ঠাকুরগাঁওয়ের ছোট্ট শহরে অতি পরিচিত নাম সাম্য ক্লাব। ৩৪ বছরের পুরনো ছোট্ট এ ক্লাবটিই এ এলাকার তরুণদেরকে মাদক থেকে দূরে রেখে দিয়ে যাচ্ছে নির্মল আনন্দ। এ সাম্য ক্রীড়া ও সাংষ্কৃতিক গোষ্ঠী ক্লাবের কারণেই এখানকার তরুণরা খেলাধুলা ও সংস্কৃতিতে এগিয়ে।
মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) সকালে শহরের কালিবাড়ি এলাকার স্থানীয়দের কাছে ক্লাবটি সম্পর্কে জানতে গেলে সবাই এক বাক্যে সাধুবাদ জানান এ মহৎ উদ্যোগকে।
জানা যায়, ‘মাদক নয়, ক্রীড়াই হোক আমাদের মূল হাতিয়ার’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ১৯৮৪ সালে শহরের ফকিরপাড়া এলাকায় দোয়েল স্কুলের পাশেই চালু হয় সাম্য ক্রীড়া ও সাংষ্কৃতি ক্লাবটি। সে সময় ক্লাবের সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করেন মোতাহার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন সামসুজ্জোহা রিপন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এগোতে থাকে এই ক্লাবটির কার্যক্রম।
এরপরে ১৯৯০-১৯৯৪ পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দ্বায়িত্ব পালন করেন রফিকুল ইসলাম ও পয়গাম আলী, ১৯৯৫-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে থাকেন রফিকুল ইসলাম ও মজিবুল হক লিটন, ২০০০-২০০৮ সাল পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে থাকেন রাসেদুজ্জামান মলয় ও শামসুল হক শান্ত।
এরপরে ২০০৯-২০১৩ সাল পর্যন্ত আবারো বিজয়ী হয়ে সভাপতি হন রাসেদুজ্জামান মলয় ও সাধারণ সম্পাদক হন রমজান আলী, পর পর দুই বার বিজয়ী হওয়ার পরে তৃতীয় বারেও ২০১৭ সালে ক্লাবের সভাপতির দ্বায়িত্ব পান রাসেদুজ্জামান মলয় ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পান আহমদ উল্লাহ বাবু।
এভাবেই বিভিন্ন খেলাপ্রেমী উদ্যোক্তাদের হাত ধরে এগোতে থাকে ক্লাবটি। চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর ক্লাবটি পা দিলো ৩৪ বছরে। সেই দিন সকাল থেইে নানা আয়োজনে মধ্যে ব্যস্ত থাকেন বর্তমান ও সাবেক ক্লাব সদস্যরা। বিশাল শোভাযাত্রা নিয়ে মাতিয়ে তোলে শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো। নানা আয়োজনে মধ্যে দিয়ে পালন করেন এই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী।
চোখের পলকেই পেরিয়ে গেলো ৩৪টি বছর। এর মধ্যে নানা বাধার সম্মুখীন হলেও থেমে ছিলো না ক্লাবের চেষ্টা। এগিয়ে নিয়ে গেছে যুব সমাজকে ক্রীড়া অঙ্গনের দিকে। আজ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার যুবকেরা এই ক্লাবের মাধ্যমে ক্রীড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
জেলা-উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন এই ক্লাবের সদস্যরা। যুব সমাজ যাতে করে মাদকের সাথে জড়িত না হয়- এটাই ছিলো ক্লাবের মূল লক্ষ। তবে এবারে হয়তো সার্থক হয়েছে তারা। আজ শুধু সেই এলাকার ছেলেরাই নন, বিভিন্ন এলাকার ছেলেরাও এই ক্লাবের সাথে জড়িত।
স্থানীয় বাসিন্দা টিপু, চয়েজ, নিখিল, নাইমসহ অনেকেই বলেন, ‘একটা সময় ছিলো আমরা বসে থাকতাম। কিনবা ঘুড়ে বেড়াতাম। কিন্তু আজ আর সেটি করতে হয় না। অবসর টাইমে সাম্য ক্লাবে গিয়ে খেলতে পাড়ি। আগে খেলাধুলার প্রতি কারো তেমন ইচ্ছা ছিলো না। কিন্তু আজ পরিবর্তন হয়েছে। এই ক্লাবের মধ্যমে আমাদের অনেকেই বিভিন্ন পর্যায়ে গিয়ে খেলে আসেন।’
ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আহমদ উল্লাহ বাবু বলেন, ‘অনেক বাধা পেরিয়ে আজ এই অবস্থানে এসেছি, এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিলো যুব সমাজকে মাদক থেকে বিরত রেখে ক্রীড়া অঙ্গনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। যেটাতে আমরা অনেকটাই এগিয়ে গেছি। আমাদের এই ক্লাবের অনেক খেলোয়াররা জেলার বিভন্ন স্থানে খেলায় অংশগ্রহণ করছে এবং পুরস্কার অর্জন করছে।’
ঠাকুরগাঁও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান বাবু বলেন, ‘সাম্য ক্রীড়া ক্লাবটি অনেক আগের। ক্লাবের সদস্যরা অত্যন্ত পরিশ্রম ও সততার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ করছেন।’