প্রজাপতির (Butterfly) মতো এতো সুন্দর পতঙ্গ এই ধরনীতে আর আছে কি? সম্ভবত নেই। কল্পনায় যত রঙ আঁকা যায়, তার সবগুলো রঙেরই প্রজাপতি থাকা সম্ভব। বাহারি কারুকাজযুক্ত রঙির ডানাওয়ালা পতঙ্গগুলোকে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ বাদে বিশ্বের প্রায় সবখানেই দেখা যায়। ছোট্ট বর্নিল নিরীহ পতঙ্গগুলোকে দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে। রঙিন এই পতঙ্গগুলো যখন নরম ডানায় ভর করে কারো পাশ দিয়ে ধীর গতিতে উড়ে যায় তখন মূগ্ধ দৃষ্টিতে না তাকিয়ে কি থাকা যায় না।
প্রজাপতি লেপিডপটেরা বর্গের সদস্য, গ্রীক ভাষায় যার অর্থ আঁশযুক্ত ডানাওয়ালা পতঙ্গ। প্রজাপতি ছাড়া এই বর্গে আরও রয়েছে মথ (Moth)। আর সেকারণেই মথ প্রজাপতির নিকটাত্মীয়। প্রজাপতির বিভিন্ন গোত্র বা পরিবারগুলোকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- ১. সত্যিকারের প্রজাপতি (True Butterfly), ২. কাপ্তান (The Skipper) ও মথ-প্রজাপতি (Moth-Butterfly)। লেপিডপটেরার বাদবাকি পরিবারগুলোর সদস্যরাই হলো মথ। এ বর্গের ৮৯-৯৪%-ই মথ ও বাকি মাত্র ৬-১১% প্রজাপতি। প্রায় ২০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে ওদের উদ্ভব হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। বিশ্বব্যাপী ১৫-২০ হাজার প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৪৩০টি প্রজাতি তালিকাভুক্ত হলেও মোট প্রজাতি সংখ্যা পাঁচশ-এর বেশি হতে পারে। এদেশে বর্তমানে তিনটি প্রজাপতি পার্ক রয়েছে। প্রথমটি চট্রগ্রামের পতেঙ্গায়, দ্বিতীয়টি গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে ও তৃতীয়টি গাজীপুরের বাঘের বাজারে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কের ভেতর।
হাতির যেমন শুঁড় (proboscis) আছে প্রজাপতিরও তেমনি শুঁড় রয়েছে যা দিয়ে এরা ফুলের ভিতর থেকে নির্যাস বা রস (Nectar) বের করে আনে। পাপুয়া নিউ গিনির ‘রাণী আলেকজান্দ্রার বিহন’ বিশ্বের বৃহত্তম প্রজাপতি, যার প্রসারিত ডানা ২৫০ থেকে ২৮০ মিলিমিটার এবং উত্তর আমেরিকা ও আফ্রিকার ‘পশ্চিমা বামন নীল’ বিশ্বের ক্ষুদ্রতম প্রজাপতি (প্রসারিত ডানা ১০ মিলিমিটার)। ‘বেনুবিহন’ বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রজাপতি (প্রসারিত ডানা ১৪০ থেকে ১৯০ মিলিমিটার) ও ‘সলমা’ ক্ষুদ্রতম (প্রসারিত ডানা ২০ থেকে ২২ মিলিমিটার)। বিশ্বব্যাপী বহু সুন্দর সুন্দর প্রজাপতি ও মথ রয়েছে, যেমন- নীল প্রজাপতি, সচ্ছ প্রজাপতি, ৮৮ প্রজাপতি ইত্যাদি। এসব প্রজাপতি বা ওদের নিকটাত্বীয় কিছু প্রজাতি এদেশেও রয়েছে, যেমন- বেণুবিহন, শ্বেত ফড়িংলেজী, তিতিমৌরল, মরাপাতা ইত্যাদি। অন্যান্য সুন্দর প্রজাপতির মধ্যে রয়েছে গর্দাপেয়ারী, নিশি সিন্ধুপ, রতœচূড়, চোরকাটা কমলা, নীল শিখীপর্ণ, বিদুষক ইত্যাদি।
আমাদের প্রজাপতির মধ্যে সচরাচর যেগুলোকে দেশজুড়ে দেখা যায় তার মধ্যে উদয়াবল্লী, সাত ডোরা, নীরদ সিন্ধু, মনমেঘা, কস্তুরী শার্দুল, নীল ডোরা, চোরকাটা কমলা, উষসী বায়স, নীল পুনম, অংশশুচপল, কমলা শিখীপর্ণ, ধূসর শিখীপর্ণ, বনবেদে, নাবিক, কৃষ্ণতরঙ্গ, গুণনকর বনপাল, কুম্ভীধনু, তৃণাঙ্গুরী, উষসী কপিল, ভোল ভ্রামরী, রাগ নকশী, হেমশুভ্র, চৈতালী দূত, তৃণ গোধুম, তৃণ বিদুষক, তিলাইয়া, কৃষ্ণতিলা, পঞ্চতিলা, তিন্নি, নীলবিজুড়ী, মলয় মশাল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। দুলর্ভ ও বিরল প্রজাতির মধ্যে রয়েছে বেণুবিহন, কেশবতী, কাজল, চন্দ্রাবল্লী, হলদে খঞ্জর, শ্বেত ফড়িংলেজী, তিতিমৌরল, নীল বায়স, বনমালী, নীল শিখীপর্ণ, পালিপার্বন, দেতাবকী, নিশি সিন্ধুপ, একাঙ্ক গোধুম, বান্দর, ময়ূরী রেণূ, পীতরতœ, চাতুল, নীল খয়ের, আকাশচারী, ভাটুরে বউল, শিখা বউল, জলদ আকাশি, ছিটকুল, সূর্যচঞ্চল, স্বর্ণছরা, ছাযাকরণ ইত্যাদি। মহাবিপন্ন ও বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় রয়েছে স্বর্ণবিহন, সিঁদুরী পদ্মরাগ, চুমকি, সুন্দরী বায়স, শ্বেত শার্দুল, চিত্রল বায়স, সুন্দরী বনদেবী, বনবেণু, রত্মচূড়, উদয়ধনু, রক্তডানা, কৃষ্ণ অধিরাজা, কৃষ্ণ যুবরাজ, তালডিঙি, পিপুলকাঠি, উর্মিমালা, কুল মুকুল, ভাঁড় ইত্যাদি।
প্রজপাতি নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক সংস্কার বা কুসংস্কার রয়েছে। যেমন- কারো গায়ে প্রজাপতি বসাকে সৌভাগ্যের লক্ষণ বলে ধরে নেয়া হয়। এদেশে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক অবিবাহিত লোকের দেহে প্রজপাতি বসলে তার বিয়ের ফুল ফুটলো বলে ধরে নেয়া হয়। সাদা রঙের প্রজপতিকে কোথাও কোথাও সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করা হয়। এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রজাপতি নিয়ে বহু পৌরাণিক কাহিনী বা কিংবদন্তী প্রচলিত আছে। প্রাচীন গ্রীক ভাষায় Psyche (সাইকি) অর্থ হলো প্রজাপতি। Psyche-এর শাব্দিক অর্থ Soul বা আত্মা অথবা Mind বা মন। গ্রীকরা বিশ্বাস করে যে, প্রাতিটি মথ প্রজাপতি থেকে বের হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আত্মার জন্ম হয়। প্রজাপতি নিয়ে জাপানী মিথ হলো- যার ঘরে প্রজাপতি প্রবেশ করে, সবচেয়ে পছন্দের ব্যাক্তিটি তাকে দেখতে আসে। দু’টি প্রজাপতি একসঙ্গে উড়াকে চীনারা ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে দেখে। ফিলিপিনোরা মনে করে, কোন ঘরে