শাল গাছ আমাদের দেশের পরিচিত একটি নাম। কাগজপত্রে এ গাছের নাম শাল থাকলেও এর গোড়া থেকে চারা গজানোর কারণে স্থানীয়রা শালকে গজারি গাছ নামে ডাকে।
কিছুদিন আগেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় শাল বাগানের দেখা মিললেও এখন তা কমে এসেছে। তবে বিচ্ছিন্নভাবে গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলায় শাল গাছের দেখা মেলে।
প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাকারী শাল গাছ রক্ষায় সরকার কার্যকরী কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় সংকটাপন্ন অবস্থার মধ্যে পড়েছে শাল গাছ।
শাল গাছ সরল ও লম্বা প্রকৃতির হয়। শাল কাঠ খুবই শক্ত, মজবুত ও ভারবাহী। এর প্রতিটি অংশই প্রকৃতি ও মানব জীবনে উপকার বয়ে আনে। এ গাছের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এটি রোপন করা যায় না। শাল গাছ প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হয়। হিন্দুধর্ম মতে, এই গাছ ভগবান বিষ্ণুর আশীর্বাদপ্রাপ্ত।
বন বিভাগ ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, গাজীপুরে রয়েছে ৬৫ হাজার একর বনভূমি। স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে এসব বনভূমিতে ছিল শাল বাগান। যার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল বনবিভাগের ওপর। কিন্তু স্থানীয়দের জবর-দখল ও অপরিকল্পিত শিল্পায়নের আগ্রাসনে অধিকাংশ শাল বন ধ্বংস হয়ে গেছে।
এখন ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানসহ সামান্য কিছু এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে শাল বাগান রয়েছে। তবে শাল গাছ ধ্বংসের পেছনে সরকারের উদাশীনতা অনেকাংশেই দায়ী। সামাজিক বনায়নের নামে শাল বাগান কেটে আকাশমনির জন্য প্লট দেওয়ায় ধ্বংস হচ্ছে শাল বাগানের জায়গা।
এ ছাড়া নানাভাবে নতুন শাল গাছ জন্ম ও কেড়ে উঠার ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে।
শ্রীপুরের গাজীয়ারন এলাকার কলেজ শিক্ষক হ.ম মানিক জানান, বেশ কিছুদিন আগেও শাল বাগানের ছায়ায় আমরা বসতাম। শাল বাগানে আসলে খোঁজে পেতাম প্রাণের স্পন্দন। আমাদের গাজীপুরের ঐতিহ্য ছিল ভাওয়ালের শাল বন। এখন যে হারে বন দখলের মহোৎসব চলছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে শাল গাছ খুব একটা অবশিষ্ট থাকবে না।
গাজীপুর সদর এলাকার আবুবকর সিদ্দিক জানান, শাল বাগান কেটে প্রথমে বন পরিস্কার করা হয়। পরে সেখানে আকাশমনি চারা রোপন করা হয়। আগে যেখানে শাল গাছের রাজত্ব ছিল সেখানে এখন আকাশমনির আধিক্য। আর আকাশমনি গাছের বিশেষত্ব হচ্ছে, এ গাছের নিচে আর কোনো প্রজাতির গাছ জন্মে না।
গাজীপুর মির্জাপুর ডিগ্রি কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল হোসেন জানান, শাল ডিপ্টেরোকার্পাসিয়া প্রজাতির উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে থাকলেও আমাদের দেশে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে তা। তবে সংরক্ষণের উদ্যোগ না নেওয়ায় ইতিমধ্যেই এ গাছ সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়েছে। প্রকৃতি ও মানব জীবনের জন্য উপকার বয়ে আনা শাল গাছ রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউসুফ বার্তা২৪.কমকে বলেন, উপকারী শাল গাছ রক্ষায় আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এখন থেকে শাল কপিচ না কেটে তা বেড়ে উঠার জন্য সুফল প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, শাল তা পরিপূর্ণতা ফিরে পাবে।