাল্ড বা টাক পাখি একসময় বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে ছিল। ২০০৯ সাল থেকে জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
পাকিস্তানের এক কিশোরী তার অসাধারণ ভাষার দক্ষতা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। কিশোরীর নাম শুমাইলা। কখনো স্কুলের গন্ডিতে পা না দিয়েও শুমাইলা যেভাবে উর্দু, ইংরেজি, সারাইকি, পাঞ্জাবি, পশতু ও চিত্রালি ভাষায় দক্ষতা দেখিয়েছেন তা দেখে সত্যিই অবাক হওয়ার মতো।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানায়, খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের লোয়ার দিরে চিনাবাদাম, সূর্যমুখী বীজ এবং অন্যান্য খাবার বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে শুমাইলা। তাকে পাকিস্তানি ইউটিউবার জিশান শাব্বির আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি ডাক্তার জিশান নামেও পরিচিত। হিন্দুকুশ পর্বতমালার মধ্য দিয়ে দির ও চিত্রলকে সংযোগকারী আইকনিক লোয়ারী টানেলের কাছে ভ্লগ চিত্রগ্রহণের সময় শুমাইলার সঙ্গে দেখা হয় তার।
একপর্যায়ে তাদের মধ্যে কথোপকথন হয়। সেই কথোপকথনের ভিডিও নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই শুমাইলা ভাইরাল হয়ে যায়।
ওই ভিডিওতে, শুমাইলার চিত্তাকর্ষক ভাষা দক্ষতা এবং কমনীয় ব্যক্তিত্ব সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের মনে জায়গা করে নিতে বাধ্য করেছে।
এতে দেখা যায়, শাব্বির যখন শুমাইলাকে নিজের পরিচয় দিতে বলেন, তখন শুমাইলা অসাধারণ আত্মবিশ্বাস ও ভদ্রতার সঙ্গে উত্তর দেন। শুমাইলা বলেন, "আমার বাবা ১৪টি ভাষায় কথা বলেন এবং আমি ছয়টি ভাষায় কথা বলতে পারি। আমি স্কুলে যাই না। আমার বাবা আমাকে বাড়িতে পড়ান।
তারপরে সে তার পণ্যের প্রচার করতে গিয়ে বলেন, "আমি চিনাবাদাম এবং সূর্যমুখী বীজ বিক্রি করছি। আপনি কিছু কিনতে চাইলে আমাকে বলুন।"
ভাইরাল হওয়া আরেকটি ভিডিওতে শুমাইলা তার পরিবার নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, আমার পাঁচ জন মা ও ৩০ জন ভাই-বোন রয়েছে। পরিবারের সবাই সাবলীলভাবে ইংরেজি বলতে পারেন। আমার এক ভাই ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে থাকেন। তিনি তার প্রতিদিনের রুটিন সম্পর্কেও আমাকে শেয়ার করেন।
ভিডিওগুলো দেখে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা শুমাইলার অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা, আত্মবিশ্বাস এবং উদ্যোক্তা মনোভাবের জন্য প্রশংসা করেছেন। অনেক ব্যবহারকারী তাকে বই পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।
ভিডিওর মন্তব্যের ঘরে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, "এটি দুর্দান্ত। সৃষ্টিকর্তা তাকে সব দিক দিয়ে সর্বোত্তম মঙ্গল করুক। আমিন।"
অন্য একজন মন্তব্য করেছেন, "তার ইংরেজিতে দক্ষতা অভিজাত স্কুলে পড়া অনেকের চেয়ে ভালো। তার বাবার প্রচেষ্টাকে অভিনন্দন।"
তৃতীয় একজন ব্যবহারকারী বলেছেন, "আমার প্রিয়তম শুমাইলা, তুমি আমাকে গর্বিত করেছো। তোমার জন্য আমি বই পাঠাতে চাই। কীভাবে পাঠাবো সেটা দয়া করে জানাও। ধন্যবাদ।"