যদি কালো প্রজাপতি প্রবেশ করে বা এর মথ আনা হয় বা জন্ম হয়, তবে ঐ পরিবারের কেউ মারা গেছে বা শীঘ্রই মারা যাবে। প্রাচীন ইউরোপিয়রা মনে করতো মানুষের আত্মা নেয়া হয় প্রজাপতির রূপে, তাই তারা প্রজাপতিকে খুবই শ্রদ্ধা ও ভয়ের সাথে দেখতো। আইরিশরা মনে করে, মৃত ব্যক্তিদের আত্মা স্বর্গে প্রবেশের আগ পর্যন্ত প্রজাপতি হযে থাকে। মেক্সিকোর কোন কোন আদিবাসী বিশ্বাস করে যে, প্রজাপতি হলো পৃতিবীর উর্বরতার প্রতীক। মায়া আদিবাসীরা মনে করে, মৃত যোদ্ধাদের আত্মা প্রজাপতির রূপ নিয়ে পৃথিবীতে বিরাজ করে। আসামের নাগাস অঞ্চলের লোকেদের বিশ্বাস এই যে, আত্মা পৃথিবীতে এক রূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তরিত হচ্ছে। এর সর্বশেষ ধাপে প্রজাপতি হয়ে জন্মগ্রহণ করে। এই প্রজাপতির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে আত্মার রূপান্তরও শেষ হয়।
প্রজাপতি দিনের বেলায় ফুল থেকে ফুলে ওড়ে বেড়ায় ও ফুলের রস পান করে। ফুলের পরাগায়ণে অর্থাৎ গাছের বংশবিস্তারে এরা বেশ সাহায্য করে। এদের পঞ্চেন্দ্রিয় উন্নত ধরনের। পূর্ণবয়ষ্ক প্রজাপতির মাথায় একজোড়া প্রায় গোলাকার যৌগিক চোখ বা পুঞ্জাক্ষি (Compound Eye) থাকে যা দিয়ে এরা চারদিক দেখতে পারে। প্রজাপতি পুঞ্জাক্ষির সাহায্যে ভিন্ন ভিন্ন রঙ ও বস্তু শণাক্ত করতে পারে। এদের লম্বা দেহটি তিনভাগে বিভক্ত, যেমন মাথা, বুক ও উদর বা পেট। উদর লম্বা বেলুনাকার যা দশটি খন্ডে বিভক্ত। সাধারণত দেহ এবং ডানার উপর ও নিচের দিকের রঙ এবং কারুকাজে ভিন্নতা থাকে। মাথার দু’পাশে একটি করে অ্যান্টেনাও রয়েছে। চোখ বাদে পুরো দেহ ছোট ছোট রোম ও চ্যাপ্টা আঁশে আবৃত থাকে। এদের ডানা চারটি ও পা তিন জোড়া।
ঠাণ্ডা মৌসুমে প্রজাপতি উড়তে পারে না। এদের স্বাভাবিক কাজকর্ম বা ওড়াউড়ি করার জন্য পরিবেশের তাপমাত্রা ২৮-২৯- সেলসিয়াস থাকা বাঞ্ছনীয়। এরা শীতল রক্তসম্পন্ন প্রাণী, তাই দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এজন্য পরিবেশের তাপমাত্রা এদের দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পরিবেশের তাপমাত্রা যদি ১৩- ডিগ্রী সেলসিয়াসের কম থাকে তবে এরা নড়াচড়া করতে পারে না, এমনকি নিজেদের জন্য খাদ্য সংগ্রহেও যেতে পারে না। শীতে প্রজাপতিদের চলাফেরার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যের তাপের প্রয়োজন হয়। নতুন জন্ম নেয়া প্রজাপতি উড়তে পারে না। কারণ এদের পাখাগুলো দেহের সাথে লেগে থাকে। প্রজাপতির পুরো দেহ শুষ্ক হওয়ার জন্য কয়েক ঘন্টা সময় লাগে।
