উচ্চতা ৫০ ইঞ্চি, তবুও অনুপ্রেরণা যোগায় তারা

বিবিধ, ফিচার

আলফাজ সরকার আকাশ, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 23:56:42

তিন রাস্তার মোড়ে হাতে বাটি নিয়ে ভিক্ষা করা বা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দু’এক টাকা উঠিয়ে জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করা- গল্পটা এমনই হতে পারতো। কিন্তু তারা এখন আশপাশের মানুষের অনুপ্রেরণা। বলছিলাম গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তরপাড়া গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী দম্পতি আব্দুর রাজ্জাক (৪২) ও হাসিনা খাতুনের কথা। বর্তমানে তাদের দু’জনেরই উচ্চতা মাত্র ৫০ ইঞ্চি করে।

জানা গেছে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কটিয়ে রাজ্জাক ও তার স্ত্রী হাসিনা তাদের জীবনের গল্পটায় ভিন্নভাবে সাজিয়েছেন, যা সমাজের হাজারো প্রতিবন্ধীদের অনুপ্রেরণা যোগাবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রীপুরের উত্তরে টেংরা রাস্তার পাশে একটি টং দোকান দিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক। আর স্ত্রী হাসিনা খাতুন ভাংনাহাটি এলাকায় পিকক নামের পোশাক কারখানায় হেলপার হিসেবে কাজ করছেন। রাস্তার অনেক যাত্রীই আব্দুর রাজ্জাকের দোকান থেকে কিছু কিনে তাকে উৎসাহিত করেন।

রাজ্জাকের পিতা সাফিজ উদ্দিন জানান, ১৫ বছর আগে আব্দুর রাজ্জাকের সাথে হাসিনা খাতুনের বিয়ে দেওয়া হয়। পরপর দুই বছর তারা দুটি মৃত সন্তান জন্ম দেন। কিন্তু এরপর থেকে তাদের আর কোনো সন্তান হয় না। আব্দুর রাজ্জাক শারীরিকভাবে কাজ করতে অক্ষম। তার মা সকালে দোকানের ঝাঁপ খুলে দেয় আবার রাতে তা বন্ধ করে। এভাবেই তার জীবন চলছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম জানান, তারা মাঝে মাঝে রাজ্জাকের টং দোকান থেকে পান-মুড়ি কিনে খান। কারণ সে প্রতিবন্ধী হয়েও জীবিকার জন্য কিছু করছে। আব্দুর রাজ্জাকের কাছ থেকে তাদের অনেক কিছু শেখার আছে।

আমান মোড় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা আফসার উদ্দিন জানান, এখনকার সময়ে শারীরিকভাবে অক্ষম হলেই ভিক্ষা করতে বের হয়। অনেকে প্রতিবন্ধী না হয়েও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ভিক্ষা করে। অথচ রাজ্জাক প্রতিবন্ধী হয়েও নিজে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছে। তাই সমাজের জন্য সে অনুপ্রেরণার।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ভিক্ষা করা মহাপাপ, আমি চলাফেরা করতে পারি না। শরীরে শক্তি পাই না। তাই এখানে টং দোকান দিয়ে সামান্য আয়ের চেষ্টা করি। আমার স্ত্রী কারখানায় সুতা কাটার কাজ করে। দোকানের জন্য সরকারি সহায়তা পেলে ভালো হতো।’

শ্রীপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘আব্দুর রাজ্জাক একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ও বেটে প্রকৃতির হওয়ায় স্বাভাবিক কাজ করতে অক্ষম। তাই তাকে ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরবর্তীতে তার দোকানের পুঁজির জন্য প্রতিবন্ধী ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর