গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার আচারপাড়া-আড়ুয়াকান্দি গ্রামের মানুষের ঘুম ভাঙে হাতুড়ির ঠুনঠান শব্দে। সূর্যের আলো দেখার আগেই শুরু হয় কর্ম ব্যস্ততা। কারণ এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষই পেরেক তৈরির কাজে জড়িত। বাপ-দাদার আমল থেকেই চলে আসছে এ পেরেক তৈরির কাজ। এ কাজ করে এলাকার প্রায় ২০০টি পরিবারের জীবিকা নির্বাহ চলছে।
গ্রাম ঘুরে জানা যায়, আচারপাড়া-আড়ুয়াকান্দি গ্রামে প্রায় ১৫০ বছর আগে থেকেই পেরেক তৈরির কাজ শরু হয়। পূর্ব-পুরুষের পেশা হিসেবে এখনো এ পেশা ধরে রেখেছেন তাদের উত্তরসূরিরা। এ পেশায় প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ নিয়মিত কাজ করেন।
পেরেক তৈরির কাঁচামাল হিসেবে পুরাতন বিল্ডিংয়ের ছাদের ও ব্রিজের লোহা/রড ব্যবহার করা হয়। লোহাগুলোকে সোঁজা করে পর্যায়ক্রমে ৪ ইঞ্চি, ৫-৬ ইঞ্চি, ৮-১০ ইঞ্চি, ১২-১৬ ইঞ্চি মাপে কেটে কয়লার আগুনে পুড়িয়ে চৌরাশ করে নির্দিষ্ট ছাঁচে ফেলে ছাদ পিটিয়ে পেরেকগুলো তৈরি করা হয়।
তৈরিকৃত এসব পেরেক আচারপাড়ার পাশ্ববর্তী টেকেরহাট বন্দর, মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, টরকী বন্দর, ভুরঘাটাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হয়। ৪ ইঞ্চি পেরেকের মণ প্রতি ৬ হাজার টাকা, ৫-৬ ইঞ্চি মণ প্রতি ৪ হাজার ৫০০টাকা, ৮-১০ ইঞ্চি মণ প্রতি ৪ হাজার ৩০০ টাকা, ১২-১৬ ইঞ্চি মণ প্রতি ৪ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিকিকিনি হয়।
পেরেক তৈরির কাজে নিয়োজিত আনন্দ বাকচী বার্তা২৪কে বলেন, ‘দৈনিক ১৫ থেকে ২০ কেজি পেরেক তৈরি করতে পারি। আগে বেশি মজুরি পেতাম। এখন পাই ৩০০-৪০০ টাকা।
টেকেরহাট বন্দরের প্যারাক ব্যবসায়ী অমল চন্দ্র মন্ডল বলেন, ‘আমরা ঢাকা-খুলনা থেকে লোহাগুলো ২ হাজার টাকা দরে মণ কিনে আনি। শ্রমিকদের প্রতি কেজি তৈরিতে মজুরি হিসাবে ৪০ টাকা দিতে হয়। আনুসঙ্গিক খরচসহ প্রতি কেজিতে খরচ ৯০-৯৫ টাকা পরে। দুই জন শ্রমিক দৈনিক ১৫-২০ কেজি পেরেক তৈরি করতে পারে। এতে প্রতি শ্রমিক ৩০০-৪০০ টাকা আয় করে। আমরা খরচ বাদে বাজার ভেদে প্রতি কেজি ১৪০-১৫০ টাকা দরে বিক্রি করে ৪০-৫০ টাকা নিট আয় করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে দেশের সব জায়গায় কাঠের ব্যবহার কমে গিয়ে ইট-সুরকির পাঁকা ঘর নির্মাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পেরেকের ব্যবহার দিন দিন কমে যাচ্ছে।’