যে স্থান থেকে একটি পরিযায়ী পাখির পায়ে গবেষণার জন্য ক্ষুদ্র-রিং পড়ানো হয়েছিল, সৌভাগ্যক্রমে কয়েক বছর পর সেই একই পাখি আবার বাইক্কা বিলে ফিরে এসেছিল। এ বড়ই আশ্চর্যজনক বিষয়!
কেননা, ‘পরিযায়ী পাখি’ মানেই পাখিটি পৃথিবীর অন্যদেশেও গিয়ে থাকে। আবার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাংলাদেশে ফিরে আসে। আমাদের দেশে কিছুদিন থেকে পুনরায় পৃথিবীর ওই নির্দিষ্ট দেশের নির্দিষ্ট অঞ্চলে ফিরে যায়। এমন পরিযায়ী পাখিদের পায়ে ক্ষুদ্র রিং পড়ানোর মাধ্যমেই পাখিটির গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে পাখি বিজ্ঞানীরা বহু তথ্য উদ্ধার করতে সক্ষম হন। সে বিবেচনায় পাখি গবেষণার জন্য পরিযায়ী পাখির পায়ে রিং পড়ানোর সূত্রপাত।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব কয়েক বছর থেকে বাইক্কা বিলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গবেষণামূলক কাজের জন্য পাখিদের পায়ে রিং পড়ানো আয়োজন করে আসছে। তেমনি একসময় বাইক্কা বিলে একটি রিং পড়ানো হয়েছিল বিরল পরিযায়ী ‘চাইনিজ রুবিথ্রট’ পাখিটিকে। সে শীতকালের পরিযায়ী। অর্থাৎ শীতেই পাখিটি বাংলাদেশে আসে। সেই পাখিটি কয়েক বছর পূর্বে আবার ফিরে এসেছিল বাংলাদেশের বাইক্কা বিলে।
শীত শেষ আবার ফিরে যায় পৃথিবী উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে। আবর্তনের ফলে সেখানে শীতকাল এসে যখন বরফ করে দেয় তাদের জলাধার আর খাবারের যাবতীয় আয়োজন। তখন তারা আবার ফিরে আসে আমাদের দক্ষিণএশিয়ার দেশগুলোর দিকে।
তেমনি একটি রিংপড়া বাইক্কা বিলের ফিরে আসা পরিযায়ী পাখি ‘চাইনিজ রুবিথ্রট’। বহু বছর আগে তার পায়ে রিং পড়ানো হয়েছিল। সেই রিংয়ের গায়ের ছোট করে লেখা সেই নম্বরটি ভালো করে পরীক্ষা করলেই বের হয়ে আসবে পাখিটির যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত।
পাখি আলোকচিত্রী শামীম আলী চৌধুরী বলেন, এ পাখিটির বাংলা নাম ‘লালগলা’। বাংলাদেশের প্রখ্যাত পাখি গবেষক শরীফ খান এর বাংলা নামকরণ করেছেন। এর ইংরেজী নাম Chinese Rubythroat এবং বৈজ্ঞানিক নাম Calliope tschebaiewi।
তিনি আরো বলেন, এই ছবিটি শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিল থেকে তোলা। পরিযায়ী পাখি। দেশে কদাচিৎ দেখা মিলে। ২০১৫ সালে এ পাখিটি একবার দেখেছিলো বাইক্কাতে। তখন পায়ে রিং পড়ানো হয়। আমার ছবিতেও পায়ে রিং পড়ানো আছে।
পাখির এ ছবিটি প্রাপ্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদ আসিফকে সাথে নিয়ে বাইক্কা বিলে গিয়ে এই ছবিটি পাই। কিন্তু নিশ্চিত হতে পারিনি নতুন এ পাখিটির সঠিক ‘আইডি’ সম্পর্কে। পরে এ পাখির ছবিটি জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান মহোদয়ের নিকট পাঠানো হয়। তিনি এ পাখিটিকে তখন দেশের নতুন রেকর্ড পাখি বলে শনাক্ত করেছিলেন। আদনান আজাদ আসিফ এবং আমিসহ বাংলাদেশে মাত্র সাত/আটজনের ক্যামেরায় এ ‘লালগলা’ পাখিটির ছবি তোলা আছে।
এর দৈর্ঘ্য ১৫ সেন্টিমিটার। আমাদের চড়ুই পাখির আকার হচ্ছে ২০ সেন্টিমিটার অর্থাৎ চড়ুই থেকেও ছোট। মাথা কপাল ও ঘাড়ে একটি সাদা ক্রস আছে। বুকের উপরে গালটুকু লাল। বুকের উপরি ভাগ কালো। বুক সাদা বলে জানান পাখি আলোকচিত্রী শামীম আলী চৌধুরী
জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং প্রখ্যাত বন্যপ্রাণী গবেষক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘চাইনিজ রুবিথ্রট’ পাখিটি বিরল পরিযায়ী। এর প্রচলিত বাংলা নাম নেই। তবে ইংরেজি নামে সাথে মিল রেখে একটা দেয়া যেতে পারে। মাঝে মাঝে হঠাৎ শীতকালে পাওয়া যায়। তবে বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন সংলগ্ন জলাভূমি ছাড়া আর কোথাও ‘চাইনিজ রুবিথ্রট’ পাখিটিকে পাওয়া যায় না।