গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী টেকেরহাট বন্দর এলাকার হ্যামিলটন ব্রিজের নিচে বসে শ্রম হাট। প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকেই জমজমাট হতে থাকে এই শ্রম হাট। হাটে ৭০ বছরের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের শ্রমজীবী আসেন কাজের সন্ধানে। প্রথমে চলে দর কষাকষি, পরে দরদামে মিললে বিভিন্ন এলাকার কাজ করতে চলে যান এসব শ্রমিকরা।
জানা গেছে, এ হাটের শ্রমিকরা ৩০০-৪০০ টাকা দৈনিক মজুরিতে বিক্রি হন। তবে মালিকদের পছন্দের ওপর শ্রমের মূল্য নির্ভর করে। সাধারণত বৃদ্ধদের চেয়ে জোয়ান বা যুবকদের চাহিদা বেশি থাকে। তবে অনেকে শরীরিক গঠন দেখেও শ্রমিক ভাড়া নেন।
জানা গেছে, মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড়, ননীক্ষীর, গোহালা, রাঘদী ইউনিয়ন থেকে প্রায় ৪ (চার) শতাধিক নারী-পুরুষ প্রতিদিন এই হাটে জমায়েত হন। প্রায় ৫/৬ কিলোমিটার দূর থেকে ভোররাতে রওনা দিয়ে পায়ে হেঁটে এখানে হাজির হন তারা। সকাল ৭ টার মধ্যে মুকসুদপুরের জলিরপাড়, ননীক্ষীর গোহালা, রাঘদী ইউনিয়নসহ রাজৈর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জমির মালিকরা দরদাম করে এসব শ্রমিকদের জমির কাজের জন্য ভাড়া করেন। তবে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের আয়েরও পরিবর্তন হয়। বেশি শ্রমিক থাকায় অনেকে কাজ পান না।
কাজের সন্ধানে আসা শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা অনেকেই প্রায় ভূমিহীন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। শ্রম বিক্রির ওপর নির্ভর করে তাদের সংসার। যখন কাজ থাকে না তখন অনেকে সংসার চালাতে নেন এনজিও‘র ঋণ। শ্রমের মজুরি দিয়ে তাদের এসব ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়।
মনিকা নামের এক নারী শ্রমিক বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘আমি রাইচ মিলে কাজ করি। যখন কাজ না থাকে তখন আমি সংসার চালাতে কৃষি জমিতে বা বিভিন্ন বাড়িতে বিভিন্ন কাজ করে টাকা উপার্জন করি। কাজ পেতে আমাকে খুব সকালেই এখানে আসতে হয়। শ্রমিক সংখ্যা বেশি থাকায় অনেক সময় কাজ পাইনা। আবার অনেক সময় কম মজুরিতে সারাদিন কৃষি জমিতে অথবা বাড়িতে ধোঁয়া-মোছার কাজ করতে হয়।’