প্রজাপতির জীবন চক্র চারটি পর্বে বিভক্ত। যথা- ১) ডিম, ২) শুককীট (বা শুঁয়াপোকা), ৩) মূককীট (বা কোকুন) ও ৩) পূর্ণাঙ্গ পতঙ্গ (বা ইমাগো)। এটিকে বলে সম্পূর্ণ রূপান্তর। প্রজাপতি ও মথের ধরনের উপর নির্ভর করে জীবন চক্রের দৈর্ঘ্য মাস থেকে বছরব্যাপী হতে পারে। জীবন চক্রের প্রথম পর্যায় হলো ডিম। ডিমের আকার ও আকৃতি ওদের ধরনের উপর নির্ভর করে। ডিম ছোট, গোলাকার, ডিম্বাকার বা নলাকার হয় ও কমবেশি সচ্ছ থাকে। স্ত্রী সচরাচর পছন্দনীয় উদ্ভিদ অর্থাৎ পোষক গাছের কচি পাতা, অঙ্কুর বা কাণ্ডে ডিম পাড়ে। বসন্ত ও গ্রীষ্ম ডিম পাড়ার উপযুক্ত মৌসুম, তবে অন্য সময়েও ডিম পাড়তে সক্ষম। স্ত্রী একসঙ্গে প্রচুর ডিম পাড়ে, তবে শেষ পর্যন্ত মাত্র কয়েকটি বেঁচে থাকে। জীবন চক্রের দ্বিতীয় পর্যায় হলো শুককীট। এটি দেখতে লম্বা পোকার মতো যার চোখ বয়ষ্কগুলোর মতো যৌগিক নয় বরং সরল। ডিম ফুটে বের হওয়ার পর প্রথমেই শুককীট ডিমের খোসাটি খেয়ে ফেলে। ওরা গাছের পাতা খেয়ে ও কয়েকবার (সচরাচর পাঁচবার) দেহের খোলস পাল্টে আকারে বড় হয় ও পরের ধাপে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। বেশিরভাগ শুককীটই গাছের ক্ষতি করে। অবশ্য কোনো কোনো প্রজাতি ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে কৃষকদের উপকারও করে। মূককীট হলো জীবন চক্রের তৃতীয় পর্যায়। এ পর্যায়ে শুককীট খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেহের চারিদিকে একটি খোলস সৃষ্টি করে এবং নিজেকে তার মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলে। শক্ত খোলসের ভিতরে এটি দ্রুত পরিবর্তিত বা রূপান্তরিত হয়ে মূককীটে পরিণত হয়। এই রূপান্তরে, শুককীটের কলা, অঙ্গ, প্রতঙ্গ ইত্যাদি পরিবর্তিত হয়ে প্রজাপতিতে পরিণত হয়। এক সপ্তাহ থেকে কয়েকমাস, এমনকি বছর পর্যন্ত এটি সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। জীবন চক্রের চতুর্থ বা চূড়ান্ত পর্যায় হলো প্রাপ্তবয়স্ক ধাপ বা ইমাগো। মূককীটের ভিতরে রূপান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর উপযুক্ত সময় ও পরিবেশে সুপ্তিকালশেষে একদিন খোলস কেটে বেরিয়ে আসে প্রজাপতি। এ সময় তার দু’ডানাই ভেঁজা, নরম ও দেহের সঙ্গে ভাঁজ হয়ে থাকে। ডানা পুরোপুরি শুকানোর পর সে ওড়াউড়ি শুরু করে।
যেহেতু প্রাপ্তবয়স্ক প্রজাপতির মূল কাজ হলো বংশবিস্তার করা তাই সে সঙ্গী খোঁজে, মিলিত হয়, ডিম পাড়ে ও বংশবিস্তার করে। এই পর্যায়ে কিছু প্রজাপতি ফুল থেকে নির্যাস পান করে। অন্যরা গাছের রস, মল, ভিজা মাটির রস, পচনশীল ও মৃত প্রাণীজ পদার্থ এবং অন্যান্য জৈব পদার্থ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। প্রজাপতি মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাঁচে, কারণ ওদের জীবকাল