ফ্লাইট সেফটিতে ‘নো কমপ্রোমাইস’- ইউএস বাংলা

বিবিধ, ফিচার

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 03:37:21

কুয়ালালামপুর থেকে: ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের রোয়িং ৭৩৭-৮০০ (উইংলেটস) এয়ারক্রাফটি শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দর থেকে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে কুয়ালালামপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। এই ফ্লাইটে ইউএস বাংলার আমন্ত্রণে ৫৪ জন সাংবাদিকের একটি বহরও রয়েছে।

ইমিগ্রেশনের ২ নম্বর গেইটে ইউএস বাংলা চেকিং কাউন্টার। কর্মকর্তাদের আন্তরিক সহযোগিতায় ট্যুরের সঙ্গীসহ যাত্রীদের চেকিং সম্পন্ন হয়। সকালের অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে হ-য-ব-র-ল বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন, দীর্ঘ সময় নিয়ে পার হতে হলো।

টুকটাক কাজ শেষে ১০ নম্বর গেইটে বোর্ডিং শেষ করে এয়ারক্রাফটের কাছে যাওয়া হয়। এয়ারক্রাফটির উড্ডয়নের আগে বেসরকারি এয়ারলাইন্সটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আসিফ ইরমান সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।

নেপাল দুর্ঘটনার পর ইউএস বাংলা এয়ারল্যাইন্সের সেফটি বিষয়ে বিভিন্ন সময় নানা প্রশ্ন উঠেছে। তবে এ এয়ারলাইন্সটি সব সময় ফ্লাইট পরিচালনায় নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় বলে জানা গেছে।

এসব নিয়ে  সিইও বলেন, ‘ইউএস বাংলা শতভাগ সেফটি নিশ্চিত করে ফ্লাইট পরিচালনা করে। বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) বিএস ৩১৫ ফ্লাইটি ছেড়ে যাওয়ার আগে বিদেশি ইঞ্জিনিয়াররা এয়ারক্রাফটি চেক করেছেন, ডেসপাস ক্লিয়ার করার জন্য। তারা সমস্ত কিছু অ্যাড্রেস করার পর, যদি কোনো প্রোব্লেম থাকে রেক্টিফাউন্ড করার পরেই উড্ডয়নের জন্য এয়ারক্রাফটি  ক্যাপ্টেনকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।’ এই চেক করতে ৪০ মিনিট সময় নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

আসিফ ইমরান বলেন, ‘আসলে এয়ারক্রাফট মেইনটেনেন্স অন্যান্য ট্রান্সপোর্টেশনের মতো নয়। বিশ্বব্যাপী এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের নীতিমালায় পরিচালিত হয়। ইউএস বাংলার যে কোনো এয়ারক্রাফট উড্ডয়নের আগে তিন ধাপে টেকনিক্যাল চেকিং হয়। উড্ডয়নের আগে ইঞ্জিনিয়ার আবার তা পরীক্ষা করেন। উড্ডয়ন উপযোগী সার্টিফিকেট প্রদানের পর সংশ্লিষ্ট ক্যাপ্টেন আবার এয়ারক্রাফটির সক্ষমতা রি-চেক করেন। এরপরেই ফ্লাইটি ডিপার্টচারের অনুমতি পায়।’

বোয়িং ৭৩৭ এয়ারক্রাফটির উড্ডয়নের আগে কথা হয় ক্যাপ্টেন মশিউল আজমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ইউএস বাংলা ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক। সেফটির ব্যাপারে তারা কোনো কমপ্রোমাইস করে না। প্রথমে ইঞ্জিনিয়াররা সব কিছু চেক করে। যদি এয়ারক্রাফটের প্রিভিয়াস পাইলট কোনো কমপ্লেইন দিয়ে থাকে তবে সেগুলো দেখে থাকি। এয়ারক্রাফটি উড্ডয়নের জন্য ফুয়েল, ইঞ্জিন ওয়েল হাইড্রোলিকসহ যা যা দেওয়ার কথা তা সঠিক আছে কি না তা চেক করে থাকি।’

 

এ সময় মশিউল আজম একটি ডকুমেন্ট দেখিয়ে বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়াররা সব কিছু দেখে এই ডকুমেন্ট তৈরি করে। সেখানে তাদের পরিদর্শন সম্পর্কিত তথ্য থাকে। আমি এগুলো চেক করি, এরপর অ্যাকসেপ্ট করে ডকুমেন্টে সাইন করি।’

এয়ারক্রাফটের নিরাপদ উড্ডয়ন নিশ্চিত করার জন্য ইউএস বাংলার ক্যাপ্টেনরা দুই ঘণ্টা আগেই এয়ারক্রাফটের কাছে আসে বলে জানান তিনি।

সম্প্রতি কক্সবাজারের নোজ ল্যান্ডি গিয়ার না খোলার বিষয়টি নিয়ে পাইলট বলেন, ‘টেকনিক্যালি সমস্যার কারণে নোজ গিয়ার বের হয় না সাধারণত। আমরা আনলাকি যে কয়েকদিন আগে আমাদের ফাইন্ডিং এ সমস্যা হয়েছিলো। সাধারণত ল্যান্ডিং এ সমস্যা হলে একটা না একটা গিয়ার কাজ করে। বাট মেকানিক্যাল জিনিস দুর্ভাগ্যজনকভাবে সমস্যা হতে পারে। মিলিয়নে যদি একটা হয় আমাদের হয়েছে।’

২০১৮ সালে প্লেন দুর্ঘটনা বেড়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বের যদি হিসেব করি তাহলে বলা যায়, দুর্ঘটনা বাড়েনি। কারণ আগের তুলনায় অনেক বেশি ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে।’

ক্যাপ্টেন ও সিইও কথার উত্তরও মেলে চার ঘণ্টার ঢাকা-কুয়ালালামপুর উড়োজাহাজ ভ্রমণ শেষে। মাঝপথে স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করে কেবিন ক্রুরা। সেই খাবারের প্রশংসাও শোনা যায় প্লেনের অন্য যাত্রীদের কাজ থেকে।

এক যাত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘ইউএস বাংলা সবসময় পছন্দের। তাদের টাইম মেইনন্টেন, প্লেনের অভ্যন্তরে পরিষেবাসহ সব কিছুই ভালো। নেপাল দুর্ঘটনার পর তাদের অল্প কিছুতে সমস্যা মনে করছে মানুষ। আন্তজার্তিক বাজারে টিকে থাকতে হলে দেশের এয়ারলাইন্সগুলোকে আমাদের সহযোগিতা করার দরকার।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর