নাস্তা বিক্রেতা সুজা মিয়া। বয়স প্রায় ২৩। একদম দরিদ্র ঘরের সন্তান। অভাবের কারণে তেমন একটা লেখা-পড়া করার সুযোগ পাননি তিনি। অল্প বয়সেই আয়ের পথ খুঁজে নিতে হয় তাকে। পেটের তাগিদে সুজা মিয়া হোটেল বয় হিসেবে কাজ নেন।
বয়স বাড়তে থাকলে জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেন বিয়ে করে। গাইবান্ধা শহরের ডেভিট কোংপাড়া তার বাড়ি। পিতা সুরুজ মিয়া চরম অভাবের কারণে ভাতের হাড়ি থেকে সুজা মিয়াকে আলাদা করতে বাধ্য হন বিয়ের পরপরই।
নতুন বিবাহিত সুজা মিয়ার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। এ অন্ধকার জীবন থেকে আলোর মুখ দেখাতে স্ত্রী নার্গিস সব সময় সাহায্য করেছেন সুজা মিয়াকে। স্ত্রী ও নিজের পরিকল্পনায় শুরু করেন নিজের ব্যবসা। পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভ্রাম্যমাণ ভাবে গাইবান্ধা শহরস্থ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে নিজেদের তৈরি খাবার বিক্রি করবেন বলে স্বামী-স্ত্রী দুইজনেই সিদ্ধান্ত নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে সমুচা, খাজা ও শিঙাড়া বেচবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন এই দম্পতি।
ব্যবসা শুরু করতে গেলে অর্থের প্রয়োজন। মাত্র ৩ হাজার টাকার জন্য সুজা মিয়া ও তার স্ত্রী ব্যবসা শুরু করতে পারছিলেন না। একটি মাত্র গৃহপালিত ছাগলই তাদের শেষ সহায় সম্বল। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে পোষা ছাগলটি বিক্রি করেন তারা। প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে শুরু করেন সমুচা, খাজা ও শিঙাড়া তৈরির কাজ।
প্রতিদিনের মতো গতকাল বিকেলেও গাইবান্ধা শহরের নিউমার্কেট গেটে দেখা যায় নাস্তা বিক্রেতা সুজা মিয়ার। কাঁচের গ্লাসের আবদ্ধ ঠেলাগাড়িতে ওইসব নাস্তা বিক্রিতে চরম ব্যস্ত সময় পার করছিলেন তিনি। এরই ফাঁকে কথা হয় তার সঙ্গে।
ছবি তোলার চেষ্টা করলে প্রথমে একটু ক্ষেপে যান সুজা। ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন তিনি। এ কারণেই ছবি তুলতে নারাজ। সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে রাগটা কিছুটা শিথিল করলেন সুজা মিয়া।
বিক্রি কেমন হয় জিজ্ঞেস করতেই সুজা মিয়া বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ ভাবে নাস্তা বিক্রি করে প্রতিদিন ৩ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা লাভ হয়। যা দিয়ে সংসার চালিয়ে আসছি। এখন কিছুটা সুখে-শান্তিতে আছি। তবে মোটা অংকের পুঁজি থাকলে বর্তমান বাজারে সমুচা, খাজা ও শিঙাড়া পাইকারিতে বিক্রি করা যেতো। পুঁজি সংকট বিষয়ে দানশীল প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তির সহযোগিতা পেলে উপকার হতো’।
আশেপাশের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় স্থানীয় এলাকায় সুজা মিয়ার শিঙাড়ার ভালোই সুনাম রয়েছে। গাইবান্ধা শহরে কম্পিউটার ভিশনের স্বত্বাধিকারী রোকন মিয়া ও মানিক মিয়া বলেন, সুজা মিয়ার তৈরিকৃত খাবারগুলো খুবই সুস্বাদু। সব ধরনের খাবার প্রতি পিস মাত্র ৫ টাকা দরে বিক্রি করেন তিনি। শহরের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে পথচারীরাও তার এসব খাবার খেতে পছন্দ করেন।