গড়ে ৩-৪ সপ্তাহ। তবে, পরিযায়ী প্রকৃতিরগুলো বছরখানেকও বাঁচতে পারে। প্রজাপতিরা সাতটি গোত্রে বিভক্ত। তবে এদেশে হেডিলিডি গোত্রের কোনো প্রজাপতি না থাকায় বাংলাদেশের প্রজাপতিগুলোকে ছয়টি গোত্রেই দেখানো হয়, যেমন- ১) প্যাপিলিওনিডি বা সোয়ালোলেজী প্রজাপতি (উদাহরন- উতলকূট, অভ্রকূট), ২) নিম্ফালিডি বা চারপেয়ে প্রজাপতি (চোরকাটা কমলা, কস্তুরী শার্দুল), ৩) পিয়েরিডি বা সাদা ও হলুদ প্রজাপতি (রাগ নকশী, শুদ্ধ হরিদ্রা), ৪) লাইকিনিডি বা নীল প্রজাপতি (জলদ আকাশী, চাতুল), ৫) রিওডিনিডি বা ধাতবচিহ্নযুক্ত প্রজাপতি (ভাঁড়, বিদুষক) ও হেস্পারিডি বা অধিনায়ক (বাদামি শঙ্কু, শিকনদেও) প্রজাপতি। কোনো কোনো পুরনো শ্রেণিবিন্যাসে কিছু অতিরিক্ত গোত্র, যেমন- ড্যানাইডি, হেলিকোনিডি, লিবিথিইডি, স্যাটিরিডি, অ্যাকারিইডি, অ্যামাসথুসিইডি ইত্যাদিকে স্বীকৃতি দিলেও আধুনিক শ্রেণিবিন্যাসে এগুলোকে নিম্ফালিডি গোত্রের অর্ন্তগত উপগোত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
প্রজাপতি দেখতে বেশ সুন্দর ও বর্নিল হলেও শুককীটগুলো অনেক ক্ষেত্রেই তেমন একটা সুন্দর হয় না। তাছাড়া এরা গাছের বেশ ক্ষতি করে। অবশ্য কোন কোন প্রজাতির শুককীট ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে কৃষকদের বেশ উপকারও করে। আবার শূককীট বা শুয়াপোকা অনেক পাখির কাছেই অত্যন্ত প্রিয় খাবার। কাজেই অনেক প্রজাতির পাখিও প্রজাপতির ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে। গাছের বৈচিত্র্য তৈরিতে প্রজাপতি ভূমিকা রাখে।
প্রকৃতির সুন্দর সৃষ্টিগুলোর মধ্যে ফুল, পাখি ও প্রজাপতি অন্যতম। সুন্দর এই প্রজাপতিগুলো দেখে আমরা মুগ্ধ হই। কিন্তু এদের প্রতি আমরা মোটেও সচেতন নই। আামদের দেশের শিশু-কিশোর এমনকি বড়রাও সঠিকভাবে প্রজাপতি চিনে না। এদের উপকারিতা সম্পর্কেও বিশেষ কিছু জানে না। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় উদ্ভিদ ও প্রাণী-পাখির মতো প্রজাপতিরও যে ভূমিকা রয়েছে তা অনেকেরই জানা নেই। প্রজাপতি পরিবেশের সুস্থতার নির্নায়ক। এদেশে বর্তমানে কয় প্রজাতির প্রজাপতি বিলুপ্তির দোড়গোড়ায় ও কয়টি ইতোমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে তার কোন সঠিক হিসাব নেই। কাজেই এ বিষয়ে জ্ঞানার্জন করা প্রয়োজন। তবে আমাদের প্রাকৃতিক গাছগুলোকে সংরক্ষণ করে প্রজাপতিকে রক্ষা করা সম্ভব। কেননা কিছু কিছু গাছ রয়েছে যার ওপর প্রজাপতিরা সরাসরি নির্ভরশীল। তবে কিছু কিছু প্রজাতি মারাত্মকভাবে হুমকীর সম্মূখীন রয়েছে। কাজেই এদের রক্ষা করার ব্যাপারে এখনই সচেতন না হলে এদেরকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যাবে না।