চতুর্থ একজন যোগ করেছেন, "এটি খুব সুন্দর, বিস্ময়কর প্রতিভা প্রকাশের জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। সে খুব বুদ্ধিমতী বলে মনে হচ্ছে। আমরা কি তার পরিবারকে স্কুলের খরচ বহন করার জন্য কিছু সাহায্য করতে পারি? আমি তাকে সাহায্য করতে চাই।"
সন্তানদের মুখে দু-বেলা দুমুঠো ডাল-ভাত তুলে দিতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন মধ্যবয়সী জরিনা বেগম। সিলেট নগরীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান তিনি। স্বামী কামাল মিয়া মাদকাসক্ত হয়ে পরিবারের সঙ্গে না থাকায় বাধ্য হয়ে এই পেশা বেছে নিয়েছেন তিনি। আগে ইট ভাঙার কাজ করলেও চোখের সমস্যা এবং অল্প মজুরি দিয়ে ঘরভাড়া-সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। তাই কিস্তিতে নেওয়া একটি ব্যাটারিচালিত তিন চাকার বাহন রিকশায় ভর করে লড়ছেন তিনি।
তিন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে সিলেট নগরীর শামীমাবাদ এলাকায় একটি কলোনিতে ভাড়া বাসায় থাকেন জরিনা। জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হলেও ১০ বছর বয়স থেকে বেড়ে ওঠা সিলেট শহরে। জরিনার তিন ছেলে সালমান, শাওন ও আরমান। ছেলেদের পড়ালেখা করানোর ইচ্ছে থাকলেও সামর্থ নেই তার। মায়ের কষ্টের ভাগ কমাতে ও ছোট ভাইদের পড়ালেখা করাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের একটি বেকারির দোকানে কাজ করেন ১২ বছরের ছোট্ট শিশু সালমান।
রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ও বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জরিনা রিকশা নিয়ে ছুটে চলেন শহরের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। মাঝখানে যে সময়টুকু পান বাসায় ফিরে সন্তানদের জন্য রান্না করা ও তাদেরকে গোসল করিয়ে মুখে খাবার তুলেন তিনি। রিকশা চালিয়ে যে টাকা রোজগার করেন তা দিয়ে ঘরভাড়া ও সন্তানদের ভরণপোষণ চালান। সময় যত যাচ্ছে জরিনার সংসারে অভাব যেন তাড়া দিচ্ছে তত। এক হাত ভাঙা অবস্থায় অভাব দূর করতে যে রিকশাটি কিস্তিতে নিয়েছিলেন সেটির ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেছে। মেরামতের জন্য প্রয়োজন ২০-২৫ হাজার টাকা।
টাকার অভাবে সন্তানদের পড়ালেখা ও চোখের অপারেশন করাতে পারচ্ছেন না এই সংগ্রামী নারী। তাই সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সাহায্য চাইলেন জরিনা।
জরিনা বেগম বলেন, রিকশা চালাতে গিয়ে কোনো সমস্যা হয় না। যাত্রীরা ভালো ব্যবহার করেন। সবাই অনেক উৎসাহ দেন। শুরুর দিকে রিকশাচালাতে গিয়ে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। স্বামী মদ-গাঁজা সেবন করেন। সে ঘুমাতে না পারলে আমার সন্তানদের মারপিট করে। কিছুদিন আগে কাজ করতে গিয়ে আমার একটি হাত ভেঙে যায়। টাকার অভাবে ভালোমতো চিকিৎসা করাতে পারেননি। বাসাভাড়া দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, মানুষের বাসা-বাড়িতে যে টাকা পেতাম তা দিয়ে আমার সংসার চালানো সম্ভব না। পরে ইট ও কংক্রিট ভাঙার কাজ করতে গিয়ে চোখ জ্বালাপোড়া করায় বাধ্য হয়ে সেই কাজ ছেড়ে দেই। এখন কিস্তিতে একটি রিকশা কিনেছি। সেই কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
সংগ্রামী এই মা জানান, ছেলেদের লেখাপড়া শেখাতে খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু টাকার অভাবে সেটা হয়ে উঠছে না। প্রথম দিকে প্রতিদিন ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা রোজগার করা গেলেও এখন ৪০০-৫০০ টাকা রুজি করতে পারি।
মানুষের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস আর ভালোবাসার পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় ক্ষমতা শুধুমাত্র পোষা প্রাণীর থেকেও অধিক গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে কুকুরকে। আনুগত্যের সঙ্গে যখন এদের বিস্ময়কর বুদ্ধিমত্তা যোগ হয় তখন অনায়াসেই এরা মানুষের এমন সঙ্গীতে পরিণত হয়, যার কোনো বিকল্প হয় না। এদের মধ্যে বিশেষ কিছু কুকুরের অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে যার মাধ্যমে এরা ২০২৪ সালের সেরা কুকুরের জায়গা দখল নিয়েছে। এমনকি খবরের পাতায় শিরোনামও হয়েছে।
চলুন, যে কুকুরগুলো ২০২৪ এ সেরা কুকুর হিসেবে আলোচনায় এসেছে- তা জেনে নেওয়া যাক।
এরিয়েল
ছয়টি পা নিয়ে জন্মগ্রহণকারী এরিয়েল নামের কুকুরটি ছিল এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত প্রাণী। ২০২৪ সালে এরিয়েলের অতিরিক্ত অঙ্গগুলো অস্ত্রপচারের মাধ্যমে অপসারণ করা হয় এবং অপারেশনটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এরপর কুকুরটিকে ওয়েস্ট ওয়েলসে বসবাসকারী এক কুকুরপ্রেমী নিয়ে যান। সেখানে এরিয়েল সার্ফিং করা শেখে। এখন এরিয়েল কেবল স্বাভাবিকভাবে হাঁটতেই পারে না, সে সমুদ্রে সাঁতার কাটছে, সে প্যাডেল বোর্ডিং, সার্ফিংও করতে পারে।
ওয়াইল্ড থাং
ক্যালিফোর্নিয়ায় বিশ্বের কুৎসিত কুকুর প্রতিযোগিতায় জয়ী কুকুর হচ্ছে ওয়াইল্ড থাং। অবশ্য এই শিরোপা জেতার আগে থাং চারবার ব্যর্থ হয়েছে।
আট বছর বয়সী পিকিংগিজ কুকুরছানা হিসেবে ভাইরাল ওয়াইল্ড থাং ক্যানাইন ডিসটেম্পারে রোগে আক্রান্ত হয়েছিল । যার ফলে তার জিহ্বা স্থায়ীভাবে আটকে যায়। আর এতেই সে বিশ্বের কুৎসিত কুকুর প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়। তবে তার মালিক বলেছে, ওয়াইল্ড থাং শারীরিকভাবে সুস্থ একটা কুকুর।
গাইয়া
তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও স্মৃতিসম্পন্ন কুকুর হচ্ছে গাইয়া। শুধু তাই নয় গাইয়া একটি সার্টিফাইড জিনিয়াস কুকুর। এ প্রজাতির কুকুরের বিভিন্ন বস্তুর নাম শেখার একটি অনন্য ক্ষমতা রয়েছে। এদের স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত প্রখর হয়। গত সেপ্টেম্বরে বায়োলজি লেটারস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, বিভিন্ন খেলনা, রঙ, জিনিসের নাম তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য মনে রাখতে পারে। গাইয়া এই গবেষণায় শীর্ষস্থানীয় পারফর্মার ছিল।
টাইটান
টাইটান সাদা ল্যাব্রাডুডল প্রজাতির একটি কুকুর। তবে এটি কোন সাধারণ কুকুর না, টাইটান এক অসাধারণ বীরত্বের অধিকারী এক কুকুর। সে তার মালিকের হত্যাকারীকে খুঁজতে পুলিশকে সাহায্য করেছিল।
ডেইজি
ডেইজি মোল ভ্যালিতে তার মালিকের সাথে থাকতো। ২০১৬ সালে তার মালিকের বাগান থেকে হারিয়ে যায় এবং প্রায় ৮ বছর পর ২০২৪ সালে ডেইজি তার পুরনো মালিকের কাছে ফিরে আসে।
