পাঁচ ফিট বাই তিন ফিটের ছোট্ট বারান্দা। বারান্দার একপাশে মজুবত গ্রিল দিয়ে ঘেরা। শীতের বিকেলের পড়ন্ত রোদ ঠিকমত ঢুকছে না। কেননা বারান্দাটা আর দশটা সাধারণ বারান্দার মত নয়। গোটা বারান্দার গ্রিলে জড়িয়ে আছে করল্লার লতানো ডালপালা। ছোট্ট ছোট্ট দেশি করল্লা ঝুলে আছে লতানো ডালগুলোতে। ঠিক যেন মেয়েদের কানের দুলের মত।
এই লতানো গাছের ফাঁক দিয়েই সূর্যকিরণ ঠিকরে ঠিকরে ঘরের ভেতরে আসছে। এমন দৃশ্য দেখে মনে পড়ে যায় গ্রামের ‘জাংলা’ কিংবা ‘মাচার’ কথা। জাংলাতে লতানো সবজির গাছ উঠে গেলে তার ফাঁক দিয়ে সূর্যের কিরণ মাঝে মাঝে উঁকিঝুঁকি দেয়।
বাসাটি একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তার। তার ছেলে আরাফাত রহমান শৈশবের বন্ধু। সেনানিবাসের শান্ত, শৃঙ্খলিত পরিবেশে একসঙ্গে আমাদের বেড়ে ওঠা। সকালে একসঙ্গে স্কুলে যাওয়া, বিকেল বিশাল মাঠে ক্রিকেট/ফুটবল খেলা ছিল আমাদের নিত্যদিনের অভ্যাস। ওদের বাসাতেও ছিল নিয়মিত যাতায়াত। ঢাকা-১৭ আসনে ভোটের খবরাখবর নিতে শুক্রবার গিয়েছিলাম কচুক্ষেত, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়। সেখানেই বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। আঙ্কেল-আন্টির সঙ্গে দেখা করতে দুপুরে চলে যাই ওদের বাসায়।
দুই বেডরুমের বাসাতে ঢুকেই বন্ধু বারান্দায় নিয়ে যায়। বারান্দায় প্রবেশ করেই চোখে সবুজের আভা খেলে যায়। টবের মধ্যে বেগুন গাছ। ছোট্ট দুটো দেশি বেগুন সেখানে ঝুলে আছে। রোদের আলোতে বেগুনের গা চিকচিক করছে। বেশ কয়েকটি টব সাজানো। কোনটাতে করল্লা গাছ, মরিচ গাছ, বেশ কয়েকটা টবে চাষ করা মাটিও দেখা গেল।
আরাফাত জানালো, এই বারান্দা কৃষি তার মায়ের। আন্টির বাগান করার শখ ছিল। কিন্তু সেটা আজো আছে জেনে বেশ অবাকও হলাম।
কথায় কথায় আরাফাত জানাল, বারান্দার বেগুন গাছের বেগুন, করল্লা গাছের করল্লাও তারা খেয়েছে। এখন লাউয়ের গাছ লাগানো হবে। আন্টি চারাগুলোর যত্নআত্তি করেন। আরাফাত ও তার ভাই সময় সুযোগ পেলে যত্ন নেয়।
আরাফাত বলে, গাছগুলো থাকায় একধরনের প্রশান্তি কাজ করে। বারান্দাটা সব সময় ঠাণ্ডা থাকে। আর নিজের গাছে ফল ধরলে খুব আনন্দ হয়।
যেহেতু জীবনের প্রয়োজনে আমাদের অনেকের গ্রামে যাওয়ার সুযোগ হয়না। ইট কাঠের শহরেই দিনযাপন করতে হয়। তাই সুযোগ থাকলে ছাদ-কিংবা বারান্দা হয়ে উঠতে পারে এক চিলতে কৃষিজমি। শুধু একটু ইচ্ছাশক্তি থাকলেই হয়, যোগ করেন আরাফাত।