চারিদিকে ফুলের বাগান। ফুলের মৌ মৌ গন্ধ, মৌমাছির ওড়াওড়ি, যেনো এক মনোমুগ্ধ পরিবেশ। চোখ পড়লেই মনে হয় যেনো শিল্পীর হাতে আঁকা কোনো বাস্তব পৃথিবীর প্রাকৃতিক চিত্রকর্ম।
বলছিলাম যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের ফুল বাগানের কথা। ফুলের রাজধানীখ্যাত গদখালীতে হরেক প্রজাতির ফুল চাষ হয়।
কুয়াশার চাদর কাটিয়ে সূর্যের আভা ছড়ানোর আগেই ফুল চাষিরা মাঠে বেড়িয়ে পরেছেন। শীতের শুরুতেই এ সময়টায় ব্যস্ত সময় পার করেন গদখালীর ফুল চাষিরা। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই চাষিরা হালকা শীতের কাপড় গায়ে জড়িয়ে ফুল গাছের পরিচর্যায় মাঠে নামেন।
চাষিদের মাঠজুড়ে হাসছে গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদা, জিপসি, ডালিয়া, কসমস, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল। যেদিকেই দৃষ্টি যায়, সেদিকেই শুধু ফুল আর ফুল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের পানিসারা, পুটিপাড়া, হাড়িয়া, কৃষ্ণচন্দ্রপুর, পটুয়াপাড়া, সৈয়দপাড়া, মাটিকুমড়া, বাইসা, কাউরা, ফুলিয়াসহ আশ-পাশের কয়েকটি গ্রামের প্রায় প্রতিটা চাষযোগ্য জমিতেই ফুল চাষ হয়।
ফুল চাষি আব্দুর রহমান মিয়া বার্তা২৪.কম কে বলেন, আমরা সারাবছরই বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ করি। তবে ডিসেম্বর আর জানুয়ারি মাসের শীতের সময় অনেক ফুল একসঙ্গে ফোটে। তাই এসময়ে চাষিদের ব্যস্ততাও বেশী থাকে। এ সময়ে ফুলের চাহিদাও থাকে প্রচুর।
ফুল বাগানের অদূরেই যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে ফুল বিক্রির জন্য গদখালীর ফুলের হাট বসে। এ হাট থেকে প্রতিদিন দেশের প্রতিটি অঞ্চলে গদখালীর ফুল যায়। জনশ্রুতি আছে, দেশের চাহিদার ৭০ ভাগ ফুলই যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নে চাষ হয়। রাজধানী ঢাকাসহ, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ছাড়াও প্রায় সব শহরের পাইকারি ফুল ব্যবসায়ীরা গাড়িতে করে গদখালীর ফুল নিয়ে যান নিয়মিত। এছাড়াও ভ্যান, সাইকেল, রিকশা, ইজিবাইকে করে আশ-পাশের নিকটবর্তী অঞ্চলে স্থানীয়রা ফুল বিক্রি করেন।
হাটের ফুল ব্যবসায়ী কবির উদ্দিন বার্তা২৪.কম কে বলেন, ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি এই অঞ্চলে ফুলের ব্যবসা করে আসছেন। তার আগে এখানে তেমন ফুলের চাষ হতো না।
উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালের শুরুতে স্থানীয় হাতেগোনা কয়েকজন কৃষক ফুল চাষ শুরু করেন। ১৯৯৫ সাল থেকে কৃষকরা ব্যাপকভাবে ফুল চাষ করেন, এতে অন্য ফসলের থেকে লাভ বেশী হওয়ায় শুরু করেছেন। বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার কৃষক ফুল চাষ করেন। ফুল চাষে তারা সাবলম্বী হয়েছেন। ঘুঁচেছে তাদের সংসারের অভাব-অনটন। অনেক কৃষক ফুল চাষে লাভবান হয়ে সম্পদশালীও হয়েছেন।
এছাড়াও নগর জীবনের কোলাহলকে পেছনে ফেলে গদখালীতে অনেক পর্যটকরা বেড়াতে আসেন। অনেকে আসেন পিকনিক করতে। কারণ, এখানে যান্ত্রিকতার বাইরে এসে প্রকৃতির কাছ থেকে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকন করা যায়। অনেকে মনে করেন গদখালী মানে বাংলাদেশের বুকে এক টুকরো স্বর্গ।