ট্রুপার
চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় হ্যারিকেন মিল্টনের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে যাওয়া এক অপ্রতিরোধ্য কুকুর হচ্ছে ট্রুপার। এক ভিডিওতে দেখা যায়, ট্রুপারকে একটা খুটির সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। সেখানে বুক সমান পানিতে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করতে দেখা যায় ট্রুপারকে। ওই ভিডিও দেখে তাকে মৃতপ্রায় অবস্থায় উদ্ধার করে তার মালিকের কাছে ফেরত দেয়া হয়েছিল।
বেথ
বেথ হচ্ছে একটি রাজকীয় কুকুরছানা। সে রানি ক্যামিলার সাথে অনেক জায়াগায় ঘুরতে গেছে। তবে দুঃখজনকভাবে গত নভেম্বর মাসে একটি অনিরাময়যোগ্য টিউমারের কারণে বেথের মৃত্যু হয়।
কেভিন
বিশ্বের লম্বা কুকুরের খেতাব পাওয়া গ্রেট ডেন প্রজাতির কুকুর কেভিন। এ বছরের মার্চে কেভিন-কে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা কুকুরের খেতাব দেয় গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ডস রেকর্ড। তবে তিন বছর বয়সী কুকুরটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর এটিকে সুস্থ করার জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কেভিন মারা যায়।
জেনি
জেনি একটি গাইড কুকুর এবং যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পোষা প্রাণী। লিবারেল ডেমোক্র্যাট এমপি স্টিভ ডার্লিংয়ের সাথে তাকে সব সময় দেখা যায়। এমনকি জুলাই মাসে সংসদে এমপিদের শপথ নেয়ার সময় জেনীকে বেঞ্চে শুয়ে থাকতে দেখা গেছে।
কমান্ডার
কমান্ডার একটি জার্মান শেফার্ড প্রজাতির কুকুর। ২০২১ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে যোগ দেয় কমান্ডার। চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রকাশিত ইউএসএসএসের এক অভ্যন্তরীণ ফাইলে দাবি করা হয়, জার্মান শেফার্ড অন্তত ২৪ বার হোয়াইট হাউসের কর্মীদের কামড়েছে।
এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যদের কব্জি, কনুই, বাহু, বুক, কোমর, কাঁধ ও উরুতে কামড় দেওয়া হয়।
ফাইলে দেখা গেছে, হোয়াইট হাউসে এক এজেন্টের হাতের কনুইয়ে কামড় লাগার পর সেলাই দিতে হয়েছে এবং আরেকজনের হাতে ছয়টি সেলাই দিতে হয়েছে। তার এই কামড়ের জন্যই বেশ আলোচনায় ছিল কমান্ডার।
ববি
বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক কুকুরের স্বীকৃতি পেয়েছে ববি। গায়ে বাদামি ও সাদা রঙের মিশেল। দেখতে আর দশটি কুকুরের মতোই। কিন্তু সাধারণ কুকুর নয় ববি। রীতিমতো তারকা সে। নাম উঠেছে গিনেস বুকে। কারণ, ববির বয়স। গত মে মাসে ৩১ বছর পূর্ণ করেছে ববি।
বছর না ঘুরতে ববির ৩১ বছরের পথচলা থেমে গেছে। দীর্ঘজীবন পাওয়া ববি গত বছর অক্টোবরে মারা যায়। বয়স হয়েছিল ৩১ বছর ১৬৫ দিন। দীর্ঘদিন ববির চিকিৎসা করেছেন পশুচিকিৎসক কারেন বেকার। তিনি কুকুরটির মৃত্যুর খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন।
ববির মালিক লিওনেল কস্তা জানান, ববি রাফেইরো জাতের কুকুর। গবাদিপশু পাহারা দেওয়ার জন্য এই কুকুরগুলো পোষা হয়। ১২ থেকে ১৪ বছর বাঁচে একেকটি কুকুর। তবে ববি ছিল ব্যতিক্রম।