এই 'লঙ্কা' শ্রীলঙ্কা নয়, মরিচ। এই লঙ্কা বিশ্বব্যাপী নিজের জয়ডঙ্কা বাজিয়েছে। বিজ্ঞানী মহল ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা লঙ্কা বা মরিচের এমন কিছু গুণাবলি খুঁজে পেয়েছেন, তাতে এই অতীব ঝাল সবজি বা তরকারির জয়জয়কার অবস্থা!
মরিচ-কীর্তন সর্বসাম্প্রতিক সময়ে শোনা গেছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ মহাদেশ অস্ট্রেলিয়া থেকে। যদিও বলা হয়, মরিচের আদিবাস দক্ষিণ আমেরিকার মেক্সিকো, তথাপি এখন বিশ্বময় মরিচের দাপট আর রমরমা। ঘরে-ঘরে খাবার টেবিলে আসন পেতে বসা মরিচের এমন অনেক গুণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যা রীতিমতো বিস্ময়কর!
আমেরকান 'জার্নাল অফ ক্লিনিকাল নিউট্রেশন'-এ অস্ট্রেলিয় গবেষকেরা জানিয়েছেন, 'খাবারে নিয়মিত লঙ্কা খেলে ইনসুলিনের চাহিদা অনেকটাই কমে যায়। তাই টাইপ টু ডায়াবেটিসে যারা ভুগছেন, তাঁদের খাবারে লঙ্কা থাকা উপকারী।'
খাদ্য বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, লঙ্কা খেলে পাকস্থলীর ক্যানসার হয়, এই ধারণাও ভুল। বরং লঙ্কা পাকস্থলীর ঘা হওয়া আটকে নতুন কোষকলা নির্মাণে সাহায্য করে।
শুধু তাই নয়, অস্ট্রেলিয়ার ওই গবেষণায় জানানো হয়েছে, 'যে লঙ্কা যত বেশি ঝাল হবে তা তত উপকারি৷ কারণ লঙ্কার দানাতে ক্যাপসায়কিন নামে এক প্রকারের যৌগ থাকে। যা গলার কোনও রকম সংক্রমণ হলে আগেই বাঁধা দিয়ে দেয়৷ ফলে গলার স্বরও ভালো থাকে৷'
তবে লঙ্কার গুণাবলী জানতে গেলে শুধু গলা নয়, নজর রাখতে হবে পুরো শরীরেই। গবেষকরা আরও বলছেন, লঙ্কা পাকস্থলীকে সুস্থ রাখে৷ পাশাপাশি লঙ্কা পাকস্থলীতে হওয়া ক্যানসারও নিরাময় করে৷ এছাড়াও ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য লঙ্কা বেশ উপকারি৷
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, লঙ্কা ঘুমের জন্য খুব উপকারি৷ ঘুম যাদের হয় না বা যাদের ঘুম কম হয় তারা লঙ্কা খেয়ে দেখতেই পারেন৷ সুনিদ্রার অনেক সুপ্ত উপাদান মরিচের খাদ্য গুণের মধ্যে নিহিত রয়েছে বলেও প্রমাণ পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এসবের সঙ্গে লঙ্কা ওজন কমাতেও বেশ কার্যকর বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷ প্রতিদিন নিয়ম করে লঙ্কা খেলে দেহের অতিরিক্ত ক্যালোরি খুব সহজেই কমতে শুরু করে৷ শরীর তখন মেদহীন ও ঝরঝরে হয়ে যায়। ফ্যাটি পুরুষ ও বাল্কি মহিলাদের মরিচের সঙ্গে প্রেম করতে বলেছেন খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানীরা।
এখানেই শেষ নয়, মরিচ-কৃতিত্ব। যাদের সাইনাসের সমস্যা রয়েছে, তারাও কিন্তু লঙ্কা খেতে পারেন৷ তদুপরি ফুসফুসে জমে থাকা কফ বা শ্লেষ্মা তাড়াতেও লঙ্কা বেশ উপকারি৷ এবং হার্টে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তুলতে লঙ্কার ভূমিকা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য৷ কারণ শরীরের বিশেষ প্রয়োজন হলে অণুচক্রিকার ধ্বংস রোধ করে রক্ত তঞ্চনে সাহায্য করে এই ঝাল লঙ্কাই৷
খিদে পাচ্ছে না? তাহলেও বিশেষ চিন্তার কারণ নেই৷ বেশি করে লঙ্কা খান, খিদে বাড়তে বাধ্য আপনার৷ এমনটাই জানাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের দল৷
অতএব, গৃহিণীদের লঙ্কাচর্চা বাড়ানো ছাড়া উপায় কি! স্বামীর পাতে একটি নিটোল লঙ্কা দিয়ে যদি এতো সমস্যা মেটানো যায়, তাহলে আর দেরি কেন! নিজেরাও গ্রহণ করতে পারেন লঙ্কার আস্বাদন। আর ছাদে বা ব্যালকনি-বারান্দার এক চিলতে জায়গাকে বানিয়ে ফেলতে পারেন আপনার নিজস্ব শ্রীলঙ্কা বা লঙ্কাস্থান!