স্বপ্ন পূরণে বড় বাধা অভাব নামক দানবের শত বাধা পেরিয়ে অদম্য মেধাবী লাইফ মিয়া এ বছর জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। লাইফ মিয়া গাইবান্ধা সাদুল্যাপুর উপজেলার খোর্দ্দকোমরপুর ইউনিয়নের মুজাহিদ পুর এলাকার নওশা মিয়ার ছেলে।
জীবিকার তাগিদে স্থানীয় কিশামত ঝাউলার বাজারস্থ একটি দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে চা বিক্রি কারার পাশাপাশি লেখা-পড়া চালিয়ে আসছিল লাইফ মিয়া। ২০১৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) খোর্দ্দমুজাহিদ পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করে সবাইকে অবাক করে দেন তিনি।
চা বিক্রি করেই সংসারে দৈন্যদশা কাটানোর পাশাপাশি লেখাপড়ার খরচ বহন করছেন তিনি। বিদ্যালয় ছুটির পর থেকে রাত অবধি চা বিক্রি শেষে লেখা পড়ায় মগ্ন হয়। অনেক সময় দোকানেও বই পড়ত সে। তার ইচ্ছা লেখা-পড়া করে নিজেকে ডাক্তার করে গড়ে তুলতে সকল সিঁড়ি অতিক্রম করা। এ ইচ্ছা শক্তি সকল বাধাকে অতিক্রম করে চলতি বছর জেএসসি পরীক্ষায় খোর্দ্দকোমর পুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করে রীতিমত পুরো এলাকায় হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন লাইফ মিয়া।
ক্লাস শুরুর ৩০ মিনিট আগে দোকানে বৃদ্ধ বাবার উপর ছেড়ে দিয়ে শ্রেণি কক্ষে যেত লাইফ মিয়া। তবে একটা সময় মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হলে পড়াশুনার চাপ বাড়বে। তখন একসাথে লেখাপড়া ও দোকান একসাথে করা খুব কঠিন হয়ে পড়বে বলে এ বিষয়ে লাইফ মিয়ার কিছুটা দুশ্চিন্তা আছে।
লাইফ মিয়া বলেন, 'ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় এ বাক্যটিকে মেনে নিয়ে এতদূর এগিয়েছি। জীবন মানেই সংগ্রাম। লেখাপড়ার সাথে আমাকে দরিদ্রতা মোকাবেলায় বাড়তি সংগ্রাম করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। চা বিক্রেতা নরেন্দ্র মোদি যদি ভারতের মত এত বড় দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। তবে আমি চা বিক্রেতা লাইফ মিয়া ডাক্তার হতে পারব না কেন?।'
কথা হয় লাইফের বাবা নওশা মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, 'ছেলের এ ফলাফলে অত্যন্ত খুশি হয়েছি কিন্তু ছেলের স্বপ্ন পূরণ করতে পারব কি না তা নিয়ে বেশ চিন্তিত।'
লাইফ মিয়ার মা নারগিস বেগম বলেন, 'অনেক বার কইছি হামরা গরিব মানুষ। লেখাপড়া করে হামার লাভ কি? আর এত টাকা কোনটে পামো। লাইফ শুধু মায়ের দোয়া নিয়ে ডাক্তার হবার জন্যেই চা দোকান করে ফের পড়াও পড়ে।'
খোর্দ্দকোমর পুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, লাইফ মিয়া খুবই মেধাবী ছাত্র। খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে লেখাপড়া করে সে আজ সার্থক। জেএসসিতে এ-প্লাস পেয়েছে। মেধাবী ছাত্র হিসেবে তাকে স্কুলে সকল সহযোগিতা করেছি। এমনকি মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীদের উচ্চতর লেখাপড়া করতে গিয়ে অর্থনৈতিক কোন সমস্যা হলে স্কুল থেকে সহযোগিতা করেন বলে তিনি জানান।