বাংলাদেশে শরৎকাল শুরু হয় আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে আর শেষ হয় অক্টোবরের মাঝামাঝিতে। এই ঋতুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল আবহাওয়ায় হালকা ঠাণ্ডা থাকে। কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয় হল এই বছর শরতের বৈশিষ্ট্যের ছিটেফোটাও নেই এদেশের আবহাওয়ায়। হালকা ঠাণ্ডার পরিবর্তে দেখা মিলছে তীব্র গরমের।
আবহাওয়ার এ পরিবর্তন দেখে এক কথায় বলা চলে শরৎকালে চলছে গ্রীষ্মের তাপদাহ। আর এ তাপদাহের সব থেকে বেশি প্রভাব পড়েছে রাজধানী ঢাকাতে।
প্রচণ্ড তাপদাহে বিধ্বস্ত রাজধানীর জনজীবন। রাজধানীতে অধিক গণবসতি ও রাস্তাঘাটে প্রচণ্ড যানজটের কারণে গরমের তীব্রতা যেন কয়েকগুণ বেড়ে অসহনী পর্যায়ে চলে গেছে। তাই সব মিলিয়ে বলা চলে গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা চলছে ঢাকার নগরজীবনে। এছাড়া সূর্যের প্রখর তাপে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেক মানুষ।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে রাজধানীতে ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রয়েছে। যা চলবে আরও বেশ কয়েক দিন ধরে।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রচণ্ড এ তাপদাহে দিন দিন বেড়ে চলছে গরম জনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ও সড়কে সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রচণ্ড তাপদাহে রাজধানীর রাস্তাঘাটে হাঁটাচলা করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ঢাকার রাজপথের অসহনীয় যানজট গরমের ভোগান্তিকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে অনেকেই গণপরিবহণ ছেড়ে পায়ে হেঁটে তাদের কর্মস্থল ও অন্যান্য গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছেন। তার পরেও গরম থেকে রেহাই পাচ্ছেন নগরবাসী।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, প্রচণ্ড গরমে ঘামে ভিজে জর্জরিত হয়ে কোমল পানীয়, লেবুসহ বিভিন্ন শরবত ও ডাবের ভাসমান দোকানের দিকে ছুটছেন পথচারী রাজধানীবাসী। আবার অনেকে দেখা গেছে হাঁটার পথে কিংবা রাস্তার আশপাশে একটু ছায়া পেলেই গরম থেকে বাঁচার জন্য দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন।
তবে সব থেকে বেশি ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেছে শারীরিক পরিশ্রমের কাজে ব্যস্ত মানুষজনকে। প্রচণ্ড গরমে কঠিন শারীরিক পরিশ্রম করে তারা অল্পতে হাঁপিয়ে উঠছেন। ফলে অসুস্থ্যও হয়ে পড়ছেন তারা।
রাজধানীর টিএসসি মোড়ে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে এসে প্রথমে এক গ্লাস লেবুর শরবত পান করলেন রিকশা চালক মো.হামিদ। প্রথম গ্লাসে তেষ্টা না মিটলে আরেক গ্লাস শরবত পান করলেন।
কয়েক দিনের গরমের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সারা দিন গায়ে গতরে এই গরমের মধ্যে রিকশা চালিয়ে জীবন বাঁচতেছে না। যাত্রী নিয়ে রিকশা চালানোর সময় জীবনটা শেষ হয়ে যায় গরমে। আর পারতাছি না, কবে যে বৃষ্টি দিব আল্লাহ। ৫০০ টাকা সারা দিনে ইনকাম করলে ৫০ টাকার শরবত খাইতে হয় ‘
বাহিরে তো গরমের প্রকোপ আছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বাসা বাড়িরতেও তাপদাহে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী।
মো. ইভান বার্তা২৪.কমকে বলেন, অফিস থেকে বাসায় ফেরার পর আরেক নতুন অত্যাচার শুরু হয়ে যায়। মনে হয় বাসার দেওয়ালগুলোতে যেন আগুন ধরেছে গরমে। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে সারা রাত জেগে থাকতে হয় গরমের কারণে। তাছাড়া ফ্যানের বাতাসেও গরম লাগে।’
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হওয়া এ তাপদাহ সম্পর্কে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু কম সক্রিয় রয়েছে এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল ধরণের। তাই নতুন ঋতুর আবহাওয়ার প্রভাব এখনো শুরু হয়নি। ফলে গ্রীষ্মের তাপদাহ চলমান রয়েছে, যা সহসা বন্ধ হবে না বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘তাপদাহ অক্টোবর পর্যন্ত থাকতে পারে। মাঝখানে সামান্য পরিমাণে বৃষ্টি হলেও তাতে তাপদাহ কমার কোনো লক্ষণ নেই। ঋতু পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থা চলতেই থাকবে রাজধানীসহ সারাদেশে।’
এদিকে চিকিৎসকদের মতে প্রচণ্ড এই গরমে সর্দি-হাঁচি-কাশিসহ না রোগব্যাধি হচ্ছে শিশুসহ বড়দের। এছাড়া গরম থেকে রেহাই পেতে রাস্তাঘাটে চলাচলরত অস্বাস্থ্যকর ঠাণ্ডা পানীয় খাওয়ার কারণে ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়া-আমাশয়সহ অনেক পানিবাহিত রোগ।